1 of 2

২৯. বরাহের ক্রীড়া বর্ণন

ঊনত্রিংশ অধ্যায় বরাহের ক্রীড়া বর্ণন

ঋষিগণ বলিলেন;–মহাদেব পূৰ্বে যে চতুৰ্বিধ ভূতগণকে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহারা উৎপন্ন হইয়া কি কাৰ্য্য সাধন করিয়াছিল? এবং তাহারা কি নিমিত্ত নানারূপ ধারণ করিল? ১

কাহারও অর্ধ-শরীর বরাহের ন্যায় এবং অর্ধ-শরীর হস্তীর ন্যায়। কোন কোন গণনায়ক কি নিমিত্ত সিংহ ব্যাঘ্রাদির ভয়ঙ্কর রূপধারী হইয়াছিল? ২

কি নিমিত্ত তাহার নিরন্তর ক্রূর কৰ্ম্ম করিত? এবং মহাবল প্রমথগণের আহাৰ্য্য কি ছিল? এই সকল বিষয় শ্রবণের নিমিত্ত আমরা অতীব উৎকণ্ঠিত হইয়াছি। ৩।

মার্কণ্ডেয় বলিলেন;–হে মুনিগণ! যে প্রকারে শিব হইতে গণসকলের উৎপত্তি হইয়াছিল এবং তাহারা উৎপন্ন হইয়া যে কাৰ্য্য সাধন করিয়াছিল, তোমরা তাহা শ্রবণ কর। ৪

সুগোপনীয় ধর্ম-অর্থ কামদায়ী তেজস্বী পরম-তপস্যা-স্বরূপ এই বৃত্তান্ত তোমাদের সম্বন্ধে কীৰ্ত্তন করিতেছি। ৫

লোক-যশস্কর, ধনপ্রদ, আয়ুজনক, সন্তোষক, পুষ্টিকারক এই আখ্যান শ্রবণ করিয়া ইহলোক এবং পরলোকে কোন কষ্ট পায় না। ৬-৭

মুনিবরগণ! অদি বরাহসর্গ শেষ হইলে মহাদেব জগন্নাথ বরাহ দেবকে বলিয়াছিলেন,–প্রভো! আপনি যাহার নিমিত্ত বরাহরূপ ধারণ করিয়াছিলেন, পৃথিবী পূর্বের ন্যায় যথাস্থানে অবস্থাপিত হইয়াছেন। ৮

অতএব আপনার বরাহরূপ ধারণের সার্থক্য সম্পন্ন হইয়াছে। এবং আপনার অনুগ্রহে সাগর সকলের প্রকৃতিস্থিতা, পৃথিবীর উদ্ধার এবং ব্রহ্মা কর্তৃক জগৎ সৃষ্টি হইয়াছে। ৯-১০

আপনি তেজোময় সৰ্ব্বময় যজ্ঞস্বরূপ এবং জগতে যে সকল গুরু আছেন, তাহাদেরও আপনি পরাৎপর গুরুস্বরূপ। ১১।

হে পৃথিবীপতে। আপনার বহনে অসমর্থা পৃথিবী বিশীর্ণা হইতেছেন এবং পূৰ্বে আপনার স্থাপিতা ধরা পৰ্বতসমূহের সংঘাতে নিয়ন্ত্রিত হইতেছেন। ১২

অতএব হে ধরাপতে! আপনি বরাহ শরীর ত্যাগ করুন। জগদাত্মক জগদ্রূপ এবং জগতের কারণ-সমূহেরও কারণ-স্বরূপ আপনার এই বরাহ দেহকে অন্য কে বহন করিতে পারিবে; বিশেষতঃ আপনি জলময়-প্রদেশে কামিনী পৃথিবীর কামনা পূর্ণ করিয়াছেন। স্ত্রীধর্মিণী পৃথিবী আপনার তেজে দারুণ গর্ভধারণ করিয়াছেন। ১৩-১৪

হে জগন্নাথ! রজস্বলা পৃথিবী যে গর্ভধারণ করিয়াছেন, সেই গর্ভ হইতে যাহার উৎপত্তি হইবে, তাহার দুর্যশ হইবে এবং দেবগন্ধৰ্বাদির প্রতিদ্বন্দ্বী আসুরীভাব লাভ করিবে। দক্ষের সমীপে লোকপতি ব্রহ্মার নিকট এই কথা শ্রুত হইয়াছি, হে লোকপতে। রজস্বলাসঙ্গমে দোষান্বিত অনিষ্টকারক এই কামুক বরাহ দেহত্যাগ করুন। ১৫-১৭

আপনিই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়কারী লোকনিয়ন্তা এবং সময় মত সৃষ্টি-স্থিতি প্রলয়াদিকাৰ্য্য করিয়া থাকেন। ১৮

অতএব হে মহাবল। লোকহিতের নিমিত্ত প্রকাণ্ড বরাহদেহ ত্যাগ করুন। পুনৰ্বার উচিতকালে এই দেহ ধারণ করত উপস্থিত কাৰ্য্য সাধন করিবেন। ১৯

মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–ভগবান্ বরাহদেব মহাদেবের এইরূপ বাক্য শ্রবণ করত বলিলেন,–হে মহেশ্বর! তুমি যে বাক্য আমাকে বলিলে তোমার সেই বাক্যানুসারে যজ্ঞবরাহদেহ নিশ্চয় ত্যাগ করিব। ২০-২১

এবং তোমার কথানুসারে সময়মত লোকহিতের নিমিত্ত পুনর্বার আশ্চৰ্য্য বরাহ দেহ ধারণ করিব। ২২

জগতের গুরু জগৎ-স্রষ্টা লোকনিয়ন্তা জগন্নাথ মহাকায় বরাহরূপী ভগবান এই প্রকার বলিতে বলিতে সেই স্থানেই অন্তর্হিত হইলেন। ২৩

বরাহদেব অন্তর্হিত হইলে দেবদেব মহাদেব প্রমথগণের সহিত স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। ২৪

বরাহদেব সেই স্থান হইতে যাইয়া লোকালোক পৰ্বতে বরাহরূপিণী মনোরমা পৃথিবীর সহিত রমণ করিতে লাগিলেন। ২৫

পরমকামুক বরাহরূপী লোকেশ, পৰ্ব্বতোত্তমে পৃথিবীর সহিত বহুকাল বিলাস করিয়াও তৃপ্তি লাভ করিলেন না। ২৬

তদনন্তর বরাহদেবের বীর্যে পৃথিবীর গভে মহাবল সুবৃত্ত, কনক এবং ঘোরনামক তিনটী পুত্র উৎপন্ন হইল। ২৭-২৮

সুবৃত্তাদি মহাবল বরাহ-পুত্রগণ শৈশবকালে পরস্পর মিলিত হইয়া সুমেরু পৰ্বতের কাঞ্চনময় সানুতে, গহ্বর মধ্যে এবং সরোবরে ক্রীড়া করিতে আরম্ভ করিল। ২৯

হে দ্বিজগণ! বরাহদেব সেইকালে বরাহরূপিণী পৃথিবীর সহিত রমণরসে এবং সুবৃত্তাদিগণের স্নেহে কাম ক্রীড়া ত্যাগ করিতে ইচ্ছা করেন নাই। ৩০

মহাবল বরাহদেব কখন পুত্রগণের সহিত কর্দম মধ্যে অবতরণ করিয়া ভাৰ্যার সহিত কর্দমক্রীড়া করিতেন। ৩১

সন্ধ্যাকালীন রক্ত পীতবর্ণ মেঘ হইতে জল বর্ষণ হইলে যেরূপ শোভা হয়, পিঙ্গলবর্ণ বরাহদেবের সর্বাঙ্গ পঙ্কলিপ্ত হওয়ায় সেইরূপ শোভা সম্পন্ন হইত। ৩২

বরাহ, পুত্র-ত্রয় এবং ধরিত্রীর সহিত বিলাস করত শোভা পাইতে লাগিলেন এবং পৃথিবীর মধ্যদেশ বরাহ-বিক্ৰমে নম্র হইল। ৩৩

অনন্তদেবও কূৰ্ম্মকে আক্রমণ করত পৃথিবী মধ্যস্থায়ী বরাহদেবের বহন ব্যথায় ভগ্নমস্তক ও আতঙ্কিত হইলেন। ৩৪

সুবৃত্ত, কনক এবং ঘোর–ইহাদিগের পোত্র (মুখাগ্র) আঘাতে সুমেরুর স্বর্ণবপ্রসকল ভগ্ন হইল। ৩৫

হে দ্বিজগণ! দেবগণ যত্নপূর্বক সুমেরু পৰ্ব্বতের উপরিভাগে সুবর্ণ দ্বারা যে সকল রম্য স্থান নির্মাণ করিয়াছিলেন, বরাহপুত্রগণ সেই স্থানসকল মুখ প্রহারে চূর্ণ করিয়াছিল। ৩৬

মানস প্রভৃতি দেবগণের নির্মল রম্য সরোবর সকল বরাহ-শিগুগণ পোত্রাঘাতে সকলদিকে আবিল করিতে লাগিল। ৩৭

বনিতারূপিণী পৃথিবী বরাহের সহিত রমণ করিয়া তাহার দেহভারে অতিশয় দুঃখ অনুভব করিতে লাগিলেন। ৩৮

সুবৃত্তাদি বরাহ পুত্রগণ সমুদ্র সকলে অবগাহন করত রত্নের সহিত রত্নাকরকে পোত্র দ্বারা ব্যাকুল করিল। ৩৯

সেইকালে ইতস্ততঃ ক্রীড়াপর বরাহপুত্রগণ, পার্বত্য ভূমি, নদী এবং কল্পদ্রুম প্রভৃতিকে ভগ্ন করিল। ৪০

জগৎকর্তা বরাহদেব পুত্রগণদ্বারা জগতের অমঙ্গল হইতেছে জানিয়াও পুত্র বাৎসল্যে স্বয়ং তাহাদিগকে বারণ করিতেন না। ৪১

সুবৃত্ত, কনক এবং ঘোর ইচ্ছানুরূপ যেকালে স্বর্গে গমন করিত, তাহাদের আগমন দর্শন করত অমরগণ মরণভয়ে দিগ্‌দিগন্তে পলায়ন করিতেন। ৪২

যজ্ঞ-বরাহ, এইরূপ ভার্যা এবং পুত্রগণের সহিত ইচ্ছামত ক্রীড়া করত কখনও সন্তোষলাভ করিলেন না; কিন্তু প্রতিদিনই তাঁহার কামবৃদ্ধি পাইতে লাগিল, কাম ত্যাগ করিতে ইচ্ছা হইত না। ৪৩

ঊনত্রিংশ অধ্যায় সমাপ্ত ॥ ২৯

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *