২৮. কুরু-পাণ্ডুবীরগণের পরস্পর যুদ্ধ

ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসিল সঞ্জয়ের স্থানে।
ভীষ্ম সঙ্গে যুদ্ধ করে পাণ্ডবের গণে।।
মোর যোদ্ধাগণে কেবা মারয়ে পাণ্ডব।
সৃঞ্জয় পাঞ্চাল কিবা করিল কৌরব।।
সঞ্জয় বলেন, রাজা কৌরব পাণ্ডব।
বিস্তারিয়া কহি যত বুঝে বীর সব।।
ভীষ্মেরে প্রতিজ্ঞা যেই সেই করে রণ।
দশ সহস্র রথী নিত্য করেন নিধন।।
অর্জ্জুনে সংগ্রামে চলে পাঞ্চালের সাথে।
অযুতে অযুতে সৈন্য মারে সব্যহাতে।।
ধৃষ্টকেতু সনে রণ কৌরব সহিত।
দুর্য্যোধন সনে রণ সুভদ্রার সুত।।
দ্বাদশ বাণেতে রাজা অভিমন্যু হানে।
ক্রোধ করি শেল এড়ে সুভদ্রা নন্দনে।।
ক্ষুরবাণে দুর্য্যোধন কাটিল ত্বরিত।
অভিমন্যু নব বাণে করিল পীড়িত।।
পুনঃ বাণে হানিলেক রাজার হৃদয়।
ক্ষণেক অস্থির হয়ে রথোপরি রয়।।
রাজাকে স্থগিত দেখি কোশলের পতি।
অষ্টাদশ বাণে হানে অভিমন্যু রথী।।
মদ্ররাজা সনে রণ ধর্ম্মের নন্দন।
মাতুল-ভাগিনা যুদ্ধ হইল তখন।।
পদাতি পদাতি যুদ্ধ করে মহারণ।
এত মতে ঘোর যুদ্ধ হইল তখন।।
অশ্বে অশ্ব মারিল হস্তীতে মারে হস্তী।
উন্মত্তের প্রায় রথ বিপরীত গতি।।
পরস্পর করে রণ অতি ভয়ঙ্কর।
অর্জ্জুন কৌরবে ক্ষয় করিল সমর।।
তবে শল্য কৃপ আর বিকর্ণ দুঃশাসন।
অর্জ্জুনে আগুলে আসি যুদ্ধে ততক্ষণ।।
দুঃশাসনে হানিলেক পার্থ ধনুর্দ্ধর।
শরীর ভেদিয়া বাণ ধায় রসাতল।।
পরে তার সারথিরে কাটিল অর্জ্জুন।
চারি অশ্ব কাটি তার কাটে ধনুর্গুণ।।
কৃপ শল্য বিকর্ণ হানিল তিন জনে।
বিরথ করিল তিনে পাণ্ডুর নন্দনে।।
পরাজয় পেয়ে তারা ভঙ্গ দিল রণে।
তাহা দেখি ভীষ্ম বাণ যোড়ে শরাসনে।।
অগ্নিতে পোড়য়ে যেন শুষ্ক বন পেয়ে।
সেই মত পড়ে সৈন্য ভীষ্ম-বাণ খেয়ে।।
চেদি পাঞ্চাল কাশী বিরাট রাজার।
যমপুরে নিল সৈন্য পরম যুঝার।।
অক্ষয় ভীষ্মের অস্ত্র বিন্ধিছে শরীরে।
ভীষ্মের সম্মুখে কেহ দাণ্ডাইতে নারে।।
জমদগ্নিসুত রাম-শিক্ষিত যে বাণ।
পাণ্ডু-সৈন্য নাশ করে পূরিয়া সন্ধান।।
বিরাটের সহোদর শতানীক পড়ে।
সহস্র রাজার মাথা বাণে কাটি পাড়ে।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন সহিত আইল ভীমসেন।
নকুল সহদেব আর কেকয় পঞ্চজন।।
চেকিতান সাত্যকি আর সুভদ্রা নন্দন।
ধৃষ্টকেতু দ্রুপদ আইল কাল হেন।।
দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র ঘটোৎকচ সনে।
উত্তমৌজা কুন্তীভোজ আইল আপনে।।
বিরাট প্রভৃতি আইলা যত পাণ্ডুগণ।
একে একে হানি ভীষ্ম করে নিবারণ।।
ভয়ার্ত্ত কাতর হৈর ছিল যত জন।
অর্জ্জুনে সম্বোধি বলে দেবকী নন্দন।।
এই দেখ ভীষ্ম হানে মহারথিগণ।
তোমা বিনে তার অস্ত্র সহে কোন্ জন।।
শুনিয়া কৃষ্ণের বাণী অর্জ্জুন তখন।
ভীষ্মের উপরে করে বাণ বরিষণ।।
রথ ধ্বজ অশ্ব যূথ আবরিল শরে।
শরে শর পার্থ বীর নিবারণ করে।।
দুর্য্যোধন নরপতি লয়ে রাজগণ।
পাণ্ডব সহিত যুদ্ধ করে অনুক্ষণ।।
শিখণ্ডীকে আগে করি পাণ্ডব নিকর।
বেড়িয়া হানয়ে শর ভীষ্মের উপর।।
শতঘ্নী পরশু আর মুষল মুদগর।
শেল শূল জাঠা জাঠি ভূষণ্ডী তোমর।।
ভীষ্মপর্ব্বে দশর অধ্যায় সমাপন।
ব্যাস-বিরচিত তাহা কাশীরাম গান।।