1 of 3

০৪০. কুরআন সম্পর্কে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার মন্তব্য

প্রবীণ কুরাইশ নেতা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার কাছে কুরাইশদের একটি দল সমবেত হলো। তখন হজ্জের মওসুম সমাগত। ওয়ালীদ বললো, “হে কুরাইশগণ, হজ্জের মওসুম সমাগত। আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তোমাদের এখানে লোক আসবে। আর মুহাম্মাদের কথা তারা ইতিমধ্যেই শুনেছে। সুতরাং তোমরা তার সম্পর্কে একটি সর্বসম্মত মত স্থির কর। এ ব্যাপারে তোমাদের মধ্যে যেন কোন রকম মতানৈক্য না থাকে। একজন একটা বলবে, আরেকজন তার কথা খ-ন করবে এমন যেন না হয়। তাহনে একজনের কথা আরেকজনের কথা দ্বারা মিথ্যা প্রমাণিত হবে।”

সবাই বললো, “তাহলে আপনিই একটা মত ঠিক করে দিন। আমরা সবাই সেই মতেরই প্রতিধ্বনি করবো।”ওয়ালীদ বললো, “বলো তোমারাই বলো, আমি শুনি।” সমবেত সবাই বললো, “আমরা বলবো, মাহাম্মাদ একজন গণক।” ওয়ালীদ বললো, “না, সে গণক নয়। আমরা অনেক গণককে দেখেছি। মাহাম্মাদের কথাবার্তা গণকের ছন্দবদ্ধ অস্পষ্ট কথার মত নয়।”

সবাই বললো, “তাহলে আমরা বলবো, মুহাম্মাদ পাগল।”

ওয়ালীদ বললো, “না, সে পাগলও নয়। আমরা অনেক পাগল দেখেছি, আর পাগলামী কাকে বলে তাও জানি। পাগলের কথাবার্তায় জড়তা ও অস্পষ্টতা থাকে, প্রবল ভাবাবেগের মূর্ছনা এবং সন্দেহ-সংশয়ে তা ভারাক্রান্ত থাকে। কিন্তু মুহাম্মাদের কথায় তা নেই।”

সবাই বললো, “তাহলে আমরা বলবো, সে একজন কবি।”

ওয়ালীদ বললো, “না সে কবিও নয়। আমরা সব ধরনের কবিতা সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু মুহাম্মাদের কথা কোন ধরনের কবিতার আওতায় পড়ে না।”

সবাই এবার বললো, “তাহলে আমরা বলবো, সে যাদুকর।” ওয়ালীদ বললো, “সে যাদুকরও নয়। আমরা যাদুকর ও যাদু অনেক দেখেছি। কিন্তু তাদের মত গিরা দেয়া ও গিরায় ফুঁক দেয়ার অভ্যাস মুহাম্মাদের নেই।” সবাই বললো, “তাহলে আপনি কি বলতে চান?”

ওয়ালীদ বললো, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মাহাম্মাদের কথা শুনতে বেশ মিষ্টি লাগে। তার গোড়া অত্যন্ত শক্ত এবং শাখা-প্রশাখা ফলপ্রসূ। তোমরা যে কথাই বলবে তা মথ্যিা বলে প্রতিপন্ন হবে। তবে সবচেয়ে উপযুক্ত কথা হবে তাকে যাদুকর বলা। কেনা সে এমনভাবে কথা বলে যা ভাইয়ে ভাইয়ে, স্বামী-স্ত্রীতে ও আত্মীয়-স্বজনের পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে যাদুর মতই কার্যকর। তাই তাকে যথার্থ যাদুই বলা চলে এর প্রভাবে জাতি বাস্তুবিকই বিভেদের শিকার হয়েছে।

এরপর হজ্জের মওসুমে লোকজনের আগমন শুরু হলে কুরাইশরা লোকজনের যাতায়াতের পথে জটলা করে বসে থাকতে লাগলো। আর যখনই কেউ তাদের পাশ দিয়ে যেতো তখনই তাকে বলতো মুহাম্মাদের সংস্পর্শ থেকে যেন সে সাবধান থাকে। আর তাকে তারা মুহাম্মাদের তৎপড়তা সম্পর্কেও অবহিত করতো। এই উপলক্ষে আল্লাহ ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা সম্পর্কে নাযিল করলেন,

“যাকে আমি একা সৃষ্টি করেছি তার সাথে বুঝাপড়ার দায়িত্ব আমার জন্য রেখে দাও। তাকে সৃষ্টি করার পর আমি অনেক সম্পদ দিয়ে সর্বক্ষণ পাশে থাকার মত অনেক পুত্র সন্তান দিয়েছি এবং তার নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছি। এরপরও যাতে তাকে আরো অধিক দান করি সেজন্য সে লালায়িত। তা কক্ষণো হবে না। সে আমার আয়াতসমূহের প্রতি অত্যন্ত বৈরীভাবাপন্ন।”

এরপর যার সাথেই দেখা হয়, তার কাছেই তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঐসব কথা বলতে লাগলো। হজ্জের মওসুম শেষে আরবরা যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো তখন তাদের মুখে কেবল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসঙ্গই আলোচিত হতে লাগলো। এভাবে আরবের প্রতিটি জনপদে তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়লো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *