০৩. শরভঙ্গ মুনির আশ্রমে শ্রীরামচন্দ্রের গমন ও মুনি কর্ত্তৃক ইন্দ্রের ধনুর্ব্বাণ দান এবং মুনির স্বর্গে গমন

শ্রীরাম বলেন, চল জানকী লক্ষ্মণ।
গোমতীর পারে শরভঙ্গ-নিকেতন।।
হেথা হৈতে সেই স্থান দ্বাদশ যোজন।
অদ্ভুত দেখিবা সে মুনির তপোবন।।
তপের প্রতাপে যেন জ্বলন্ত অনল।
শরভঙ্গ মুনির বিখ্যাত সেই স্থল।।
সেই দিন শ্রীরাম রহেন সেই স্থানে।
প্রভাতে উঠিয়া যান মুনি দরশনে।।
হেনকালে উপনীত তথা শচীনাথ।
করিবারে শরভঙ্গ মুনির সাক্ষাৎ।।
রথোপরে পুরন্দর আসে শুদ্ধবেশে।
দেবগণ বেষ্টিত তাঁহার চারি পাশে।।
রথ শোভা করে মণি মুকুতার ঝারা।
বায়ুবেগে চলে ঘোড়া, সারথির তাড়া।।
চারিদিকে শোভে নীল পীত পতাকায়।
দূরে থাকি রামচন্দ্র দেখিলেন তাঁয়।।
অনুজেয়ে বলেন, থাকহ এইক্ষণ।
জানি আগে আশ্রমে প্রবেশ কোন্ জন।।
ইন্দ্র আসি মুনিরে করিয়া নমস্কার।
নিবেদন করেন যে কার্য্য আপনার।।
শুন মুনি রামরূপী ত্রিলোকের নাথ।
আসিবেন তব সহ করিতে সাক্ষাৎ।।
রাক্ষস বধের হেতু তাঁর অবতার।
ত্রিকালজ্ঞ আপনিহ, জানাব কি আর।।
তব স্থানে রাখিলাম এই ধনুর্ব্বাণ।
আইলে তাঁহারে তুমি করিবা প্রদান।।
এত বলি স্বর্গপুরী যান পুরন্দর।
প্রবেশ করেন রাম যথা মুনিবর।।
প্রণাম করেন শরভঙ্গ মুনিবরে।
আশীর্ব্বাদ পূর্ব্বক কহেন মুনি তাঁরে।।
অনাথ ছিলাম বনে, আইলা হে নাথ।
যোগে যাঁরে দেখা ভার তিনিই সাক্ষাৎ।।
আইলে আপনি বিষ্ণু আমার নিবাস।
তোমা দরশনে মম হবে স্বর্গবাস।।
শত বৎসরের তপ করিলাম দান।
এই লহ ইন্দ্রদত্ত দিব্য ধনুর্ব্বাণ।।
শরীর ছাড়িব আমি অতি পুরাতন।
প্রাণ রাখিয়াছি রাম তোমার কারণ।।
ক্ষণেক লক্ষ্মণ সহ বৈস এইখান।
অগ্নিতে শরীর ত্যজি তব বিদ্যমান।।
শরভঙ্গ কুণ্ড কাটি জ্বালেন অনল।
জ্বলিয়া উঠিল অগ্নি গগন-মণ্ডল।।
কৌতুক দেখেন সীতা শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
মুনির সাহস দেখি বিস্মিত ভুবন।।
রাম রাম উচ্চারিয়া মুনি ঊর্দ্ধতুণ্ডে।
অগ্নি প্রদক্ষিণ করি ঝাঁপ দেন কুণ্ডে।।
পুড়িয়া মুনির দেহ হইল অঙ্গার।
অগ্নি হৈতে উঠে এক পুরুষ আকার।।
গোলোকে গেলেন মুনি পুণ্য ফলোদয়।
দেখিয়া সবার মনে হইল বিস্ময়।।
রাম দরশনে মুনি যান স্বর্গবাস।
রচিল অরণ্যকাণ্ড দ্বিজ কৃত্তিবাস।।