2 of 2

৯০. সমাপ্তি

নবতিতম অধ্যায় – সমাপ্তি

মার্কণ্ডেয় বলিলেন-হে মুনিবরগণ! বেতালের বংশবিবরণ কীর্তন করিতেছি শ্রবণ কর। ইহা শ্রবণ করিলে তৎক্ষণাৎ সমস্ত পাপ হইতে মুক্তি লাভ করা যায়। ১

সর্বলোকোপকারিণী গো সমূহ-জননী মহাভাগ সুরভি নামে যে দক্ষ-কন্যা আছেন, প্রজাপতি কশ্যপের ঔরসে তাঁহার গর্ভে এক কন্যা উৎপন্ন হন, তাঁহার নাম রোহিণী, তিনি শুক্লবর্ণা এবং মনুষ্যদিগের নিখিল কাম-প্রসবিনী। ২-৩

অতি তপস্বী মুনিবর শুনঃশেফের ঔরসে রোহিণীর গর্ভে সৰ্বলক্ষণসম্পন্না কামধেনু নাম্নী গাভী উৎপন্ন হন। ৪

কামধেনুর বর্ণ শুক্লবর্ণ-মেঘ-সদৃশ, পদচতুষ্টয় চতুর্বেদ-সন্নিভ, চারিটি স্তন ধৰ্মার্থ-কাম-মোক্ষ-প্রদানে তৎপর। ৫

সহজ-সুন্দরী কামধেনুর কিছুকাল পরে নির্মল-মনোহর যৌবন-সঞ্চার হইল। ৬

একদা বেতাল, সেই চারুরূপা সুলক্ষণা কামধেনুকে সুমেরু পৰ্ব্বতের উপরে বিচরণ করিতে দেখিয়া কামাতুর হইলেন। ৭

কামধেনু, সেই চন্দ্রশেখরপুত্র বেতালকে কামুক জানিয়া পশুধর্মক্রমে আপনিই তাহাকে ভজনা করিলেন। ৮

শিবপুত্র বেতাল, কামধেনুকে পাইয়া পরম আনন্দযুক্ত–কামধেনু তাহাকে পাইয়া অত্যন্ত প্রীত হইলেন। ৯

তাহাদিগের উভয়ের সুরত ক্রীড়া হইলে কামধেনুর গর্ভ হইল। পরে যথা কালে কামধেনু এক মহাবৃষ প্রসব করিলেন। ১০

সেই বৃষ, অচিরকাল মধ্যেই প্রকাণ্ডকায় হইয়া উঠিল। তাঁহার বৃহৎ ককুদ, মনোহর শৃঙ্গদ্বয়, উন্নত চপল কর্ণযুগল এবং সুদীর্ঘ পুচ্ছ হইল। ১১-১২

তদীয়, ককুদ, কর্ণদ্বয় এবং শৃঙ্গদ্বয় শুক্লবর্ণ; দেবগণ, তাহাকে শৃঙ্গ শোভিত জঙ্গম কৈলাস পৰ্বত বলিয়া বোধ করিতেন। হে দ্বিজগণ! বেতাল–তাঁহার নাম রাখিলেন “শৃঙ্গ”। ১৩

সেই জ্ঞানী শৃঙ্গ, মহাদেবের আরাধনা করে; তাহাতে তিনি সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে অভিলষিত বর প্রদান করেন। ১৪

মহেশ্বর, সেই বৃষকে দেব-শরীর করিয়া তাহাকেই নিজ বাহন করেন। সেই পৃথিবী-ধারণ-সমর্থ বলবান্ দীর্ঘজীবী বৃষ মহাদেবের রথ-কেতুও হইল। ১৫

মহাবৃষ শৃঙ্গ, শঙ্করের বাহন, এইজন্য তাঁহার শৃঙ্গী বলিয়া আর একটি নাম প্রসিদ্ধ হইল। ১৬

মহাদেব ধ্যানমগ্ন হইলে, কখন কখন সেই শৃঙ্গ-বৃষ বরুণালয়ে অবস্থিত রূপ যৌবন-সম্পন্ন সুরভি-তনয়া গাভীগণের সহিত সুরত ক্রীড়া করিতে যায়। ১৭-১৮

হে বিপ্রগণ! বরুণের গৃহে সৰ্বলক্ষণসম্পন্ন অনেক গাভী আছে; তাহা দিগের গর্ভে শৃঙ্গ-বৃষের অনেক পুত্র উৎপন্ন হইল। ১৯

তাহাদিগের সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমস্ত জগৎ পূর্ণ। সেই গো হইতেই যজ্ঞ-প্রবৃত্তি। দেবগণ ঘৃতদ্বারা সন্তুষ্ট, ঘৃতের উপরই যন্ত্রের নির্ভর; আর সমস্ত স্থাবর জঙ্গমাত্মক জগৎই যজ্ঞের অধীন। ২০-২১

যজ্ঞ যাহার অধীন, সেই ঘৃত–গাভীগণের অধীন; সুতরাং গাভীই সকলের মূলাধার। হে দ্বিজোত্তমগণ! অতএব সমস্ত জগৎ গোরুর অধীন। ২২  

সর্বপ্রিয় গো-গণ বেতালের বংশ। যে ব্যক্তি, নিত্য এই মহাত্মা বেতালের সন্তান-সন্ততির জন্ম বিবরণ শ্রবণ করে, সে সুখী ও বলবান হয়। গোধন বা অন্য কোন সম্পত্তি কদাচ তাহার নষ্ট হয় না। ২৩-২৪

ভূত, প্রেত, পিশাচ প্রভৃতি তাহাকে দেখে না, বেতাল স্বয়ং সতত তাহার রক্ষাকর্তা হইয়া থাকেন। ২৫

বিপ্রগণ! বেতাল ভৈরব যেরূপে পুত্রোৎপাদন করিয়াছিলেন, কালিকা দেবী যেরূপে শিবকে মোহিত করেন, যেরূপে তিনি উৎপন্ন হইয়াছিলেন এবং যেরূপে শিবের শরীরার্ধ গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহা এই তোমাদের নিকট বলিলাম, তোমাদিগের সংশয়ও দূর হইল। ২৬-২৭

যে ব্যক্তি, প্রতিদিন “কালিকায়ৈ নমস্তুভ্যং” বলে, অন্তে তাহার মুক্তি করতলস্থিত,–ইহলোকেও সে সুখভাগী হয়। ২৮

মন্ত্র-যন্ত্রময় পরম বিশুদ্ধ জ্ঞানপ্রদ বাঞ্ছাপূরক এই কালিকাপুরাণে কথিত হইল। ২৯

দ্বিজগণ! এই পূরাণ–দেবতা গন্ধৰ্ব্ব ও পিতৃগণের সদা গ্রহণীয় এবং লোকে ও বেদে অত্যন্ত গোপিত। ৩০

মহাত্মা বসিষ্ঠ, এই অমৃতময় উৎকৃষ্ট পুরাণ আমার নিকট অধ্যয়ন ও শ্রবণ করেন। ৩১

তিনি কিন্তু সুরালয় কামরূপ পীঠে ইহা গোপন করিয়া রাখিয়াছেন। হে মহর্ষিগণ! আজ আমি তাহা প্রকাশ করিয়া বলিলাম। ৩২

তোমরাও লোকে এই পুরাণকে গোপনে রাখিবে। শঠ, চঞ্চল-চিত্ত, নাস্তিক, অজিতেন্দ্রিয়, ভক্তি-শ্রদ্ধা-বিহীন ব্যক্তির নিকটে কদাচ প্রকাশ করিবে না। ৩৩

যে ব্যক্তি কালিকাপুরাণ একবারও পাঠ করে, সে সমস্ত অভিলষিত বস্তু প্রাপ্ত হইয়া অন্তে মুক্তি লাভ করে। ৩৪

দ্বিজগণ! এই উত্তম কালিকাপুরাণ লিখিত হইয়া যাহার গৃহে থাকে, তাহার কদাচ বিঘ্ন হয় না। ৩৫

দ্বিজবরগণ! যে ব্যক্তি এই পরম গুহ্য পুরাণ প্রত্যহ পাঠ করে, তাহার নিখিল বেদ পাঠের ফল হয়। ৩৬

তাহা অপেক্ষা অধিক কৃতার্থ ও বিচক্ষণ আর কেহ থাকে না। সে ব্যক্তি সুখী, বলবান এবং দীর্ঘজীবী হয়। ৩৭

যিনি এই ত্রিলোককে সতত ধারণ ও পালন করিতেছেন, যিনি কল্পশেষে এই সমস্ত জগৎ সংহার করেন, ভ্রমাত্মক বা প্রমাত্মক এই ব্রহ্মাণ্ড যাহার রূপ প্রপঞ্চমাত্র–সেই ঈশ্বরকে প্রণাম করি। ৩৮

প্রকৃতি পুরুষ যাঁহার প্রপঞ্চ, যিনি যোগিজনহৃদয়ে পুরাণাধিপতি বিষ্ণুরূপে বিরাজিত, সেই শিব তোমাদিগের প্রতি প্রসন্ন হউন। ৩৯

যে সনাতন পুরাণ-পুরুষ জগতের শাশ্বত প্রধান কারণ, সেই পুরাণকর্তা পুরণবেদ্য পরমেশ্বরকে পুরাণশেষে স্তব ও প্রণাম করিতেছি। ৪০

যে ত্রিলোক-পালিনী দেবী লক্ষ্মীরূপে নারায়ণকে মোহিত করিয়া আছেন এবং শিবারূপে শিবের সন্তোষ সাধন করিতেছেন, সেই মায়া তোমাদিগকে বিভব বিতরণ করুন। ৪১  

নবতিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৯০

সম্পূর্ণমেতৎ কালিকাপুরাণম

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *