০১. দ্রোণাচার্য্যকে সেনাপতি-পদে বরণ

মুনি বলে শুন পরীক্ষিতের তনয়।
সমরে পড়িল যদি ভীষ্ম মহাশয়।।
দশ দিন যুদ্ধ করি মারি সেনাগণ।
আপন ইচ্ছায় তাঁর হইল পতন।।
ভীষ্ম যদি পড়িল আকুল দুর্য্যোধন।
হাহা ভীষ্ম শব্দ করি করয়ে রোদন।।
মহাশোকে রোদন করেন সেনাগণ।
কর্ণে চাহি কহিতে লাগিল দুর্য্যোধন।।
ভীষ্মের মরণ কর্ণ মনে পাই ত্রাস।
যুদ্ধ করি প্রাণ দিবে কহিলেন ব্যাস।।
তোমারে জিজ্ঞাসি সখে করহ বিচার।
কারে সেনাপতি করি কে করিবে পার।।
তোমা বিনা যোদ্ধাপতি নাহিক আমার।
কেবল ভরসা আমি করিহে তোমার।।
উপরোধ করি ভীষ্ম না করিল রণ।
তুমি মোরে ধরি দেহ ধর্ম্মের নন্দন।।
যদি মোরে ধরি দেহ কুন্তীর কুমার।
সত্য কহি শুন বীর সকলি তোমার।।

এতেক শুনিয়া কহে কর্ণ মহাবীর।
সদর্পে কহেন কথা নির্ভয় শরীর।।
মহারাজ কোন চিন্তা না করিহ তুমি।
একেলা পাণ্ডবগণে বিনাশিব আমি।।
এত বলি দুর্য্যোধন হরষিত মন।
শীঘ্র আসি কর্ণেরে দিলেন আলিঙ্গন।।

হেনকালে কহে কৃপাচার্য্য মহামতি।
সার কথা বলি শুন কুরু মহীপতি।।
কর্ণ সেনাপতি নহে দ্রোণ বিদ্যমান।
পৃথিবীতে বীর নাহি দ্রোণের সমান।।
একা মহারথী দ্রোণ পৃথিবী ভিতরে।
অর্দ্ধরথী বলি কহে কর্ণ ধনুর্দ্ধরে।।
অতএব দ্রোণে তুমি কর সেনাপতি।
শুনি হৃষ্ট হয়ে কহে গান্ধারী সন্তুতি।।
আজি সেনাপতি করি দ্রোণ মহারথী।
এত বলি দুর্য্যোধন চলে শীঘ্রগতি।।
কৃপাচার্য্য অশ্বথামা কর্ণ ধনুর্দ্ধর।
শকুনি দুম্মুখ সঙ্গে চলিল সত্বর।।
হরষিতে দুর্য্যোধন সবারে লইয়া।
দ্রোণের নিকটে তবে উত্তরিল গিয়া।।
প্রণমিয়া কহিলেন রাজা দুর্য্যোধন।
অবধান কর গুরু মম নিবেদন।।
মহারথী দেখি ভীষ্মে কৈনু সেনাপতি।
উপরোধে না যুঝিল ভীষ্ম মহারথী।।
ভরসা কেবল আমি তব ভূজাশ্রিত।
শরণ পালন কর হয়ে কৃপান্বিত।।
সেনাপতি বিনা যুদ্ধ নাহি হয় জানি।
কৃপা করি সেনাপতি হইবা আপনি।।
যুধিষ্ঠিরে ধরি দেহ এই নিবেদন।
তোমা ভিন্ন তারে ধরে নাহি হেন জন।।

দুর্য্যোধনে সকাতর দেখি গুরু দ্রোণ।
আশ্বাসিয়া কহিলেন শুন দুর্য্যোধন।।
সেনাপতি হৈব আমি করিব সমর।
কিন্তু এক কথা কহি তোমার গোচর।।
আমি সেনাপতি যদি হইব সমরে।
তবে বাণ ধরিবে না কর্ণ ধনুর্দ্ধরে।।
আমার নিয়ম এই শুন নরবর।
কহিলাম সত্য এই তোমার গোচর।।
যুধিষ্ঠিরে তবে আমি ধরিব নিশ্চয়।
কিন্তু যদি নাহি থাকে বীর ধনঞ্জয়।।

এতেক শুনিয়া তবে বলে দুর্য্যোধন।
তোমার নিকটে কর্ণ না করিবে রণ।।
দ্রোণ বলে শুন রাজা আমার বচন।
চক্রব্যূহ করিয়া করিব মহারণ।।
দুর্য্যোধন শুনিয়া হইল হৃষ্টমতি।
অভিষেক করি দ্রোণে করে সেনাপতি।।
জয় জয় শব্দ হয় কটকে ঘোষণা।
মহাশব্দে নানাবিধ বাজায় বাজনা।।
শত শত জয়ঢাক বাজে জয়ঢোল।
মহাশব্দ হৈল যেন সমুদ্র-কল্লোল।।
শত শত দামা বাজে, বাজে জগঝম্প।
কোটী কোটী সানি বাজে কোটী কোটীডম্ফ।।
মৃদঙ্গের রোলে কম্প হয় বসুমতী।
খমক টমক বাদ্য বাজে নানাজাতি।।
মহানাদে গর্জ্জন করয়ে সেনাগণ।
আনন্দিত হইল দেখিয়া দুর্য্যোধন।।
দ্রোণপর্ব্ব সুধারস অপূর্ব্ব আখ্যান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।