১০. হেলফুল ফুযুল ও সংগ্রামী জীবন যাপন

হেলফুল ফুযুল

ফুজ্জারের যুদ্ধের পর নিষিদ্ধি ঘোষিত যিলকদ মাসে হেলফুল ফুযুল সংঘটিত হয়। কয়েকটি গোত্র যেমন কোরায়শ অর্থাৎ বনি হাশেম, বনি মোত্তালেব, বনি আসাদ ইবনে আবদুল ওযযা, বনি যোহরা ইবনে কেলাব এবং বনু তাইম ইবনে মোররা এর ব্যবস্থা করেন। এরা সবাই আবদুল্লাহ ইবনে জুদআন তাইমির ঘরে একত্রিত হন। এরা বয়স এবং আভিজাত্যে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।
এরা পরস্পর এ মর্মে অংগীকার করলেন যে, মক্কায় সংঘটিত যে কোন প্রকার যুলুম অত্যাচার প্রতিরোধ করবেন।
হোক মক্কার অধিবাসী বা বাইরের কেউ-অত্যাচারিত হলে প্রতিকার করে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে। এ সমাবেশে রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও উপস্থিত ছিলেন। নবুয়ত পাওয়ার পর এ ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের ঘরে এমন চুক্তিতে শরিক ছিলাম, যার বিনিময়ে লাল উটও আমার পছন্দ নয়। ইসলামী যুগে সেই চুক্তির জন্যে যদি আমাকে ডাকা হতো, তবে আমি অবশ্যই হাযির হতাম।
এ চুক্তির মূল ছিলো জাহেলী যুগের যাবতীয় বে-ইনসাফী দূরীকরণ। এ চুক্তির কারণ এটাই বলা হয়েছে যে, যোবায়ের একজন লোক কিছু জিনিস নিয়ে মক্কায় এসেছিলো। আস ইবনে ওয়ায়েল তার কাছ থেকে সেই জিনিস ক্রয় করে, কিন্তু তার মূল পরিশোধ করেনি। আস ইবনে ওয়ায়ের কাছে জিনিস বিক্রেতা আবদুদ দার, মাখজুম, জামিহ,ছাহাম এবং আদীর কাছে সাহায্যে আবেদন জানায়। কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি। এরপর সেই লোকটি আবু কুরাইস পাহাড়ে উঠে উচ্চস্বরে কয়েকটি কবিতা আবৃত্ত করলো। সে কবিতায় তার প্রতি অত্যাচারের কথা বর্ণনা করা হয়েছিলো।
এতে যোবায়ের ইবনে আবদুল মোত্তালেব ছুটোছুটি শুরু করে বলেন, এই লোকটির কোন সাহায্যকারী নেই কেন? তার চেষ্টায় উল্লেখিত কয়েকটি গোত্র একত্রিত হলো। প্রথমে তারা চুক্তি করলো পরে আস ইবনে ওয়ায়েলের কাছ থেকে বিক্রীত পণ্যের মূল্য আদায় করে দিল।

সংগ্রামী জীবন যাপন

তরুণ বয়সে রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দিষ্ট কোন কাজ ছিলো না। তবে বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তিনি বকরি চরাতেন। সেগুলো ছিলো বনি সা’দ গোত্রের।
কয়েক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মক্কার বিভিন্ন লোকের বকরিও তিনি চরাতেন। পঁচিশ বছর বয়সে তিনি হযরত খাদিজা (রা) বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে সিরিয়ায় সফর করেন। ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, খাদিজা বিনতে খোয়াইলেদ একজন অভিজাত ও ধনবতী মহিলা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন লোককে দিয়ে পণ্য কিনতেন এবং সেসব পণ্য বিক্রি করাতেন। লাভের একটা অংশ তিনি গ্রহণ করাতেন। সমগ্র কোরায়শ গোত্রেই ব্যবসা করতো। বিবি খাদিজা নবী রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সততা, সচ্চরিত্রতা এবং নম্রতার কথা শুনে তাঁকে ব্যবসায় নিয়োগের জন্যে প্রস্তাব পাঠালেন। তিনি তাঁর ক্রীতদাস মায়ছারাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রস্তাব দিলেন। বিবি খাদেজা একথাও বললেন যে অন্য লোকদের তিনি যে পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দিবেন। রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং বিবি খাদিজার ব্যবসায়িক পণ্য (তথা মসলাদী) তাঁর ক্রীতদাস মায়ছারাকে সাথে নিয়ে সিরিয়া গেলেন।