1 of 3

০১০. রাবিয়া ইবনে নসরের স্বপ্ন

রাজাদের মধ্যে ইয়ামানের রাবিয়া ইবনে নসর একজন দুর্বল পরাধীন রাজা ছিলেন।একবার তিনি একটা ভয়ংকর সপ্ন দেভে ভীষণভাবে ঘাবড়ে যান। তাঁর রাজ্যে যত গণক, যাদুকর, আয়েফ [৬. তৎকালে এক ধরনের গণক ছিল যারা পখির ডাক, গতিবিধি ইত্যাদি দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করতো। তাদেরকে বলা হতো আয়েফ।]

বা জ্যোতিষী ছিল তাদের সবাইকে তিনি সমবেত করে বলেন, “আমি এমন একটা স্বপ্ন দেখেছি যা আমাকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। তোমরা আমাকে বলবে আমি কি স্বপ্ন দেখেছি এবং তার ত’বীরই বা কি?” সমবেত জ্যোতিষীরা বললো, “সপ্নটা আমাদের কাছে বর্ণনা করুন। আমরা তার তাবীর বলবো।” রাজা বললেন, “স্বপ্নটা যদি আমি বলে দিই তাহলে তোমাদের তাবীরে আমি স্বস্তি বা প্রশান্তি লাভ করতে পারবো না। কেননা এই স্বপ্নের তা’বীর বা ব্যাখ্যা একমাত্র সে-ই করতে সক্ষম যে আমার বলার আগেই স্বপ্ন সম্পর্কেও বলতে সক্ষম।” জ্যোতিষীদের একজন বললো, ‘জাঁহাপনা, যদি এইভাবে স্বপ্নের তা’বীর জানতে চান তাহলে সাতীহ ও শেক্কে ডেকে পাঠান। কারণ তাদের চেয়ে পারদর্শী আর কেউ রনই। আপনি যা জানতে চান তা তারাই বলতে পারবে।”

রাজা ঐ দ’জন ভবিষ্যদ্বক্তাকে ডেকে পাঠালেন। প্রথমে রাজার দরবারে হাজির হলো সাতীহ। রাজা তাকে বললেন, “আমি এমন একটা স্বপ্ন দেখেছি যা আমাকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। তুমি বল আমি কি স্বপ্ন দেখেছি? তুমি যদি স্বপ্নটা সঠিকভাবে বলতে পার তাহলে তার ব্যাখ্যাও সঠিকভাবে করতে পারবে।”

সাতীহ বললো, “বেশ, আমি তাই করবো। আপনি স্বপ্নে দেখেছেন, অন্ধকারের ভেতর থেকে এক টুকরো আগুন বেরিয়ে এসে নিম্নভূমিতে নামলো এবং সেখানে যত প্রাণী ছিল, সবাইকে গ্রাস করলো।”

রাজা বললেন, ‘বাহ্! স্বপ্নটা তো তুমি সঠিকভাবেই বলে দিয়েছ। এখন বলতো এর তাৎপর্য কি?”

সে বললো, “দুই প্রস্তরময় দেশে বিরাজমান সমস্ত সাপের শপথ করে বলছি, আবিসিনিয়াবাসী আপনার ভূখন্ডে প্রবেশ করবে এবং সমগ্র ইয়ামান দখল করে নেবে।”রাজা বললেন, “হে সাতীহ, এটাতো ভীষণ বেদনাদায়ক ও ক্রোধোদ্দীপক ব্যাপার।

এটা কবে ঘটবে? আমার আমলেই, না আমার পরে।?”

সে বললো, “আপনার আমলের কিছু পরে, ষাট বা সত্তর বছরের বেশী অতিক্রান্ত হয়ে যাবে।” রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “এই ভূখন্ঠ কি চিরকালই তাদের অধিকারে থাকবে, না তাদের জবরদখলের অবসান ঘটবে?” সে বললো, “৭০ বছরের কিছু বেশীকাল উত্তীর্ণ হবার পর তাদের দখলের অবসান ঘটবে? তারপর তারা হয় নিহত হবে নয়তে পালিয়ে যাবে। রাজা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, “তাদেরকে কে হত্যা বা বহিষ্কার করবে?” সাতীহ বললো, “তারা নিহত বা বহিষ্কৃত হবে ইরাম ইবনে যীইয়াযানের হাতে। তিনি এডেন থেকে আবির্ভূত হবেন এবং ইয়ামানে তাদের একজনকেও অবশিষ্ট রাখবেন না।”

রাজা বললেন,“ইরামের আধিপত্য কি চিরস্থায়ী হবে না অস্থায়ী?”

সাতীহ বললো, “তাদের আধিপত্য অস্থায়ী হবে।”

রাজা বললেন, ’‘কার হাতে ক্ষমতার অবসান ঘটবে।?”

সাতীহ বললো,“এক পূত:পবিত্র নবীর হাতে। তিনি ঊর্ধজগত থেকে ওহী লাভ করবেন।”

রাজা বললেন, “এ নী কোন বংশোদ্ভূত?”

সাতীহ বললো,“তিনি নাদারের পুত্র মালেকের পুত্র ফিহির, ফিহিরের পুত্র গালেবের বংশ থেকে উদ্ভূত হবেন। তাঁর জাতির তাতে ক্ষমতা থাকবে বিশ্বজগতের বিলুপ্তি ঘটার মুহূর্ত পর্যন্ত।”

রাজা বললেন, “বিশ্বজগতের আবার শেষ আছে নাকি?”

সে বললো,“হ্যাঁ, যেদিন পৃথিবীর প্রথম মানবগন ও শেষ মানবগণ একত্রিত হবে। যারা সৎকর্মশীল তারা সুখী হবে, আর যারা অসৎকর্মশীল তারা দুঃখ ভোগ করবে।”

রাজা বললেন,“তোমার ভবিষ্যদ্বাণী কি সত্য?”

সে বললো, “হ্যাঁ, রাতের অন্ধকার ও ঊষার আলোর শপথ, সুবিন্যস্ত প্রভাতের শপথ, আমি যা বলেছি তা পুরোপুরি সত্য।”

এরপর শেক এসে পৌঁছলো রাজার দরবারে। সাহীহকে রাজা যা যা বলেছিলেন শেককেও তাই বললেন। কিন্তু সাতীহ যা বলেছে তা তাকে জানতে দিলেন না- তারা উভয়ে একই ধরনের ভবিস্যদ্বাণী করে, না ভিন্ন রকমের, তা দেখবার জন্য তিনি ব্যাপারটা গোপন করলেন।

শেক বললো, “আপনি স্বপ্নে দেখেছেনে, অন্ধকার থেকে এবটি অগ্নিশিখা বেরিয়ে এলো। সেটা একটা পর্বত ও একটা বাগানের মাঝখানে পতিত হলো। অতঃপর সেখানকার সকল প্রণীকে গ্রাস করলো।”

রাজা বুঝতে পারলেন যে, উভয়ের বক্তব্য অভিন্ন। শুধু এতটুকু পার্থক্য যে সাতীহ বলেছিল, টুকরোটা নিম্নভূমিতে নামলো। আর শেক বলেছে, একটি পর্বত ও একটি বাগানের মাঝখানে নামলো। অতঃপর তিনি শেককে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ। এবার বল এর তাবীর কি?”

সে বললো,“ দুই পর্বতাকীর্ণ দেশের সমস্ত মানুষের শপথ করে বলছি, আপনার দেশে সুদানীরা আক্রমণ চালাবে এবং সব দুর্বল লোক তাদের অঙ্গুলী হেলনে চলতে বাধ্য হবে। তারা আবইয়ান থেকে নাজরান পর্বত সমগ্র ভূখ-ের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে।”

রাজা বললেন, “এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও ক্রোধোদ্দীপক ব্যাপার। এ ঘটনা কবে ঘটবে? আমার জীবদ্দশাতেই, না আরো পরে?”

সে বললো, “আপনার পরে বেশ কিছুকাল অতিক্রান্ত হবার পর। এরপর একজন পরাক্রমশালী ব্যক্তি আপনাদেরকে উদ্ধার করবে এবং হানাদারদেরকে ভীষণভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে বিতাড়িত করবে।”

রাজা বললেন, “এই পরাক্রমশালী ব্যক্তি কে?”

সে বললো, “একজন যুবক, যিনি নগণ্য বা নীচাশয় নয়। যী-ইয়াযানের বাড়ী থেকে তার অভ্যুদয় ঘটবে। তিনে হানাদারদের একজনকেও ইয়ামানে টিকতে দেবেন না।”

রাজা বললেন, “এই ব্যক্তির শাসন কি চিরস্থায়ী হবে না ক্ষণস্থায়ী?”

শেক বললো একজন প্রেরিত রাসূলের আগমনে তার শাসনের অবসান ঘটবে-যিনি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন, ধার্মিক ও সজ্জনদের সমভিব্যাহারে আসবেন, তাঁর জাতির শাসন চলবে কিয়ামত পর্যন্ত।”

রাজা বললেন, “কিয়ামত কি?”

সে বললো,“যেদিন শাসকদের বিচার হবে, আকাশ থেকে আহ্বান আসবে, সে আহ্বান জীবিত ও মৃত সকলেই শুনতে পাবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। সেদিন মিতাচারী লোকদের জন্য হবে সাফল্য ও কল্যাণ।”

রাজা বললেন, “তুমি যা বলেছো তা বি সত্য?”

সে বললো,“হ্যাঁ, আকাশ ও পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সকল সমতল ও অসমতল সব কিছুর রবের শপথ করে বলছি, আমি আপনার কাছে যে ভবিষ্যদ্বাণী করলাম তা সঠিক ও সন্দেহাতীত।”

রাবিয়া এই দুই ভবিষ্যদ্বক্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করলেন এবং স্বীয় পরিবার পরিজনকে প্রয়োজনীয় পাথেয় দিয়ে ইরাক পাঠিয়ে দিলেন। তারপর পারস্যের তৎকালীন সম্রাট শাপুর ইবনে খুরযাদকে চিঠি লিখে পাঠালেন। শাপুর তাদেরকে হিরাতে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দিলেন।

 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *