4 of 11

২০.০৬ দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে রাখাল, মাস্টার, মহিমা প্রভৃতি সঙ্গে

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

১৮৮৪, ২রা ফেব্রুয়ারি

দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে রাখাল, মাস্টার, মহিমা প্রভৃতি সঙ্গে

[শ্রীরামকৃষ্ণের হস্তে আঘাত — সমাধি ও জগন্মাতার সহিত কথা ]

ঠাকুর দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে সেই ঘরে অবস্থিতি করিতেছেন। বেলা তিনটা। শনিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দ; ২০শে মাঘ, ১২৯০ সাল, মাঘ শুক্লা ষষ্ঠী।

একদিন ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইয়া ঝাউতলার দিকে যাইতেছেন; সঙ্গে কেহ না থাকাতে রেলের কাছে পড়িয়া যান। তাহাতে তাঁহার বাম হাতের হাড় সরিয়া যায় ও খুব আঘাত লাগে। মাস্টার কলিকাতা হইতে ভক্তদের নিকট হইতে বাড়্‌, প্যাড ও ব্যাণ্ডেজ আনিয়াছেন।

শ্রীযুক্ত রাখাল, মহিমাচরণ, হাজরা প্রভৃতি ভক্তেরা ঘরে আছেন। মাস্টার আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া ঠাকুরের চরণ বন্দনা করিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ — কিগো! তোমার কি ব্যারাম হয়েছিল? এখন সেরেছে তো?

মাস্টার — আজ্ঞে, হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মহিমার প্রতি) — হ্যাঁগা, “আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী” — তবে এরকম হল কেন?

ঠাকুর তক্তার উপর বসিয়া আছেন। মহিমাচরণ নিজের তীর্থদর্শনের গল্প করিতেছেন। ঠাকুর শুনিতেছেন। দ্বাদশ বৎসর পূর্বে তীর্থদর্শন।

মহিমাচরণ — কাশী সিক্‌রোলের একটি বাগানে একটি ব্রহ্মচারী দেখলাম। বললে, “এ-বাগানে কুড়ি বছর আছি। কিন্তু কার বাগান জানি না।” আমায় জিজ্ঞাসা করলে, “নৌকরী কর বাবু?” আমি বললাম, না। তখন বলে, “কেয়া, পরিব্রাজক হ্যায়?”

নর্মদাতীরে একটি সাধু দেখলাম, অন্তরে গায়ত্রী জপ কচ্ছেন — শরীরে পুলক হচ্ছে। আবার এমন প্রণব আর গায়ত্রী উচ্চারণ করেন যে যারা বসে থাকে তাদের রোমাঞ্চ আর পুলক হয়।

ঠাকুরের বালকস্বভাব, — ক্ষুধা পাইয়াছে; মাস্টারকে বলিতেছেন, “কি, কি এনেছ?” রাখালকে দেখিয়া ঠাকুর সমাধিস্থ হইলেন।

সমাধি ভঙ্গ হইতেছে। প্রকৃতস্থ হইবার জন্য ঠাকুর বলিতেছেন — “আমি জিলিপি খাব”, “আমি জল খাব!”

ঠাকুর বালকস্বভাব, — জগন্মাতাকে কেঁদে কেঁদে বলছেন — ব্রহ্মময়ী! আমার এমন কেন করলি? আমার হাতে বড় লাগছে। (রাখাল, মহিমা, হাজরা প্রভৃতির প্রতি) — আমার ভাল হবে? ভক্তেরা ছোট ছেলেটিকে যেমন বুঝায় — সেইরূপ বলছেন “ভাল হবে বইকি!”

শ্রীরামকৃষ্ণ (রাখালের প্রতি) — যদিও শরীর রক্ষার জন্য তুই আছিস, তোর দোষ নাই। কেননা, তুই থাকলেও রেল পর্যন্ত তো যেতিস না।

[শ্রীরামকৃষ্ণের সন্তানভাব — “ব্রহ্মজ্ঞানকে আমার কোটি নমস্কার” ]

ঠাকুর আবার ভাবাবিষ্ট হইলেন। ভাবাবিষ্ট হইয়া বলিতেছেন —

“ওঁ ওঁ ওঁ — মা আমি কি বলছি! মা, আমায় ব্রহ্মজ্ঞান দিয়ে বেহুঁশ করো না — মা আমায় ব্রহ্মজ্ঞান দিও না। আমি যে ছেলে! — ভয়তরাসে। — আমার মা চাই — ব্রহ্মজ্ঞানকে আমার কোটি নমস্কার। ও যাদের দিতে হয়, তাদের দাও গে। আনন্দময়ী! আনন্দময়ী!”

ঠাকুর উচ্চৈঃস্বরে আনন্দময়ী! আনন্দময়ী! বলিয়া কাঁদিতেছেন আর বলিতেছেন —

“আমি ওই খেদে খেদ করি (শ্যামা)।
তুমি মাতা থাকতে আমার জাগা ঘরে চুরি ৷৷”

ঠাকুর আবার মাকে বলিতেছেন — “আমি কি অন্যায় করেছি মা? আমি কি কিছু করি মা? — তুই যে সব করিস মা! আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী! (রাখালের প্রতি, সহাস্যে) দেখিস, তুই যেন পড়িস নে। মান করে যেন ঠকিস না।

ঠাকুর মাকে আবার বলিতেছেন — “মা, আমি লেগেছে বলে কি কাঁদছি? না। —

“আমি ওই খেদে খেদ করি (শ্যামা)।
তুমি মাতা থাকতে আমার জাগা ঘরে চুরি ৷৷”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *