৩৪. ভীষ্মকৃত শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি

মুনি বলে, জন্মেজয় কর অবধান।
কৃষ্ণকে স্মরণ ভীষ্ম করিল তখন।।
শুন দেব নারায়ণ মোর নিবেদন।
তোমার চরিত্র প্রভু জানে কোন জন।।
দেবের দেবতা তুমি সবার ঠাকুর।
অনন্ত তোমার গুণ কে জানয়ে মূল।।
স্বর্গ-মর্ত্ত্য পাতাল বৈসে যত প্রাণী।
তোমার সকলি হয় তাহা আমি জানি।।
তোমার অধিক আর কে আছে সংসারে।
তোমা বিনে তিনলোকে ধ্যান করে কারে।।
তুমি হর তুমি হরি তুমি সর্ব্ববীজ।
তুমি বৃক্ষ তুমি ফল তুমি জল নিজ।।
তুমি যক্ষ তুমি রক্ষ গন্ধর্ব্ব কিন্নর।
তুমি আদি তুমি অন্ত তুমি নারী নর।।
তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি হও শিব।
তুমি মায়া তুমি স্নেহ তুমি সর্ব্বজীব।।
তুমি বায়ু তুমি অগ্নি তুমি সর্ব্বময়।
সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় যে তোমা হৈতে হয়।।
তুমি দয়া নিদয়া প্রভু তুমি ধর্ম্মাধর্ম্ম।
তুমি দ্বিজ তুমি কৃষ্ণ তুমি সর্ব্বকর্ম্ম।।
সুবুদ্ধি কুবুদ্ধি তুমি, তুমি সর্ব্বসিদ্ধ।
তুমি ধন তুমি জন তুমি অষ্টনিধি।।
তুমি গতি তুমি পতি অন্ধজন লড়ি।
তুমি কর্ত্তা তুমি হর্ত্তা তুমি বীর বলি।।
তুমি ভাল তুমি মন্দ তুমি সব কর।
নাটক হইয়া তুমি, তুমি নাট কর।।
তুমি যার তুমি তার, তুমি কর দয়া।
এ তিন ভুবনে তোমার সে মায়া।।
তুমি স্বর্গপুরে ইন্দ্র তুমি চন্দ্র রবি।
তুমি মুনি তুমি ঋষি পুরাণের কবি।।
তুমি মৃত্যু তুমি কাল তুমি হও যম।
চতুর্দ্দশ ভুবনে কে আছে তোমা সম।।
কেহ ত না জানে তোমা চিনিতে না পারে।
সুজন জনারে রাখ অসুর-সংহারে।।
তোমার ভকত যেই তোমাকে সে চিনে।
তার গতি গোত্র প্রভু হও ত আপনে।।
আমারে করহ দয়া দেবকী-নন্দন।
তোমার চরণে যেন দৃঢ় রহে মন।।
অর্জ্জুনের রথে তুমি ছিলে তার সঙ্গে।
তাহারে হানিতে বাণ বাজে তব অঙ্গে।।
এই দোষ ক্ষমা মোর কর নারায়ণ।
প্রাণ যাইতে দেখি যেন তোমার চরণ।।
তোমা বিনে গতি মোর নাহিক সংসারে।
পদতলে স্থান দিয়া রাখিবে আমারে।।
হাসিয়া বলেন তবে দেবকী-নন্দন।
ক্ষমিনু সকল যাহ বৈকুণ্ঠ ভুবন।।
কান্দি কান্দি পঞ্চ ভাই বলিল বিস্তর।
আশীর্ব্বাদ করিলেন ভীষ্ম দনুর্দ্ধর।।
বৈশম্পায়ন মুনি গুণের নিধন।
অষ্টাদশ পুরাণ যাহাতে অধিষ্ঠান।।
কাশীরাম দাস কহে ভারত-আখ্যান।
এই মতে ভীষ্মপর্ব্ব হৈল সমাধান।।

ভীষ্মপর্ব্ব সমাপ্ত।