৫৩. পাণ্ডবদিগের বনবাস গমনোদযোগ

বিনয় করিয়া কহিছেন ধর্ম্মরায়।
ধৃতরাষ্ট্র আদি যত ছিলেন সভায়।।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য্য বিদুর সঞ্জয়।
সোমদত্ত ভূরিশ্রবা পৃষত-তনয়।।
একে একে সবারে বলেন ধর্ম্মরায়।
আজ্ঞা কর, বনে যাই, মাগি যে বিদায়।।
লজ্জায় মলিন সবে, মাথা না তুলিল।
মনে মনে সর্ব্বজন কল্যাণ করিল।।
বিদুর কহেন তবে সজল-নয়ন।
খণ্ডাইতে কেবা পারে দৈব-নির্ব্বন্ধন।।
কিছুদিন কষ্ট ভোগ করহ কাননে।
কুন্তীকে রাখিয়া যাও আমার ভবনে।।
একে বৃদ্ধা আর তাহে রাজার কুমারী।
যোগ্য নহে কুন্তী এবে হৈবে বনচারী।।
ধর্ম্ম-বলিলেন, তুমি জনক-সমান।
তব আজ্ঞা কুরুকুলে কে করিবে আন।।
বিশেষে পাণ্ডব-গুরু, জানে সর্ব্বজন।
মম শক্তি নাই, তাহা করিব হেলন।।
থাকুক জননী তাত তোমার আলয়।
আর কি করিব, আজ্ঞা কর মহাশয়।।
বিদুর বলেন, তুমি সর্ব্ব-ধর্ম্ম-জ্ঞাতা।
অধর্ম্মে হইল জিত, না পাইও ব্যথা।।
আমি কি করিব তাত তোমার গোচর।
তুলনা নাহিক দিতে পঞ্চ সহোদর।।
পরম সঙ্কটে যেন ধর্ম্মচ্যুত নহে।
এই উপদেশ মম যেন মনে রহে।।
কুশলে আসিও সত্য করিয়া পালন।
পুনঃ তোমা দেখি যেন জুড়ায় নয়ন।।
এত বলি বিদুর হইল শোকাকুল।
বনে যেতে পঞ্চ ভাই হলেন আকুল।।
জটা-বল্ক পঞ্চ ভাই করেন ভূষণ।
তবে ত দ্রৌপদী দেবী দেখি স্বামিগণ।।
ত্যজিলা ভূষণ বস্ত্র পিন্ধন সকল।
লম্বিত কোমল কেশ পিন্ধন বাকল।।
রাজ্য ত্যজি অরণ্যেতে যান ধর্ম্মরায়।
শুনি হস্তিনার লোকে স্ত্রী-পুরুষে ধায়।।
পাণ্ডবের বেশ দেখি কান্দে সর্ব্বজন।
বাল বৃদ্ধ যুবা কান্দে, যত নারীগণ।।
ভূমে গড়াগড়ি দিয়া কান্দে দ্বিজগণ।
আমা সবাকারে কেবা করিবে পালন।।
নগর পূরিল যে রোদন-কোলাহলে।
হস্তিনা কর্দ্দম হৈল নয়নের জলে।।
পঞ্চ পুত্র বনে যায়, বধূ গুণবতী।
বার্ত্তা শুনি কুন্তী দেবী আসে শীঘ্রগতি।।
দূর হৈতে দেখি কুন্তী তনয় সকলে।
মূর্চ্ছিত হইয়া দেবী পড়িল ভূতলে।।
মুকুলিত কেশভার, গলিত বসন।
শিরে করাঘাত করি করেন রোদন।।
বধূর দেখিয়া বেশ হইল বাতুলী।
দাণ্ডাইয়া চাহে যেন চিত্রের পুত্তলী।।
ক্ষণেক রহিয়া কহে গদগদ ভাষে।
সভাপর্ব্ব সুধারস গায় কাশীদাসে।।