১.৮ যৌবনের প্রারম্ভে

প্রথম খণ্ডঅষ্টম অধ্যায়: যৌবনের প্রারম্ভে

রামকুমারের কলিকাতায় টোল খোলা

পত্নী পরলোকে গমন করিলেন, কিন্তু রামকুমারের দুঃখ দুর্দিনের অবসান হইল না। বিদায়-আদায় কমিয়া যাওয়ায় অর্থের অভাবে তাঁহার সাংসারিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হইতে লাগিল। লক্ষ্মীজলার জমিখণ্ডে পর্যাপ্ত ধান্য এখনও উৎপন্ন হইলেও বস্ত্রাদি অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পদার্থসকলের অভাব সংসারে প্রতিদিন বাড়িয়া যাইতে লাগিল। তদুপরি তাঁহার বৃদ্ধা মাতার ও মাতৃহীন শিশু অক্ষয়ের জন্য এখন নিত্য দুগ্ধের প্রয়োজন। সুতরাং ঋণ করিয়া ঐসকল প্রয়োজন সাধিত হইতে লাগিল এবং ঋণজালের প্রতিদিন বৃদ্ধি ভিন্ন হ্রাস হইল না। অশেষ চিন্তা ও নানা উপায় অবলম্বন করিয়াও রামকুমার উহার প্রতিরোধে অসমর্থ হইলেন। তখন বন্ধুবর্গের পরামর্শে অন্যত্র গমন করিলে আয়বৃদ্ধির সম্ভাবনা বুঝিয়া তিনি তাহার জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। তাঁহার শোকসন্তপ্ত মনও উহাতে সাহ্লাদে সম্মতিদান করিল। কারণ, প্রায় ত্রিশ বৎসরকাল যাঁহাকে জীবনসঙ্গিনী করিয়া সংসার পাতিয়াছিলেন, তাঁহার স্মৃতি যে গৃহের সর্বত্র বিজড়িত রহিয়াছে, সেই গৃহ হইতে দূরে থাকিলেই এখন শান্তিলাভের সম্ভাবনা। সুতরাং কলিকাতা বা বর্ধমান কোথায় যাইলে অধিক অর্থাগমের সম্ভাবনা, এই বিষয়ে পরামর্শ চলিতে লাগিল। পরিশেষে স্থির হইল প্রথমোক্ত স্থানে যাওয়াই কর্তব্য; কারণ, সিহড়গ্রামের মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেশড়ার রামধন ঘোষ প্রভৃতি তাঁহার পরিচিত অনেক ব্যক্তি কলিকাতায় যাইয়া উপার্জনের সুবিধালাভ করিয়া নিজ নিজ সংসারের বেশ শ্রীবৃদ্ধিসাধন করিয়াছে – একথা তাঁহার বন্ধুগণ নির্দেশ করিতে লাগিলেন। ঐসকল ব্যক্তি যে তাঁহা অপেক্ষা বিদ্যা, বুদ্ধি ও চরিত্রবলে অনেকাংশে হীন, একথাও তাঁহারা তাঁহাকে বলিতে ভুলিলেন না। সুতরাং পত্নীবিয়োগের স্বল্পকাল পরেই শ্রীযুক্ত রামকুমার রামেশ্বরের উপর সংসারের ভারার্পণ করিয়া কলিকাতায় আগমন করিলেন এবং ঝামাপুকুর নামক পল্লীর ভিতর টোল খুলিয়া ছাত্রগণকে অধ্যয়ন করাইতে নিযুক্ত হইলেন।

রামকুমারপত্নীর মৃত্যুতে পারিবারিক পরিবর্তন

রামকুমারের পত্নীর মৃত্যুতে কামারপুকুরের পারিবারিক জীবনে অনেক পরিবর্তন উপস্থিত হইল। শ্রীমতী চন্দ্রা ঐ ঘটনায় গৃহকর্মের সমস্ত ভার পুনরায় গ্রহণ করিতে বাধ্য হইলেন। রামকুমার-পুত্র অক্ষয়ের লালনপালনের ভারও ঐদিন হইতে তাঁহার স্কন্ধে নিপতিত হইল। তাঁহার মধ্যম পুত্র রামেশ্বরের পত্নী তাঁহাকে ঐসকল কর্মে যথাসাধ্য সাহায্য করিতে লাগিল; কিন্তু সে তখনও নিতান্ত বালিকা, তাহার নিকট হইতে বিশেষ সাহায্য পাইবার সম্ভাবনা ছিল না। সুতরাং ৺রঘুবীরের সেবা, অক্ষয়ের লালনপালন এবং রন্ধনাদি গৃহকর্ম সকলই তাঁহাকে এখন করিতে হইত। ঐসকল কর্ম সম্পন্ন করিতে তাঁহার সমস্ত দিন কাটিয়া যাইত, বিশ্রামের জন্য তিলার্ধ অবসর থাকিত না। আটান্ন বৎসর বয়ঃক্রমে সংসারের সমস্ত ভার ঐরূপে স্কন্ধে লওয়া সুখসাধ্য না হইলেও শ্রীশ্রীরঘুবীরের ঐরূপ ইচ্ছা বুঝিয়া চন্দ্রাদেবী উহা বিনা অভিযোগে বহন করিতে লাগিলেন।

রামেশ্বরের কথা

অন্যদিকে সংসারের আয়ব্যয়ের ভার শ্রীযুক্ত রামেশ্বরের উপর এখন হইতে নিপতিত হওয়ায় তিনি কিরূপে উপার্জন করিয়া পরিবারবর্গকে সুখী করিতে পারিবেন তদ্বিষয়ে চিন্তায় ব্যাপৃত রহিলেন; কিন্তু কৃতবিদ্য হইলেও তিনি কোনকালে বিশেষ উপার্জনক্ষম হইয়াছিলেন বলিয়া আমরা শ্রবণ করি নাই। তদুপরি পরিব্রাজক সাধু ও সাধকগণকে দেখিতে পাইলে তিনি তাঁহাদিগের সঙ্গে অনেককাল অতিবাহিত করিতেন এবং তাঁহাদিগের কোনরূপ অভাব দেখিলে উহা মোচন করিতে অনেক সময়ে অতিরিক্ত ব্যয় করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না। সুতরাং আয়-বৃদ্ধি হইলেও তাঁহার দ্বারা সংসারের ঋণ-পরিশোধ অথবা বিশেষ সচ্ছলতা সম্পাদিত হইল না। কারণ, সংসারী হইলেও তিনি সঞ্চয়ী হইতে পারিলেন না এবং সময়ে সময়ে আয়ের অধিক ব্যয় করিয়া ‘৺রঘুবীর কোনরূপে চালাইয়া দিবেন’ ভাবিয়া দিনাতিপাত করিতে লাগিলেন।

গদাধরের সম্বন্ধে রামেশ্বরের চিন্তা

কনিষ্ঠ ভ্রাতা গদাধরকে প্রাণের সহিত ভালবাসিলেও শ্রীযুক্ত রামেশ্বর তাহার শিক্ষাদি অগ্রসর হইতেছে কি-না, তদ্বিষয়ে কোনকালে লক্ষ্য করিতেন না। কারণ, একে ঐরূপ করা তাঁহার প্রকৃতির বিরুদ্ধ ছিল, তদুপরি অর্থচিন্তায় তাঁহাকে নানা স্থানে যাতায়াত করিতে হইত। সুতরাং ঐ বিষয় লক্ষ্য করিতে তাঁহার ইচ্ছা ও সময় উভয় বস্তুরই এখন অভাব হইয়াছিল। আবার এই অল্প বয়সেই বালকের ধর্মপ্রবৃত্তির অদ্ভুত পরিণতি দেখিয়া তাঁহার দৃঢ় ধারণা হইয়াছিল, তাহার প্রকৃতি তাহাকে সুপথে ভিন্ন কখনও কুপথে পরিচালিত করিবে না। পল্লীর নরনারীসকলকে তাহার উপর প্রগাঢ় বিশ্বাস স্থাপন করিতে এবং তাহাকে পরমাত্মীয়বোধে ভালবাসিতে দেখিয়া তাঁহার ঐ ধারণা বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল। কারণ, তিনি বুঝিতেন বিশেষ সৎ ও উদারচরিত্র না হইলে কেহ কখন সংসারে সকল ব্যক্তির চিত্তাকর্ষণ করিয়া তাহাদিগের প্রশংসাভাজন হইতে পারে না। সেজন্য বালকের সম্বন্ধে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কল্পনাপূর্বক তাঁহার হৃদয় আনন্দিত হইয়া উঠিত এবং তিনি সর্বদা নিশ্চিন্ত থাকিতেন। সুতরাং রামকুমারের কলিকাতায় গমনকালে গদাধর ত্রয়োদশ বর্ষে পদার্পণ করিয়া একপ্রকার অভিভাবকশূন্য হইয়া পড়িল এবং তাহার উন্নত প্রকৃতি তাহাকে যেদিকে ফিরাইতে লাগিল, সে এখন অবাধে সে-পথেই চলিতে লাগিল।

গদাধরের মনের বর্তমান অবস্থা কার্যকলাপ

আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়াছি গদাধরের সূক্ষ্মদৃষ্টি তাহাকে এই অল্প বয়সেই প্রত্যেক ব্যক্তির ও কার্যের উদ্দেশ্য লক্ষ্য করিতে শিখাইয়াছিল। সুতরাং অর্থলাভে সহায়তা হইবে বলিয়াই যে পাঠশালায় বিদ্যাভ্যাসে এবং টোলে উপাধি-ভূষিত হইতে লোকে সচেষ্ট হয়, ইহা বুঝিতে তাহার বিলম্ব হয় নাই। আবার, অশেষ আয়াস স্বীকারপূর্বক সেই অর্থ উপার্জন ও উহার দ্বারা সাংসারিক ভোগসুখ লাভ করিয়া লোকে তাহার পিতার ন্যায় সত্যনিষ্ঠা, চরিত্রবল এবং ধর্মলাভে সক্ষম হয় না, ইহাও সে দিন দিন দেখিতে পাইতেছিল। গ্রামের কোন কোন পরিবারস্থ ব্যক্তিগণ স্বার্থসুখে অন্ধ হইয়া বিষয়সম্পত্তি লইয়া পরস্পর বিবাদ ও মামলা-মকদ্দমা উত্থাপনপূর্বক গৃহ ও ক্ষেত্রাদিতে দড়ি ফেলিয়া ‘এই দিকটা আমার, ঐ দিকটা উহার’ ইত্যাদি অদ্য নিরূপণ করিয়া লইয়া কয়েক দিন ঐ বিষয় ভোগ করিতে না করিতেই শমনসদনে চলিয়া যাইল – ঐরূপ দৃষ্টান্তসকল কখনও কখনও অবলোকন করিয়া বালক বিশেষরূপে বুঝিয়াছিল, অর্থ ও ভোগলালসা মানবজীবনের অনেক অনর্থ উপস্থিত করে। সুতরাং অর্থকরী বিদ্যার্জনে সে যে এখন দিন দিন উদাসীন হইবে এবং পিতার ন্যায় ‘মোটা-ভাত-কাপড়ে’ সন্তুষ্ট থাকিয়া ঈশ্বরের প্রীতিলাভকে মনুষ্য-জীবনের সারোদ্দেশ্য বলিয়া বুঝিবে, ইহা বিচিত্র নহে। সেজন্য বয়স্যদিগের প্রতি প্রেমে গদাধর পাঠশালায় প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন সময়ে যাইলেও ৺রঘুবীরের সেবাপূজায় ও গৃহকর্মে সাহায্যদানপূর্বক মাতার পরিশ্রমের লাঘব করিয়া এখন হইতে তাহার অধিককাল অতিবাহিত হইতে লাগিল। ঐসকল বিষয়ে ব্যাপৃত হইয়া বেলা তৃতীয় প্রহর পর্যন্ত তাহাকে এখন প্রায়ই বাটীতে থাকিতে হইত।

পল্লীরমণীগণের নিকটে গদাধরের পাঠ সঙ্কীর্তনাদি

গদাধর ঐরূপে বাটীতে অধিককাল অতিবাহিত করায় পল্লীরমণীগণের তাহার সহিত মিলিত হইবার বিশেষ সুযোগ উপস্থিত হইয়াছিল। কারণ, গৃহকর্ম সমাপন করিয়া তাঁহাদিগের অনেকে অবসরকালে শ্রীমতী চন্দ্রার নিকটে উপস্থিত হইতেন এবং বালককে তথায় দেখিতে পাইয়া কখনও গান করিতে এবং কখনও ধর্মোপাখ্যানসকল পাঠ করিতে অনুরোধ করিতেন। বালকও তাঁহাদিগের ঐসকল অনুরোধ যথাসাধ্য পালন করিতে যত্নপর হইত। চন্দ্রাদেবীকে গৃহকর্মে সাহায্য করিবার জন্য তাহার অবসরের অভাব দেখিলে তাঁহারা আবার সকলে মিলিয়া শ্রীমতী চন্দ্রার কর্মসকল করিয়া দিয়া তাহার মুখে পুরাণকথা ও সঙ্গীতাদি শুনিবার অবসর করিয়া লইতেন। ঐরূপে তাঁহাদের নিকটে কিছুক্ষণ পাঠ ও সঙ্গীত করা গদাধরের নিত্যকর্মের মধ্যে অন্যতম হইয়া উঠিয়াছিল। রমণীগণও উহাতে এত আনন্দ অনুভব করিতেন যে, উহা অধিকক্ষণ শুনিবার আশায় তাঁহারা এখন হইতে নিজ নিজ গৃহকর্মসকল শীঘ্র শীঘ্র সমাপ্ত করিয়া চন্দ্রাদেবীর নিকটে উপস্থিত হইতে লাগিলেন।

গদাধর ইঁহাদের নিকটে সুদ্ধ পুরাণপাঠমাত্রই করিত না, কিন্তু অন্য নানা উপায়ে ইঁহাদিগের আনন্দ সম্পাদন করিত। গ্রামে ঐ সময়ে তিনদল যাত্রা, একদল বাউল এবং দুই-এক দল কবি ছিল। তদ্ভিন্ন বহু বৈষ্ণব এখানে বসতি করায় অনেক গৃহেই প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে ভাগবতপাঠ ও সঙ্কীর্তনাদি হইত। বাল্যকাল হইতে শ্রবণ করায় এবং নিজ স্বভাবসিদ্ধ প্রতিভায় ঐসকল দলের পালা, গান ও সঙ্কীর্তনসকল গদাধরের আয়ত্ত ছিল। সেজন্য রমণীগণের আনন্দবর্ধন করিতে সে কোনদিন যাত্রার পালা, কোন দিন বাউলের গীতাবলী, কোনদিন কবি এবং কোনদিন বা সঙ্কীর্তন আরম্ভ করিত। যাত্রার পালা বলিবার কালে সে ভিন্ন ভিন্ন স্বরে বিভিন্ন ভূমিকায় কথাসকল উচ্চারণপূর্বক একাকীই সকল চরিত্রের অভিনয় করিত। আবার নিজ জননী বা রমণীগণের মধ্যে কাহাকেও কোনদিন বিমর্ষ দেখিলে সে ঐসকল যাত্রার সঙের পালা অথবা সকলের পরিচিত গ্রামের কোন ব্যক্তির বিচিত্র আচরণ ও হাবভাবের এমন স্বাভাবিক অনুকরণ করিত যে, তাঁহাদিগের মধ্যে হাস্য ও কৌতুকের তরঙ্গ ছুটিত।

পল্লীরমণীগণের গদাধরের প্রতি ভক্তি বিশ্বাস

সে যাহা হউক, গদাধর ঐরূপে ইঁহাদিগের হৃদয়ে ক্রমে অপূর্ব প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল। বালকের জন্মগ্রহণকালে তাহার জনক-জননী যে-সকল অদ্ভুত স্বপ্ন ও দিব্যদর্শন লাভ করিয়াছিলেন, সে সকলের কথা ইঁহারা ইতিপূর্বেই শুনিয়াছিলেন। আবার দেবদেবীর ভাবাবেশে সময়ে সময়ে তাহার যেরূপ অদৃষ্টপূর্ব অবস্থান্তর উপস্থিত হয়, তাহাও তাঁহারা স্বচক্ষে দর্শন করিয়াছিলেন। সুতরাং তাহার জ্বলন্ত দেবভক্তি, তন্ময় হইয়া পুরাণপাঠ, মধুর কণ্ঠে সঙ্গীত এবং তাঁহাদিগের প্রতি আত্মীয়ের ন্যায় সরল উদার আচরণ যে তাঁহাদিগের কোমল হৃদয়ে এমন অপূর্ব ভক্তি-ভালবাসার উদয় করিবে, ইহা বিচিত্র নহে। আমরা শুনিয়াছি, ধর্মদাস লাহার কন্যা প্রসন্নময়ীপ্রমুখ বর্ষীয়সী রমণীগণ বালকের ভিতরে বালগোপালের দিব্য প্রকাশ অনুভব করিয়া তাহাকে পুত্রের অধিক স্নেহ করিতেন এবং তদপেক্ষা স্বল্পবয়স্কা রমণীগণ তাহাকে ঐরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশসম্ভূত বলিয়া বিশ্বাস করিয়া তাহার সহিত সখ্যভাবে সম্বদ্ধা হইয়াছিলেন। রমণীগণের অনেকেই বৈষ্ণববংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন এবং সরল কবিতাময় বিশ্বাসই তাঁহাদিগের ধর্মজীবনের প্রধান অঙ্গ ছিল; সুতরাং অশেষগুণসম্পন্ন প্রিয়দর্শন বালককে দেবতা বলিয়া বিশ্বাস করা তাঁহাদিগের পক্ষে বিচিত্র ছিল না। সে যাহা হউক, ঐরূপ বিশ্বাসে তাঁহারা এখন গদাধরের সহিত মিলিতা হইয়া তাহাকে নিঃসঙ্কোচে আপনাপন মনের কথা খুলিয়া বলিতেন এবং অনেক বিষয়ে তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিয়া উহা কার্যে পরিণত করিতে চেষ্টা করিতেন। গদাধরও তাঁহাদিগের সহিত এমনভাবে মিলিত হইত যে, অনেক সময়ে তাহাকে তাঁহাদিগের রমণী বলিয়া মনে হইত।1


1. সম্পূর্ণরূপে রমণীগণের ন্যায় হইবার বাসনা শ্রীযুক্ত গদাধরের প্রাণে এই কালে কত প্রবল হইয়াছিল, তাহাসাধকভাব‘ – চতুর্দশ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ কথা হইতে পাঠক সবিশেষ জানিতে পারিবেন।

রমণীবেশে গদাধর

গদাধর কখন কখন রমণীর বেশভূষা ধারণ করিয়া তাঁহাদিগের নিকটে বিশেষ বিশেষ নারীচরিত্রের অভিনয় করিত। ঐরূপে শ্রীমতী রাধারানীর অথবা তাঁহার প্রধানা সখী বৃন্দার ভূমিকা গ্রহণ করিবার কালে তাঁহারা তাহাকে অনেক সময় রমণীর বেশভূষায় সজ্জিত হইতে অনুরোধ করিতেন। বালকও তাঁহাদিগের ঐ অনুরোধ রক্ষা করিত। ঐ সময়ে তাহার হাবভাব, কথাবার্তা, চালচলন প্রভৃতি অবিকল নারীর ন্যায় হইত। রমণীগণ উহা দেখিয়া বলিতেন, নারী সাজিলে গদাধরকে পুরুষ বলিয়া কেহই চিনিতে পারে না। উহাতে বুঝিতে পারা যায়, বালক নারীগণের প্রত্যেক কার্য কত তন্ন তন্ন করিয়া ইতিপূর্বে লক্ষ্য করিয়াছিল। রঙ্গপ্রিয় বালক এই সময়ে কোন কোন দিন রমণীর ন্যায় বেশভূষা করিয়া কক্ষে কলসী ধারণপূর্বক পুরুষদিগের সম্মুখ দিয়া হালদারপুকুরে জল আনয়নে গমন করিয়াছিল এবং কেহই তাহাকে ঐ বেশে চিনিতে পারে নাই।

সীতানাথ পাইনের পরিবারবর্গের সহিত গদাধরের সৌহৃদ্য

গ্রামের ধনী গৃহস্থ সীতানাথ পাইনদের কথা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করিয়াছি। সীতানাথের সাত পুত্র ও আট কন্যা ছিল এবং কন্যাগণ বিবাহের পরেও সীতানাথের ভবনে একান্নে অবস্থান করিতেছিল। শুনা যায়, সীতানাথের বহু গোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিন দশখানি শিলে বাটনা বাটা হইত, রন্ধনকার্যে এত মসলার প্রয়োজন হইত! তদ্ভিন্ন সীতানাথের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়বর্গের অনেকে আবার তাঁহার বাটীর পার্শ্বে বাটী করিয়া বাস করিয়াছিল। সেজন্য কামারপুকুরের এই অংশ বণিকপল্লী নামে প্রসিদ্ধ ছিল এবং উহা ক্ষুদিরামের বাটীর সন্নিকটে থাকায় বণিক রমণীগণের অনেকে চন্দ্রাদেবীর নিকটে অবসরকালে উপস্থিত হইতেন, বিশেষতঃ, আবার সীতানাথের স্ত্রী ও কন্যাগণ। সুতরাং গদাধরের সহিত ইঁহাদের এখন বিশেষ সৌহৃদ্য উপস্থিত হইয়াছিল। ইঁহারা বালককে অনেক সময়ে নিজ ভবনে লইয়া যাইতেন এবং রমণী সাজিয়া পূর্বোক্তভাবে অভিনয়াদি করিতে অনুরোধ করিতেন। অভিভাবকগণের নিষেধে তাঁহাদিগের আত্মীয়া রমণীগণের অনেকে তাঁহাদিগের বাটী ভিন্ন অন্যত্র যাইতে পারিতেন না এবং সেজন্য গদাধরের পাঠ ও সঙ্গীতাদি শ্রবণ করা তাঁহাদিগের ভাগ্যে ঘটিত না বলিয়াই বোধ হয় তাঁহারা বালককে ঐরূপে নিজ ভবনে যাইতে নিমন্ত্রণ করিতেন। ঐরূপে যাঁহারা চন্দ্রাদেবীর নিকটে যাইতেন না, বণিকপল্লীর ভিতরে এমন অনেক রমণীও গদাধরের ভক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন এবং সে সীতানাথের ভবনে উপস্থিত হইলে তাঁহারা লোকমুখে সংবাদ পাইয়া তথায় আগমনপূর্বক তাহার পাঠশ্রবণে ও অভিনয়াদিদর্শনে আনন্দ উপভোগ করিতেন। বাটীর কর্তা সীতানাথ গদাধরকে বিশেষরূপে ভালবাসিতেন এবং বণিকপল্লীর অন্যান্য পুরুষেরাও তাহার সদ্গুণসকলের সহিত পরিচিত ছিলেন। সেজন্য তাঁহাদিগের রমণীগণ তাহার নিকটে ঐরূপে সঙ্গীত-সঙ্কীর্তনাদি শ্রবণ করেন জানিয়াও তাঁহারা উহাতে আপত্তি করিতেন না।

বণিকপল্লীর দুর্গাদাস পাইন নামক এক ব্যক্তি কেবল ঐ বিষয়ে আপত্তি করিতেন এবং গদাধরকে স্বয়ং শ্রদ্ধা ভক্তি করিলেও অন্দরের কঠোর অবরোধপ্রথা কাহারও জন্য কোন কালে শিথিল হইতে দিতেন না। তাঁহার অন্তঃপুরের কথা কেহ জানিতে সক্ষম নহে এবং তাঁহার বাটীর রমণীগণকে কেহ কখনও অবলোকন করে নাই বলিয়া তিনি সীতানাথ-প্রমুখ তাঁহার আত্মীয়বর্গের নিকট সময়ে সময়ে অহঙ্কারও করিতেন। ফলতঃ, সীতানাথ-প্রমুখ ব্যক্তিগণ তাঁহার ন্যায় কঠোর অবরোধপ্রথার পক্ষপাতী ছিলেন না বলিয়া তিনি তাঁহাদিগকে হীন জ্ঞান করিতেন।

দুর্গাদাস পাইনের অহঙ্কার চূর্ণ হওয়া

দুর্গাদাস একদিন তাঁহার কোন আত্মীয়ের নিকটে ঐরূপে অহঙ্কার করিতেছিলেন, এমন সময়ে গদাধর তথায় উপস্থিত হইয়া ঐ বিষয় শ্রবণপূর্বক বলিল, “অবরোধ-প্রথার দ্বারা রমণীগণকে কখন কি রক্ষা করা যায়? সৎশিক্ষা ও দেবভক্তি-প্রভাবেই তাঁহারা সুরক্ষিতা হন; ইচ্ছা করিলে আমি তোমার অন্দরের সকলকে দেখিতে ও সমস্ত কথা জানিতে পারি।” দুর্গাদাস তাহাতে অধিকতর অহঙ্কৃত হইয়া বলিলেন, “কেমন জানিতে পার, জান দেখি?” গদাধরও তাহাতে ‘আচ্ছা দেখা যাইবে’ বলিয়া সেদিন চলিয়া আসিল। পরে একদিন অপরাহ্ণে কাহাকেও কিছু না বলিয়া বালক মোটা মলিন একখানি শাড়ি ও রূপার পৈঁছা প্রভৃতি পরিয়া দরিদ্রা তন্তুবায়-রমণীর ন্যায় বেশধারণপূর্বক একটি চুবড়ি কক্ষে লইয়া ও অবগুণ্ঠনে মুখ আবৃত করিয়া সন্ধ্যার প্রাক্কালে হাটের দিক হইতে দুর্গাদাসের ভবন-সম্মুখে উপস্থিত হইল। দুর্গাদাস বন্ধুবর্গের সহিত তখন বহির্বাটীতেই বসিয়াছিলেন। রমণীবেশধারী গদাধর তাঁহাকে তন্তুবায়-রমণী গ্রামান্তর হইতে হাটে সূতা বেচিতে আসিয়া সঙ্গিনীগণ ফেলিয়া যাওয়ায় বিপন্না বলিয়া নিজ পরিচয় প্রদান করিল এবং রাত্রির জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করিল। দুর্গাদাস তাহাতে তাহার কোন্ গ্রামে বাস ইত্যাদি দুই-একটি প্রশ্ন করিয়া উত্তরশ্রবণানন্তর বলিলেন, “আচ্ছা, অন্দরে স্ত্রীলোকদিগের নিকটে যাইয়া আশ্রয় লও।” গদাধর তাহাতে তাঁহাকে প্রণামপূর্বক কৃতজ্ঞতা জানাইয়া অন্দরে প্রবেশ করিল এবং রমণীগণকে পূর্বের ন্যায় আত্মপরিচয় প্রদানপূর্বক নানাবিধ বাক্যালাপে পরিতুষ্টা করিল। তাহার স্বল্প বয়স দেখিয়া এবং মধুর বাক্যে প্রসন্ন হইয়া দুর্গাদাসের অন্তঃপুরচারিণীরা তাহাকে থাকিতে দিলেন এবং তাহার বিশ্রামের স্থান নিরূপণ করিয়া দিয়া জলযোগ করিবার জন্য মুড়ি-মুড়কি প্রভৃতি প্রদান করিলেন। গদাধর তখন নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়া উহা ভক্ষণ করিতে করিতে অন্দরের সকল ঘর ও প্রত্যেক রমণীকে তন্ন তন্ন করিয়া লক্ষ্য করিতে এবং তাঁহাদিগের পরস্পরের বাক্যালাপ শ্রবণ করিতে লাগিল। তাঁহাদিগের বাক্যালাপে মধ্যে মধ্যে যোগদান এবং প্রশ্নাদি করিতেও সে ভুলিল না। ঐরূপে প্রায় এক প্রহর রাত্রি অতীত হইল। এদিকে এত রাত্রি হইলেও সে গৃহে ফিরিল না দেখিয়া চন্দ্রাদেবী রামেশ্বরকে তাহার অনুসন্ধানে প্রেরণ করিলেন এবং বণিকপল্লীতে সে প্রায় যাইয়া থাকে জানিয়া তাহাকে তথায় অন্বেষণ করিতে বলিয়া দিলেন। রামেশ্বর সেজন্য প্রথমে সীতানাথের বাটীতে উপস্থিত হইয়া জানিলেন, বালক তথায় আসে নাই। অনন্তর দুর্গাদাসের ভবনের নিকট উপস্থিত হইয়া তাহার নাম ধরিয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিলেন। তাঁহার স্বর শুনিতে পাইয়া গদাধর অধিক রাত্রি হইয়াছে বুঝিয়া দুর্গাদাসের অন্দর হইতে ‘দাদা, যাচ্ছি গো’ বলিয়া উত্তর দিয়া দ্রুতপদে তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইল। দুর্গাদাস তখন সকল কথা বুঝিলেন এবং বালক তাঁহাকে ও তাঁহার পরিবারবর্গকে প্রতারণা করিতে সক্ষম হইয়াছে ভাবিয়া প্রথমে অপ্রতিভ ও কিছু রুষ্ট হইলেও পরক্ষণেই তাহার দরিদ্রা তন্তুবায়-রমণীর বেশ ও চালচলনের অনুকরণ কতদূর স্বাভাবিক হইয়াছে ভাবিয়া হাসিতে লাগিলেন। সীতানাথ প্রমুখ দুর্গাদাসের আত্মীয়েরা পরদিন ঐ কথা জানিতে পারিয়া গদাধরের নিকটে তাঁহার অহঙ্কার চূর্ণ হইয়াছে বলিয়া আনন্দ করিতে লাগিলেন। এখন হইতে সীতানাথের ভবনে বালক উপস্থিত হইলে দুর্গাদাসের অন্তঃপুরচারিণীরাও তাহার নিকটে আসিতে লাগিলেন।

বণিকপল্লীর রমণীগণের গদাধরের প্রতি ভক্তিবিশ্বাস

সীতানাথের পরিবারবর্গ এবং বণিকপল্লীর অন্যান্য রমণীগণ ক্রমে গদাধরের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। বালক তাঁহাদিগের নিকটে কিছুদিন না আসিলেই তাঁহারা তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইতেন। সীতানাথের ভবনে পাঠ ও সঙ্গীতাদি করিবার কালে গদাধরের কখন কখন ভাবাবেশ উপস্থিত হইত। তদ্দর্শনে রমণীগণের তাহার প্রতি ভক্তি বিশেষ প্রবৃদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল। আমরা শুনিয়াছি, ঐরূপ ভাবসমাধিকালে তাঁহাদিগের অনেকে বালককে ভগবান শ্রীগৌরাঙ্গ বা শ্রীকৃষ্ণের জীবন্ত বিগ্রহজ্ঞানে পূজা করিয়াছিলেন এবং অভিনয়কালে তাহার সহায়তা হইবে বলিয়া তাঁহারা একটি সুবর্ণনির্মিত মুরলী এবং স্ত্রী ও পুরুষ-চরিত্রের অভিনয়-উপযোগী বিবিধ পরিচ্ছদ প্রস্তুত করাইয়াছিলেন।

ধর্মপ্রবণ, পূতস্বভাব, তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও প্রত্যুত্পন্নমতি এবং সপ্রেম, সরল ও অমায়িক ব্যবহারে গদাধর পল্লীরমণীগণের উপরে এইকালে যেরূপ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, তাহার বিবরণ আমরা তাঁহাদিগের কাহারও কাহারও মুখে সময়ে সময়ে শুনিবার অবসর লাভ করিয়াছিলাম। সন ১২৯৯ সালের বৈশাখের প্রারম্ভে শ্রীযুক্ত রামকৃষ্ণানন্দ স্বামী প্রমুখ আমরা কয়েকজন কামারপুকুরদর্শনে গমন করিয়া সীতানাথ পাইনের কন্যা শ্রীমতী রুক্মিণীর সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছিলাম। তাঁহার বয়স তখন আন্দাজ ষাট বৎসর হইয়াছিল। শ্রীযুক্ত গদাধরের পূর্বোক্ত প্রভাব সম্বন্ধে তিনি আমাদিগকে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহার এখানে উল্লেখ করিলে পাঠকের ঐ বিষয় স্পষ্ট উপলব্ধি হইবে। শ্রীমতী রুক্মিণী বলিয়াছিলেন –

গদাধরের সম্বন্ধে শ্রীমতী রুক্মিণীর কথা

“আমাদের বাড়ী এখান হইতে একটু উত্তরে – ঐ দেখা যাইতেছে। আজকাল আমাদের বাড়ীর ভগ্নাবস্থা, পরিবারবর্গ একরূপ নাই বলিলেই হয়। কিন্তু আমার বয়স যখন সতর-আঠার বৎসর ছিল, তখন বাড়ীটি দেখিলে লক্ষ্মীমন্তের বাড়ী বলিয়া বোধ হইত। আমার পিতার নাম ৺সীতানাথ পাইন। খুড়তুতো জাঠতুতো সকলকে ধরিয়া সর্বসুদ্ধ আমরা সতর-আঠারটি ভগ্নী ছিলাম এবং বয়সে পরস্পরে দুই-পাঁচ বৎসরের ছোট-বড় হইলেও ঐকালে সকলে যৌবনে পদার্পণ করিয়াছিলাম। গদাধর বাল্যকাল হইতে আমাদিগের সহিত একত্রে খেলা-ধুলা করিতেন। সেজন্য আমাদিগের সহিত তাঁহার খুব ভাব ছিল। আমরা যৌবনে পদার্পণ করিলেও তিনি আমাদের বাড়ীতে যাইতেন এবং ঐরূপে তিনি বড় হইবার পরেও আমাদিগের বাড়ীর অন্দরে যাতায়াত করিতেন। বাবা তাঁহাকে বড় ভালবাসিতেন – আপন ইষ্টের মত দেখিতেন ও ভক্তি-শ্রদ্ধা করিতেন। পাড়ায় কেহ কেহ তাঁহাকে বলিত, ‘তোমার বাড়ীতে অতগুলি যুবতী কন্যা রহিয়াছে, গদাধরও এখন বড় হইয়াছে, তাহাকে এখনও অত বাড়ীর ভিতরে যাইতে দাও কেন?’ বাবা তাহাতে বলিতেন, ‘তোমরা নিশ্চিন্ত থাক, আমি গদাধরকে খুব চিনি।’ তাহারা সাহস করিয়া আর কিছু বলিতে পারিত না। গদাধর বাড়ীর অন্দরে আসিয়া আমাদিগকে কত পুরাণকথা বলিতেন, কত রঙ্গ-পরিহাস করিতেন। আমরা প্রায় প্রতিদিন ঐসকল শুনিতে শুনিতে আনন্দে গৃহকর্মসকল করিতাম। তিনি যখন আমাদের নিকটে থাকিতেন, তখন কত আনন্দে যে সময় কাটিয়া যাইত তাহা এক মুখে আর কি বলিব! যেদিন তিনি না আসিতেন, সেদিন তাঁহার অসুখ হইয়াছে ভাবিয়া আমাদিগের মন ছটফট করিত। সেদিন যতক্ষণ না আমাদিগের কেহ জল আনিবার বা অন্য কোন কর্মের দোহাই দিয়া বামুন-মার (চন্দ্রাদেবীর) সহিত দেখা করিয়া তাঁহার সংবাদ লইয়া আসিত, ততক্ষণ আমাদিগের কাহারও প্রাণে শান্তি থাকিত না। তাঁহার প্রত্যেক কথাটি আমাদের অমৃতের ন্যায় বোধ হইত। সেজন্য তিনি যেদিন আমাদিগের বাড়ীতে না আসিতেন, সেদিন তাঁহার কথা লইয়াই আমরা দিন কাটাইতাম।”

পল্লীর পুরুষসকলের গদাধরের প্রতি অনুরক্তি

কেবলমাত্র রমণীগণের সহিত ঐরূপে মিলিত হইয়াই গদাধর ক্ষান্ত ছিল না। কিন্তু তাহার সর্বতোমুখী উদ্ভাবনী শক্তি এবং সকলের সহিত প্রেমপূর্ণ আচরণ তাহাকে গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেরই সহিত মিলিত করিয়াছিল। প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে গ্রামের বৃদ্ধ ও যুবকবৃন্দ যে-সকল স্থলে মিলিত হইয়া ভাগবতাদি পুরাণপাঠ বা সঙ্গীত-সঙ্কীর্তনাদিতে আনন্দ উপভোগ করিতেন, তাহার সকল স্থলেই তাহার যাতায়াত ছিল। বালক ঐসকল স্থলের যেখানে যেদিন উপস্থিত থাকিত, সেখানে সেদিন আনন্দের বন্যা প্রবাহিত হইত। কারণ, তাহার ন্যায় পাঠ ও ধর্মতত্ত্বসকলের ভক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা আর কেহই করিতে সক্ষম ছিল না। সঙ্কীর্তনকালে তাহার ন্যায় ভাবোন্মত্ততা, তাহার ন্যায় নূতন নূতন ভাবপূর্ণ আখর দিবার শক্তি এবং তাহার ন্যায় মধুর কণ্ঠ ও রমণীয় নৃত্য আর কাহারও ছিল না। আবার রঙ্গপরিহাসস্থলে তাহার ন্যায় সঙ্ দিতে, তাহার ন্যায় নরনারীর সকলপ্রকার আচরণ অনুকরণ করিতে এবং তাহার ন্যায় নূতন নূতন গল্প ও গান যথাস্থলে অপূর্বভাবে লাগাইয়া সকলের মনোরঞ্জন করিতে অন্য কেহ সমর্থ হইত না। সুতরাং যুবক ও বৃদ্ধেরা সকলেই তাহার প্রতি বিশেষ অনুরক্ত হইয়াছিলেন এবং প্রতিদিন সন্ধ্যাকালে তাহার আগমন প্রতীক্ষা করিতেন। বালকও সেইজন্য কোনদিন এক স্থলে, কোনদিন অন্য স্থলে তাঁহাদিগের সহিত সমভাবে মিলিত হইয়া তাঁহাদিগের আনন্দবর্ধন করিত।

আবার এই বয়সেই বালক পরিণতবয়স্কের ন্যায় বুদ্ধিধারণ করায় তাঁহাদিগের মধ্যে অনেকে নিজ নিজ সাংসারিক সমস্যাসকলের সমাধানের জন্য তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। ধার্মিক ব্যক্তিগণ ঐরূপে তাহার পূতস্বভাবে আকৃষ্ট হইয়া এবং ভগবৎ-নাম ও কীর্তনে তাহার ভাবসমাধি হইতে দেখিয়া তাহার পরামর্শ গ্রহণপূর্বক নিজ গন্তব্য পথে অগ্রসর হইতেন।1 কেবল ভণ্ড ও ধূর্তেরা তাহাকে দেখিতে পারিত না। কারণ, গদাধরের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তাহাদিগের উপরের মোহনীয় আবরণ ভেদ করিয়া গোপনীয় উদ্দেশ্যসকল ধরিয়া ফেলিত এবং সত্যনিষ্ঠ, স্পষ্টবাদী বালক অনেক সময়ে উহা সকলের নিকট কীর্তন করিয়া তাহাদিগকে অপদস্থ করিত। সুদ্ধ তাহাই নহে, রঙ্গপ্রিয় গদাধর অনেক সময়ে অপরের নিকটে তাহাদিগের কপটাচরণের অনুকরণ করিয়াও বেড়াইত। উহার জন্য মনে মনে কুপিত হইলেও সকলের প্রিয়, নির্ভীক বালকের তাহারা কিছুই করিতে পারিত না। সেজন্য অনেক সময়ে শরণাগত হইয়া তাহাদিগকে গদাধরের হস্ত হইতে অব্যাহতি লাভ করিতে হইত। কারণ শরণাগতের উপর বালকের অশেষ করুণা সর্বদা পরিলক্ষিত হইত।


1. শুনা যায়, শ্রীনিবাস শাঁখারী প্রমুখ কয়েকজন যুবক শ্রীযুক্ত গদাধরকে এখন হইতে দেবতাজ্ঞানে ভক্তি পূজা করিত।

গদাধরের অর্থকরী বিদ্যার্জনে উদাসীনতার কারণ

আমরা ইতিপূর্বে বলিয়াছি, গদাধর এখনও প্রতিদিন কোন না কোন সময়ে পাঠশালায় উপস্থিত হইত এবং বয়স্যদিগের প্রতি প্রেমই তাহার ঐরূপ করিবার কারণ ছিল। বাস্তবিক চতুর্দশ বর্ষে পদার্পণ করিবার পর হইতে বালকের ভক্তি ও ভাবুকতা এত অবধি প্রবৃদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিল যে, পাঠশালার অর্থকরী শিক্ষা তাহার পক্ষে এককালে নিষ্প্রয়োজন বলিয়া তাহার নিকটে উপলব্ধি হইতেছিল। সে যেন এখন হইতেই অনুভব করিতেছিল, তাহার জীবন অন্য কার্যের নিমিত্ত সৃষ্ট হইয়াছে এবং ধর্মসাক্ষাৎকার করিতে তাহাকে তাহার সর্বশক্তি নিয়োজিত করিতে হইবে। ঐ বিষয়ের অস্পষ্ট ছায়া তাহার মনে অনেক সময়ে উদিত হইত, কিন্তু উহা এখনও পূর্ণাবয়ব না হওয়ায় সে উহাকে সকল সময়ে ধরিতে বুঝিতে সক্ষম হইত না। কিন্তু নিজ জীবন ভবিষ্যতে কিভাবে পরিচালিত করিবে, একথা তাহার মনে যখনই উদিত হইত, তাহার বিচারশীল বুদ্ধি তাহাকে তখনই ঈশ্বরের প্রতি একান্ত নির্ভরের দিকে ইঙ্গিত করিয়া তাহার কল্পনাপটে গৈরিক বসন, পবিত্র অগ্নি, ভিক্ষালব্ধ ভোজন এবং নিঃসঙ্গ বিচরণের ছবি উজ্জ্বল বর্ণে অঙ্কিত করিত। তাহার প্রেমপূর্ণ হৃদয় কিন্তু তাহাকে পরক্ষণেই মাতা ও ভ্রাতাদিগের সাংসারিক অবস্থার কথা স্মরণ করাইয়া তাহাকে ঐ পথে গমনের অভিলাষ পরিত্যাগ করিতে এবং নিজ পিতার ন্যায় নির্ভরশীল হইয়া সংসারে থাকিয়া তাঁহাদিগকে যথাসাধ্য সাহায্য করিতে উত্তেজিত করিত। ঐরূপে বুদ্ধি ও হৃদয় তাহাকে ভিন্ন পথ নির্দেশ করায় সে ‘যাহা করেন রঘুবীর’ ভাবিয়া ঈশ্বরের আদেশলাভের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকিত। কারণ, বালকের প্রেমপূর্ণ হৃদয় একান্ত আপনার বলিয়া তাঁহাকেই ইতিপূর্বে অবলম্বন করিয়াছিল। সুতরাং যথাকালে তিনিই ঐ প্রশ্ন সমাধান করিয়া দিবেন ভাবিয়া সে এখন অনেক সময়ে আপনাকে শান্ত করিত। ঐরূপে বুদ্ধি ও হৃদয়ের দ্বন্দ্বস্থলে তাহার বিশুদ্ধ হৃদয়ই পরিশেষে জয়লাভ করিত এবং উহার প্রেরণাতেই সে এখন সর্ব কর্ম সম্পাদন করিতেছিল।

গদাধরের হৃদয়ের প্রেরণা

অসাধারণ সহানুভূতিসম্পন্ন গদাধরের বিশুদ্ধ হৃদয় তাহাকে এখন হইতে অন্য এক বিষয়ও সময়ে সময়ে উপলব্ধি করাইতেছিল। পুরাণপাঠে ও সঙ্কীর্তনাদিসহায়ে উহা তাহাকে গ্রামের নরনারীসকলের সহিত ইতিপূর্বে ঘনিষ্ঠভাবে সম্বদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে এত আপনার বলিয়া জ্ঞান করিতে শিখাইয়াছিল যে, তাহাদিগের জীবনের সুখ-দুঃখাদি সে এখন হইতে সর্বতোভাবে আপনার বলিয়া অনুভব করিতেছিল। সুতরাং তাহার বিচারশীল বুদ্ধি তাহাকে এইকালে যখনই সংসার-পরিত্যাগে ইঙ্গিত করিত, তাহার হৃদয় তাহাকে তখনই ঐসকল নরনারীর সরল প্রেমপূর্ণ আচরণের এবং তাহার প্রতি অসীম বিশ্বাসের কথা স্মরণ করাইয়া তাহাকে এমনভাবে নিজ জীবন নিয়োজিত করিতে বলিত, যদ্দর্শনে তাহারা সকলে নিজ নিজ জীবনে পরিচালিত করিবার উচ্চাদর্শলাভে কৃতার্থ হইতে পারে এবং তাহার সহিত তাহাদিগের বর্তমান সম্বন্ধ যাহাতে সুগভীর পারমার্থিক সম্বন্ধে পরিণত হইয়া চিরকালের নিমিত্ত অবিনশ্বর হইতে পারে। বালকের স্বার্থগন্ধশূন্য হৃদয় তাহাকে ঐ বিষয়ের স্পষ্ট আভাস প্রদানপূর্বক ঐজন্য বলিতেছিল, ‘আপনার জন্য সংসার ত্যাগ করা – সে তো স্বার্থপরতা; যাহাতে ইহারা সকলে উপকৃত হয়, এমন কিছু কর।’

গদাধরের পাঠশালাপরিত্যাগ বয়স্যদিগের সহিত অভিনয়

পাঠশালায় এবং পরে টোলে বিদ্যাভ্যাস সম্বন্ধে কিন্তু গদাধরের হৃদয় ও বুদ্ধি এখন মুক্তকণ্ঠে এক কথাই বলিতেছিল, কিন্তু সহসা পাঠশালা পরিত্যাগ করিলে বয়স্যগণ তাহার সঙ্গলাভে অনেকাংশে বঞ্চিত হইবে বলিয়া সে ঐ কার্য কখনও করিতে পারিতেছিল না। কারণ, গয়াবিষ্ণু-প্রমুখ বালকের সমবয়স্ক সকলে তাহাকে প্রাণের সহিত ভালবাসিত এবং তাহার অসাধারণ বুদ্ধি ও অসীম সাহস তাহাকে এখানেও দলপতিপদে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল। এই সময়ে একটি ঘটনায় বালক অর্থকরী বিদ্যাভ্যাস পরিত্যাগ করিবার সুযোগ লাভ করিয়াছিল। গদাধরের অভিনয় করিবার শক্তি দেখিয়া তাহার কয়েকজন বয়স্য এখন একটি যাত্রার দল খুলিবার প্রস্তাব একদিন উত্থাপন করিল এবং তাহাদিগকে ঐ বিষয়ে শিক্ষাদানের ভার গদাধরকে লইবার জন্য অনুরোধ করিতে লাগিল। গদাধরও ঐ বিষয়ে সম্মত হইল; কিন্তু অভিভাবকগণ জানিতে পারিলে ঐ বিষয়ে বাধা উপস্থিত হইবার সম্ভাবনা জানিয়া কোন্ স্থানে তাহারা ঐ বিষয়ে শিক্ষালাভ করিবে, তদ্বিষয়ে বালকগণ চিন্তিত হইয়া পড়িল। গদাধরের উদ্ভাবনী শক্তি তখন তাহাদিগকে মানিকরাজার আম্রকানন দেখাইয়া দিল এবং স্থির হইল, পাঠশালা হইতে পলায়ন করিয়া তাহারা প্রতিদিন সকলে নির্দিষ্ট সময়ে ঐস্থানে উপস্থিত হইবে।

সঙ্কল্প শীঘ্রই কার্যে পরিণত হইল এবং গদাধরের শিক্ষায় বালকগণ স্বল্প সময়ের ভিতরেই আপন আপন ভূমিকা ও গানসকল কণ্ঠস্থ করিয়া লইয়া শ্রীরামচন্দ্র ও শ্রীকৃষ্ণ-বিষয়ক যাত্রাভিনয়ে আম্রকানন মুখরিত করিয়া তুলিল। অবশ্য ঐসকল যাত্রাভিনয়ের সকল অঙ্গই গদাধরকে নিজ উদ্ভাবনী শক্তিবলে সম্পূর্ণ করিয়া লইতে হইত এবং উহাদিগের প্রধান চরিত্রের ভূমিকাসকল তাহাকেই গ্রহণ করিতে হইত। যাহাই হউক, যাত্রার দল একপ্রকার মন্দ গঠিত হইল না দেখিয়া বালকেরা পরম আনন্দলাভ করিয়াছিল এবং শুনা যায়, আম্রকাননে অভিনয়কালেও গদাধরের সময়ে সময়ে ভাবসমাধি উপস্থিত হইয়াছিল।

গদাধরের চিত্রবিদ্যা মূর্তিগঠনে উন্নতি

সঙ্কীর্তন ও যাত্রাভিনয়ে গদাধরের অনেক কাল অতিবাহিত হওয়ায় তাহার চিত্রবিদ্যা এখন আর অধিক অগ্রসর হইতে পায় নাই। তবে শুনা যায়, গৌরহাটি গ্রামে তাহার কনিষ্ঠা ভগিনী শ্রীমতী সর্বমঙ্গলাকে বালক এই সময়ে একদিন দেখিতে গিয়াছিল এবং বাটীতে প্রবেশ করিয়াই দেখিতে পাইয়াছিল, তাহার ভগিনী প্রসন্নমুখে তাহার স্বামীর সেবা করিতেছে। উহা দেখিয়া সে অল্পদিন পরে তাহার ভগিনী ও তৎস্বামীর ঐভাবের একখানি চিত্র অঙ্কিত করিয়াছিল। আমরা শুনিয়াছি, পরিবারস্থ সকলে উহাতে চিত্রগত প্রতিমূর্তিদ্বয়ের সহিত শ্রীমতী সর্বমঙ্গলা ও তৎস্বামীর নিকট-সাদৃশ্য দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছিল।

দেবদেবীর মূর্তিসকল-সংগঠনে কিন্তু গদাধর বিশেষ পারদর্শী হইয়া উঠিয়াছিল। কারণ, তাহার ধর্মপ্রবণ প্রকৃতি তাহাকে ঐসকল মূর্তি গঠনপূর্বক বয়স্যগণ সমভিব্যাহারে যথাবিধি পূজা করিতে অনেক সময়ে প্রযুক্ত করিত।

সে যাহা হউক, পাঠশালা পরিত্যাগ করিয়া গদাধর নিজ হৃদয়ের প্রেরণায় পূর্বোক্ত কার্যসকলে নিযুক্ত থাকিয়া এবং চন্দ্রাদেবীকে গৃহকর্মে সাহায্য করিয়া কাল কাটাইতে লাগিল। মাতৃহীন শিশু অক্ষয়ও তাহার হৃদয় অধিকার করিয়া তাহাকে অনেক সময় নিযুক্ত রাখিত। কারণ চন্দ্রাদেবীকে গৃহকর্মের অবসর দিবার জন্য ঐ শিশুকে ক্রোড়ে ধারণ করা এবং নানাভাবে খেলা দিয়া তাহাকে ভুলাইয়া রাখা এখন তাহার নিত্যকর্মসকলের অন্যতম হইয়া উঠিয়াছিল। ঐরূপে তিন বৎসরের অধিককাল অতীত হইয়া গদাধর ক্রমে সপ্তদশ বর্ষে পদার্পণ করিয়াছিল। ঐ সময় তিন বৎসরের পরিশ্রমে শ্রীযুক্ত রামকুমারের কলিকাতার চতুষ্পাঠীতে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়া তাঁহারও উপার্জনের পূর্বাপেক্ষা সুবিধা হইয়াছিল।

গদাধরের সম্বন্ধে রামকুমারের চিন্তা তাহাকে কলিকাতায় আনয়ন

কলিকাতায় অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করিলেও শ্রীযুক্ত রামকুমার বৎসরান্তে একবার কয়েক পক্ষের জন্য কামারপুকুরে আগমনপূর্বক জননী ও ভ্রাতৃবৃন্দের তত্ত্বাবধান করিতেন। গদাধরের বিদ্যার্জনে উদাসীনতা ঐ অবসরে লক্ষ্য করিয়া তিনি এখন চিন্তিত হইয়াছিলেন। সে যেভাবে বর্তমানে কাল কাটাইয়া থাকে, তিনি তদ্বিষয়ে সবিশেষ অনুসন্ধান লইলেন এবং মাতা ও মধ্যম ভ্রাতা রামেশ্বরের সহিত পরামর্শ করিয়া তাহাকে কলিকাতায় নিজ সমীপে রাখাই যুক্তিযুক্ত বলিয়া নিরূপণ করিলেন। ছাত্রসংখ্যার বৃদ্ধির সহিত টোলের গৃহকর্মও অনেক বাড়িয়া গিয়াছিল; সেজন্য ঐসকল বিষয়ে সাহায্য করিতে একজন লোকের অভাবও তিনি ঐসময়ে বোধ করিতেছিলেন। অতএব স্থির হইল যে, গদাধর কলিকাতায় আসিয়া তাঁহাকে ঐসকল বিষয়ে কিছু কিছু সাহায্য দান করিবে এবং অন্যান্য ছাত্রগণের ন্যায় তাঁহারই নিকটে বিদ্যাভ্যাস করিবে। গদাধরের নিকটে ঐ প্রস্তাব উপস্থিত হইলে পিতৃতুল্য অগ্রজকে সাহায্য করিতে হইবে জানিতে পারিয়া সে কলিকাতা-গমনে কিছুমাত্র আপত্তি করিল না। অনন্তর শুভদিনে শুভক্ষণে শ্রীযুক্ত রামকুমার ও গদাধর ৺রঘুবীরকে প্রণামপূর্বক চন্দ্রাদেবীর পদধূলি মস্তকে ধারণ করিয়া কলিকাতায় যাত্রা করিলেন। কামারপুকুরের আনন্দের হাট কিছুকালের জন্য ভাঙ্গিয়া যাইল এবং শ্রীমতী চন্দ্রা ও গদাধরের প্রতি অনুরক্ত নরনারীসকলে তাহার মধুময় স্মৃতি ও ভাবী উন্নতির চিন্তা করিয়া কোনরূপে কাল কাটাইতে লাগিলেন। কলিকাতায় আগমন করিবার পরে শ্রীযুক্ত গদাধর যে-সকল অলৌকিক চেষ্টা করিয়াছিলেন, পাঠক সে-সকল শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গের ‘সাধকভাব’ নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ দেখিতে পাইবেন।

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গে পূর্বকথা বাল্যজীবন পর্ব সম্পূর্ণ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *