10 of 11

৫৩.১৩ শ্রীরামকৃষ্ণ কাশীপুর উদ্যানে — গিরিশ ও মাস্টার

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

শ্রীরামকৃষ্ণ কাশীপুর উদ্যানে — গিরিশ ও মাস্টার

কাশীপুর বাগানের পূর্বধারে পুষ্করিণীর ঘাট। চাঁদ উঠিয়াছে। উদ্যানপথ ও উদ্যানের বৃক্ষগুলি চন্দ্রকিরণে স্নাত হইয়াছে। পুষ্করিণীর পাশ্চিমদিকে দ্বিতল গৃহ। উপরের ঘরে আলো জ্বলিতেছে, পুষ্করিণীর ঘাট হইতে সেই আলো খড়খড়ির মধ্য দিয়া আসিতেছে, তাহা দেখা যাইতেছে। কক্ষমধ্যে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শয্যার উপর বসিয়া আছেন। একটি-দুটি ভক্ত নিঃশব্দে কাছে বসিয়া আছেন বা এ-ঘর হইতে ও-ঘর যাইতেছেন। ঠাকুর অসুস্থ, চিকিৎসার্থে বাগানে আসিয়াছেন। ভক্তেরা সেবার্থ সঙ্গে আছেন। পুষ্করিণীর ঘাট হইতে নিচের তিনটি আলো দেখা যাইতেছে। একটি ঘরে ভক্তেরা থাকেন, তাহার আলো দেখা যাইতেছে। মা ঠাকুরের সেবার্থ আসিয়াছেন। তৃতীয় আলোটি রান্নাঘরের। সেই ঘর গৃহের উত্তরদিকে। উদ্যান মধ্যস্থিত ওই দুতলা বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণ হইতে একটি পথ পুষ্করিণীর ঘাটের দিকে গিয়াছে। পূর্বাস্য হইয়া ওই পথ দিয়া ঘাটে যাইতে হয়। পথের দুই ধারে, বিশেষতঃ দক্ষিণ পার্শ্বে, অনেক ফল-ফুলের গাছ।

চাঁদ উঠিয়াছে। পুকুরঘাটে গিরিশ, মাস্টার, লাটু আরও দুই-একটি ভক্ত বসিয়া আছেন। ঠাকুরের কথা হইতেছে। আজ শুক্রবার, ১৬ই এপ্রিল, ১৮৮৬, ৪ঠা বৈশাখ, ১২৯৩। চৈত্র শুক্লা ত্রয়োদশী।

কিয়ৎক্ষণ পরে গিরিশ ও মাস্টার ওই পথে বেড়াইতেছেন ও মাঝে মাঝে কথাবার্তা কহিতেছেন।

মাস্টার — কি সুন্দর চাঁদের আলো! কতকাল ধরে এই নিয়ম চলছে!

গিরিশ — কি করে জানলে?

মাস্টার — প্রকৃতির নিয়ম বদলায় না (Uniformity of Nature) আর বিলাতের লোকেরা নূতন নূতন নক্ষত্র টেলিস্‌কোপ দিয়ে দেখেছে। চাঁদে পাহাড় আছে, দেখেছে।

গিরিশ — তা বলা শক্ত, বিশ্বাস হয় না।

মাস্টার — কেন, টেলিস্‌কোপ দিয়ে ঠিক দেখা যায়।

গিরিশ — কেমন করে বলব, ঠিক দেখেছে। পৃথিবী আর চাঁদের মাঝখানে যদি আর কোন জিনিস থাকে, তার মধ্যে দিয়ে আলো আসতে আসতে হয়তো অমন দেখায়।

বাগানে ছোকরা ভক্তেরা ঠাকুরের সেবার জন্য সর্বদা থাকেন। নরেন্দ্র, রাখাল, নিরঞ্জন, শরৎ, শশী, বাবুরাম, কালী, যোগীন, লাটু ইত্যাদি; তাঁহারা থাকেন। যে ভক্তেরা সংসার করিয়াছেন, কেহ কেহ প্রত্যহ আসেন ও মাঝে মাঝে রাত্রেও থাকেন। কেহ বা মধ্যে মধ্যে আসেন। আজ নরেন্দ্র, কালী ও তারক দক্ষিণেশ্বর-কালীবাড়ির বাগানে গিয়াছেন। নরেন্দ্র সেখানে পঞ্চবটী বৃক্ষমূলে বসিয়া ঈশ্বরচিন্তা করিবেন; সাধন করিবেন। তাই দুই-একটি গুরুভাই সঙ্গে গিয়াছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *