০২. জাম্বুবান কর্ত্তৃক হনুমানের জন্ম বৃত্তান্ত কথন

জাম্বুবান বলে বাছা তুমি মহাবল।
রাম-কার্য্য কর বাছা কেন কর ছল।।
অঙ্গদ বলেন ভাল মন্ত্রী জাম্বুবান।
কোন গুণ নাহি ধরে বীর হনুমান।।
জাম্বুবান-বাক্যে আর অঙ্গদের বোলে।
কেহ হাত ধরে তার কেহ করে কোলে।।
জাম্বুবান বলে বীর কর অবধান।
শুন হনুমানের যে জন্মের বিধান।।
কুঞ্জর-তনয়া নামে ছিল বিদ্যাধরী।
শাপে-বিশ্বামিত্রের সে হইল বানরী।।
অঞ্জনা নামেতে তার হইল কুমারী।
বিবাহ করিল তারে বানর কেশরী।।
মলয় পর্ব্বতোপরে কেশরীর ঘর।
অঞ্জনা লইয়া কেলী করে নিরন্তর।।
চৈত্র মাসে প্রবেশিতে বসন্ত সময়।
হেনকালে বায়ু গেল পর্ব্বত মলয়।।
একে তা বসন্ত তাহে মলয় পবন।
কামেতে চঞ্চলা অতি অঞ্জনার মন।।
অঞ্জনার রূপে বায়ু মোহিত হৃদয়।
লঙ্ঘিতে না পারে ঘরে কেশরী দুর্জ্জয়।।
অঞ্জনা গেলেন ভাবি নিজ অনুকূল।
ঋতুস্নান করিবারে নর্ম্মদার কূল।।
সন্ধান পাইয়া গিয়া দেবতা পবন।
বলে ধরি অঞ্জনারে করেন রমণ।।
অঞ্জনা বলেন যে করিলা জাতি নাশ।
দেবতা হইয়া তব বানরী বিলাস।।
দেবতা হইয়া তুমি করিলা কি কর্ম্ম।
কি হেতু করিলে নষ্ট পতিব্রতা ধর্ম্ম।।
পবন বলেন কিছু না কহ অঞ্জনা।
দেখিয়া তোমার রূপ পাসরি আপনা।।
কোপ সম্বরিয়া যে অঞ্জনা যাহ ঘরে।
মহাবীর হবে এক তোমার উদরে।।
আমার বীর্য্যেতে সেই হইবে কুমার।
আমার অধিক গতি হইবে তাহার।।
এত বলি পবন গেলেন নিজ স্থান।
অষ্টাদশ মাসে জন্মিলেন হনুমান।।
অমাবস্যা তিথিতে জন্মেন হনুমান।
সে দিনের কথা কহি কর অবধান।।
জন্মিয়া মায়ের কোলে করে স্তনপান।
প্রত্যূষে উদিত রক্তবর্ণ ভানুমান।।
রাঙ্গা ফল জ্ঞান করি ধরিতে তাঁহাকে।
সেখান হইতে লাফ দিলেন কৌতুকে।।
পর্ব্বত হইতে লক্ষ যোজন ভাস্কর।
এক লাফে উঠিলেন সে অতি দুষ্কর।।
দিবাকরে ধরিবারে যান হনুমান।
দৈবায়ত্ত তথা রাহু হয় অধিষ্ঠান।।
সূর্য্যকে করিতে গ্রাস রাহু উপস্থিত।
দেখি হনুমানেরে আপনি সশঙ্কিত।।
ভাবিয়া চিন্তিয়া রাহু পলায় তরাসে।
নিবেদন করে গিয়া বাসবের পাশে।।
শুন সুরপতি কহি এক সমাচার।
সূর্য্যকে গিলিত যে আইল রাহু আর।।
শুনিয়া রাহুর কথা বাসব বিরস।
সূর্য্যকে গিলিতে অন্য কাহার সাহস।।
ঐরাবতে চড়িয়া আইল পুরন্দর।
হনুমানে দেখে গিয়া সূর্য্যের গোচর।।
ভাবিতে লাগিল ইন্দ্র পাইয়া তরাস।
সূর্য্যকে ছাড়িয়া পাছে মোরে করে গ্রাস।।
সিন্দূরে শোভিত ঐরাবতের বদন।
দেখিয়া কৌতুকী অতি পবন-নন্দন।।
সূর্য্যকে ছাড়িয়া পাছে ধরে ঐরাবতে।
ত্রাসযুক্ত দেবরাজ বজ্র নিল হাতে।।
ক্রোধিত হইলে লোক আপনা পাসরে।
বিনা অপরাধে ইন্দ্র বজ্র মারে শিরে।।
অচেতন হনুমান হইলেন তাতে।
পড়িলেন তখনি সে মলয়-পর্ব্বতে।।
হনু ভগ্ন পড়ে সেই মলয়-শিখরে।
হনুমান নাম তেঁই বাপ মায়ে ধরে।।