৬৩. লব-কুশ কর্ত্তৃক যজ্ঞের অশ্ব বন্ধন

লব-কুশ কর্ত্তৃক যজ্ঞের অশ্ব বন্ধন

ত্রৈলোক্য-বিজয় যজ্ঞ বড় পরিপাটী।
আতপ-তণ্ডুলে হোম করে কোটি কোটি।।
লক্ষ লক্ষ শুভ্র বস্ত্র ব্রাহ্মণের হাতে।
ইন্দ্র যম বরুণ যজ্ঞের চারিভিতে।।
প্রায় যজ্ঞ সমাপন হয় যেইক্ষণে।
দৈবের নির্ব্বন্ধ, ঘোড়া গেল সে দক্ষিণে।।
তুরঙ্গ পবনবেগে করিল প্রয়াণ।
উপস্থিত হইল বাল্মীকি-মুনি-স্থান।।
যে দিন যা হবে তাহা মুনি সব জানে।
লব কুশ দুই ভায়ে ডাক দিয়া আনে।।
মুনি বলে, লব কুশ শুনহ বিশেষ।
তপস্যা করিতে যাই চিত্রকূট-দেশ।।
তপোবন রক্ষা কর ভাই দুই জন।
তথায় বিলম্ব মম হবে বহু দিন।।
কারো সঙ্গে না করিও বাদ-বিসম্বাদ।
মুনি সব জানে যত পড়িবে প্রমাদ।।
দুই ভাই প্রণাম করিল করপুটে।
শিষ্যগণ সহ মুনি গেল চিত্রকূটে।।
বার শত শিষ্য সহ গেল মুনিবরে।
দুই ভাই খেলা করে দণ্ড লয়ে করে।।
ধনুর্ব্বাণ হাতে দুই ভাই খেলা খেলে।
মৃগ পক্ষী সব বিন্ধে বসি বৃক্ষতলে।।
সন্ধান পূরিয়া দুই ভাই এড়ে বাণ।
দেশ দেশান্তরে বাণ ভ্রমে স্থানে স্থান।।
নদ নদী বিন্ধে আর বিন্ধে যে পর্ব্বত।
এক দিনে যায় বাণ ছয় দিনের পথ।।
ষটচক্র বাণ যে বেড়ায় দেশে দেশে।
লক্ষ লক্ষ মৃগ মারি পুনঃ তূণে আসে।।
এমন বাণের শিক্ষা নাহি ত্রিভুবনে।
কেবা শিখাইল বাণ, কোথা হৈতে জানে।।
দুই ভাই বৃক্ষতলে নানা খেলা খেলে।
হেনকালে অশ্ব এল সে গাছের তলে।।
ঘোড়া দেখি হরিষ হইল দুইজন।
জয়পত্র তার ভালে দেখিল লিখন।।
রাজা দশরথের উৎপত্তি সূর্য্যবংশে।
তিনি সত্য পালিয়া গেলেন স্বর্গবাসে।।
তাঁর পুত্র রঘুনাথ ভুবন ভিতরে।
অযোধ্যায় রাজ্য করে চারি সহোদরে।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ শ্রীভরত শত্রুঘন।
অশ্বমেধ শ্রীরাম করেন আরম্ভন।।
সে অশ্বমেধের অশ্ব রাখে শত্রুঘন।
দুই অক্ষৌহিণী ঠাট তাহার ভিড়ন।।
জয়পত্র দেখি দুই ভাই কোপে জ্বলে।
সাহস করিয়া যোড়া বান্ধে বৃক্ষমূলে।।
দুই অক্ষৌহিণী ঘোড়া না পারে রাখিতে।
হেন ঘোড়া দুই ভাই বান্ধে ভালমতে।।
ঘোড়া বান্ধি মায়ের কাছে গেল দুই জন।
মিষ্ট অন্ন আদি দোঁহে করিল ভোজন।।