6 of 11

৩৫.০৯ ঈশানকে উপদেশ — ভক্তিযোগ ও কর্মযোগ — জ্ঞানের লক্ষণ

নবম পরিচ্ছেদ
১৮৮৪, ১১ই অক্টোবর

ঈশানকে উপদেশ — ভক্তিযোগ ও কর্মযোগ — জ্ঞানের লক্ষণ

সিঁথির পণ্ডিত চলিয়া গিয়াছেন। ক্রমে সন্ধ্যা হইল। কালীবাড়িতে ঠাকুরদের আরতির বাজনা বাজিয়া উঠিল। শ্রীরামকৃষ্ণ ঠাকুরদের নমস্কার করিতেছেন। ছোট খাটটিতে বসিয়া উন্মনা। কয়েকটি ভক্ত মেঝেতে আসিয়া আবার বসিলেন। ঘর নিঃশব্দ।

রাত্রি একঘন্টা হইয়াছে। ঈশান মুখোপাধ্যায় ও কিশোরী আসিয়া উপস্থিত। তাঁহারা ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া আসন গ্রহণ করিলেন। ঈশানের পুরশ্চরণাদি শাস্ত্রোল্লিখিত কর্মে খুব অনুরাগ। ঈশান কর্মযোগী। এইবার ঠাকুর কথা কহিতেছেন —

শ্রীরামকৃষ্ণ — জ্ঞান জ্ঞান বললেই কি হয়? জ্ঞান হবার লক্ষণ আছে। দুটি লক্ষণ — প্রথম অনুরাগ অর্থাৎ ঈশ্বরকে ভালবাসা। শুধু জ্ঞানবিচার করছি, কিন্তু ঈশ্বরেতে অনুরাগ নাই, ভালবাসা নাই, সে মিছে। আর-একটি লক্ষণ কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ। কুলকুণ্ডলিনী যতক্ষণ নিদ্রিত থাকেন, ততক্ষণ জ্ঞান হয় না। বসে বসে বই পড়ে যাচ্ছি, বিচার করছি, কিন্তু ভিতরে ব্যাকুলতা নাই, সেটি জ্ঞানের লক্ষণ নয়।

“কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ হলে ভাব, ভক্তি, প্রেম — এই সব হয়। এরই নাম ভক্তিযোগ।

“কর্মযোগ বড় কঠিন। কর্মযোগে কতকগুলি শক্তি হয় — সিদ্ধাই হয়।”

ঈশান — আমি হাজরা মহাশয়ের কাছে যাই।

ঠাকুর চুপ করিয়া রহিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ঈশান আবার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিলেন। সঙ্গে হাজরা। ঠাকুর নিঃশব্দে বসিয়া আছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে হাজরা ঈশানকে বলিলেন, চলুন ইনি এখন ধ্যান করবেন। ঈশান ও হাজরা চলিয়া গেলেন।

ঠাকুর নিঃশব্দে বসিয়া আছেন। ক্রমে সত্য সত্যই ধ্যান করিতেছেন। করে জপ করিতেছেন। সেই হাত একবার মাথার উপরে রাখিলেন, তারপর কপালে, তারপর কণ্ঠে, তারপর হৃদয়ে, তারপর নাভিদেশে।

শ্রীরামকৃষ্ণ কি ষট্‌চক্রে আদ্যাশক্তির ধ্যান করিতেছেন? শিব সংহিতাদি শাস্ত্রে যে যোগের কথা আছে, এ কি তাই!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *