২২. অর্জ্জুনের বীভৎসু ও অন্যান্য নামের বিবরণ

পার্থ বলিলেন, শুন বিরাট-নন্দন।
কহি এবে আর নাম যাহার কারণ।।
বিজয় বলিয়া ডাকে সকলে আমারে।
বিজয় করিয়া আসি, যাই যথাকারে।।
শ্বেতবর্ণ চারি অশ্ব মম রথ বহে।
শ্বেতবাহনক বলি লোকে মোরে কহে।।
সূর্য্য অগ্নি সম মম কিরীট যে মাথে।
কিরীটী দিলেন নাম তেঁই সুরনাথে।।
বীভৎসু বলিয়া ডাকিলেন নারায়ণ।
কহিব বিরাট পুত্র তাহার কারণ।।
এক দিন কৃষ্ণ সহ নৈমিষ-কাননে।
জিজ্ঞাসা করেন কৃষ্ণ সহায্য বদনে।।
ধন্য ধনঞ্জয় তুমি, বলে মহাবল।
তোমা সম বীর নাহি ধরণীর তল।।
লক্ষ রাজা জিনি কৃষ্ণা নিলে স্বয়ম্বরে।
জিনিলে অঙ্গারপর্ণ গন্ধর্ব্ব-ঈশ্বরে।।
খাণ্ডব দহিয়া অগ্নি নির্ব্যাধি করিলে।
ইন্দ্র সহ সুরাসুর সমরে জিনিলে।।
কুবেরে জিনিয়া ধন আনিলে সকল।
তিন লোক আসি খাটে তব ছত্রতল।।
মহাভার ধরণী ধরিলে বাহুবলে।
বাহুযুদ্ধে সদানন্দে সন্তোষ করিলে।।
তপেতে তাপিলে তুমি হিমালয় গিরি।
চক্ষুর কোণেতে নাহি চাহ পরনারী।।
যে ঊর্ব্বশী দেখি ব্রহ্মা হলেন মোহিত।
যে জন তোমার ঠাঁই হইল লর্জ্জিত।।
বীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ তুমি, তপেতে প্রধান।
জিতেন্দ্রিয় রূপে গুণে কামের সমান।।
এ তিন ভুবনে নাহি দেখি এক জনা।
তোমার সদৃশ রূপগুণের তুলনা।।
আমা হৈতে শতগুণে তোমারে বাখানি।
তোমার সদৃশ কেবা আছে বীরমণি।।
আমি হেন নাহি দেখি সংসার ভিতরে।
তুমি যদি জান আছে, দেখাহ আমারে।।
আমি কহিলাম বহু করিয়া প্রকার।
ধাতার সৃজিত এই সকল সংসার।।
আমা হৈতে অধিক আছয়ে রূপে গুণে।
নাহি বলি শ্রীগোবিন্দ বল কি ‍কারণে।।
গোবিন্দ বলেন, সখা দেখাহ আমারে।
আপন সদৃশ জন কে আছে সংসারে।।
পুনঃ পুনঃ শ্রীগোবিন্দ বলেন আমারে।
গোবিন্দের আজ্ঞা পেয়ে গেলাম সত্বরে।।
স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতল ভ্রমি ত্রিভুবন।
আপন সদৃশ নাহি দেখি কোন জন।।
কৃষ্ণের উদ্দেশে মনে করি বিবেচন।
মম সম নাহি পাই এ তিন ভুবন।।
আপন সদৃশ জন কারে না দেখিয়া।
পুরীষ নিলাম আমি বসনে বান্ধিয়া।।
গোবিন্দের আগে করিলাম নিবেদন।
আমা হেন ত্রিভুবনে নাহি কোন জন।।
তোমার মুখেতে পূর্ব্বে শুনিয়াছি আমি।
যত জীব তত্র শিবরূপে আছ তুমি।।
ব্রহ্ম কীট তৃণাদিতে তুমি আত্মা রূপে।
তিনলোকে নাহি পাই আমার স্বরূপে।।
ভাবিয়া চিন্তিয়া এই বুঝিলাম সার।
তোমাতে পূরিত এই সকল সংসার।।
আপন সদৃশ নাহি পাই এক জন।
আমি যার তুল্য আনিয়াছি নারায়ণ।।
হয় নয় সমতুল করিতে না পারি।
আনিয়াছি জগন্নাথ দেখাইতে ডরি।।
অন্তর্য্যামী বাসুদেব সকল জানিয়া।
ফেলাহ ফেলাহ বলি বলেন ডাকিয়া।।
কি কারণে ধনঞ্জয় এতেক ন্যূনতা।
যেই আমি সেই তুমি, নহেক অন্যথা।।
তোমায় আমায় কিছু নাহি ভেদাভেদ।
ব্রহ্মা শিব জানে ইহা, জানে চারি বেদ।।
এত বলি শ্রীগোবিন্দ করি আলিঙ্গণ।
দিলেন বীভৎসু নাম করি নিরূপণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।