1 of 3

০২৮. খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে বিয়ে

খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ ছিলেন তৎকালীন আরবের একজন সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মহিলা। তিনি লোকজনকে নির্দিষ্ট বেতনে ও লভ্যাংশের ভিত্তিতে ব্যবসায়ে নিয়োগ করতেন। ব্যবসায়ী গোত্র হিসেবে কুরাইশদের নাম-ডাক ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক মহত্ত্বের কথা জানতে পেরে তিনি তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁর পণ্যসামগ্যী নিয়ে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বললেন যে, এজন্য তিনি অন্যদেরকে যা গিয়ে থাকেন তার চেয়ে উত্তম সম্মানী তাঁকে দেবেন। মাইসারাহ নামক এক কিশোরকেও তাঁর সাহায্যের জন্য সঙ্গে দিতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং খাদীজার পণ্য সামগ্রী ও দাস মাইসারাহকে সাথে নিয়ে সিরিয়ায় রওয়ানা হলেন। অনতিবিলম্বে তিনি সিরিয়ায় গিয়ে পৌঁছলেন।

সিরিয়ায় পৌঁছে তিনি জনৈক ধর্মযাজকের গীর্জার নিকটবর্তী এক গাছের নীচে বিশ্রাম করলেন। ধর্মযাজক মাইসারাহকে জিজ্ঞেস করলেন, “গাছটির নীচে যিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি কে?” মাইসারাহ বললেন, “তিনি হারামের অধিবাসী জনৈক কুরাইশ বংশীয় ব্যক্তি।” ধর্মযাজক কললেন, “এই গাছের নীচে নবী ছাড়া আর কেউ কখনো বিশ্রাম নেয়নি!”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আনীত পণ্য বিক্রি করে দিলেন এবং নতুন কিছু জিনিস ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। পথে যেখানেই দুপুর হয় এবং প্রচ- রৌদ্র ওঠে, মাইসারাহ দেখতে পায় যে, দু’জন ফিরিশতা মুহাম্মাদকে ছায়া দিয়ে রৌদ্র থেকে রক্ষা করেছে এবং তিনি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে এগিয়ে চলেছেন। মক্কায় পৌঁছে তিনি খাদীজাকে তাঁর ক্রয় করা পণ্যদ্রব্য বুঝিয়ে দিলেন। খাদীজা ঐ মাল বিক্রি করে প্রয় দ্বিগুণ মুনাফা লাভ করলেন। মাইসারাহ খাদীজাকের যাজকের বক্তব্য ও নবীকে (সাঃ) দুই ফিরিশতার ছায়াদানের বিষয় অবহিত কললেন। খাদীজা ছিলেন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বুদ্ধিমতি ও সম্ভ্রান্ত মহিলা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহত্ত্ব ও সততার সাথে পরিচিত হওয়া তার জন্য একটা অতিরিক্ত সৌভাগ্য রূপে বিবেচিত হলো, যা নিছক আল্লাহর ইচ্ছাক্রমেই তিনি লাভ করলেন। মাইসারাহ কাছে উক্ত অলৌকিক ঘটনার কথা শুনে খাদীজা লোক পাঠিয়ে তাঁকে বললেন, “ভাই, আপনাদের গোত্রের মধ্যে আপনার যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান, যে আত্নীয়তার বন্ধন এবং সর্বোপরি আপনার বিশ্বস্ততা, চরিত্রমাধুর্য ও সত্যবাদিতার যে সুনাম রয়েছে, তাতে আমি মুগ্ধ এবং অভিভূত।” এই কথা বলে খাদীজা তাঁকে বিয়ে করার প্রন্তাব দেন। কুরাইশদের মধ্যে খাদীজা ছিলেন সর্বাপেক্ষা অভিজাত বংশীয়া, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সম্ভ্রান্ত এবং অতিশয় ধনাঢ্য মহিলা। এ কারণে সম্ভব হলে তাঁর গোত্রের সকলেই তাঁকে বিয়ে করার অভিলাষ পোষণ করতো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজার এ প্রস্তাব চাচাদেরকে জানালেন। চাচা হামযা খাদীজার পিতা খুয়াইলিদ ইবনে আসাদের (ইবনে আবদুল উযযা ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কা’ব ইবনে লুয়াই) সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেন এবং বিয়ে সম্পন্ন হলো।[১৬. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মোহরানা হিসেবে খাদীজাকে ২০ টি উট দিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম স্ত্রী এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিয়ে করেননি।]

খাদীজার গর্ভে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একমাত্র ইবরাহীম ছাড়া সব সন্তান জন্মে তাঁরা হলেন : কানিম, তাহির তাইয়েব, যয়নব, উম্মে কুলসুম ও ফাতিমা। কাসিমের নামানুসারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুল কাসিম নামেও খ্যাত হন। কাসিম ও তাহির জাহেলিাতের যুগেই মারা যান। কিন্তু মেয়েরা সবাই ইসলামের আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে পিতার সাথে হিজরাত করেন।[১৭. বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, তাহির ও তাইয়েব দুই ব্যক্তি। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো এ দুটোই আবদুল্লাহর উপনাম। তাঁকে এই দুই নেিমই ডাকা হতো।]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *