7 of 11

৩৫.১২ শ্রীরামকৃষ্ণ ও কর্মকাণ্ড — কর্মকাণ্ড কঠিন তাই ভক্তিযোগ

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

শ্রীরামকৃষ্ণ ও কর্মকাণ্ড — কর্মকাণ্ড কঠিন তাই ভক্তিযোগ

কালীমন্দিরের সম্মুখে ভক্তেরা শ্রীরামকৃষ্ণকে ঘেরিয়া চতুর্দিকে বসিয়া আছেন। এতক্ষণ অবাক্‌ হইয়া শ্রীমুখের বাণী শুনিতেছিলেন।

এইবার ঠাকুর গাত্রোত্থান করিলেন। মন্দিরের সম্মুখে চাতালে আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া মাকে প্রণাম করিলেন। ভক্তেরা সকলে তাঁহার কাছে সত্বর আসিয়া তাঁহার পাদমূলে ভূমিষ্ঠ হইয়া পড়িলেন। সকলেই চরণধূলির ভিখারী। সকলে চরণবন্দনা করিলে পর, ঠাকুর চাতাল হইতে নামিতেছেন ও মাস্টারের সঙ্গে কথা কহিতে কহিতে নিজের ঘরের দিকে আসিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (গীত গাহিতে গাহিতে মাস্টারের প্রতি) —

“প্রসাদ বলে ভুক্তি মুক্তি উভয়ে মাথায় রেখেছি।
আমি কালী ব্রহ্ম জেনে মর্ম, ধর্মাধর্ম সব ছেড়েছি!

“ধর্মাধর্ম কি জানো? এখানে ‘ধর্ম’ মানে বৈধীধর্ম। যেমন দান করতে হবে, শ্রাদ্ধ, কাঙালীভোজন — এই সব।

“এই ধর্মকেই বলে কর্মকাণ্ড। এ-পথ বড় কঠিন। নিষ্কামকর্ম করা বড় কঠিন! তাই ভক্তিপথ আশ্রয় করতে বলেছে।

“একজন বাড়িতে শ্রাদ্ধ করেছিল। অনেক লোকজন খাচ্ছিল। একটা কসাই গরু নিয়ে যাচ্ছে, কাটবে বলে। গরু বাগ মানছিল না — কসাই হাঁপিয়ে পড়েছিল। তখন সে ভাবলে শ্রাদ্ধবাড়ি গিয়ে খাই। খেয়ে গায়ে জোর করি, তারপর গরুটাকে নিয়ে যাব। শেষে তাই কল্লে, কিন্তু যখন সে গরু কাটলে তখন যে শ্রাদ্ধ করেছিল, তারও গো-হত্যার পাপ হল।

“তাই বলছি, কর্মকাণ্ডের চেয়ে ভক্তিপথ ভাল।”

ঠাকুর ঘরে প্রবেশ করিতেছেন, সঙ্গে মাস্টার। ঠাকুর গুনগুন করিয়া গাহিতেছেন। নিবৃত্তিমার্গের বিষয় যা বললেন, তারই ফুট উঠছে। ঠাকুর গুনগুন করে বলছেন — “অবশেষে রাখ গো মা, হাড়ের মালা সিদ্ধি ঘোটা।”

ঠাকুর ছোট খাটটিতে বসিলেন। অধর, কিশোরী ও অন্যান্য ভক্তেরা আসিয়া বসিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) — ঈশানকে দেখলুম — কই, কিছুই হয় নাই! বল কি? পুরশ্চরণ পাঁচমাস করেছে! অন্য লোকে এক কাণ্ড করত।

অধর — আমাদের সম্মুখে ওঁকে অত কথা বলা ভাল হয় নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ — সে কি! ও জাপক লোক, ওর ওতে কি?

কিয়ৎক্ষণ কথার পর ঠাকুর অধরকে বলিতেছেন, ঈশান খুব দানী। আর দেখ, জপতপ খুব করে।

ঠাকুর কিছুকাল চুপ করিয়া আছেন। ভক্তেরা মেঝেতে বসিয়া একদৃষ্টে চাহিয়া আছেন।

হঠাৎ ঠাকুর অধরকে উদ্দেশ করিয়া বলিতেছেন –আপনাদের যোগ ও ভোগ দুই-ই আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *