১২. সিদ্ধাশ্রমের অন্তরালে – দ্বাদশ প্রকরণ

১২. সিদ্ধাশ্রমের অন্তরালেদ্বাদশ প্রকরণ

রাম প্রমুখ চার ভাই সকল বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠলে দশরথ উপাধ্যায় ও বন্ধুগণের সঙ্গে পুত্রদের দারক্রিয়া বিষয়ে চিন্তা করছিলেন; এমন সময় অযোধ্যায় বিশ্বামিত্রর আগমন। দশরথকে সত্যপ্রতিজ্ঞা করিয়ে বিশ্বামিত্র তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন।

বিশ্বামিত্র যাগকরণাভিলাষী হয়েছেন। কিন্তু সুন্দ ও উপসুন্দের পুত্র মারীচ ও সুবাহু অনেকবার নিয়ম সমাপ্ত হলেও যজ্ঞ সমাপনকালে বিঘ্নের সৃষ্টি করেছে। সুতরাং মারীচ ও সুবাহুকে দমন করে যাতে যজ্ঞ সম্পন্ন করা যায় সেকারণে বিশ্বামিত্র দশরত্রের জন্য রামকে তার হাতে প্রদান করার জন্য দশরথকে অনুরোধ জানালেন। রামের বয়স তখন ঊনষোড়শ বৎসর মাত্র। এজন্য দশরথ প্রথমে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেন; অবশেষে বসিষ্ঠ প্রমুখর অনুরোধে সম্মত হন। বিশ্বামিত্র কেবলমাত্র রামকে প্রার্থনা করলেও লক্ষ্মণ রামের অনুগামী হয়েছিলেন। তিনজনে অযোধ্যা ত্যাগ করার কালে,—

ততো বায়ুঃ সুখস্পর্শে নীরজস্কো ববৌ তদা।
বিশ্বামিত্রগতং রামং দৃষ্ট্বা রাজীবলোচনম্॥ ৪ (১.২২.৪)

অর্থাৎ, রাজীবলোচন রাম বিশ্বামিত্রর অনুগমন করবার উদ্যোগী হয়েছেন দেখে আরামদায়ক সুখস্পর্শশালী বায়ু প্রবাহিত হতে লাগল।

এবং

কলাপিনৌ ধনুষ্পাণী শোভয়ানৌ দিশো দশ।
বিশ্বামিত্ৰং মহাত্মানং ত্রিশীর্ষাবিব পন্নগৌ॥ ৭
অনুজগ্মতুরক্ষুদ্রৌ পিতামহমিবাশ্বিনৌ।
অনুযাতে শ্রিয়া দীপ্তৌ শোভয়ন্তাবনিন্দিতৌ॥ ৮
স্থাণুং দেবমিবাচিন্ত্যং কুমারাবিব পাবকী।
অধ্যর্দ্ধযোজনং গত্বা সরয্ব দাক্ষিণে তটে॥ ১১ ১(১.২২.৭-৮.১১)

অর্থাৎ, যেমন ধনুষ্পাণীকে কলাপী শোভান্বিত করে এবং অশ্বিনীকুমারদ্বয় পিতামহ ব্ৰহ্মাকে অনুসরণ করে, তেমনি পৃষ্ঠদেশে সমুন্নত তৃণীর যুগ্মধারী হয়ে ত্রিশীর্ষ সপের ন্যায় রাম ও লক্ষ্মণ বিশ্বামিত্রর অনুগমন করলেন।……পাবকী অগ্নিনন্দন কুমার অচিন্ত্য স্থাণুকে যেমন অনুগমন করে তেমনিভাবে রাম ও লক্ষ্মণ বিশ্বামিত্রকে অনুসরণ করে অধ্যর্দ্ধযোজন পথ অতিক্রমণের পর সরযুর দক্ষিণতটে উপনীত হলেন।

এখানে বিশ্বামিত্র রামকে বলা ও অতিবলা মন্ত্র প্রদান করেন। এই মন্ত্র গ্রহণ করে,—

সহস্ররশ্মির্ভাগবান্‌ শরদীব দিবাকরঃ।
গুরুকার্য্যাণি সৰ্বাণি নিযুজ্য কুশিকাত্মজে।
উষুস্তাং রজনীং তন্ত্র সরষাং সসুখং ত্রয়ঃ॥ ২৩ (১.২২.২৩)

অর্থাৎ, রাম শরৎকালীন সহস্রকিরণ দিবাকরের ন্যায় শোভা ধারণ করলেন। রাম, বিশ্বামিত্রর প্রতি, ‘যেরূপ গুরুর প্রতি কাৰ্য্য করতে হয়’ সেরূপ সকল কার্য সম্পন্ন করার পর তারা তিনজনে সেই রজনী সরযুর দক্ষিণতীরে অতিবাহিত করলেন। অযোধ্যা ত্যাগের পর এটি প্রথম রাত্রি।

রাত্রি প্রভাত হলে বিশ্বামিত্র পর্ণ-শয্যায় শয়ান রাম ও লক্ষ্মণকে শয্যাত্যাগ করে প্রাতঃসন্ধ্যাকালের দৈবকর্ম সম্পাদন করতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর অগ্রসর হয়ে সরযু ও দিব্যা ত্রিপথগার সঙ্গমস্থল দর্শন করলেন। স্থানটি সম্পর্কে রাম কৌতুহল প্রকাশ করলে বিশ্বামিত্র জানালেন কন্দর্প পূর্বে মূর্তিমান ছিলেন। বুধগণ (পণ্ডিতগণ) তাকে কাম (মনোহর) বলে অভিহিত করতেন। বহুদিন গত হল, স্থাণু এই স্থানে তপস্যার কারণে সমাধিস্থ ছিলেন। একদা সমাধি ভঙ্গ হলে মরুদ্‌গণসহ রুদ্র যখন পরিভ্রমণ করছিলেন তখন মদন রুদ্রকে ধর্ষণ করেন। ক্রুদ্ধ হয়ে রুদ্র রৌদ্র-নয়নে অবলোকন করা মাত্র মদনের সমস্ত অবয়ব বিশীর্ণ হয়ে যায়। কায়াহীন হওয়ায় কন্দর্প ‘অনঙ্গ’ নামে এবং এই স্থানটি ‘কামাশ্রম’ নামে বিখ্যাত হয়। এই কামাশ্রমে বিশ্বামিত্র প্রমুখ দ্বিতীয় রাত্রি অবস্থান করেন।

অনন্তর সুবিমল প্রভাতকালে তাঁরা নদীতীরে উপস্থিত হলে মুনিগণ নৌকা নিয়ে এসে সত্বর সাগরগামী ঐ নদী অতিক্রম করতে অনুরোধ জানালেন। নৌকাযোগে তার জাহ্নবীর দক্ষিণতীরে উত্তীণ হয়ে অগ্রসর হওয়াব কালে পথে ধব, অশ্বকৰ্ণ, অর্জুন, পাটলী, বদরী, তিন্দুক ও বিশ্ব প্রভৃতি বৃক্ষে পূর্ণ দুর্গম বন দেখে রাম কৌতুহলী হলে বিশ্বামিত্র বললেন,— পূর্বে এস্থানে মলদ ও করূষ নামে দুটি জনপদ ছিল। এর পূর্বে সহস্রাক্ষ বৃত্ৰবধ করে ব্ৰহ্মহত্যার কারণে মলিন ও ক্ষুধাকান্ত হয়েছিলেন। দেবগণ এই স্থানে মহেন্দ্রকে স্নান করালে ইন্দ্ৰ মল ও করূষ (ক্ষুধা) মুক্ত হন। এই কারণে মলদ ও কবৃষ নামকরণ। ইন্দ্রর প্রসাদে এই দুই জনপদ উত্তরোত্তর শ্ৰীবৃদ্ধি লাভ করে। কিছুকাল পরে সুন্দের সহস্র-হস্তিনী-বলধারিণী তাড়কানামী এক যক্ষিণী ভার্যা হল। তার গর্ভে ইন্দ্রতুল্য পরাক্রমশালী মারীচ নামে এক পুত্র জন্মায়।

অগস্ত্যশাপে সুন্দ নিহত হওয়ায় পুত্রসহ তাড়কা অগস্ত্যকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে অগস্ত্যর অভিশাপে মাতা পুত্র উভয়ে রাক্ষসে পরিণত হয়। অভিশপ্তা রাক্ষসরূপিণী তাড়কা সেই অগস্ত্যাশ্রম উৎসন্ন করেছে। রাক্ষস মারীচ নিয়ত লোকগণকে বিত্রস্ত করে। দুষ্টচারিণী তাড়কা মলদ ও করূষ নামক জনপদদ্বয়ে নিয়ত উৎপীড়ন করছে। সে এস্থান হতে অর্ধযোজন দূরে পথ আগলে আছে। যে বনে তাড়কা বাস করছে সেখান দিয়ে তাঁদের যেতে হবে এবং রাক্ষসীকে বিনাশ করতে হবে।

যেহেতু সন্ধ্যাকালে রাক্ষসগণ অত্যধিক বল লাভ করে, সেকারণে বিশ্বামিত্রর নির্দেশে রাম সন্ধ্যার পূর্বেই তাড়কাকে বধ করেছিলেন। তাড়কাবনে বিশ্বামিত্র প্রমুখ তৃতীয় রাত্রি অতিবাহিত করলেন।

পরদিন প্রভাতে বিশ্বামিত্র সন্তুষ্ট হয়ে রামকে বহুবিধ অস্ত্র সম্প্রদান করেন। দান গ্রহণ করে পথে যেতে যেতে আরেকটি আশ্রম দেখে রাম পুনরায় কৌতুহল প্রকাশ করলেন। ঐ আশ্রমই গন্তব্যস্থল একথা জানিয়ে বিশ্বামিত্র সেই আশ্রমের পুরা-কাহিনী শোনালেন।

বামনের উৎপত্তির পূর্বে এখানে বিষ্ণু যুগ-শত-পরিমিত কাল তপস্যা করে তপঃ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। সেই সময়ে বিরোচন-পুত্র বলি ইন্দ্র ও মরুদ্‌গণ প্রভৃতি দেবতাগণকে পরাজিত করে ত্ৰিলোকে রাজত্ব করছিল। বলি যজ্ঞ উপলক্ষে যে যা প্রার্থনা করছে তাই দান করছিল। তখন অগ্নি প্রভৃতি দেবগণ সকলে বিষ্ণুকে অনুরোধ জানাল যে দেবগণের মঙ্গলের জন্য বিষ্ণু যেন বামনরূপ ধারণ করে বলিকে পযুদস্ত করে ইন্দ্রকে ত্ৰৈলোক্য ফিরিয়ে দেয়।

এই একই সময়ে কশ্যপ অদিতির সঙ্গে সহস্ৰ দিব্য-বর্ষানুষ্ঠেয় ব্রত সমাপনপূর্বক মধুসূদনকে তার পুত্র এবং ইন্দ্রর কনিষ্ঠ ভ্রাতারূপে প্রার্থনা করল।

দেবগণের অনুরোধে এবং কশ্যপের প্রার্থনামত বিষ্ণু অদিতির গর্ভে বামনরূপে উৎপন্ন হয়ে ত্রিপদ দ্বারা ত্ৰিলোক আক্ৰমণ করে বলিকে বলপূর্বক পাতালে বন্দী করে ত্রিলোককে ইন্দ্রের অধীন করে দিল, বর্তমানে বিশ্বামিত্র এই আশ্রম উপভোগ করছেন।

বিষ্ণু সিদ্ধিলাভ করায় স্থানটি ‘সিদ্ধাশ্ৰম’ নামে খ্যাত হয়। বামনের আশ্রম হিসাবে ‘শ্রমনাশন’ নামে পরিচিত।

শশীব গতনীহারঃ পুনর্ব্বসুসমন্বিতঃ।
তং দৃষ্ট্বা মুনয়ঃ সর্ব্বে সিদ্ধাশ্রমনিবাসিনঃ।
উৎপত্যোৎপত্য সহসা বিশ্বামিত্রমপূজয়ন্।। ২৬

(১.২৯.২৬) অর্থাৎ, বিশ্বামিত্রদের আগমনে তৎকালে পুনর্বসু নক্ষত্রদ্বয়ে মিলিত হিমানীমুক্ত নির্মল শশধরের ন্যায় আশ্রমের শোভা হল। সিদ্ধাশ্রমবাসীগণ বিশ্বামিত্রকে সমাগত দেখে সহসা উত্থানপূর্বক তাঁকে অৰ্চনা করলেন।

মুহূর্তকাল বিশ্রাম করেই বিশ্বামিত্র যজ্ঞার্থে দীক্ষিত হলেন। অযোধ্যা ত্যাগের পর রাম লক্ষণের এখানে চতুর্থ রাত্রিবাস।

পরদিন প্রভাতে রাম কোন সময়ে দুই রাক্ষসের অত্যাচার হতে যজ্ঞ রক্ষা করতে হবে জানতে চাইলে মুনিগণ বললেন যে আজ হতে ছয় অহোরার বিশ্বামিত্র মৌনী থাকবেন। এই কয়দিন তাঁকে রক্ষা করতে হবে।

পঞ্চম অহোরাত্র গত হয়ে ষষ্ঠ দিবস উপনীত হলে মারীচ ও সুবাহু যজ্ঞনাশ-কারণে উপস্থিত হল। রাম শীতেষু নামক অস্ত্রে মারীচকে বিঘূর্ণিত ও অচেতন করে একশত-যোজন-ব্যাপ্ত সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন। আগ্নেয় অস্ত্রে সুবাহুকে বধ এবং বায়ব্য অস্ত্রে অন্যান্য রাক্ষসগণকে হনন করলেন। অতঃপর বিশ্বামিত্রর যজ্ঞ সমাপ্ত হল।

যজ্ঞান্তে পরদিন বিশ্বামিত্র রাম-লক্ষ্মণকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে না গিয়ে জনকযজ্ঞ দর্শনার্থে উত্তরদিকে রওনা হয়েছিলেন, যদিও যজ্ঞ সমাপনের দিন দশরথের নিকট প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মত দশরাত্র অতিবাহিত হয়ে যায়।

সিদ্ধাশ্রম কাহিনীতে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করার আছে। অযোধ্যা ত্যাগ করার পর পথে নানা গল্প হল; কিন্তু মারীচ ও সুবাহুর কীর্তি ও বলাবল সম্পর্কে কোন আলোচনা নাই। এমন কি বিশ্বামিত্র দশরথকে রাবণের প্রসঙ্গ জ্ঞাত করালেও রামকে এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি।

সিদ্ধাশ্রমে পৌঁছানোর পরদিন প্রভাতে রাম জানতে চাইছেন রাক্ষসদ্বয় কখন আসবে? বিশ্বামিত্র এ বিষয়ে রামকে কোন নির্দেশ দেননি।

এই কাহিনীতে লক্ষ্মণ রামের অনুগমন করলেও তার ভূমিকা খুবই নগন্য।

পুত্রদের জন্মক্রিয়া সকল সম্পন্ন করার পর রামের ঊনষোড়শ বৎসর বয়সে দশরথ পুত্রদের দারক্রিয়া বিষয়ে চিন্তা করছিলেন।(১)

অথচ রামায়ণের অন্যত্র দেখা যায় যে রাবণ সীতাহরণ জন্য মারীচের সাহায্য প্রার্থনা করলে মারীচ জানায় ঊনদ্বাদশবর্ষীয় রাম কি ভাবে বিশ্বামিত্রর আশ্রমে তাকে পযুদস্ত করেছিলেন।(২) আবার মুনির ছদ্মবেশী রাবণকে সীতা বলেছিলেন বিবাহের পর ইক্ষ্বাকুকুলে বারো বংসর অতিবাহিত হলে ত্রয়োদশবর্ষে তার বয়স যখন আঠারো ও রামের পচিশ বৎসর বয়স, তখন রাম বনগমন করেছিলেন।(৩)

মারীচের বক্তব্যমত ঊনদ্বাদশ বৎসরে বিশ্বামিত্রর আশ্রমের ঘটনা এবং সীতার বিবাহের পর শ্বশুরকুলে বারো বৎসর কাটানোর হিসাব মেলে। কারণ রাম পাঁচিশ বৎসর বয়সে বনগমন করলে বারো বৎসর বয়সে সীতার সঙ্গে তার বিবাহ হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান কাহিনীতে বলা হচ্ছে রামের বয়স ঊনষোড়শ বৎসর; এর কারণ কি?

কারণ রহস্য সৃষ্টি।

‘ঊন’ শব্দটি দুইটি ক্ষেত্রে দুই অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ঊনদ্বাদশ শব্দের ক্ষেত্রে রামের জন্মের পর এগার বৎসর উত্তীর্ণ হয়েছে, কিন্তু বারো বৎসর পূর্ণ হয়নি এই ইংগিত গ্রহণ করতে হবে।

ঊনষোড়শ শব্দের ক্ষেত্রে রামের ষোড়শতম বর্ষটিতে একটি মলমাস এবং একটি ক্ষয়মাস পড়ায় চান্দ্রমাস সংখ্যা ঊন হয়েছে; অর্থাৎ সৌর মাসের চেয়ে কম হয়েছে।

প্রাচীনকালে পাঁচ বৎসরে যুগ ধরা হত। সেকালে প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর একটি মাস বাদ দিয়ে সৌর ও চান্দ্র বৎসরে সামঞ্জস্য আনা হত।

স্থূল হিসাবে প্রতি তৃতীয় বৎসরে মলমাস গণনা করা হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দুইটি মলমাসের মধ্যে সমান সময়ের ব্যবধান থাকে না। সাধারণতঃ দুই বৎসর চার মাস হতে দুই বৎসর এগারে মাসের ব্যবধানে মলমাস অনুষ্ঠিত হয়। ফলে কোন বিশেষ বৎসরে মলমাস ছিল কিনা হিসাব করা বিশেষ দুরূহ। অনুরূপভাবে, ১৪১, ১২২, ৭৬, ৬৫, ৪৬ এবং ১৯ বৎসর অন্তর ক্ষয়মাস পড়ে। তবে ১৯ এবং ১৪১ বৎসরের পৌনঃপুনিকতার আধিক্য। এক্ষেত্রেও হিসাবের জটিলতা খুব বেশী।

একাদশ এবং ষোড়শ বৎসরের মধ্যে পাঁচ বৎসরের ব্যবধান। সুতরাং উভয় বৎসরে মলমাস পড়া স্বাভাবিক।

বিশ্বামিত্র দশরাত্রর জন্য রামকে প্রার্থনা করেছিলেন। সাধারণ হিসাবে অযোধ্যা ত্যাগ করার পর বিশ্বামিত্রর সিদ্ধিলাভের দিন পর্যন্ত দশ রজনী অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। সিদ্ধাশ্রম হতে অযোধ্যা ফিরতে হিসাব মত আরও তিনটি রজনী পথে কাটতে হয়। সুতরাং বিশ্বামিত্র ত্রয়োদশ রাত্র না বলে দশরাত্র বললেন কেন?

‘রাত্র’ শব্দ দ্বারা অন্ধকার রজনী অর্থাৎ অমাবস্যা বুঝানো হয়েছে ধরা যেতে পারে।(৪) রামের ষোড়শ বৎসরটিতে মনে হয় একটি ক্ষয়মাস ও একটি মলমাস পড়ায় দুইটি মাসের অমাবস্যা বাদ ধরলে দশটি শুদ্ধ অমাবস্যা হয়। তাড়কা নিধন ঘটনাটি মূলতঃ ক্ষয়মাসের ইংগিত বহন করছে। অপরদিকে, যে মাসে রামকে নিয়ে বিশ্বামিত্র অযোধ্যা ত্যাগ করেছিলেন সেই মাসের অমাবস্যা এবং একটি মলমাসের অমাবস্যা এই দুই অমাবস্যা বাদ দিলে দশটি অমাবস্যা তথা মাসে বৎসবটি পূর্ণ হয়। সুতরাং বিশ্বামিত্র ত্রয়োদশ রাত্রর বদলে দশরার বক্তব্য ঠিকই আছে। যেহেতু বিশ্বামিত্র দশরার তথা দশ মাসের জন্য রামকে দশরথের নিকট হতে চেয়ে নিয়েছিলেন, সেকারণে বিশ্বামিত্রর সিদ্ধাশ্রমে সিদ্ধিলাভের পর উত্তরদিকে জনকের যজ্ঞে যাওয়া অসংগত হয় নাই।

এই প্রসঙ্গে আরেকটি তথ্যের অবতারণা করতে হয়। সীতা ও মারীচের বক্তব্যমত রাম বারো বৎসর বয়সে ষষ্ঠ-বর্ষীয় সীতাকে বিবাহ করেছিলেন। প্রাচীনকালে অনেক জাতির মধ্যে বাল্যবিবাহর প্রচলন ছিল। সেক্ষেত্রে বালিকার প্রথম ঋতু দর্শনের পর পুনর্বিবাহ অনুষ্ঠানের রীতি ছিল। এই পুনর্বিবাহ কালে বালিকা যৌনসঙ্গম-সক্ষম হয়। মনে হয়, রামের ষোল বছর বয়সে মানবী সীতার প্রথম ঋতুদর্শনের পর যে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়েছিল তার ইংগিত দেওয়া হয়েছে ‘দারক্রিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করে। দার (বিদারণ, ভেদন) + অ (ঘঞ)-ক (পাণিনি ৩.৩.২০)। অতএব ‘দার’ শব্দের মধ্যে যৌনসম্পর্কের আভাস আছে। এছাড়া রাম সীতার বিবাহ প্রস্তাবনা কালেও যৌনসম্পর্ক-প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছিল।(৫) মনে করি পুনর্বিবাহ বিষয়টির প্রতি নির্দেশ করার জনা আদিকবি বিবাহ শব্দের পরিবর্তে এক্ষেত্রে ‘দারক্রিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সুতরাং রামের একাদশ বর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর সীতার সঙ্গে বিবাহ হয়। ষোড়শ বর্ষে মলমাস ও ক্ষয়মাস ছিল এবং ঐ বছর পুনর্বিবাহ হয়।

এই দুই বৎসরের উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে দুই রকমের প্রস্তাবনা করে আদিকবি দুরূহ রহস্যর সৃষ্টি করেছেন।

 

পুষ্যা নক্ষত্রর একটি নাম সিধ্য। এই নক্ষত্রটি নক্ষত্রমণ্ডলের ৯৩° ২০’ (তিরানব্বই অংশ কুড়ি কলা) হতে ১০৬°৪০” (একশত ছয় অংশ চল্লিশ কলা) পর্যন্ত বিস্তৃত। একদা এই নক্ষত্রে দক্ষিণায়নাদি হত। সেক্ষেত্রে শ্রবণা নক্ষত্রর ২৮৬°৪০’ (দুইশত ছিয়াশী অংশ চল্লিশ কলা) হতে ২৮০° (দুইশত আশি অংশ) পর্যন্ত ৬°৪০’ ছয় অংশ চল্লিশ কলা) এবং উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রর ২৮০° (দুইশত আশি অংশ) হতে ২৭৩°২০’ (দুইশত তিয়াত্তর অংশ কুড়ি কলা) পর্যন্ত ৬°৪০’ (ছয় অংশ চল্লিশ কলা) এই মোট ১৩°২০’ (তেরো অংশ কুড়ি কলায়) উত্তরায়ণাদি ছিল।

শ্রবণা নক্ষত্রর বৈদিক নাম বিষ্ণু।

বছরে ৪৮” (আটচল্লিশ বিকল) হিসাবে অয়নচলন ধরলে শ্রবণ নক্ষত্রর উপরোক্ত ৬°৪০’ (ছয় অংশ চল্লিশ কলা? উত্তরায়ণের পশ্চাদ্‌গামী হতে পাঁচশত বৎসর লাগে। এই তথ্যটিকে নির্দেশ করার জন্যই উপাখ্যানে বলা হয়েছে বিষ্ণু যুগ-শত পরিমিত কাল অর্থাৎ পাঁচশত বৎসর তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করায় স্থানটি ‘সিদ্ধাশ্রম’ নামে খ্যাত হয়েছিল। অতএব সিধ্য অর্থাৎ পুষ্যা নক্ষত্র সংশ্লিষ্ট মকর রাশির অংশ বিশেষকে ‘সিদ্ধাশ্রম’ আখ্যা দিয়ে অতীতের কোনও এক কালের উত্তরায়ণাদিস্থান ইংগিত করা হয়েছে, এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

 

এবার বামনের উৎপত্তি।

বরাহ মতে আষাঢ় মাসের আদিত্যর নাম বামন। বৈশাখ মাসের আদিত্যর নাম মধুসূদন। একদা চান্দ্র-বৈশাখ মাসে বাসন্ত-বিষুব হত। অদিতি পুনর্বসু নক্ষত্র এবং কশ্যপ কালপুরুষ নক্ষত্র। কশ্যপ ও অদিতির এক-সহস্রবর্ষব্যাপী-অনুষ্ঠিত ব্ৰত অর্থে অয়ণের এক নক্ষত্র পশ্চাদগামী হওয়া। মিথুন রাশিতে সাধারণতঃ পুনর্বসু নক্ষত্রে সূর্যর অবস্থানকালে চান্দ্র-আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয়। এজন্য অদিতি অর্থাৎ পুনর্বসু নক্ষত্রে বামনের উৎপত্তি বলা হয়েছে।

বিষ্ণুর তপস্যা সমাপ্ত কালে উত্তরায়ণ ছিল উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে ২৮০° (দুই শত আশি অংশে)। তাহলে শারদ-বিষুব ১৯০° (একশত নবই অংশে) স্বাতি নক্ষত্রে, দক্ষিণায়ন ১০০° (একশত অংশে) পুষ্যা নক্ষত্রে এবং বাসন্ত বিষুব ১০° (দশ অংশে) অশ্বিনী নক্ষত্রে।

সূর্য মেষ রাশিতে ১০° (দশ অংশে) অবস্থানকালে কোনক্রমেই চান্দ্রবৈশাখ মাস হবে না। বাসন্ত-বিষুবর এই অবস্থানকে ইংগিত করার জন্য অদিতি ও কশ্যপের মধুসূদনের অর্থাৎ চান্দ্র-বৈশাখ মাস হতে চান্দ্র-চৈত্র মাসে বাসন্ত-বিষুবর পশ্চাদগামী হওয়ার প্রার্থনা।

বামন ইন্দ্রর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাসের আদিত্য ইন্দ্রর পরে আষাঢ় মাসের আদিত্য বামন। বামন বিষ্ণুর আশ্রমে অবস্থানকালে একটি মাত্র কাজ করেছিল, তা হল বলিকে পর্যুদস্ত করে ইন্দ্রকে ত্রিলোকের ভার অর্পণ করা।

বামনের উত্তবকালে শারদ-বিষুব ছিল স্বাতি নক্ষত্রে ১৯০° (একশত নব্বই অংশে)। স্বাতি নক্ষত্রকে ‘বলি’ বলা হয়েছে। এই নক্ষত্রটিকে ‘স্বাতি’ নামে উল্লেখ করলে পুংলিঙ্গ হয়; যার বৈদিক নাম মরুত্মান, অথর্বসংহিতায় এই ব্যবহার আছে। স্বাতি নক্ষত্রর তিনটি উজ্জ্বল তারা বলি অর্থাৎ নৈবেদ্যসদৃশ আকৃতি বিশিষ্ট। তাছাড়া অতীতে শারদ-বিষুব কালে রুদ্র তথা পশুযাগ অনুষ্ঠিত হত। এই যজ্ঞের সূত্র ধরে স্বাতি নক্ষত্রকে রূপকে বলি কল্পনা করা হয়েছে।

বল (শক্তি, প্রভাব) শব্দজাত বলি অর্থে বলবান, প্রভাববান। বলি বিরোচনপুর। বিরোচন অর্থ দীপ্তি, উজ্জ্বল, উদ্ভাসক, সূর্য। সুতরাং বলি শব্দ দ্বারা নক্ষত্রবিশেষকে ইংগিত করা যায়; বিশেষতঃ যে নক্ষত্রে শারদ-বিষুব অনুষ্ঠিত হয়। কারণ এই সময় সূর্যর পরাক্রম অর্থাৎ গতি বৃদ্ধি পায়। স্বাতি নক্ষত্রে এই অবস্থা ঘটায় বলিকে বিরোচন পুত্র বলা হয়েছে। দেবতারা অগ্নিকে পুরোধ করে বিষ্ণুকে বামনৰূপে জন্ম নিতে অনুরোধ করেন। অগ্নি অর্থে কৃত্তিকা নক্ষত্র। বিষ্ণুর তপস্যার সমাপ্তিকালে স্বাতি নক্ষত্রর দ্বিতীয় পাদে ১৯০° (একশত নব্বই অংশে) শারদ-বিষুব হলে বাসন্ত-বিষুব হয় অশ্বিনী নক্ষত্রে; মেষ রাশির ১০° (দশ অংশে)। ভরণী নক্ষত্রর সম্মুখে কৃত্তিকা নক্ষত্র। এজন্য কাহিনীতে অগ্নি পুরোধা।

কালক্রমে ২৫০ (দুইশত পঞ্চাশ) বছরে বিষুব ৩°২০” (তিন অংশ কুড়ি কলা) পশ্চাদগামী হওয়ায় শারদ-বিষুব স্বাতি নক্ষত্রর পরিবর্তে চিত্রা নক্ষত্রর ১৮৬°৪০’ (একশত ছিয়াশী অংশ চল্লিশ কলায়) অনুষ্ঠিত হয়। স্বাতি নক্ষত্র হতে শারদ-বিষুবর এই পশ্চাদ্‌গামী হওয়ার তথ্য রূপকে বামন বলিকে পযুদস্ত করে ইন্দ্রকে ত্রিলোকের দায়িত্ব প্রদান করেছিল বলা হয়েছে। বলি ইন্দ্রকে পরাস্ত করে ত্রিলোক জয় করেছিল। বিশাখা নক্ষত্রর প্রথম অংশের নাম ইন্দ্র। আবার চিত্র নক্ষরেও এক নাম ইন্দ্র। একারণে একবার বলির নিকট ইন্দ্রর পরাজয় অর্থাৎ বিশাখা নক্ষত্র হতে শারদ-বিষুবর পশ্চাদ্‌গামী হয়ে স্বাতি নক্ষত্রে অনুষ্ঠিত হওয়া এবং ইন্দ্রর পুনরায় ত্রিলোকের দায়িত্ব লাভ অর্থাৎ শারদ-বিষুব স্বাতি নক্ষত্রর বদলে চিত্র নক্ষত্রে অনুষ্ঠিত হওয়া। বলিকে পাতালে বন্দী করা অর্থে শারদ-বিষুবর পরে স্বাতি নক্ষত্রর অবস্থান; অর্থাৎ, পিতৃযান পর্যায়ভুক্ত।

 

বামনের পর বিশ্বামিত্র সিদ্ধাশ্রমে নিয়মমাফিক তপস্যা করছিলেন। বিশ্ব (উত্তরাষাঢ়া) নক্ষত্রে মিত্র (সুর্য)র অবস্থানে উত্তরায়ণাদি অনুষ্ঠানকে ‘বিশ্বামিত্র’ বলা হয়েছে। তখন উত্তরায়ণ ছিল ২৭৬°৪০’ (দুইশত ছিয়াত্তর অংশ চল্লিশ কলায়) মকর রাশিতে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে, শারদ-বিষুব ১৮৬°৪০’ (একশত ছিয়াশী অংশ চল্লিশ কলায়) তুলা রাশিতে চিত্র নক্ষত্রে, দক্ষিণায়ন ৯৬°৪০’ (ছিয়ানৱই অংশ চল্লিশ কলায়) কর্কট রাশিতে পুষ্যা নক্ষত্রে এবং বাসন্ত-বিষুব ৬°৪০’ (ছয় অংশ চল্লিশ কলায়) মেষ রাশিতে অশ্বিনী নক্ষত্রে।

বিশ্বামিত্রর আশ্রম প্রবেশকালে পুনর্বসু নক্ষত্রযুক্ত চন্দ্র ও নীহারমুক্ত রজনীর তুলনা আছে।

রামায়ণকালে পৌষ মাস হেমন্ত ঋতুর অন্তর্গত ছিল। এই ঋতুতে মেঘ জলশূন্য থাকে, এজন্য নীহারমুক্ত বলা হয়েছে। আশ্রমে প্রবেশ অর্থে সূর্যর মকররাশিতে সংক্ৰমণ। পুনর্বসু নক্ষত্রর উল্লেখ করে পূর্ণিমা নয়, পৌষ মাসের ইংগিত দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টিই এর কারণ। স্থূলহিসাবে ঐ দিনটিতে সূর্যর মকররাশি সংক্ৰমণকালে অমাবস্যার নিবৃত্তি হয়ে শুক্ল প্রতিপদ তিথির প্রবৃত্তি হয়েছিল। ধনুরাশিতে সূর্যর অবস্থানকালে সৌর পৌষমাস ক্ষয়মাস হলে সূর্যর মকররাশির সংক্রমণের দিন শুক্লা প্রতিপদ তিথি শুদ্ধ পৌষ শুক্ল পক্ষের অন্তর্গত হবে। এই তথ্য নির্দেশনার জন্য বিশ্বামিত্র আশ্রমে প্রবেশ করার পরই দীক্ষিত হয়ে পরবর্তী ছয় অহোরাত্র মৌন থাকেন। পাঁচ অহোরাত্র গত হওয়ার পর ষষ্ঠ অহঃতে মারীচ ও সুবাহুর আগমন।

আগ্নেয় অস্ত্রে সুবাহুকে নিধন। সূর্যর মকরক্রান্তিতে অবস্থা বায়ু প্রবাহেরও দিক পরিবর্তন ঘটে। এখানে সুবাহু অর্থাৎ বিস্তৃত বাহু যার এই শব্দটির দ্বারা বায়ু প্রবাহ এবং আগ্নেয় অস্ত্র অর্থে মকরক্রান্তি রেখায় সূর্যতাপ বিকীরণ ইংগিত করে। সুবাহুকে হনন অর্থে বায়ু প্রবাহর দিক পরিবর্তন বুঝানো হয়েছে।

শীতেষু অস্ত্রে মারীচকে শতযোজন বিস্তীর্ণ সমুদ্রে নিক্ষেপ। শীত নামক ইষু (তীর, বাণ) এই সূত্রে শীতেষু শব্দের মধ্যে হিমঋতুর প্রস্তাবনা গ্রহণ করা যায়। মারীচ শব্দটি মরীচি-সম্বন্ধীয়। মরীচি অর্থ কিরণ, রশ্মি। সুতরাং এই শব্দে প্রখর সূর্যতাপকে নির্দেশ করছে, যা শীতকালে প্রখরতা হারায় এবং পুনরায় গ্রীষ্মকালে প্রকাশিত হয়। রামায়ণকালে সেীর জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় দুই মাস গ্রীষ্মঋতুর অন্তর্গত ছিল। বৃষ ও মিথুন রাশিদ্বয় ছায়াপথে নিমজ্জিত। বৈদিক সাহিত্যে ছায়াপথ সমুদ্র নামে চিহ্নিত। একশত-যোজন-বিস্তৃত শব্দে ছায়াপথের বিশালতা প্রকাশ করা হয়েছে। অতএব শীতেষু অস্ত্রে মারীচকে সমুদ্রে নিক্ষেপ অর্থে উত্তরায়ণকালে শীত ও বসন্তঋতুর পর সূর্য বৃষ রাশিতে এলে তখন সূর্যতাপের প্রখরতা বাড়বে। সুতরাং বিশ্বামিত্র ও সিদ্ধাশ্রম উপাখ্যানে উত্তরায়ণাদির স্থান নিদিষ্ট করা হয়েছে। রামের জন্মকাহিনী বিশ্লেষণ করেও অনুরূপ তথ্যই পাওয়৷ গিয়েছে।

 

অযোধ্যা ত্যাগ করে সিদ্ধাশ্রমে পৌঁছানোর বিবরণ এবং এই উপাখ্যানের ঊনষোড়শ এবং দশরার শব্দ দুইটির প্রদত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জ্যোতিবিজ্ঞানের একটি স্কুল রূপরেখা টানা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে অন্যান্য প্রকরণের আলোচনার সূত্রে রামায়ণের কালে শারদ-বিষুব অনুষ্ঠিত হত ১৮৬°৪০’ (একশত ছিয়াশী অংশ চল্লিশ কলায়) এই তথ্যকে অবলম্বন করে বক্তব্যের অবতারণা করা হচ্ছে।

অযোধ্যা ত্যাগকালে রাম লক্ষ্মণসহ বিশ্বামিত্রর সঙ্গে কয়েকটি নক্ষত্রর তুলনা আছে।

কলাপিনৌ ধনুষ্পাণী। কলাপী অর্থ চন্দ্র, ধনুষ্পাণী ধনুরাশি। আশ্বিন পূর্ণিমার পূর্ববতী অমাবস্যা আন্দাজ ১৮০°৩২’ (একশত আশি অংশ বরিশ কলায়) অনুষ্ঠিত হলে চন্দ্রর ধনুরাশিতে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে অবস্থানকালে আশ্বিন শুক্লা ষষ্ঠী তিথি হওয়ার সম্ভাবন।

ত্রিশীর্ষাবিব পন্নগৌ। পন্নগ অর্থে যা পতিত হয়ে গমন করে। তিন তারা বিশিষ্ট ভরণী নক্ষত্রকে ত্রিশীর্ষ পন্নগ বলা যায়। পন্নগ অর্থে সর্প ধরে অশ্লেষা নক্ষত্রকেও সাধারণভাবে নির্দেশ করা চলে।

পিতামহ রোহিণী নক্ষত্র; যার বৈদিক নাম ব্রহ্মা।

কালপুরুষ নক্ষত্রর দক্ষিণ পদের উজ্জ্বল তারাটির নাম স্থাণু। কৃত্তিকা নক্ষত্রর বৈদিক নাম অগ্নি, পাবক। কুমারাবিব পাবকী অর্থে কৃত্তিকা নক্ষত্র। সূর্যর তুলা রাশিতে অবস্থানকালে রাত্রির আকাশে ধনুরাশি, স্থাণু, অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী নক্ষত্রগুলি দেখা যায়। অযোধ্যা ত্যাগ করে রাম বলা ও অতিবলা মন্ত্র গ্রহণ করার পর শরৎকালীন সহস্রকিরণ দিবাকরের ন্যায় শোভা ধারণ করেন। বরাহ মতে কার্তিক মাসের আদিত্যর নাম দিবাকর। অতএব রামের এই শোভাধারণ শরৎঋতুর ইংগিত।

সুতরাং সিদ্ধাশ্রম প্রসঙ্গর অনুসরণে বলা যায় আশ্বিন শুক্ল ষষ্ঠী তিথিতে সূর্যর চিত্র নক্ষত্রে ১৮৬°৪০’ (একশত ছিয়াশি অংশ চল্লিশ কলায়) রামায়ণকালে শারদ-বিষুব ছিল।

এখন বিশ্বামিত্র প্রমুখর সিদ্ধাশ্রম প্রবেশের পূর্বে বিভিন্ন স্থানে রাত্রিবাস গুলির বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

প্রথম রাত্রিবাস সরযূর দক্ষিণতীরে। সেখানে রাম পৰ্ণশয্যায় শয়ন করেছিলেন। যে জ্যোতিষ্ক প্রবহটি তুলা ও বৃশ্চিক রাশিকে আচ্ছন্ন করে ছায়াপথে মিলিত হয়েছে সেই প্রবহটিকে সরযূ বলা হয়েছে। এই প্রবহের দক্ষিণতীরে বিশাখা নক্ষত্র। পৃথিবী হতে দর্শকের দৃষ্টিতে ছায়াপথের ডানদিকে বিশাখ নক্ষত্র দৃশ্য হয়, একারণে সরযুর দক্ষিণতীর বলা হয়েছে। বিশাখা নক্ষত্র চু্যত পরমাল সদৃশ আকৃতির। বিশাখা নক্ষত্রর বৈদিক নাম ইন্দ্রাগ্নী; প্রথম ভাগ ‘ইন্দ্র’ পত্রাকৃতি এবং পরবর্তীভাগ ‘অগ্নি’ লতাসদৃশ। সুতরাং সরযূর দক্ষিণতটে রামের পর্ণশয্যায় শয়ন অর্থে বৃশ্চিক রাশিতে বিশাখা নক্ষত্রর শেষ পাদে অমাবস্যা তিথি।

সূর্যর মকররাশি সংক্রমণের প্রাক্‌কালে অমাবস্যা হলে স্বাতি নক্ষত্রে কার্তিক পূর্ণিমার পরবর্তী অমাবস্যা হয় বিশাখা নক্ষত্রর আন্দাজ ২১০° (দুইশত দশ অংশে)।

বিশ্বামিত্রর অযোধ্যা ত্যাগ করে অধ্যর্দ্বযোজন পথ অতিক্রম করে সরযুর দক্ষিণতটে উপনীত হয়েছিলেন। যা যুক্ত করে তাকে যোজন বল যায়। সাতাশটি নক্ষত্র পরস্পর যুক্ত হয়ে সূর্যক্লান্তিপথ তৈরি করেছে। সুতরাং অধ্যর্দ্বযোজন অর্থে দেড় নক্ষত্র। স্বাতি নক্ষত্রর প্রথম পাদ হতে বিশাখা নক্ষত্রর তৃতীয় পাদ পর্যন্ত সূর্য অগ্রসর হয়ে বিশাখা নক্ষত্রর যে অংশটি সরযূ নামধেয় জ্যোতিষ্ক প্রবহের কাছে, সেখানে উপনীত হওয়ার পর বিশ্বামিত্র রামকে বলা ও অতিবলা মন্ত্র প্রদান করেছিলেন। শারদ-বিষুবর পর হতে সূর্যর গতি যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি দক্ষিণ-পূর্বমুখী বায়ুপ্রবাহ প্রবল হতে প্রবলতর হয়। বলা ও অতিবলা মন্ত্র অর্থে সূর্যর এবং বায়ুপ্রবাহর উভয়ের গতি বৃদ্ধি ইংগিত করা হয়েছে মনে করি।

দ্বিতীয় রাত্রিবাস কামাশ্রমে।

বিশাখা নক্ষত্রর ২১০° (দুইশত দশ অংশে) অমাবস্যা হলে পরবর্তী অমাবস্যা হয় জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রর শেষপাদে অর্থাৎ আন্দাজ ২৩৯°৫৮’ (দুইশত উনচল্লিশ অংশ আটান্ন কলায়) সূর্যর অবস্থানকালে। ব্যোমমণ্ডলে ছায়াপথ ও সরযূ নামধেয় জ্যোতিষ্ক প্রবহর সঙ্গমস্থলের কাছাকাছি জ্যেষ্ঠ নক্ষত্রর অবস্থান। ত্রিপথগা শব্দে ছায়াপথ বুঝানো হয়েছে। এখানে সুদূরতম অতীতে জ্যেষ্ঠ নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। বৈদিককালে সূর্য মৃগশিরা নক্ষত্রে চন্দ্র জ্যেষ্ঠ নক্ষত্রে জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় বাসন্ত-বিষুব সময়ে জনসমাজে মদনোৎসব অনুষ্ঠিত হত।

স্থাণুর সমাধিস্থ হওয়া অর্থে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব ও মদনোৎসব। অয়নচলন হেতু বাসন্ত-বিষুব পশ্চাদ্‌গামী হয়ে মৃগশিরা নক্ষরে এলে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে শারদ-বিষুব অনুষ্ঠিত হয়। ফলে মদনোৎসবের মাসের পরিবর্তন ঘটে; অর্থাৎ অগ্রহায়ণ বা মার্গশীর্ষর বদলে জ্যৈষ্ঠ মাস। স্থাণু শব্দে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে বাসন্ত-বিষুব এবং রুদ্র শব্দে ঐ নক্ষত্রে শারদ-বিষুব ইংগিত করা হয়েছে। রুদ্রর মরুদগণের সঙ্গে বিচরণ অর্থে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র হতে অয়নচলনের পশ্চাদগমন। মরুদৃগণ স্বাতি নক্ষত্র। এই পরিবতন নির্দেশ করার কারণে কামের অঙ্গত্যাগের স্থান হিসাবে জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানটিকে ‘কামাশ্রম’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রামায়ণ-কালে অগ্রহায়ণ মাস হেমন্ত ঋতুর অন্তর্গত; মনোহর কাল।

জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে সূর্যর অবস্থানকালে প্রত্যুষে অগস্ত্য নক্ষত্রর উদয় হয়। বেদে অগস্ত্য নক্ষত্র দিব্যনৌকা। মুনিগণের নৌকা আনয়ন এবং এই নৌকায় ত্বরায় নদী উত্তরণ অর্থে সূর্যোদয়ের প্রাক্‌কালে খুব অল্প সময়ের জন্য অগস্ত্য নক্ষত্র দেখা যায়, তারপরই সূর্যালোকে অদৃশ্য হয়। ব্যোমমণ্ডলে যেখানে অগস্ত্য নক্ষত্রর অবস্থান সেখানে ছায়াপথ ছিন্নবিচ্ছিন্ন এবং ছায়াপথের এই স্থানটিকে জাহ্নবী আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয় রাত্রিবাস অগস্ত্যাশ্রমে তথা তাড়কাবনে।

মূল নক্ষত্রে সূর্যর অবস্থানকালে সৌর পৌষ মাস, রামায়ণ-কালে হেমন্তঋতুর অন্তর্গত ছিল। এই ঋতুতে ধব, অশ্বকৰ্ণ, অর্জুন, পাটলী, বদর, তিন্দুক, বিশ্ব প্রভৃতি বৃক্ষ ফল-পুষ্পে সুশোভিত হয়। এই বৃক্ষ উল্লেখ করে হেমন্তঋতুর ইংগিত দেওয়া হয়েছে।

বৃত্রহত্যার পর এখানে ইন্দ্রকে দেবতারা স্নান করিয়েছিলেন। মলদ ও করূষ দুই জনপদ অর্থে ছায়াপথে নিমগ্ন মূল ও পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রদ্বয়কে ইংগিত করা হয়েছে মনে করি।

জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে শারদ-বিষুবর কালে সৌর পৌষ মাস শরৎঋতুর অন্তর্গত থাকায় তখন মানবসমাজে বর্ষান্তে এই মাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ অবশ্যই আকর্ষণীয় ছিল। প্রত্যুষে অগস্ত্য নক্ষত্রর উদয় দেখে অনুষ্ঠানাদি হত। কিন্তু পরবর্তী কালে অয়ন পশ্চাদ্‌গামী হওয়ায় সৌর পৌষ মাসের বৈশিষ্ট্য লুপ্ত হয়। একারণে কাহিনীতে তাড়কা কর্তৃক অগস্ত্যাশ্রম বিনাশ বলা হয়েছে।

মূলা রাক্ষস-নক্ষত্র, বৈদিক নাম নি‌র্ঋতি। এই সুবাদে স্ত্রীলিঙ্গ, অর্থ অলক্ষ্মী। এই সূত্র ধরে তাড়কা চরিত্রের অবতারণা। পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রর বৈদিক নাম অপাংনপাৎ। নপাতের এক অর্থ স্রোত বা সন্তান। একারণে নি‌র্ঋতির পরবর্তী নক্ষত্র অপাংনপাৎ তাড়কার পুত্র মারীচ হিসাবে কপিত হয়েছে। পুত্রসহ তাড়কাকে রাক্ষসত্বের অভিশাপ দিয়ে অগস্ত্যর আশ্রম ত্যাগ অর্থে শারদ-বিষুবর পশ্চাদ্‌গমন এবং অগস্ত্য নক্ষত্রর বিশেষ ভূমিকার লোপ।

যক্ষিণী তাড়কার রাক্ষসীতে রূপান্তর।

যক্ষ ও রক্ষর উৎপত্তির পুরাণ কাহিনী অনুসরণে বলা যায় শরৎ ঋতুতে শস্যসম্ভার পরিপুষ্ট হয় অর্থাৎ ভাল ফলনের জন্য বৃদ্ধি লাভ করায় পূজিত হয় এবং হেমন্তঋতুতে পরিপক্ক ফসল ঘরে ওঠে অর্থাৎ বীজের মধ্যে আগতদিনের শস্যচার রক্ষিত হয়। সুতরাং তাড়কার রূপান্তর ঋতু পরিবর্তনের তথ্য।

জ্যেষ্ঠ নক্ষত্রর ২৪০° (দুইশত চল্লিশ অংশে) সূর্যর ধনুরাশিতে সংক্রমণের পর অমাবস্যার নিবৃত্তি ঘটলে পরবর্তী অমাবস্যা হয় ধনুরাশিতে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রর প্রথম পাদে।

তাড়কার ‘বসত্যত্যর্দ্ধযোজন’ শব্দে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রর এই অংশটি নির্দেশ করা হয়েছে। ধনুরাশিতে সূর্যর অবস্থানকালে দুইটি অমাবস্যা হওয়ায় এই মাসটি ক্ষয়মাস হয়। ক্ষয়মাস বর্ষচক্রের মধ্যে চোরের মত অথবা জোর করে প্রবেশ করেছে গণ্য করা যায়। সুতরাং মাসটিকে উচ্ছেদ বা হনন করা স্বাভাবিক। প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রে ক্ষয়মাস ও মলমাস সংশ্লিষ্ট চারটি শব্দ পাওয়া যায়। সংসপ, অহংস্পতি, ভানুলঙ্ঘিত এবং মলিম্লুচ। মলিম্লুচ শব্দের অর্থ চোর-স্বরূপ। সুতরাং এই শব্দে ক্ষয়মাস বুঝাতে মনে হয়।

এই তথ্য প্রকাশের কারণে রাক্ষসী তাড়কার পরাক্রমশীলতা এবং নারী হওয়া সত্বেও নিধন করার জন্য বিশ্বামিত্রর রামকে নির্দেশদান।

তাড়কা নিধন কাহিনীর মধ্যে আরও একটি তথ্যের ইংগিত পাওয়া যায়।

রামকে যৌবরাজ্যে অভিষেক করার সংকম্প ঘোষণার পর সীতার বক্তব্যমত রামের তখন চৰ্বিশ বছর পূর্ণ হয়েছে। তারপর দশরথের জন্ম নক্ষত্র আক্ৰমণ করেছিল রাহু। রাহুর এই অবস্থান বিচার করলে দেখা যায় রামের ষোল বছর বয়সে রাহু ছিল ধনুরাশির শেষাংশে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রর প্রথম পাদে। রামায়ণের ঘটনাকালে এই বিশেষ বৎসরে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রর ঐ অংশে সূর্যগ্রহণ হতে পারে, হয়ত পূৰ্ণগ্রাস হওয়ায় বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। সূর্যগ্রহণ অনুমান করা হচ্ছে এই কারণে যে বিশ্বামিত্র রামকে নিশাকালের পূর্বেই রাক্ষসী তাড়কাকে বধ করার নির্দেশ দিচ্ছেন।

সূর্যগ্রহণের কালে সূর্য অস্তমিত হলে রজনীর অন্ধকার ও গ্রহণের অন্ধকার একীভূত হয়ে যাওয়ার দরুণ গ্রহণকালের ব্যাপ্তি স্পষ্ট হয় না। কিন্তু অপরাহ্নে সূর্যগ্রহণ হয়ে সন্ধ্যার পূর্বে মোক্ষ হলে পুনরায় সূর্যদর্শন ঘটে। তাড়কা নিধনের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছিল। ক্ষয়মাসের অমাবস্যা তিথিতে সূর্যগ্রহণ হয় এবং অমাবস্যা তিথিতেই সূর্যর মকররাশি সংক্রমণের পরেই শুক্ল প্রতিপদ তিথির প্রবৃত্তি।

এই উপাখ্যানে লক্ষণীয় যে তাড়কা-নিধন কালে মারীচ উপস্থিত ছিল না। সীতাহরণ বিষয়ে মারীচের সঙ্গে রাবণের দুই দফার কথোপকথনকালে এবং সিদ্ধাশ্রমে মারীচ আগমন করে তার মাতৃহত্যা বিষয়ে কোন উল্লেখ করে নাই। সুতরাং তাড়কা ও মারীচের মাতা-পুত্র সম্বন্ধটি নিছক রহস্য সৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়।

চতুর্থ দিবসে সিদ্ধাশ্রমে প্রবেশ এবং রাত্রিবাস।

যদি ধনুরাশিতে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে ২৬৯°৩০’ (দুইশত উনসত্তর অংশ ত্রিশ কলায়) অমাবস্যা তিথির প্রবৃত্তি হয় রাত্রি আন্দাজ দশটায়। তাহলে সূর্যর মকররাশিতে সংক্রমণের পর রাত্রি প্রায় বারোটায় অমাবস্যা তিথির নিবৃত্তি হবে। এই দিনের পর পাঁচ অহোরাত্র গতে ষষ্ঠ দিবসে শুক্লাষষ্ঠ তিথিতে সূর্যর অবস্থান আন্দাজ ২৭৬°৪০’ (দুইশত ছিয়াত্তর অংশ চল্লিশ কলায়)। এই দিন উত্তরায়ণাদি ছিল।(৬)

এই অভূতপূর্ব জ্যোতিবিজ্ঞান তথ্য ভিত্তি করে আদিকবি তাড়কা নিধন কাহিনীর মধ্যে রামায়ণের কাল তথা ঘটনার সময়কালের সুন্দর সুস্পষ্ট ইংগিত দিয়েছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *