আজ একেলা বসিয়া , আকাশে চাহিয়া , কী সাধ যেতেছে , মন! বেলা চলে যায় — আছিস কোথায় ? কোন্ স্বপনেতে নিমগন ? বসন্তবাতাসে আঁখি মুদে আসে , মৃদু মৃদু বহে শ্বাস , গায়ে এসে যেন এলায়ে পড়িছে কুসুমের মৃদু বাস । যেন সুদূর নন্দনকাননবাসিনী , সুখঘুমঘোরে মধুরহাসিনী , অজানা প্রিয়ার ললিত পরশ ভেসে ভেসে বহে যায় , অতি মৃদু মৃদু লাগে গায় । বিস্মরণমোহে আঁধারে আলোকে মনে পড়ে যেন তায় , স্মৃতি-আশা-মাখা মৃদু সুখে দুখে পুলকিয়া উঠে কায় । ভ্রমি আমি যেন সুদূর কাননে , সুদূর আকাশতলে , আনমনে যেন গাহিয়া বেড়াই সরযূর কলকলে । গহন বনের কোথা হতে শুনি বাঁশির স্বর-আভাস , বনের হৃদয় বাজাইছে যেন মরমের অভিলাষ । বিভোর হৃদয়ে বুঝিতে পারি নে কে গায় কিসের গান , অজানা ফুলের সুরভি মাখানো স্বরসুধা করি পান । যেন রে কোথায় তরুর ছায়ায় বসিয়া রূপসী বালা , কুসুমশয়নে আধেক মগনা বাকল-বসনে আধেক ন গনা , সুখদুখগান গা ই ছে শুইয়া গাঁথিতে গাঁথিতে মালা । ছায়ায় আলোকে , নিঝরের ধারে , কোথা কোন্ গুপ্ত গুহার মাঝারে , যেন হেথা হোথা কে কোথায় আছে এখনি দেখিতে পাব — যেন রে তাদের চরণের কাছে বীণা লয়ে গান গাব । শুনে শুনে তারা আনত নয়নে হাসিবে মুচুকি হাসি , শরমের আভা অধরে কপোলে বেড়াইবে ভাসি ভাসি । মাথায় বাঁধিয়া ফুলের মালা বেড়াইব বনে বনে । উড়িতেছে কেশ , উড়িতেছে বেশ , উদাস পরান কোথা নিরুদ্দেশ , হাতে লয়ে বাঁশি মুখে লয়ে হাসি , ভ্রমিতেছি আনমনে । চারি দিকে মোর বসন্ত হসিত , যৌবনকুসুম প্রাণে বিকশিত , কুসুমের'পরে ফেলিব চরণ যৌবনমাধুরীভরে । চারি দিকে মোর মাধবী মালতী সৌরভে আকুল করে । কেহ কি আমারে চাহিবে না ? কাছে এসে গান গাহিবে না ? পিপাসিত প্রাণে চাহি মুখপানে কবে না প্রাণের আশা ? চাঁদের আলোতে দখিন বাতাসে কুসুমকাননে বাঁধি বাহুপাশে শরমে সোহাগে মৃদুমধুহাসে জানাবে না ভালোবাসা ? আমার যৌবনকুসুমকাননে ললিত চরণে বেড়াবে না ? আমার প্রাণের লতিকা-বাঁধন চরণে তাহার জড়াবে না ? আমার প্রাণের কুসুম গাঁথিয়া কেহ পরিবে না গলে ? তাই ভাবিতেছি আপনার মনে বসিয়া তরুর তলে ।
Leave a Reply