2 of 11

১২.০৯ পঞ্চবটীমূলে কীর্তনানন্দে

নবম পরিচ্ছেদ

১৮৮৩, ১১ই মার্চ

পঞ্চবটীমূলে কীর্তনানন্দে

অপরাহ্নে ভক্তেরা পঞ্চবটীমূলে কীর্তন করিতেছেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহাদের সহিত যোগদান করিলেন। আজ ভক্তসঙ্গে মার নামকীর্তন করিতে করিতে আনন্দে ভাসিলেন:

শ্যামাপদ-আকাশেতে মন ঘুড়িখান উড়তেছিল ৷
কলুষের কুবাতাস পেয়ে গোপ্তা খেয়ে পড়ে গেল ৷৷
মায়াকান্নি হল ভারী, আর আমি উঠাতে নারি ৷
দারাসুত কলের দড়ি, ফাঁস লেগে সে ফেঁসে গেল ৷৷
জ্ঞান-মুণ্ড গেছে ছিঁড়ে, উঠিয়ে দিলে অমনি পড়ে ৷
মাথা নেই সে আর কি উড়ে, সঙ্গের ছজন জয়ী হল ৷৷
ভক্তি ডোরে ছিল বাঁধা, খেলতে এসে লাগল ধাঁধা ৷
নরেশচন্দ্রের হাসা-কাঁদা, না আসা এক ছিল ভাল ৷৷

আবার গান হইল। গানের সঙ্গে সঙ্গে খোল-করতাল বাজিতে লাগিল। ঠাকুর ভক্তসঙ্গে নাচিতেছেন:

মজলো আমার মনভ্রমরা শ্যামাপদ নীলকমলে ৷
(শ্যামাপদ নীলকমলে, কালীপদ নীলকমলে!)
যত বিষয়মধু তুচ্ছ হল কামাদি কুসুম সকলে ৷৷
চরণ কালো, ভ্রমর কালো, কালোয় কালো মিশে গেল ৷
পঞ্চতত্ত্ব, প্রধান মত্ত, রঙ্গ দেখে ভঙ্গ দিলে ৷৷
কমলাকান্তেরই মনে, আশাপূর্ণ এতদিনে ৷
তায় সুখ-দুঃখ সমান হলে আনন্দ সাগর উথলে ৷৷

কীর্তন চলিতেছে। ভক্তেরা গাহিতেছেন:

(১)   —     শ্যামা মা কি এক কল করেছে।
(কালী মা কি এক কল করেছে)
চোদ্দপোয়া কলের ভিতরি, কল ঘুরায় ধরে কলডুরি,
কল বলে আপনি ঘুরি, জানে না কে ঘুরাতেছে।
যে কলে জেনেছে তারে, কল হতে হবে না তারে,
কোন কলের ভক্তিডোরে আপনি শ্যামা বাঁধা আছে।

(২)   —     ভবে আসা খেলতে পাশা কত আশা করেছিলাম।
আশার আশা ভাঙা দশা প্রথমে পঞ্জুড়ি পেলাম ৷৷
পঞ্চবার আঠার ষোল, যুগে যুগে এলাম ভাল ৷
শেষে কচে বারো পড়ে মাগো, পঞ্জা-ছক্কায় বন্দী হলাম ৷৷

ভক্তেরা আনন্দ করিতে লাগিলেন। তাহারা একটু থামিলে ঠাকুর গাত্রোত্থান করিলেন। ঘরে ও আশেপাশে এখনও অনেকগুলি ভক্ত আছেন।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পঞ্চবটী হইতে দক্ষিণাস্য হইয়া নিজের ঘরের দিকে যাইতেছেন। সঙ্গে মাস্টার। বকুলতলায় আসিলে পর শ্রীযুক্ত ত্রৈলোক্যের সহিত দেখা হইল। তিনি প্রণাম করিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ত্রৈলোক্যের প্রতি) — পঞ্চবটীতে ওরা গান গাচ্চে। চল না একবার —

ত্রৈলোক্য — আমি গিয়ে কি করব?

শ্রীরামকৃষ্ণ — কেন, বেশ একবার দেখতে।

ত্রৈলোক্য — একবার দেখে এসেছি।

শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা, আচ্ছা বেশ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *