ঈশা ব্যসমিদং সর্বং যতকিঞ্চ জগত্যাং জগত্।।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্।। ১।।
শান্তিপাঠ।–যে সকল পদার্থ, ইন্দ্রিয়ের অগোচর (সূক্ষ্ম), তাহা ব্রহ্ম দ্বারা পূর্ণ বা ব্যাপ্ত, যে সকল পদার্থ ইন্দ্রিয় গোচর তাহাও ব্রহ্ম দ্বারা ব্যাপ্ত এবং এই সমস্ত জগৎই পরিপূর্ণ ব্রহ্ম হইতে অভিব্যক্তি হইয়াছে; আর সেই পূর্ণ স্বভাব ব্রহ্মের পূর্ণতা জগদ্ব্যাপ্ত হইলেও তাহার পূর্ণতার হানি হয় না।
মূলানুবাদ।–জগতে যে কিছু পদার্থ আছে, তৎসমস্তই আত্মরূপী পরমেশ্বর দ্বারা আচ্ছাদন করিবে, অর্থাৎ একমাত্র পরমেশ্বরই সত্য, জগৎ তাহাতে কল্পিত—মিথ্যা, এই জ্ঞানের দ্বারা জগতের সত্যতা-বুদ্ধি বিলুপ্ত করিবে। [তাহাতেই তোমার হৃদয়ে আসক্তি-ত্যাগরূপ সন্ন্যাস আসিবে,] সেই ত্যাগ বা সন্ন্যাস দ্বারা আত্মার অদ্বৈত নির্ব্বিকার ভাব রক্ষা কর; কাহারো ধনে আকাঙ্ক্ষা করিও না।।১।]
শঙ্কর ভাষ্যানুবাদ
‘ঈশ্’ ধাতুর অর্থ ঐশ্বর্য্য বা শাসন-ক্ষমতা; যিনি এই জগতের শাসনে সমর্থ পরমাত্মা পরমেশ্বর, তিনিই এখানে ‘ঈশা’-পদের প্রতিপাদ্য। তিনি প্রত্যকরূপে (জীবরূপে) সর্ব্ব বস্তুর অভ্যন্তরে থাকিয়া, সমস্ত জগৎ যথানিয়মে শাসিত ও পরিচালিত করিতেছেন। সেই সর্ব্বাত্মরূপী পরমেশ্বর দ্বারা পৃথিবীস্থ সমস্ত বস্তুকে আচ্ছাদিত করিবে,–সর্ব্বত্র তাঁহার সত্তা উপলব্ধি করিবে। [অভিপ্রায় এই যে] জগৎকারণ পরমেশ্বরই জীবরূপে সর্ব্বদেহে বর্ত্তমান আছেন; এবং তাঁহার সংকল্পপ্রসূত স্থাবর-জঙ্গমময় এই জগৎ বস্তুতঃ মিথ্যা হইয়াও তাঁহাকে আশ্রয় করিয়াই সত্যের ন্যায় প্রতিভাত হইতেছে। সেই পরমাত্মরূপী আমিই এই জগৎ, আমার সত্তাই জগতের সত্তা, তদ্ভিন্ন জগতের আর পৃথক সত্তা নাই; এইরূপ যথার্থ সত্য জ্ঞানের দ্বারা জগতের সত্যতা ঢাকিয়া ফেলিবে, অর্থাৎ ‘জগত সত্য’ বলিয়া যে ভ্রম ছিল, তাহা বিলুপ্ত করিবে। যেমন চন্দন ও অগরুপ্রকৃতি গন্ধদ্রব্যসমূহ জলাদি-সংস্পর্শে কখন কখন দুর্গন্ধযুক্ত বলিয়া মনে হয় সত্য; কিন্তু ঘর্ষণ করিলেই তাহার স্বভাবসিদ্ধ মনোহর সৌরভ প্রকাশ পায়, এবং আগন্তুক দুর্গন্ধ দূর করিয়া দেয়, ঠিক সেইরূপ, কর্ত্তৃত্ব-ভোক্তৃত্বপূর্ণ, ভিন্ন ভিন্ন নাম (সংজ্ঞা), রূপ (আকৃতি) ও চেষ্টা বা ক্রিয়া-সম্পন্ন এই সমস্ত জগৎ নিজে অসত্য হইয়াও, যথার্থ সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের আশ্রয়ে থাকিয়া সত্য বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে মাত্র; বস্তুতঃ উহা মিথ্যা—অধ্যস্ত মাত্র; এইরূপ সত্য ভাবনা দ্বারা জগতের সত্যতা-ভ্রম নিরস্ত হইয়া যায়।
উক্তরূপ যে লোক আপনাকে ঈশ্বরাংশ বলিয়া বুঝিতে পারে, তাহার আর পুত্র, সম্পদ বা স্বর্গাদি লোক-লাভের এষণা বা কামনা থাকে না; সুতরাং তদর্থ কর্ম্মেও অধিকার থাকে না; একমাত্র বাসনাত্যাগরূপ সন্ন্যাসেই অধিকার থাকে; তাহার ফলে সিএ লোক তখন সন্ন্যাস গ্রহণ করে। অতএব, তুমি তাদৃশ ভাবাপন্ন হইয়া, সন্ন্যাস দ্বারা আত্মাকে পরিপালন কর; অর্থাৎ জগতের মিথ্যাত্ব ভাবনাদ্বারা আত্মার আত্মত্ব (নির্ব্বাকারত্ব ও সত্যত্ব প্রভৃতি ভাবগুলি) রক্ষা কর। তুমি এইরূপে বাসনা পরিত্যাগপূর্ব্বক নিজের কিংবা পরের, কাহারো ধনের আকাঙ্খা করিও না। অথবা, ধন কাহার?—ধন ত কাহারও নহে, যাহা আকাঙ্খা করিতে পারা যায়। আত্মাই সমস্ত জগৎ, এবং সমস্ত জগৎই আত্মরূপ; সেইরূপ পরমেশ্বর-চিন্তা দ্বারা যখন সমস্ত বস্তুই মিথ্যা বলিয়া পরিত্যাগ করিয়াছ, তখন আর সেই মিথায় বিষয়ে আকাঙ্খা বা লোভ করা সঙ্গত হয় না। (৬) মন্ত্রে যে, ‘স্বিৎ’ কথাটি আছে, উহা অর্থহীন নিপাত শব্দ (বাক্যের শোভাবর্দ্ধকমাত্র)।।১।।
SUBRATA GHOSHAL
সুন্দর লিখেছেন
Nusrat Binta Ahasan
ব্যাপ নয় ব্যাপ্ত।বানানটি ঠিক করে দিন।
Tridib Bolar
How can I navigate to the next mantra
Bangla Library
দুঃখিত, উপনিষদ পুরোটা আমরা এখনও দিয়ে পারিনি।
Chandra Shekhar Chowdhury
উপনিষদের বিষয় বস্তু কি?