০৬. সামবেদীয় নিষ্ক্রমণ

সামবেদীয় নিষ্ক্রমণ *

অনুবাদ–সন্তানের জন্মদিন হইতে তৃতীয় শুক্লপক্ষের তৃতীয় তিথিতে পিতা প্রাতঃকালে কুমারকে স্নান করাইয়া সায়ংসন্ধ্যা অতীত হইলে চন্দ্রাভিমুখে করপুটে অবস্থিতি করিবেন। মাতা কুমারকে বিশুদ্ধ বস্ত্রে আচ্ছাদন পূর্বক দক্ষিণ দিকে পতির বামপার্শ্বে পশ্চিমাভিমুখী হইয়া উত্তরশির কুমারকে তৎপিতার হস্তে প্রদান করিবেন। তৎপরে মাত্রা, পতির পৃষ্ঠ ভাগে উত্তরদিকে গমন পূর্বক চন্দ্রাভিমুখী হইয়া ভর্তা দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থান করিবেন। অনন্তর পিতা মুলের লিখি ঋষ্যাদি সহ মন্ত্রত্রয় পাঠ করিবেন। অর্থাৎ “হে চন্দ্র! ত্বদী অতি শীতল আলোকে আলোকিত এবং সন্তানের আনন্দ অন্তৰ্ম্মধ্যে আত্মার স্থান নিহিত রহিয়াছে। আমি সে ব্ৰহ্মকে অবগত আছি এবং সম্মাননা করি। আমি যেন পুঞ্জ সম্বন্ধীয় কোনরূপ অঘ প্রাপ্ত না হই।১।

যাহা পুথিবী অমৃত এবং দ্যুলোকে চন্দ্রমধ্যে আশ্রিত, আমি তাহা অবগত আছি। আমি যেন পুত্রসম্বন্ধীয় কোনরূপ ব্যসন প্রাপ্ত না হই।২।

হে ইন্দ্র! হে অগ্নে! আপনারা উভয়ে আমার সন্তানের কল্যাণ বিধান করুন। আপনারা লোকপাল। যেন আমার কুমার জননী সহ অবস্থিত থাকিয়া কোন প্রকার বিপদাপন্ন না হয়।৩।

এই তিনটি মন্ত্র পাঠ করিবে। এই মন্ত্রত্রয় জপ করিয়া কুমারকে চন্দ্র দেখাইতে হয়। তদনন্তর পিতা চন্দ্রদেবকে অর্ঘ্য প্রদান করিবেন। “হে ক্ষীরোদার্ণবসম্ভূত! হে অত্রিনেত্রোদ্ভব! হে শশাঙ্ক! আপনি রোহিণী সহ আমার এই অর্ঘ্য গ্রহণ করুন।” এই মন্ত্র পাঠ করিয়া অর্থ প্রদান করিতে হয়। অনন্তর পিতা ঊর্ধ্বপর শুক্লপক্ষত্ৰয়ে তৃতীয়া তিথিতে সাংসন্ধ্যাকালে চন্দ্রাভিমুখ হইয়া জলাঞ্জলি গ্রহণ পূর্বক প্রজাপতি ঋষিরষ্ট ছন্দশ্চন্দ্রো দেব কুমার চন্দ্রদর্শনে বিনিয়োগঃ। ওঁ যদশ্চমসি কৃষ্ণং পৃথিব্যা হৃদয়ং শ্রিতং। তদহ বিঙ্গান্ত পশহং পৌত্রমঘং রুদং।” এই মন্ত্র পাঠ করিবে অর্থাৎ “চন্দ্রের অভ্যন্তরে যে কৃষ্ণবর্ণ লাঞ্ছন আছে, তাহা পৃথিবীর হৃদয়েও নিহিত রহিয়াছে; উহা আমি অবগত আছি এবং দর্শন করিতেছি। পুত্রসম্বন্ধীয় শোক নিবন্ধন যেন আমাকে ক্রন্দন করিতে না হয়।” এই মন্ত্র পাঠ করিবে। ৪।

এই মন্ত্র পাঠ করিয়া গৃহীত জলাঞ্জলি নিক্ষেপ করিবে।** তূষ্ণীভাবেও দুইবার জলাঞ্জলি দিতে হয়। তৎপরে বামদেব্যগান পূর্বক কল্যাণাধারণ করিয়া গৃহ প্রবেশ করিবে। এই নিষ্ক্রমণকৰ্ম্মাঙ্গভূত উদীচ্য কৰ্ম্ম পত্নীপুত্রোপাদান বিরহ হইলেও প্রবাসী পিতা করিতে পারেন।

ইতি সামবেদীয় নিষ্ক্রমণ।

————-

* দশবিধ সংস্কার ভিন্ন নিষ্ক্রমণ নামে আরও একটী শৈশব সংস্কার আছে। জন্মদিন হইতে তৃতীয় শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথিতেই ইহা কর্তব্য। প্রথমবারে নান্দীমুখ শ্রাদ্ধাদি সহকায় ইহা সম্পন্ন করিতে হয়; তদনন্তর সন্তানের একবর্ষ বয়ঃক্রম পূর্ণ হওয়া যাবৎ প্রত্যেক শুক্লা তৃতীয়া রাতে করণীয়।

** এই সংস্কারে যে কয়টী মন্ত্রের উল্লেখ হইল, ইহাতে স্পষ্টই প্রতীত হইতেছে যে, সাক্ষাৎ সম্বন্ধে পিতা আপনার জন্যই প্রার্থনা করিতেছেন, অধিকন্তু ইহাতে আত্মার বিভুত্ব, পুত্ৰাৰ্থ পিতার আন্তরিক ব্যাকুল প্রভৃতিই প্রকাশিত হইতেছে। এই কারণে এই সংস্কারটাকে মুখ্য সংস্কারের মধ্যে গণ্য করা যাইতে পারে না। ইহা অন্যান্য, সংস্কারের ন্যায় গৌরবান্বিতও নহে। ইহা এক প্রকার পুষ্টিসাধক সংস্কার বলিয়া অভিহিত হইতে পারে।