১২. রাবণের প্রতি মারীচের সুমন্ত্রণা প্রদান

ঔষধ না খায় যার নিকট মরণ।
যত বলে মারীচ, তা না শুনে রাবণ।।
রুষিয়া রাবণ কহে মারীচের প্রতি।
কুবুদ্ধি ঘটিল তোর, শুন রে দুর্ম্মতি।।
নরের গৌরব রাখ মন্দ বল মোরে।
আমি তোরে মারিলে কে কি করিতে পারে।।
আমার প্রতাপে সদা কম্পিতা মেদিনী।
মনুষ্যের কিবা কথা দেব দৈত্য জিনি।।
আইলাম আমি ঘরে, কর তিরস্কার।
আমার সম্মুখে মনুষ্যের পুরস্কার।।
বল বুদ্ধি হীন রাম হয় নরজাতি।
নিশাচরকুলে তুমি রাখিলে অখ্যাতি।।
নিষেধ করেন যদি দেব পঞ্চানন।
তথাপি আনিব সীতা, না যায় খণ্ডন।।
ভাণ্ডাইয়া রামেরে লইয়া যাহ দূরে।
হরিয়া আনিব সীতা পেয়ে শূন্য ঘরে।।
আমার সহিত যাবে, তোমার কি ভয়।
যুদ্ধ না করিব আমি, দেখহ নিশ্চয়।।
মারীচ শুনিয়া তাহা বলিল বচন।
সীতারে আনিলে হবে সবংশে নিধন।।
হরেছ অনেক নারী, পেয়েছ নিস্তার।
না দেখি নিস্তার রাজা হরিলে এবার।।
পুত্র মিত্র কলত্র বান্ধব পরিবার।
এইবার সবাকার হইবে সংহার।।
এক স্ত্রী আনিয়া মজাইবে যত নারী।
এই লোভে ছাড়িয়া চলহ লঙ্কাপুরী।।
সাগরের দর্প কর, সাগর কি করে।
সবংশে তোমারে রাম ডুবাবে সাগরে।।
আগেতে মরিব আমি রাম-দরশনে।
পশ্চাতে মরিবে তুমি, সহ পুরজনে।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণেরে ভাণ্ডাব কি মায়ায়।
না দেখি উপায় কিছু ঠেকিলাম দায়।।
আমার মায়ায় রাম যদি ছাড়ে ঘর।
একা না থাকিবে সীতা থাকিবে দোসর।।
যে ঘরে থাকিবে বীর সুমিত্রা-নন্দন।
ঘে ঘরে প্রবেশ করে, হেন কোন্ জন।।
যথা তথা যাহ তুমি বলি লঙ্কেশ্বর।
না কর সীতার চেষ্টা চলি যাহ ঘর।।
হরিতে গেলাম সীতা না পাইলাম তায়।
দেশে গিয়া এই কথা জানাও সবায়।।
যদি সীতা আনিতে নিতান্ত কর মন।
পরিণামে মম কথা করিবে স্মরণ।।
রাজা পাত্র করে যুক্তি হয়ে একমতি।
রথে চাপি উত্তরেতে চলে শীঘ্রগতি।।
ফুলিয়ার কৃত্তিবাস গায় সুধাভাণ্ড।
রাবণেরে মজাইতে বিধাতার কাণ্ড।।