8 of 11

৪৩.১৪ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবেন্দ্রের বাটীতে ভক্তসঙ্গে

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেবেন্দ্রের বাটীতে ভক্তসঙ্গে

ঠাকুর ভক্তসঙ্গে আনন্দে কথাবার্তা কহিতেছেন। চৈত্র মাস, বড় গরম! দেবেন্দ্র কুলপি বরফ তৈয়ার করিয়াছেন। ঠাকুরকে ও ভক্তেদর খাওয়াইতেছেন। ভক্তরাও কুলপি খাইয়া আনন্দ করিতেছেন। মণি আস্তে আস্তে বলছেন, ‘এন্‌কোর! এন্‌কোর!’ (অর্থাৎ আরও কুলপি দাও) ও সকলে হাসিতেছেন। কুলপি দেখিয়া ঠাকুরের ঠিক বালকের ন্যায় আনন্দ হইতেছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — বেশ কীর্তন হল! গোপীদের অবস্থা বেশ বললে — ‘রে মাধবী, আমার মাধব দে।’ গোপীদের প্রেমোন্মাদের অবস্থা। কি আশ্চর্য! কৃষ্ণের জন্য পাগল!

একজন ভক্ত আর একজনকে দেখাইয়া বলিতেছেন — এঁর সখীভাব — গোপীভাব।

রাম বলিতেছেন — এঁর ভিতর দুইই আছে। মধুরভাব আবার জ্ঞানের কঠোর ভাবও আছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কি গা?

ঠাকুর এইবার সুরেন্দ্রের কথা কহিতেছেন।

রাম — আমি খবর দিছলাম, কই এলো না।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কর্ম থেকে এসে আর পারে না।

একজন ভক্ত — রামবাবু আপনার কথা লিখছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্য) — কি লিখেছে?

ভক্ত — পরমহংসের ভক্তি — এই বলে একটি বিষয় লিখছেন — ।

শ্রীরামকৃষ্ণ — তবে আর কি, রামের খুব নাম হবে।

গিরিশ (সহাস্যে) — সে আপনার চেলা বলে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — আমার চেলা-টেলা নাই। আমি রামের দাসানুদাস।

পাড়ার লোকেরা কেহ কেহ আসিয়াছিলেন। কিন্তু তাহাদের দেখিয়া ঠাকুরের আনন্দ হয় নাই। ঠাকুর একবার বলিলেন, “এ কি পাড়া! আখানে দেখছি কেউ নাই।”

দেবেন্দ্র এইবার ঠাকুরকে বাড়ির ভিতর লইয়া যাইতেছেন। সেখানে ঠাকুরকে জল খাওয়াইবার হইয়াছে। ঠাকুর ভিতরে গেলেন। ঠাকুর সহাস্যবদনে বাড়ির ভিতর হইতে ফিরিয়া আসিলেন ও আবার বৈঠকখানায় উপবিষ্ট হইলেন। ভক্তেরা কাছে বসিয়া আছেন। উপেন্দ্র[1] ও অক্ষয়[2] ঠাকুরের দুই পার্শ্বে বসিয়া পদসেবা করিতেছেন। ঠাকুর দেবেন্দ্রের বাড়ির মেয়েদের কথা বলিতেছেন — “বেশ মেয়েরা, পাড়াগেঁয়ে মেয়ে কি না। খুব ভক্তি!”

ঠাকুর আত্মারাম? নিজের আনন্দে গান গাহিতেছেন! কি ভাবে গান গাহিতেছেন? নিজের অবস্থা স্মরণ করিয়া তাঁহার কি ভাবোল্লাস হইল? তাই কি গান কয়টি গাহিতেছেন?

গান – সহজ মানুষ না হলে সজকে না যায় চেনা।

গান – দরবেশ দাঁড়ারে, সাধের করওয়া কিস্তিধারী।
দাঁড়ারে, ও তোর ভাব (রূপ) নেহারি ৷৷

গান – এসেছেন এক ভাবের ফকির।
(ও সে) হিঁদুর ঠাকুর, মুসলমানর পীর ৷৷

গিরিশ ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন। ঠাকুরও গিরিশকে নমস্কার করিলেন।

দেবেন্দ্রাদি ভক্তেরা ঠাকুরকে গাড়িতে তুলিয়া দিলেন।

দেবেন্দ্র বৈঠকখানার দক্ষিণ উঠানে আসিয়া দেখেন যে, তক্তপোশের উপর তাঁহার পাড়ার একটি লোক এখনও নিদ্রিত রহিয়াছেন। তিনি বলিলেন, “উঠ, উঠ”। লোকটি চক্ষু মুছিতে মুছিতে উঠে বলছেন, “পরমহংসদেব কি এসেছেন?” সকলে হো-হো করিয়া হাসিতে লাগিলেন। লোকটি ঠাকুরের আসিবার আগে আসিয়াছিলেন, ঠাকুরকে দেখিবার জন্য। গরম বোধ হওয়াতে উঠানের তক্তপোশে মাদুর পাতিয়া নিদ্রাভিভূত হইঢাছেন। ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে যাইতেছেন। গাড়িতে মাস্টারকে আনন্দে বলিতেছেন — “খুব কুলপি খেয়েছি! তুমি (আমার জন্য) নিয়ে যেও গোটা চার-পাঁচ।” ঠাকুর আবার বলছেন, “এখন এই কটি ছোকরার উপর মন টানছে, — ছোট নরেন, পূর্ণ আর তোমার সম্বন্ধী।”

মাস্টার — দ্বিজ?

শ্রীরামকৃষ্ণ — না, দ্বিজ তো আছে। তার বড়টির উপর মন যাচ্ছে।

মাস্টার — ওঃ।

ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাইতেছেন।

১ শ্রীউপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ঠাকুরের ভক্ত ও “বসুমতীর” স্বত্বাধিকারী।
২ শ্রীঅক্ষয়কুমার সেন, ঠাকুরের ভক্ত ও কবি। ইনিই “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথি” লিখিয়া চিরস্মরণীয় হইয়াছেন। বাঁকুড়া জেলার অন্তঃপাতী ময়নাপুর গ্রাম ইঁহার জন্মভূমি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *