১৩. সীতার প্রতি চেড়ী গণের পীড়ন

ঘরে গেল দশমুখ ঠেকাইয়া চেড়ী।
সীতারে মারিতে সবে করে হুড়াহুড়ি।।
চেড়ী সব বলে সীতা শুন হিত-বাণী।
রাবণের মত স্বামী না পাইবে গুণী।।
অল্প ধন ধরে রাম অত্যল্প জীবন।
চৌদ্দযুগ রাজ্য রক্ষা করিবে রাবণ।।
সীতা বলে অল্প ধন অল্পই জীবন।
সেই সে আমার স্বামী কমল-লোচন।।
শুনিয়া সীতার কথা ক্রোধে সব চেড়ী।
কারে হাতে খাণ্ডা, আর কারো হাতে বাড়ি।।
তোর লাগি আমরা সকলে দুঃখ পাই।
মিলিয়া সকল চেড়ী আজি তোরে খাই।।
সকলে ধাইয়া যায় সীতারে মারিতে।
শ্রীরাম স্মরণ সীতা করয়ে মনেতে।।
দেখে শুনে হনুমান থাকি বৃক্ষ-আড়ে।
চেড়ীগণে মারি বলি মনে তোলে পাড়ে।।
মনে ভাবে নারী মারি করিব পাতক।
চেড়ীর বদলে মারি রাক্ষস কটক।।
সবাকার বুঝি আগে বাক্যে অবসান।
পিছে নহে চেড়ীদের বধিব পরাণ।।
নির্দ্দয়া নিষ্ঠুরা বলে প্রভাষা রাক্ষসী।
কাট আগে সীতারে কিসের তরে তুষি।।
না শুনিল সীতা আমা সবার বচন।
সীতারে কাটিয়া মাংস করিব ভক্ষণ।।
ভাল ভাল করিয়া উঠিল অশ্বমুখী।
প্রভাষার কথাতে হইল বড় সুখী।।
সূর্পণখা রাঁড়ী তবে হানে বাক্যবাণ।
গলে নখ দিয়া ইহার বধিব পরাণ।।
লক্ষ্মণ কাটিল যে আমার নাক কাণ।
সেই কোপে আজি তোর লইব পরাণ।।
আর চেড়ী আইল সে নাম বজ্রধারী।
চুলে ধরি সীতারে সে দিল চাক ভাউরী।।
মারিতে কাটিতে চাহে কার নাহি ব্যথা।
প্রাণে আর কত সবে কাঁন্দিছেন সীতা।।
বস্ত্র না সম্বরে সীতা কেশ নাহি বান্ধে।
শোকেতে ব্যাকুল ভূমে লোটাইয়া কান্দে।।
হনুমান মহাবীর আছে বৃক্ষডালে।
রোদন করেন সীতা সেই বৃক্ষতলে।।
কোথা গেলে প্রভু রাম কৌশল্যা শাশুড়ী।
অপমান করে মোরে রাবণের চেড়ী।।
যদি হয় লঙ্কায় রামের আগমন।
সবংশে নির্ব্বংশ হবে রাক্ষসের গণ।।
এত দুঃখ পাই যদি শুনিতেন কাণে।
লঙ্কাপুরী খান খান করিতেন বাণে।।
হেনকালে অন্তরীক্ষে থাক যদি চর।
মোর দুঃখ কহ গিয়া প্রভুর গোচর।।
আমার চক্ষুর জলের নাহিক বিশ্রাম।
এ লঙ্কায় সর্ব্বনাশ করুন শ্রীরাম।।
গৃধিনী শকুনি তুষ্ট হউক আকাশে।
শৃগাল কুকুর তুপ্ত রাক্ষসের মাসে।।
জানকীর শাপে লঙ্কা হইবে বিনাশ।
রচিল সুন্দরাকাণ্ড কবি কৃত্তিবাস।।