8 of 11

৪৩.১২ দেবেন্দ্রের বাড়িতে ভক্তসঙ্গে

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

দেবেন্দ্রের বাড়িতে ভক্তসঙ্গে

শ্রীরামকৃষ্ণ দেবেন্দ্রের বাড়ির বৈঠকখানায় ভক্তের মজলিশ করিয়া বসিয়া আছেন। বৈঠকখানার ঘরটি এক তলায়। সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। ঘরে আলো জ্বলিতেছে। ছোট নরেন, রাম, মাস্টার, গিরিশ, দেবেন্দ্র, অক্ষয়, উপেন্দ্র, ইত্যাদি অনেক ভক্তেরা কাছে বসিয়া আছেন। ঠাকুর একটি ছোকরা ভক্তকে দেখিতেছেন ও আনন্দে ভাসিতেছেন। তাহাকে উদ্দেশ করিয়া ভক্তদের বলিতেছেন, ‘তিনটে এর একেবারেই নাই! যাতে সংসারে বদ্ধ করে। জমি, টাকা আর স্ত্রী। ওই তিনটি জিনিসের উপর মন রাখতে গেলে ভগবানের উপর মনের যোগ হয় না। এ কি আবার দেখেছিল?’ (ভক্তটির প্রতি) বলত রে, কি দেখেছিলি?

[কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ ও ব্রহ্মানন্দ ]

ভক্ত (সহাস্যে) — দেখলাম, কতকগুলো গুয়ের ভাঁড়, — কেউ ভাঁড়ের উপর বসে আছে, কেউ কিছু তফাতে বসে আছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ — সংসারী লোক যারা ঈশ্বরকে ভুলে আছে, তাদের ওই দশা এ দেখেছে, তাই মন থেকে এর সব ত্যাগ হয়ে যাচ্ছে। কামিনী-কাঞ্চনের উপর থেকে যদি মন চলে যায়, আর ভাবনা কি!

“উঃ! কি আশ্চর্য! আমার তো কত জপ-ধ্যান করে তবে গিয়েছিল। এর একেবারে এত শীঘ্র কেমন করে মন থেকে ত্যাগ হলো! কাম চলে যাওয়া কি সহজ ব্যাপার! আমারই ছয়মাস পরে বুক কি করে এসেছিল! তখন গাছতলায় পড়ে কাঁদতে লাগলাম! বললাম, মা! যদি তা হয়, তাহলে গলায় ছুরি দিব!

(ভক্তদের প্রতি) — “কামিনী-কাঞ্চন যদি মন থেকে গেল, তবে আর বাকী কি রইল? তখন কেবল ব্রহ্মানন্দ।”

শশী তখন সবে ঠাকুরের কাছে যাওয়া-আসা করিতেছেন। তিনি তখন বিদ্যাসাগরের কলেজে বি. এ. প্রথম বৎসর পড়েন। ঠাকুর এইবার তাঁহার কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — সেই যে ছেলেটি যায়, কিছুদিন তার টাকায় মন এক-একবার উঠবে দেখেছি। কিন্তু কয়েটির দেখেছি আদৌ উঠবে না। কয়েকটি ছোকরা বিয়ে করবে না।

ভক্তেরা নিঃশব্দে শুনিতেছেন।

[অবতারকে কে চিনতে পারে? ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — মন থেকে কামিনী-কাঞ্চন সব না গেলে অবতারকে চিনতে পারা কঠিন। বেগুনওলাকে হীরার দাম জিজ্ঞাসা করেছিল, সে বললে, আমি এর বদলে নয় সের বেগুন দিতে পারি, এর একটাও বেশি দিতে পারি না। (সকলের হাস্য ও ছোট নরেনের উচ্চহাস্য)

ঠাকুর দেখিলেন, ছোট নরেন কথার মর্ম ফস করিয়া বুঝিয়াছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — এর কি সূক্ষ্মবুদ্ধি! ন্যাংটা এইরকম ফস্‌ করে বুঝে নিত — গীতা, ভাগবত, যেখানে যা, সে বুঝে নিত।

[কৌমারবৈরাগ্য আশ্চর্য — বেশ্যার উদ্ধার কিরূপে হয় ]

শ্রীরামকৃষ্ণ — ছেলেবেলা থেকে কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগ, এটি খুব আশচর্য। খুব কম লোকের হয়! তা না হলে যেমন শিল-খেকো আম — ঠাকুরের সেবায় লাগে না — নিজে খেতে ভয় হয়।

“আগে অনেক পাপ করেছে, তারপর বুড়ো বয়সে হরিনাম করছে এ মন্দের ভাল।

“অমুক মল্লিকের মা, খুব বড় মানুষের ঘরের মেয়ে! বেশ্যাদের কথায় জিজ্ঞাসা করলে, ওদের কি কোন মতে উদ্ধার হবে না? নিজে আগে আগে অনেকরকম করেছে কি না! তাই জিজ্ঞাসা করলে। আমি বললুম, হাঁ, হবে — যদি আন্তরিক ব্যাকুল হয়ে কাঁদে, আর বলে আর করবো না। শুধু হরিনাম করলে কি হবে, আন্তরিক কাঁদতে হবে!”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *