9 of 11

৫২.০৫ পুরুষ-প্রকৃতি — অধিকারী

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

পুরুষ-প্রকৃতি — অধিকারী

ডাক্তার ঠাকুরের জন্য ঔষধ দিলেন — দুটি Globule; বলিতেছেন, এই দুইটি গুলি দিলাম — পুরুষ আর প্রকৃতি। (সকলের হাস্য)

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — হাঁ, ওরা এক সঙ্গেই থাকে। পায়রাদের দেখ নাই, তফাতে থাকতে পারে না। যেখানে পুরুষ সেখানেই প্রকৃতি, যেখানে প্রকৃতি সেইখানেই পুরুষ।

আজ বিজয়া। ঠাকুর ডাক্তারকে মিষ্টমুখ করিতে বলিলেন। ভক্তেরা মিষ্টান্ন আনিয়া দিতেছেন।

ডাক্তার (খাইতে খাইতে) — খাবার জন্য ‘Thank you’ দিচ্ছি। তুমি যে অমন উপদেশ দিলে, তার জন্য নয়। সে ‘Thank you’ মুখে বলব কেন?

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — তাঁতে মন রাখা। আর কি বলব? আর একটু একটু ধ্যান করা। (ছোট নরেনকে দেখাইয়া) দেখ দেখ এর মন ঈশ্বরে একেবারে লীন হয়ে যায়। যে-সব কথা তোমায় বলছিলাম। —

ডাক্তার — এদের সব বলো।

শ্রীরামকৃষ্ণ — যার যা পেটে সয়। ওসব কথা কি সব্বাই লতে পারে? তোমাকে বললাম, সে এক। মা বাড়িতে মাছ এনেছে। সকলের পেট সমান নয়। কারুকে পোলোয়া করে দিলে, কারুকে আবার মাছের ঝোল। পেট ভাল নয়। (সকলের হাস্য)

ডাক্তার চলিয়া গেলে। আজ বিজয়া। ভক্তেরা সকলে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করিয়া তাঁহার পদধূলি গ্রহণ করিলেন। তৎপরে পরস্পর কোলাকুলি করিতে লাগিলেন। আনন্দের সীমা নাই। ঠাকুরের অত অসুখ, সব ভুলাইয়া দিয়াছেন! প্রেমালিঙ্গন ও মিষ্টমুখ অনেকক্ষণ ধরিয়া হইতেছে। ঠাকুরের কাছে ছোট নরেন, মাস্টার ও আরও দু’চারিটি ভক্ত বসিয়া আছেন। ঠাকুর আনন্দে কথা কহিতেছেন। ডাক্তারের কথা পড়িল।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ডাক্তারকে আর বেশি কিছু বলতে হবে না।

“গাছটা কাটা শেষ হয়ে এলে, যে ব্যক্তি কাটে সে একটু সরে দাঁড়ায়। খানিকক্ষণ পরে গাছটা আপনিই পড়ে যায়।”

ছোট নরেন (সহাস্যে) — সবই Principle!

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারকে) — ডাক্তার অনেক বদলে গেছে না?

মাস্টার — আজ্ঞা হাঁ। এখানে এলে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। কি ঔষধ দিতে হবে আদপেই সে কথা তোলেন না। আমরা মনে করে দিলে তবে বলেন, হাঁ হাঁ ঔষধ দিতে হবে।

বৈঠকখানা ঘরে ভক্তেরা কেহ কেহ গান গাহিতেছিলেন।

ঠাকুর যে ঘরে আছেন, সেই ঘরে তাঁহারা ফিরায়া আসিলে পর ঠাকুর বলিতেছেন, “তোমরা গান গাচ্ছিলে, — তাল হয় না কেন? কে একজন বেতালসিদ্ধ ছিল — এ তাই!” (সকলের হাস্য)

ছোট নরেনের আত্মীয় ছোকরা আসিয়াছেন। খুব সাজগোজ, আর চক্ষে চশমা। ঠাকুর ছোট নরেনের সহিত কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — দেখ, এই রাস্তা দিয়ে একজন ছোকরা যাচ্ছিল, প্লেটওলা জামা পরা। চলবার যে ঢঙ। প্লেটটা সামনে রেখে সেইখানটা চাদর খুলে দেয় — আবার এদিক-ওদিক চায়, — কেউ দেখছে কিনা। চলবার সময় কাঁকাল ভাঙা। (সকলের হাস্য) একবার দেখিস না।

“ময়ূর পাখা দেখায়। কিন্তু পাগুলো বড় নোংরা। (সকলের হাস্য) উট বড় কুৎসিত, — তার সব কুৎসিত।”

নরেনের আত্মীয় — কিন্তু আচরণ ভাল।

শ্রীরামকৃষ্ণ — ভাল। তবে কাঁটা ঘাস খায় — মুখ দে রক্ত পড়ে, তবুও খাবে! সংসারী, এই ছেলে মরে, আবার ছেলে ছেলে করে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *