১৪. সাঙ্খ্যদর্শন

১৪. সাঙ্খ্যদর্শন (প্রুফরীড আবশ্যক)

এই দর্শন সেই মহর্ষির কৃত, যিনি শ্ৰীমদ্ভাগবতে ভগবানের অবতার মধ্যে পরিগণিত হইয়াছেন, যিনি যোগবলে এই প্রকাণ্ড ব্রহ্মাণ্ডকে প্রত্যক্ষের অতিথি করিয়াছেন, এবং যিনি কপোস্তু পর্য্যন্ত স্থায়ী । সেই কপিল নামক মহর্ষি দেখিলেন যে, এই জগন্মণ্ডলে সকলেই ত্ৰিবিধ তপে তাপিত অর্থাৎ আধ্যাত্মিক (১),  আধিভৌতিক (২), আর আধিদৈবিক (৩) দুঃখে দুঃখিত, এমত কোন সংসারী ব্যক্তি নাই যে ঐ তাপত্রয়ে তাপিত না হয় । অধ্যাত্মিক, অধিভৌতিক, অথবা অধিদৈবিক, ইহার অন্যমত দুঃখ সকলেরই আছে । কিন্তু ঐ তাপত্ৰয় হইতে নিস্তারের উপায় সুচারুরূপে কিছুই নির্দিষ্ট নাই । যদিও শ্রুতিতে লিখিত অাছে যে তাপ ত্রয় নিবৃত্তির নানা উপায় নাই কিন্তু এক মাত্র বিবেক অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞানই উহার উপায়, তথাপি ঐ বিবেক যে কি রূপে সম্পাদন করিতে হয় তাহার সবিশষ বিধান সুচারুরূপে শ্রীতিতে লিখিত নাই ; সুতরাং উহা থাক না থাকা সমান হইয়াছে ; এমত ব্যক্তির সংখ্যাও অতি অল্প যাহারা শ্রীতি মাত্র অবলম্বন করিয়া বিবেক সম্পাদন করিতে পারেন । অতএব ঐ বিবেক সম্পাদক কোন সহজ উপায় উদ্ভাবিত করা অবশ্য কৰ্ত্তব্য এই বিবেচনা করিয়া জীবগণের প্রতি অসীম করুণ প্রকাশ পুরঃসর বিবেকোপযোগী ষড়ধ্যায়ী এই সাস্থ্য শাস্ত্রের আবিষ্কার করিলেন, এবং শিষ্য প্রশিয্যাদি দ্বার। ক্রমশঃ ঐ বিবেক শাস্ত্রের শ্রীবৃদ্ধি সাধনেও কৃতকার্য হইলেন । এজন্য সাস্থ্য গ্রন্থ যে কত আছে তাহার সংখ্যা হয় না ।

এই দর্শনে পঞ্চবিংশতি তত্ত্বের সস্থল অর্থাৎ গণনা করিয়াছেন বলিয়াই ইহাকে সাস্থ্য দর্শন কহে । ঐ পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব এই, মূল প্রকৃতি, মহৎ, অহঙ্কার, শব্দ তন্মাত্র, স্পর্শ তন্মাত্র, রূপ তন্মাত্র, রস তন্মাত্র, আর গন্ধ তন্মাত্র এই পাঁচটা তন্মাত্র, চক্ষুঃ, শ্রোত্র, ভ্রাণ, রসন}, আর ত্বক, এই পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, বাক, পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ, এই পাচট কৰ্ম্মেন্দ্রিয়, জ্ঞান ও কৰ্ম্ম এই উভয়েক্রিয় স্বরূপ মন, আকাশ, বায়ু অগ্নি, জল, ও পৃথিবী এই পাঁচটা মহাভূত, আর পুরুষ । এই পঞ্চবিংশতি তত্ত্বের মধ্যে কেহ কেবল-প্রকৃতি, কেহ কেহ কেবল বিকৃতি, কেহ কেহ বা প্রকৃতি বিকৃতি উভয়ের স্বরূপ, আর কেহ অনুভয় । মূল প্রকৃতি মহত্তত্ত্বের কারণ বলিয়া প্রকৃতিস্বরূপ, কিন্তু উহার অ্যর প্রকৃত্যন্তই নাই বলিয়৷ উহা কেবল প্রকৃতি। মহাদাদি পঞ্চতন্মাত্র পর্যন্ত সাতটি তত্ত্ব প্রকৃতি বিকৃতি উভয়াত্মক, কারণ মহত্তত্ত্ব মূল প্রকৃতির বিকৃতি আর অহঙ্কার তত্ত্বের প্রকৃতি। অহঙ্কার তত্ত্ব মহক্তত্ত্বের বিকৃতি আর পঞ্চ তন্মাত্র ও ইন্দ্রিয় সকলের প্রকৃতি বলিয়া উভয়াত্মক। এবং পঞ্চ তন্মাত্র অহঙ্কারের বিকৃতি ও পঞ্চ মহাতৃতের প্রকৃতি বলিয়া উহারাও উভয়াত্মক । ইন্দ্রিয়গণ ও পঞ্চ মহাভূত ইহার কোন তত্ত্বাস্তরের প্রকৃতি নহে এবং যথাক্রমে অহঙ্কারও পঞ্চতন্মাত্রের বিকুতি এজন্য উহার কেবল বিকৃতি। আর পুরুষ নিত্য ও অপরিণামী, ইনি কাহার প্রকৃতিও নহে বিকৃতিও নহে এজন্য অতুভয় অর্থাৎ না প্রকৃতি ন বিকৃতি ।

মূল প্রকৃতি ত্রিগুণাত্মিক, অর্থাৎ সমভাবে অবস্থিত যে সত্ত্ব, রজঃ, ও তমোগুণ তাহাদিগের স্বরূপ, নিত্য, নিষ্কিয়, অনাশ্রিত, অর্থাৎ কোন আশ্রয় অবলম্বন না করিয়াই অবস্থিত, অসংযুক্ত, অবিভক্ত, স্বতন্ত্র, অর্থাৎ অহঙ্কারাদি তত্ত্বাস্তরের সাহায্য ব্যতিরেকেই স্বকাৰ্য্য করণে সমৰ্থ, অচেতন, জড়াত্মক এবং পরিণামী । মহত্তত্ত্ব অবধি যাবতীয় अन्नार्थ ७३ झ्भाबन भइडौं भशैभख्नौं अङ्कडि भशङ्कल পর্যন্ত যাবতীয় পদার্থ মূল প্রকৃতির সাক্ষাৎ পরস্পরায় পরিণামবিশেষ, অর্থাৎ যেমন দধি ও তক্রাদি দুগ্ধের বিকর বিশেষ, সেইরূপ কাৰ্য্যজাত মূল প্রকৃতির বিকার বিশেষ, মুল প্রকৃতিই কাৰ্যরূপে বিকৃত হইয়াছে । যেমন দুগ্ধের বিকার দধি, দধির বিকার নবনীত ও নবনীতের বিকার স্থত হইলেও দুগ্ধকে দধি ও ঘূতাদির মূল কারণ বলা যাইতেছে, সেই রূপ যখন সকল কাৰ্য্যই সাক্ষাৎ পরম্পরায় মূল প্রকৃতির বিকারস্বরূপ হইতেছে তখন মুল প্রকৃতির ষে “মূল প্রকৃতি” (৪) এই নামটা যৌগিক হইতেছে ইহা কোন ব্যক্তি স্বীকার ন৷ করিবেন। এই প্রকৃতিতত্ত্ব স্বীকার না করিয়া ঈশ্বরের শক্তিস্বরূপ ময়াদ্বারাই জগৎকার্য্য সম্পন্ন হইতেছে এই রূপ বৈদন্তিকদিগের ষে মায়াবাদ নির্দিষ্ট আছে তাহাড়ে কোন প্রমাণ নাই বরং তদ্বিরোধী ভূরি ভূরি প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়, যথা পদ্মপুরাণে পাৰ্ব্বতীর পুতি ঈশ্বরের বাক্য ।

(৫) “মায়াবাদমসচ্ছাস্ত্রং পুচ্ছন্নং বৌদ্ধমেব চ। ময়ৈব কথিত । দেবি কলেী ব্রাহ্মণরূপিণী । অপার্থং শ্রুতিবাক্যানাং প্রদর্শ্য লোকগর্ভূিতম্ । কৰ্ম্মস্বরূপ ত্যাজ্যত্বমত্ৰচ পতিপাদ্যতে । সৰ্ব্ব কৰ্ম্মপরিভ্রংশাত নৈষ্কৰ্ম্ম্যং তত্ৰ চোচ্যতে। পরাত্মজীবয়োরৈক্যং ময়াত্র প্রতিপাদ্যতে । ব্রহ্মণোস্থ পরং রূপং নির্গুণং দর্শিতং ময়া। সর্ব্বস্য জগতোংপ্যত্র নাশনার্থং কলৌ যুগে । বেদার্থব মহাশস্ত্ৰং মায় বাদমবৈদিকং । ময়ৈব কথিতং দেবি জগতাং নাশকারণম্” ইতি ।

এই সকল বচনকে অপ্রমাণ, বা কম্পিত বলিযয়া কিরূপে স্বীকার করা যাইতে পারে । কারণ যদি কপিতই হইত, তাহা হইলে কখনই ব্রহ্মমীমাংসার ও সাংখ্য স্থত্রাদির ভাষ্যকার পণ্ডিত প্রধান বিজ্ঞানভিক্ষু স্বীয় ভাষ্যে ঐ সকল বচন উদ্ধত করিতেন না । যাহা হউক “বেদ। বিভিন্নঃ শ্ৰুতয়ে বিভিন্নঃ নামেী মুনির্যস্য মতং নভিন্নম | ধৰ্ম্মসা তত্ত্বং নিহিতং গুহায়াং মহাজনে যেন গভঃ ল পন্থাঃ” (৬) 1 ইত্যাদি প্রাচীন প্রবাদানুসারে আমদাদির এ বিষয়ে অতুসন্ধান করিয়া কৃতকার্য হইবার সম্ভাবনা নাই ; এই ক্ষণে পুনরায় পুকুত বিষয়ে পুৰুত্ত হইলাম ।

সত্ত্বগুণ মুখস্বরূপ, লঘু ও প্রকাশক, অর্থাৎ সত্ত্বগুণ দ্বার সকল বিষয়ের প্রকাশ হয় । সত্ত্বগুণের বৃত্তি শাস্তা, অর্থাৎ সত্ত্বগুণ শান্ত ৰুক্তি অবলম্বন করিয়া স্বকাৰ্য্য সম্পাদন করে । রজোগুণ দুঃখরূপ এবং উপষ্টভুক, অর্থাৎ সত্ত্ব ও তমোগুণ যে নিজ নিজ কাযে প্রবৃত্ত হয় তাহার প্রবর্তৃক স্বরূপ ; যেমন বায়ু নিজে চলিত হইয়া অন্যান্য অচল বস্তুকেও সঞ্চালিত করে, সেইরূপ সত্ত্ব ও তমোগুণ অচল হইলে ও রজোগুণদ্বারা চালিত হইয়া নিজ নিজ কাৰ্য সম্পাদন করে । রজোগুণের বৃত্তি ঘোরা । তমোগুণ মোহস্বরূপ, গুরু এবং আবরক ; দেখ যদি সত্ত্ব ও রজোগুণ তমোগুণ দ্বারা আব্লভ বা নিযন্ত্রিত ন। থাকিত, তাহা হইলে উহারা সৰ্ব্বদাই স্ব স্ব কার্য সম্পাদন করিত, কখনই উহাদিগের কার্যের এ রূপ নিয়ম হইত না । কারণ সত্ত্বগুণ রজোগুণ দ্বারা সঞ্চালিত হইয়া ষে কাৰ্য্য করিবে তাহার নিবারক কে ? অার রজোগুণের কথা কি বলিব সে ত স্বভাবতই চঞ্চল”। অতএব স্বীকার করিতে হইবে যে, উহারা তমোগুণের দ্বারা অারত ও নিয়ন্ত্রিত থাকে বলিয়াই সৰ্ব্বদাই কাৰ্য্য করিতে পারে না, কিন্তু যেমন সিংহ দুৰ্ব্বলাবস্থায় তৃণশ্ব স্থলকেও ছিন্ন করিতে না পারিয়া অতিনিকটস্থিত জন্থকে ও নষ্ট করিতে পারে না, কিন্তু ঐ সিংহ উদ্রিক্ত হইলে লৌহশ্বস্থলকেও তৃণ জ্ঞান করিয়া অতি দূরবর্তী ব্যক্তিকেও কাল কবলে নিক্ষেপ করে, সেই রূপ সন্তু ও রজোগুণ অনুদ্রিস্তু বস্থায় তমোগুণদ্বারা অব্রত থাকিলেও উরিক্তাবস্থায় যে তমোগুণকে অতিক্রম করিয়া স্ব স্ব কার্য্য সম্পাদন করিবে তাহার বাধা কি ? এইরূপে যখন তমোগুণ দ্বারাই কার্য্যের নিয়ম হইতেছে তখন তমোগুণকে নিয়ামক বলিয়াও নির্দেশ করা যায় । তমোগুণের বৃত্তি মূঢ়া, ঐ ব্লক্তি অবলম্বন করিয়া তমোগুণ কাৰ্য্য করে । এই গুণত্রয়ই নিজ নিজ কাষা

সম্পাদন কালে পরস্পর পরস্পরের সাহায্য অবলম্বন করে, কেবল এক একটা গুণদ্বারা কোন কাৰ্যই হয় না । এ স্থলে কেহ কেহ আপত্তি করেন যে, ঐ গুণত্রয় যেহেতু পরস্পর বিরোধী অতএব কাৰ্য্যকালে পরস্পর পরস্পরের সাহায্য করিবে কেন, বরং অনিষ্টাচরণ করিবারই সম্পূর্ণ সম্ভাবনা, যেমন পরস্পর শত্রুভাবাপন্ন সুন্দাসুর ও উপসুন্দাসুর । কিন্তু এ আপত্তি স্থূলদশীর নিকটেই রমণীয়, পণ্ডিতের নিকটে উল্লেখ্য নহে, যেহেতু পরস্পর বিরুদ্ধভাবাপন্ন বস্তু সকলও পরস্পরের সহকারিত করে, এবং ঐ সহকারিতীয় এক একটী অপুৰ্ব্ব কার্য্যও সম্পাদিত হইয়া থাকে ; যথা বৰ্ত্তি ও তৈলের দীপনিৰ্ব্বাপে ক্ষমতা আছে, এবং দীপেরও ঐ উভয়কে ভস্মসাৎ করিবার শক্তি আছে, এ জন্য উহারা পরস্পর বিরুদ্ধ বটে, কিন্তু দীপ ঐ উভয়ের সাহায্যেই যাবতীয় দৃশ্য বস্তুর প্রকাশ করিতেছে ; এবং যেমন বাত, পিত্ত ও কফ ইহারা পরম্পর বিরুদ্ধ হইলেও ইহাদিগের পরস্পরের সাহায্যেই শরীর ধারণ হইতেছে, সেইরূপ ঐ গুণত্রয় পরস্পর বিরুদ্ধ হইলেও পুরুষার্থের সম্পাদনার্থ পরস্পর পরস্পরের সহকারিভাবাপন্ন হয় ।

আর যথন ঐ গুণত্রয়ের প্রত্যেক দ্বারা কোন কার্য হইতেছে না, কিন্তু উহারা একত্রিত হইয়াই নিখিল কাৰ্য্য নিম্পন্ন করে ইহা স্থির হইল, এবং কার্য্যকারণের অভেদ ও অনন্তর প্রতিপাদিত হইবে, তখন কার্য্যস্বরূপ জগৎ যে ত্রিগুণাত্মক তাহ। আর বলা বাহুল্য । আর যেমন নর ও মনুষ্য অভিন্ন বলিয়। নরও যাহাকে বলা যায় মনুষ্য ও তাহাকে বলা যায়, সেই

রূপ সত্ত্ব রজঃ ও তমোগুণ যথাক্রমে সুখ দুঃখ ও মোহস্বরূপ বলিয়া ঐ ত্ৰিগুণাত্মক জগৎ-ও যে সুখ দুঃখ ও মোহ স্বরূপ তাহার আর সন্দেহ কি । যদিও যে বস্তু যাহার সুখস্বরূপ হয় সেই বস্তু কখনই তৎকালে তাঁহার দুঃখম্বরূপ হইতে পায়ে না বটে, কিন্তু কালান্তরে উহা সেই ব্যক্তির এবং তত্তৎকালেই ব্যক্ত্যন্তরের দুঃখ ও মোহস্বরূপ হইতে পারে ; যথা যে রমণী যৎকালে নিজ নায়কের মুখস্বরূপ হইতেছে, সেই রমণীই তৎকালে সপত্নীবৰ্গের দুঃখ স্বরূপ হইতেছে এবং উদাসীন যুবক পুরুষান্তরের মোহ স্বরূপ হইতেছে । অতএব এই রীতিক্রমে বিবেচনা করিলে বোধ হইবে যে, সকল বস্তুই সুখ, দুঃখ ও মোহস্বরূপ ।

মহত্তত্ত্ব বুদ্ধিস্বরূপ । বুদ্ধিতত্ত্বদ্বারাই যাবদ্বিষয়ের কৰ্ত্তব্যাকর্তব্যতা নিশ্চয় হয়, ঐ নিশ্চয়কে অধ্যবসায় কহে ; অধ্যবসায় বুদ্ধির ধৰ্ম্ম । এবং যেমন নীল পীতাদি বর্ণ ঘট পটাদির ধৰ্ম্ম হইলেও “নীলোঘাটঃ পীস্তোঘাটঃ” ইত্যাদি স্থলে ঐ ঐ বর্ণের সহিত ঘট পটাদির অভেদ প্রতীতি ও ব্যবহার হইতেছে, সেইরূপ ধৰ্ম্ম ধৰ্ম্মীর অভেদবশতঃ কোন স্থলে বুদ্ধিধৰ্ম্ম অধ্যবসায়ের সহিতও বুদ্ধির

অভেদ বোধ ও ব্যবহার হয় ; এজন্য অধ্যবসায় শব্দেও বুদ্ধির নির্দেশ করা যাইতে পারে । বুদ্ধির আরও আটটী ধৰ্ম্ম আছে, যথা ধৰ্ম্ম, জ্ঞান, বৈরাগ্য, ঐশ্বৰ্য্য, অধৰ্ম্ম, অজ্ঞান, অবৈরাগ্য ও অনৈশ্বর্য । তন্মধ্যে আদিম চারিটী সত্ত্বগুণসম্ভূত বলিয়৷ সাত্ত্বিক, আর অন্তিম চারিটি তামস অর্থাৎ তনোগুণজাত ; কিন্তু ঐ উভয় কর্য্যেরই রজোগুণের সাহায্য আছে । ধৰ্ম্ম দুই প্রকার ; অত্যুদয়হেতু ও নিঃশ্রেয়সহেতু । যজ্ঞ দানাদিজন্য এবং ঐহিক পারলৌকিক সুখসম্পাদক ষে ধৰ্ম্ম তাহাকে অভূrদয়হেতু, আর অষ্টাঙ্গ যোগাদির অনুষ্ঠান জন্য মুক্তিসাধক ধৰ্ম্মকে নিঃশ্রেয়সহেতু ধৰ্ম্ম কহে । প্রকৃতির সহিত পুরুষের ভেদজ্ঞানকে বিবেক ও তত্ত্বজ্ঞান কহে । রাগের অর্থাৎ বিষয়াসুরাগের অভাবকে বৈরাগ্য কহে। (৭)

অণিমা, লঘিমা, মহিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, বশিত্ব, ঈশিত্ত্ব, ও কামাবসায়িত্ব ভেদে ঐশ্বৰ্য্য অষ্টবিধ। অণিমা অণুতা, অর্থাৎ অতি স্থঙ্কতা ; এই ঐশ্বর্য্য দ্বারা শিলামধ্যেও প্রবেশ শক্তি জন্মে। লঘিম লঘুতা, অর্থাৎ গুরত্বগুণশূন্যতা, এই ঐশ্বর্য থাকিলে এমন লঘু হয় যে, স্থৰ্যকিরণকে অবলম্বন করিয়া সুৰ্য্যলোক পর্যন্তও গমন করিতে পারে । মহিম মহত্ত্ব, অর্থাৎ অতিস্থলতা ; এই ঐশ্বর্য দ্বারা অতি ক্ষীণ ব্যক্তিও প্রকাণ্ড আকার ধারণে সমর্থ হয় । প্রাপ্তি ঐশ্বৰ্য্য থাকিলে চন্দ্রকেও অঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা স্পর্শ করা যায় । প্রাকাম্য ইচ্ছার অনভিঘাত, অর্থাৎ ইচ্ছার অপ্রতিরোধ । যাহার এই ঐশ্বৰ্য আছে, সে যদি ইচ্ছা করে যে “যেমন অন্যান্য জনগণ জলে উন্মজন ও নিমজ্জন করে আমি সেইরূপ ভূমিতেই করিব তবে তাহাও করিতে পারে। বশিত্ব ঐশ্বৰ্য দ্বারা ভূত বা ভৌতিক পদার্থ সকলেই বশীভূত হয়। ঈশিত্ব ঐশ্বৰ্য দ্বারা ভূত ভৌতিক পদার্থ সকলের সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয় করিতে পারা যায় । সভ্যসঙ্কল্পতার নাম কামাবসায়িত্ব ; এই ঐশ্বৰ্য্যশালী ব্যক্তি যখন যাহ। সংকল্প অর্থাৎ নিশ্চয় করেন, তখন তাহাই সিদ্ধ হয়। র্তাহার নিশ্চয় কখনই ব্যর্থ হয় না ; যদি বলেন যে, “এই আত্মৱক্ষে নারিকেল ফল ফলিবে, এই অমাবস্যার দিবসে চন্দ্র উদিভ হইবেন, এবং এই মৃত ব্যক্তি পুনরায় প্রত্যাগস্ত হইবে।” তবে তাহাই ঘটিয়া উঠে ।

ধৰ্ম্ম, জ্ঞান, বৈরাগ্য ও ঐশ্বর্য এই চারিটী ধৰ্ম্মের বিপরীত যথাক্রমে অধৰ্ম্ম, অজ্ঞান, অবৈরাগ্য ও অনৈশ্বর্য। এই চারিীি বুদ্ধির ধৰ্ম্ম । অভিমানকে অহঙ্কার কহে । ঐ অহঙ্কার দ্বারাই ‘আমি করিতেছি, আমার গৃহ, আমা হইতে ধনী বা বিদ্বান পৃথিবীতে কেহ নাই, আমাকে সকলেই মান্য করে” ইত্যাদি অভিমান হইয়া থাকে, এজন্য অভিমান অহঙ্কারের ধৰ্ম্ম, ইহাতেই অভিমান ও অহঙ্কারের অভিন্নরূপে ব্যবহার হইয়া থাকে, যেমন নীল বর্ণের সহিত ঘটাদির । শব্দাদি পঞ্চতন্মাত্র অতি স্থম্ম বলিয়া সুক্ষ ও অবিশেষ পদবাচ্য, এবং দেবতা ও যোগীদিগেরই প্রত্যক্ষের বিষয়, অন্মদাদির ইন্দ্রিয়গোচর নহে। নয়নাদি ত্বক পর্যন্ত পাঁচটা জ্ঞানেন্দ্রিয় দ্বারা যথাক্রমে রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস ও স্পর্শের প্রত্যক্ষ হয় ; এবং বাগাদি উপস্থ পর্যন্ত পঞ্চ কৰ্ম্মেন্দ্রিয় দ্বারা অমুক্রমে বাক্য প্রয়োগ, বস্তুর গ্রহণ, গমন, উৎসর্গ অর্থাৎ পুরষত্যাগ ও আনন্দ অর্থাৎ রমণসুখ নিম্পন্ন হয় । এই উভয়বিধ ইন্দ্রিয়ের কাৰ্য্যেই মনের সহকারিতা আছে, এজন্য মনকে উভয়েন্দ্রিয় কহে । বুদ্ধি, অহঙ্কার ও মনঃ ইহার শরীরের অস্তরে থাকে, এজন্য ইহাদিগকে অন্তঃকরণ কহে । আর নয়নাদি উপস্থ পৰ্যন্ত দশটা ইন্দ্রিয় শরীরের বহিঃস্থিত বলিয়া বাহেন্দ্রিয় এবং বাহকরণ পদবাচ্য । অন্তঃকরণ তিন ও বাহ্যকরণ দশ ; এই রূপে করণ সমুদায়ে ত্রয়োদশট, একারণ কিংবদন্তী আছে যে, করণ ত্রয়োদশ প্রকার ।

পঞ্চভূত স্থূল, অন্মদাদিরও প্রত্যক্ষের বিষয়, এবং বিশেষ পদ বাচ্য। ঐ পঞ্চভূক্ত ত্ৰিবিধ ; শান্ত, ঘোর ও মূঢ়। যাহারা সত্ত্বপ্রধান তাহারা শান্ত, সুখস্বরূপ, প্রসন্ন এবং লঘু । যাহারা রজোগুণপ্রধান, তাহার ঘোর, ও দুঃখাত্মক, চঞ্চল । আর যাহার। তমোগুণ প্রধান, তাহারা মূঢ়, মোহস্বরূপ, গুরু এবং বিষন্ন। বুদ্ধি অবধি মহাভূত পর্যন্ত সকল তত্ত্বই অনিত্য, অব্যাপক, সক্রিয়, অনেক, আশ্রিত, সংযোগী, বিভক্ত, পর তন্ত্র, এবং ব্যক্তপদবাচ্য |

পুরুষ নিত্য, সত্ত্বাদিত্রিগুণশূন্য, চেতন স্বরূপ, সাক্ষী, কুটস্থ, দ্রষ্টা, বিবেকী, সুখদুঃখ দিশূন্য, মধ্যস্থ, ও উদাসীনপদবাচ্য । ইনি অকৰ্ত্তা অর্থাৎ কোন কার্য্যই করেন না, সকলই প্রকৃতির কার্য ; তবে ষে “ আমি করিতেছি, আমি সুখী বা দুঃখী ” ইত্যাদি প্রতীতি হইতেছে সে ভ্রমমাত্র । বস্তুতঃ সুখ, দুঃখ বা কর্তৃত্ব আত্মার নাই, সুখ দুঃখাদি বুদ্ধির ধৰ্ম্ম ; দেখ, কখন পরমসুখজনক সামগ্ৰী সমবধানেও সুখ হয় না, কখন বা অতি সামান্য বিষয়েও পরম সুখ

লাভ হয় ; আর কাহার রাজ্য লাভে এবং পল্যঙ্ক শয়নেও সুখ বোধ হয় না, কেহ বা ভিক্ষা লাভে ও ছিন্ন মন্দোরীতে শয়ন করিয়াও পরম আনন্দ ভোগ করে । অতএব ইহা অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবেক যে, সুখকর বা দুঃখকর কিছুই অনুগত নাই, যখন যে বস্তুকে সুখকর বা দুঃখকর বলিয়া বোধ হয়, তখনই তাহ দ্বারা যথাক্রমে সুখ বা দুঃখ হইয় উঠে ; অতএব সুখ দুঃখাদি বুদ্ধির ধৰ্ম্ম ।

পুরুষ শরীর ভেদে নানা, অর্থাৎ এক একটা শরীরের অধিষ্ঠাতা আত্মা স্বরূপ এক একটা পুরুষ আছেন। যদি সকল শরীরের অধিষ্ঠাতা পুরুষ এক হইভ, তাহা হইলে একের জনন রা মরণে সকলেরই জনন বা মরণ হইত, এবং একের সুখ বা দুঃখে জগন্মণ্ডল সুখী বা দুঃখী হইত সন্দেহ নাই। কিন্তু যখন সুখ দুঃখের এরূপ নিয়ম রহিয়াছে তখন অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবেক পুরুষ নানা, এবং যে পুরুষ যেরূপ কাৰ্য্য করে তাহাকে তদনুরূপ ফল ভোগ করিতে হয় । যদিও আত্মার সুখ বা দুঃখাদি কিছুই নাই ইহা পূৰ্ব্বেই উল্লিখিত হওয়াতে “এক জনের সুখে জগৎ সুখী না হয় কেন ?” এ রূপ অণপত্তি উথাপিতই হইতে পারে না, তথাপি যেমন “ জবাপুষ্প সন্নিধানে অতি শুভ্র স্ফটিকও রক্তের ন্যায় প্রতীয়মান হয়, সেইরূপ আত্মার স্বীয় বুদ্ধিস্থ সুখ দুঃখাদিকে আত্মগত বিবেচনা করিয়া “আমি সুখী অামি দুঃখী ” এইরূপ বোধ হয়, সকল ব্যক্তির ঐকাত্ম্যপক্ষে এক জনের ঐরূপ বোধ হইলে সকলের না হয় কেন ” এরূপ আপত্তির খণ্ডন হয় না । এবং * অ।মি ভোজন করিতেছি ” ইত্যাদি যে ব্যবহার হইতেছে তাহা শরীরের ক্রিয়া লইয়াই সমর্থন করিতে হইবে, যেহেতু আত্মার ক্রিয়া বা কর্তৃত্ব কিছুই নাই ।

ঐ শরীর দ্বিবিধ ; স্থল ও সুক্ষ। স্থূল শরীর মাত পিতার দ্বারা সম্পন্ন হয় ; মাতা হইতে লোম, রক্ত ও মাংস হয়, পিতা হইতে স্নায়ু, অস্থি ও মজ্জা (৮) জন্মে। এই ছয়টা বস্তু ঘটিত বলিয়া স্থূল শরীরকে যাট্রকৌষিক, এবং উক্ত রীতিক্রমে মাত পিতা দ্বারা সম্পাদিত হওয়াতে মাতাপিতৃজ শব্দে নির্দেশ করা যায়। এই শরীরেরই উৎপত্তি ও বিনাশ হয় ; এই শরীরই অন্তে, হয় মৃত্তিকা, না হয় ভস্ম অথবা শৃগাল কুত্ত্বরাদির পুরীষরূপে পরিণত হইবেক, যিনি যত যত্ব করুন না কেন, কেহই এই শরীরকে আজরামর করিতে পারিবেন না; সকলই কিছু দিনের নিমিত্ত, অস্তে আর দ্বিতীয় পথ নাই; পৃথিবীশ্বরেরও যে গতি, দরিদ্রেরও সেই গতি ।

স্বাক্ষ শরীর, বুদ্ধি, অহঙ্কার, জ্ঞানেন্দ্রিয়, কৰ্ম্মেন্দ্রিয়, মনঃ, ও পঞ্চতন্মাত্র, এই অষ্টাদশ তত্ত্বের সমষ্টি । ইহা নিত্য, অর্থাৎ মহাপ্রলয় পৰ্য্যন্ত স্থায়ী, এবং অব্যাহত, অর্থাৎ অপ্রতিহভগতি । সুক্ষ শরীর শিলামধ্যেও প্রবেশ করিতে পারে এবং ইহলোক পরলোক গামী, অর্থাৎ স্থলম শরীর কখন নর, পশু, পক্ষী, শিলা ও ব্ৰক্ষাদি-স্বরূপ স্থল শরীর ধারণ করে, এবং কখন স্বৰ্গীয়, কখন বা নারকীয় छून শরীর আর কখন পুনৰ্ব্বার মনুষ্যাদি শরীর গ্রহণ করে । এই শরীরেরই সুখ দুঃখ ভোগ হয়, এই শরীরের বিনাশ হয় না । প্রকৃতি সর্গের আদিতে এক একটা পুরুষের এক একটা স্থল্ম শরীর নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন, সুক্ষ্ম শরীর অধুনা আর জন্মে না । সকল পুরুষই জীবাত্মা, জীবাত্মাতিরিক্ত পরম পুরুষ পরমেশ্বরে কোন প্রমাণ নাই, ইহা স্বয়ং কপিল দেবই “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ ” এই স্থত্র দ্বারা ব্যক্ত করিয়াছেন, আর এবিষয়ে ষড়দর্শনটীকাকার পণ্ডিতপ্রধান বাচস্পতিমিশ্রও তত্ত্বকৌমুদীগ্রন্থে অনেক যুক্তি দিয়াছেন এবং ঈশ্বর-সাধক যুক্তি সকল খগুন করিয়াছেন ; এ বিষয়ের প্রতিপোষণার্থ দৰ্শনংগ্রহকারও সৰ্ব্বদর্শনসংগ্রহে নানা যুক্তি উদ্ধত করিয়াছেন, ঐ সমস্ত পরে লিখিত হইতেছে । কিন্তু সাঙ্খrপ্রবচন ভাষ্যকার বিজ্ঞানভিক্ষু কহেন যে, কপিলদেবের মতেও ঈশ্বর আছেন, তবে যে “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ” এই সুত্র রচনা করিয়াছেন সে কেবল বাদীকে জয় করিবার আশয়ে প্রেীঢ়িবাদ মাত্র । অতএব ‘ঈশ্বরাভাবাৎ” এরূপ স্থত্র রচনা না করিয়া “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ” এই সুত্র রচনা করিয়াছেন । ইহার তাৎপৰ্য্য এই, কপিলদেব বাদীকে কহিতেছেন, তুমি যুক্তি দ্বারা ঈশ্বর সিদ্ধি করিতে পারিলে না এইমাত্র : ফলতঃ ঈশ্বর আছেন ; ঈশ্বর নাই ইহা কপিলদেবের অতিপ্রেভ

নহে ।

“যেমন ঘট পটাদি জড়াত্মক বস্তু কোন চেতন পদার্থের অধিষ্ঠান ব্যতিরেকে স্বকাৰ্য্যালুষ্ঠানে প্রবৃত্ত ও শক্ত হয় না, কিন্তু যখন সচেতন বস্তু অধিষ্ঠাত হইয়া উহাদিগের আনয়নাদি করে, তখনই ঐ ঘট পটাদি স্বকার্য জলাহরণাদিতে প্ররক্ত ও শক্ত হয়, সেইরূপ প্রকৃতিও জড়াত্মক, সুতরাং কি রূপে তিনি কোন সচেতন অধিষ্ঠাতা ব্যতিরেকে কাৰ্য্যকরণে প্রবৃত্ত বা শক্ত হইবেন ? অতএব স্বীকার করিতে হইবে যে, প্রকৃতিরও এক জন সচেতন ব্যক্তি অধিষ্ঠাতা আছেন ; কিন্তু জীবাত্মকে প্রকৃতির অধিষ্ঠাত বলিতে পারা যায় না, যেহেতু জীবগণ স্থূলদশী ও অসৰ্ব্বজ্ঞাদি দোষে দৃষিত ; জীবের এমন কি শক্তি অাছে যে জগৎ করণে প্রবৃত্ত প্রকৃতির অধিষ্ঠাতা হইতে পারে, সুতরাং তাদৃশ শক্তিসম্পন্ন সৰ্ব্বজ্ঞ সৰ্ব্বারাধ্য পরমেশ্বরের সত্তা স্বীকার করিতে হইবেক । তিনিই প্রকৃতির অধিষ্ঠাতা” এই যুক্তি দ্বারা ঈশ্বর সিদ্ধ করা, যেমন ‘কাকে তোমার কর্ণ লইয়া গেল” এই বাক্য শ্রবণ করিবামাত্র নিজ কৰ্ণে হস্তার্পণ না করিয়াই কাকের প্রতি ধাবন করা উপহসনীয়, তত্ত্ব ল্য ; কারণ চেতনের অধিষ্ঠান ব্যতিরেকে জড় বস্তু যে কাৰ্য্য করিতে পারে না ইহাই আদৌ অসিদ্ধ, যে হেতু চেতনাধিষ্ঠান ব্যতিরেকেও অনেক জড় বস্তুর কার্যকরণে প্রবৃত্তি দেখা যাইতেছে, যথা অভিনবজাত কুমারের বৃদ্ধি ও জীবন ধারণার্থ জডাত্মক দুগ্ধ (৯) প্রবৃত্ত হইতেছে এবং জনগণের উপকারার্থ সময়ে সময়ে অতি জড় যে মেঘ সেও বর্ষণে প্রবৃত্ত হইতেছে । অতএব জীবের কৈবল্যার্থে জড়াত্মক প্রকৃতিও জগন্নিৰ্ম্মাণে প্ররক্ত হইবে, তন্নিমিত্ত ঈশ্বর স্বীকারের প্রয়ে|

ক্সন কি ৷ ?

আর ঈশ্বর সংস্থাপনের অাশয়ে ‘ঈশ্বর জীবের প্রতি করুণা করিয়া প্রকৃতিকে জগন্নিৰ্ম্মাণে প্রবৃত্ত করেন, বা স্বয়ংই প্ররক্ত হয়েন” এই কথা বল, যেমন তপনজনিত সস্তাপ

শাস্তির অাশয়ে প্রজ্বলিত জ্বলনের সেবন করা সন্তাপ নিবর্তৃক ন হইয়া সমধিক সন্তাপের নিমিত্তই হইয় উঠে, সেই রূপ (বিবেচনা করিয়া দেখিলে) ঈশ্বরসাধক ন হইয়৷ ঈশ্বরের ঈশ্বর ত্বাদির ব্যাঘাতকই হইয় উঠে । দেখ, করুণাশব্দে পরের দুঃখ নিবারণেচ্ছ বুঝায় । সুতরাং ‘ঈশ্বর জীবের প্রতি করুণ করিয়া সৃষ্টি করেন” ইহার অর্থ এই হইল, পরমেশ্বর জীবের দুঃখ নিবারণেচ্ছায় সৃষ্টি করেন ; কিন্তু দৃষ্টির পূৰ্ব্বে কাহারও দুঃখ ছিল না । দুঃখ ও পরমেশ্বর সৃষ্ট করিয়াছেন, ইহা প্রতিবাদীরাও স্বীকার করিয়া থাকেন ; তবে ঈশ্বর প্রথমতঃ কাহার নিবারণশয়ে সৃষ্টিকাৰ্ঘ্যে প্রবৃত্ত হইলেন, আর কি হেতুই ব| সৰ্ব্বজ্ঞ পরমেশ্বরের এইরূপ অসৎ দুঃখের নিবারণে ইচ্ছ। হইল ? যদি রোগ থাকে, তবেই তন্নিবারণার্থে ঔষধ সেবন করিতে হয়, নতুবা কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি সুস্থ থাকিয়াও ঔষধ সেবনে ইচ্ছা করে ? বরং তাহার প্রতি সৰ্ব্বতোভাবে দ্বেষই প্রকাশ করিয়া থাকে । আর যেমন সুস্থ ব্যক্তির ঔষধ সেবনে রোগ হইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা বলিয়। যদি কোন সুস্থ ব্যক্তি ঔষধ সেবন করিতে প্রবৃত্ত হয়, তবে সকলেই তাঁহাকে অজ্ঞ ও অবিবেচক বলিয়া থাকে, সেইরূপ যদি ঈশ্বর জীবগণের দুঃখ না থাকাতেও তন্নিবারণে সমুৎসুক হইয়া সৃষ্টি করিতে প্রবৃত্ত হয়েন, তবে কোন ব্যক্তি ন স্বীকার করিবেন যে, ঈশ্বর অজ্ঞ ও অবিবেচকের ন্যায় সৃষ্টি করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন এবং ঈশ্বরের সৰ্ব্ব জ্ঞতা ও বিবেচকতাদি ঈশ্বরত্ব শক্তিই বা আর কোথায় রহিল ; ঈশ্বর অন্মদাদি অপেক্ষাও অজ্ঞ হইয়া উঠিলেন । কিঞ্চ, এই দোষ পরিহারের নিমিত্ত জীবে দুঃখ সঞ্চারের পর পরমেশ্বর করুণা করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন এই কথা বলাও অজ্ঞান জলধির তরঙ্গস্বরূপ বলিতে হইবে, যে হেতু তাহা হইলে “জীবগণের দুঃখের আবির্ভাব হইলে ঈশ্বর তন্নিবারণের আশয়ে সৃষ্টি করেন এ জন্য সৃষ্টি দুঃখকে অপেক্ষা করিতেছে, এবং সৃষ্টি হইলে দুঃখের আবির্ভাব হয় এজন্য দুঃখও সৃষ্টিসাপেক্ষ” এই পরস্পর সাপেক্ষতারূপ অন্যোন্যাশ্রয় দোষ ঘটে । আরও দেখ, যদি পরমেশ্বর করুণ করিয়াই সৃষ্টি করিতেন, তাহা হইলে কখন কেহ সুখী বা দুঃখী হইত না, যেহেতু সকলেই পরমেশ্বরের কৃপার পাত্র এবং পরমেশ্বর পক্ষপাতাদি দোষ শূন্য । অতএব সিদ্ধ হইল যে, পরমেশ্বর নাই কেবল অচেতন প্রকৃতিই জগন্নিৰ্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইতেছেন ।

আর যেমন নিৰ্ব্ব্যাপার অয়স্কান্ত মণির সন্নিধানে জড়াস্মক লৌহেরও ক্রিয়া হইতেছে, সেইরূপ জীবাত্মক পুরুষ সন্নিধানে জড় স্বরূপ প্রকৃতিরও জগন্নিৰ্ম্মাণার্থ ক্রিয়া হওয়া অসম্ভাবিত নহে। এবং যেরূপ স্বামিকর্তৃক দৃষ্টদোষা স্ত্রী আর স্বামির নিকটে যায় না তাহার নিকট হইতে নিৰ্বত্ত হয়, সেইরূপ তত্ত্বজ্ঞানিপুরুষ কর্তৃক দৃষ্টদোষা প্রকৃতি র্তাহ। হইতে নিৰ্বত্ত হয়েন , আর র্তাহার সংসার সৃষ্ট করেন না । অথবা যেমন নৰ্ত্তকী নৃত্যদর্শনরূপ স্বকার্য্য সম্পাদন করিয়া নিবৃত্ত হয়, সেইরূপ প্রকৃতিও পুরুষকে সংসাররূপ রঙ্গ দর্শইয়া তাহা হইতে নিৰ্বত্ত হয়েন। আর যথা কেবল পঙ্গু বা কেবল অন্ধ ব্যক্তি স্বাভি লষিত স্থানে গমন করিতে পারে ন। কিন্তু যদি অন্ধ ব্যক্তি পদুকে স্বকীয় স্বন্ধে আরোহণপুরঃসর তৎপ্রদর্শিত পথ অবলম্বন করে, তবে উভয়েই স্বাভিলষিত সম্পাদনে সমর্থ হয় এজন্য ঐ উভয় পরস্পর সাপেক্ষ ; সেইরূপ প্রকৃতি পুরুষ সংযোগে (অর্থাৎ পুরুষকর্তৃক অভেদে দৃষ্ট হইয়াই) তাহার সংসার সৃষ্ট করেন এজন্য প্রকৃতি পুরুষসাপেক্ষ, আর পুরুষও প্রকৃতিগত সুখ দুঃখকে আত্মগত বিবেচনা করিয়া তন্নিবারণাভিলাষে মুক্তি প্রার্থনা করেন । ঐ মুক্তি প্রকৃতির সহিত পুরুষের অন্যতাখ্যাতি (অর্থাৎ ভেদজ্ঞান স্বরূপ তত্ত্বজ্ঞান) ব্যতিরেকে জন্মে না, সেই তত্ত্বজ্ঞান প্রকৃতি দ্বারাই সম্পাদিত হয়, প্রকৃতি ব্যতীত সন্তুবে না এ জন্য পুরুষও প্রকৃতি সাপেক্ষ । অতএব সিদ্ধ হইল যে, প্রকৃতি ও পুরুষ পরস্পরসাপেক্ষ ।

প্রমাণ ত্ৰিবিধ ; প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শ দ। এই মতে সকল কাৰ্য্যই সৎ, অর্থাৎ সকল কাৰ্য্যই উৎপত্তির পূৰ্ব্বে স্ব স্ব কারণে স্থম্ম রূপে সংসত্ত থাকে, পরে যখন আবির্ভূত হয় তখন তাহাকে উৎপন্ন কহে, আর যখন তিরোভূত হয় অর্থাৎ পুনরায় নিজ কারণে বিলীন হয় তখন তাহকে বিনষ্ট কহে । বস্তুতঃ কেন কার্য উৎপন্ন বা বিনষ্ট হয় না । দেখ তিলের, ধান্যের ও স্ত্রীস্তনের অন্তরে যথাক্রমে ভৈল, তণ্ডল ও দুগ্ধ সৰ্ব্বদাই আছে ; কিন্তু যখন অনুক্রমে ভাহাদিগের পীড়ন, অবঘাত ও দোহন করা যায়, তখনই তৈল্য, তণ্ডল ও দুগ্ধ উৎপন্ন হইল, এরূপ ব্যবহার হইয়া থাকে, নতুবা পূৰ্ব্বে কেহ ঐরূপ ব্যবহার করে না । কিঞ্চ, যেমন কৃষ্মের অঙ্গ যখন বহির্নিঃসৃত হয় তখনই আবির্ভূত হইল, আর যখন অন্তর্নিবিষ্ট হয় তখনই তিরোভূত হইল, এইরূপ ব্যবহার হইয়া থাকে, সেইরূপ যখন কারণ হইতে কাষ বহির্নিঃসৃত হয় তখনই আবির্ভূত ও উৎপন্ন হইল, এইরূপ ব্যবহার হইয় থাকে ; আর যখন কারণে প্রবেশ করে তখন তিরেভূত ও বিনষ্ট হইল, এইরূপ ব্যবহার হইয়া থাকে। এতন্মতবলম্বীর নৈয়ায়িক ও বৈশেষিক মতসিদ্ধ অসৎ বস্তুর উৎপত্তি ও সৎ বস্তুর বিনাশ স্বীকার করেন না । কারণ যদি কাৰ্য সকল পূৰ্ব্বে অসৎ থাকে, তবে তাহকে পরে সৎ করা কাহার সাধ্য ! এক বস্তুর পূৰ্ব্বে যেরূপ স্বভাব থাকে পরেও সেইরূপ স্বভাব থাকে কখনই স্বভবের বৈলক্ষণ্য হয় না ; দেখ, অদ্যাপি এমন ব্যক্তি দৃষ্ট বা শ্রীতিগোচর হয়ে ন ন যিনি নীল বস্তুকে পীত বা মচুৰ্য্যকে গো, স্ত্রীকে পুরুষ, বন্ধ্যার পুত্রোৎপাদন করিতে পারেন । আরও দেখ, যখন কারণ হইতে কায্য অভিন্ন হইতেছে, তখন কারণকে সৎ, আর কার্য্যকে তাসৎ বল কিরূপে সম্ভবে । এ স্থলে আপাততঃ এরূপ আপত্তি হইতে পারে, “ যদি কায কারণের ভেদ না থাকে তবে তন্তুর কার্য পট দ্বারা যেরূপ আবরণাদি হইতেছে, তন্তু দ্বার সেরূপ না হয় কেন ?” কিন্তু এ আপত্তি কোন ক্রমেই বিচারসহ হইতে পারে না । দেখ, যেমন এক জন বাহক দ্বারা শিবিক বহন হয় ন৷ এবং এক মুষ্টি তৃণ দ্বারা অবিরত বিগলিত বারিধারা নিবারিত হয় না, কিন্তু যথাক্রমে বাহক ও তৃণমুষ্টি সমূহ যথানিয়মে একত্রিত হইলে অনায়াসেই ঐ ঐ কাৰ্য সম্পাদিত হয়, সেইরূপ প্রত্যেক তন্তু দ্বারা আবরণাদি কার্য ন হইলেও অদৃশ বিলক্ষণ সংস্থান দ্বারা পটভাবাপন্ন তন্তু সমূহ দ্বারা আবরণাদি কার্য হইবার বাধা কি ? এবং পট রূপে অপরিণত তন্তু দ্বারাই বা আবরণাদি হইবার সম্ভাবনা কি ? অতএব কার্যকারণের অভেদ স্বীকার করিলে কোন হানি নাই, বরঞ্চ ভেদ স্বীকার করিলে অনেক দোষ ঘটে। দেখ, যে বস্তু যে বস্তু হইতে ভিন্ন হয়, সে বস্তুর সহিত সে বস্তুর, হয় সংযোগ, না হয় অপ্রাপ্তি থাকে ; যেমন পৰ্ব্বতের সহিত বহির ও বস্ত্রের সহিত শরীরদির সংযোগ আছে, এবং হিমগিরির সহিত বিন্ধীগিরির অপ্রাপ্তি রহিয়াছে । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই প্রতিবাদী মহাশয়েরা পটের সহিত তন্তুর সংযোগ বা অপ্রাপ্তি কিছুই স্বীকার করিবেন না, অথচ পটের সহিত তন্তুর ভেদ স্বীকার করিবেন । যাহা হউক কাৰ্য্য কারণের ভেদ পক্ষে এক প্রবল দোষ আছে ; দেখ, বিভিন্ন বস্তুর গুরুত্বাদি গুণ বিভিন্ন এবং ঐ ঐ গুণের কার্যও বিভিন্ন, আর বিভিন্ন বস্তু দ্বয় একত্রিত হইলে ঐ উভয়ের দ্বিগুণ গুরুত্ব নিবন্ধন গুরুত্বের কার্যও দ্বিগুণ হয়। যথা একপলিক স্বস্তিকের গুরুত্ব নিবন্ধন তুলাদণ্ডের যাদৃশ অবনতি হয় দ্বিপলিক স্বস্তিকের বা এক পলিক স্বস্তিকদ্বয়ের গুরুত্বদ্বার ততোধিক অবনতি হয় ইহা বালকেরও অবিদিত নহে । সুতরাং কার্য্য কারণের বিভিন্নরূপত স্বীকার করিলে ইহাও স্বীকার করিতে হইবে যে, কার্য্যের গুরুত্ব হইতে কারণের গুরুত্ব ভিন্ন, এবং ঐ ঐ গুরুত্ব দ্বয়ের কার্য্যও ভিন্ন, আর কার্য্য কারণ একত্র হইলে ঐ উভয়ের দ্বিগুণ গুরুত্বের কার্য ও দ্বিগুণ হয় । কিন্তু ইহাতে প্রতিবাদী মহাশয়দিগের কোন উপকার নাই, স্বর্ণকারাদিরই অধিক লাভের সম্ভাবন ; কারণ একপলিক স্বস্তিকের সহিত তোলিত করিয়া যে স্বর্ণ স্বর্ণকার-হস্তে সমর্পণ করা যায়, সেই স্বর্ণই অলঙ্কার হইলে দ্বিপলিক স্বস্তিকের সমতুল হইবার সম্ভাবনা, যেহেতু ঐ একপলিক স্বর্ণের গুরুত্ব, আর তৎকার্য অলঙ্কারের গুরুত্ব উভয়ে মিলিয়া দ্বিপলিক স্বস্তিকের গুরুত্ব সদৃশ হইতেছে, সুতরাং স্বর্ণকারদিগের এক মুদ্রায় এক মুদ্রণ লাভের সম্ভাবনা, ইহাতেই বোধ হয়, স্বর্ণকারের প্রতি করুণা করিয়া অথবা তদত্ত তৈলবট গ্রহণের আশয়ে নৈয়ায়িক মহাশয়ের কার্য কারণের ভেদ ব্যবস্থার আবিষ্কার করেন, নতুবা তাদৃশ স্থম্ম বুদ্ধি মহাশয়দিগের ভ্রম হইয়াছে এ কথা কে বলিবে । ফলতঃ কার্য যে অসৎ নয় ইহা ভগবদ গীতাতেই লিখিত আছে, যথা (১০)“নাসতে বিদ্যতে ভাবে নাভাবে বিদ্যতে সভঃ” ইতি ।

এই রূপে যখন স্থির হইল যে, কাৰ্য্য সৎ এবং ঐ কাৰ্য উৎপত্তির পূৰ্ব্বে সৎ স্বরূপ নিজ কারণে স্থম্ম রূপে থাকে, তখন “অসৎ কারণ হইতে সৎস্বরূপ কাৰ্য হয়” এই সেগভদিগের সিদ্ধান্ত যে নিতান্ত ভ্রান্তিমূলক ও অগ্রাহ তাহ। আর বলিবার অপেক্ষা কি । আরও দেখ, অসৎ বস্তু কখনই কারণ হইতে পারে না, অদ্যাপি কোন স্থলে কোন ব্যক্তি কখন দেখেন নাই, বা শ্রবণ করেন নাই যে, বন্ধ্যার পুত্র কোন কাৰ্য্য করিতেছে, এবং শশশৃঙ্গ দ্বারা কোন অনিষ্ট হইল । কিন্তু এ জন্য বৈদান্তিকেরা যে কহেন “যেমত রজুতে সপের ভ্রম হয় সেইরূপ সচ্চিদানন্দ পরাৎপর ব্রহ্মে এই জগতের ভ্রম হইতেছে, বাস্তবিক জগৎ সৎ নহে” ইহাও অনুচিত ও আশ্রোতব্য ; কারণ রজ্জতে সৰ্পের জ্ঞানকে যে ভ্রম বলাযায় তাহার কারণ বাধদর্শন, সেই রূপ সৎকাৰ্য্য বিষয়ে কোন বাধক দেখিতেছি না, তবে ভ্রম বলিয়া ভ্রান্ত হইব কেন ? আরও দেখ, সদৃশ বস্তুতেই সদৃশ বস্তুর ভ্রম হইয়া থাকে, নতুবা বিসদৃশ বস্তুতে বিসদৃশ বস্তুর ভ্রম কাহারও কখন হয় না, রৌপ্যে। কখনই স্বর্ণের ভ্রম হয় না । সুতরাং জড়াত্মক জগতের ভ্রম কি রূপে অতি স্বচ্ছ সচ্চিদানন্দে সম্ভবে ? অতএব প্রত্যক্ষের অপলাপ করিয়া জগতের মিথ্যাস্তু স্বীকার করা কেবল নাস্তিকতা প্রকাশ মাত্র সন্দেহ নাই |

সৃষ্টির প্রক্রিয়া এইরূপ, প্রথমতঃ প্রকৃতি হইতে মহত্তত্ত্বের উৎপত্তি হয়, মহত্তত্ত্ব হইতে অহঙ্কার হয়, সত্ত্বগুণোদ্রিক্ত ঐ অহঙ্কার হইতে জ্ঞানেন্দ্রিয়, কৰ্ম্মেন্দ্রিয় ও মনের উৎপত্তি হয়, রজোগুণোদ্রিক্ত অহঙ্কার হইতে পঞ্চতন্মাত্র জন্মে, এবং পঞ্চভন্মাত্র হইতে পঞ্চ মহাভূত জন্মে । তাহারও প্রণালী এইরূপ, শব্দ তন্মাত্র হইতে আকাশ হয়, আকাশের গুণ শব্দ। শব্দ তন্মাত্র ও স্পর্শ তন্মাত্র এই উভয় হইতে বায়ু জন্মে, বায়ুর গুণ শব্দ ও স্পর্শ । ঐ দুই তন্মাত্রের সহিত রূপ-তন্মাত্র হইতে তেজঃ জন্মে, তেজের গুণ শব্দ, ম্পর্শ ও রূপ। ঐ তিন তন্মাত্রের সহিত রস তন্মাত্র হইতে জল হয়, জলের গুণ শব্দ, স্পর্শ, রূপ, আর রস। ঐ চারিটা অন্মাত্র সহকারে গন্ধ তন্মাত্র হইতে পৃথিবী হয়, পৃথিবীর গুণ শদ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ। এই পঞ্চ মহাভূত হইতেই চতুর্দশ ভূবন ও তদন্তবর্তী কাৰ্য্যজাত হয় ।

——————

(১) আধ্যাত্মিক দুঃখ দ্বিবিধ ; শারীর আরর মানস । বাত, পিত্ত ও শ্লেষ্ম রূপ ধাতুত্রয়ের বৈষম্য নিমিত্ত জ্বরাদি রোগ জন্য যে দুঃখ তাহাকে শারীর; আর কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, ভয়, ঈর্ষা, বিষাদ ও প্রিয় বস্তুর আদর্শনাদি জন্য যে দুঃখ তাহাকে মানস দুঃখ কহে ।

(২) মনুষ্য, পশু, পক্ষী, সর্প, বৃশ্চিক ও স্থাবরাদির দ্বারা যে দুঃখ হয় তাহাকে আধিভৌতিক দুঃখ কহে ।

(৩) যক্ষ রাক্ষস বিনায়ক গ্রহাদির আবেশ নিবন্ধন দুঃখকে আধিদৈবিক দুঃখ কৰে ।

(৪) মুল=আদি, প্রকৃতি=কারণ বিশেষ, মূলপ্রকৃতি=আদি কারণ |

(৫) এই সকল বচনের তাৎপর্য্য এইঃ মায়াবাদ শাস্ত্রই অসৎ শাস্ত্র এবং বাহ্য আস্তিক শাস্ত্র বলিয়া প্রসিদ্ধ; (কিন্তু ইহা বাস্তবিক আস্তিকশাস্ত্র নয়, নাস্তিক শাস্ত্র)। কলিকালে ব্রাহ্মণরূপ ধারণ করিয়া আমিই এই শাস্ত্র আবিষ্কার করিয়াছি। লোকনিন্দিত কতকগুলি শ্রুতির মথাশ্রুত যে বিরুদ্ধার্থ আছে তাহাই প্রদর্শন করাইয়া কর্মকাণ্ড ত্যাগের কথা লিখিয়াছি। এবং সৰ্ব্বকৰ্ম্ম ত্যাগ প্রযুক্ত যে নৈষ্কৰ্ম্ম্য তাহাও লিখিয়াছি। পরমাত্মার সহিত জীবাত্মার ঐক্য প্রদর্শন করিয়াছি। এবং ব্রহ্মের যথার্থ রূপ যে নির্গুণ তাহাও প্রদর্শিত হইয়াছে। কলিযুগে নিখিল জগতের নাশই ইহার প্রধান উদ্দেশ্য । আমি জগতের সঙ্ঘারের আশয়ে বেদের অযথার্থ অর্থের সহিত মায়াবাদ মহাশাস্ত্র প্রকাশ করিয়াছি। বাস্তবিক ইহা অবৈদিক অর্থাৎ বেদের তাৎপর্য্য নহে, বেদ মুলক মাত্র ।

(৬) ইহার তাৎপর্য্যার্থ এইঃ বেদ সকল পরস্পর বিভিন্ন, শ্রুতি সকলও বিভিন্ন এবং তাঁহাকেই মুনি বলা যায় না যাঁহার মত ভিন্ন নয়। অতএব বেদ শ্রুতি ও শ্রুতি ও স্মৃত্যাদি দ্বারা ধৰ্ম্ম তত্ত্ব নিশ্চয় করা কঠিন, ধৰ্ম্ম তত্ত্ব পৰ্ব্বতের গুহার ন্যায় নিভৃত স্থানে সংস্থাপিত আছে। অতএব মহাত্মারা যে পথ অবলম্বন করিয়া গিয়াছেন তাহাই অবলম্বনীয়।

(৭) কেহ কেহ রাগের বিরোধী ভাব পদার্থকে বৈরাগ্য কহে।

(৮) মেদঃ।

(৯) এস্থলে কেহ বলেন দুগ্ধ বহির্নিগমে প্রবৃত্ত হয়, আর কেহ করেন উহা নিজ জন্মে প্রবৃত্ত হয়  অর্থাৎ বালকের নিমিত্তই জন্মে।

(১০) অসৎ বস্তুর কখনই উৎপত্তি হয় না । আর সদ্বস্তুর কখন অভাব হয় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *