৫০. যুধিষ্ঠিরাদির মুক্তি হেতু দুর্য্যোধনের বিষাদ

শুনি জন্মেজয় জিজ্ঞাসেন মুনিবরে।
কহ শুনি, কি প্রসঙ্গে হৈল তদন্তরে।।
কেন বনে চলিলেন পিতামহগণ।
শুনিবারে ইচ্ছা বড়, কহ তপোধন।।
মুনি বলে, পঞ্চ ভাই ইন্দ্রপ্রস্থে গেলে।
করযোড়ে দুঃশাসন দুর্য্যোধনে বলে।।
যতেক করিলা সব বৃদ্ধ বিনাশিল।
যে সব জিনিলা, তারে পুনঃ তাহা দিল।।
দুর্য্যোধন দুঃশাসন রাধেয় শকুনি।
অতি শীঘ্র গেল যথা অন্ধ নৃপমণি।।
দুর্য্যোধন বলে, তাত অনর্থ করিলা।
বন্দী করি কষ্টে সিংহ তাহা ছাড়ি দিলা।।
বৃহস্পতি ইন্দ্রকে যে কহিলেন নীত।
তোমা কি কহিব তাহা, তোমার বিদিত।।
যে মতে পারিবে, শত্রু করিবে নিধন।
বুদ্ধে যুদ্ধে শত্রুকে না ক্ষমি কদাচন।।
পাণ্ডব হইতে জিনিলাম যত ধন।
বাহুড়িয়া দেহ তারে কিসের কারণ।।
সেই ধনে বশ করিব রাজারে।
রাজা সখা হইলে মারিব পাণ্ডবেরে।।
স্নেহ করি পুনঃ সব দিলা তুমি তারে।
তথাপি কি পাণ্ডুপুত্র ক্ষমিবে আমারে।।
ক্রোধে সর্পবৎ হয় পাণ্ডু-পুত্রগণ।
যত করিলাম, না ক্ষমিবে কদাচন।।
সকল ক্ষমিবে তাত তোমার পীরিতে।
দ্রৌপদীর কষ্ট না ক্ষমিবে কদাচিতে।।
সৈন্য সাজাবারে তারা গেল নিজ দেশ।
যুদ্ধ হেতু আসিবেক করি সমাবেশ।।
সশস্ত্র থাকিলে রথে পাণ্ডু-পুত্রগণ।
জিনিতে না হৈবে শক্ত এ তিন-ভবন।।
আর শুন তাত যবে মুক্ত হৈয়ে যায়।
মুহুর্মুহুঃ পার্থবীর গাণ্ডীব দেখায়।।
দক্ষিণ বামেতে দুই তূণ ঘন দেখে।
সঘনে নিশ্বাস ছাড়ে হস্ত দিয়া নাকে।।
সিংহ সম গর্জ্জনেতে যায় বৃকোদর।
ঘন গদা লোফয়ে, কচালে করে কর।।
স্নেহেতে ভুলিয়া তাত করিলা কি কাজ।
মোর ক্লেশ-হেতু স্বয়ং হৈলা মহারাজ।।
শুনিয়া অস্থির-চিত্ত হৈল কুরুরায়।
অন্ধ বলে, কি হইবে কি করি উপায়।।
দুর্য্যোধন বলে, তাত আছয়ে উপায়।
পুনঃ পাশা প্রবর্ত্তিত করহ নির্ণয়।।
যে হারিবে, দ্বাদশ বৎসর যাবে বন।
বৎসরেক অজ্ঞাত রহিবে এই পণ।।
অজ্ঞাত-বাসেতে কভু যদি জ্ঞাত হয়।
পুনরপি বনবাস অজ্ঞাত নিশ্চয়।।
এয়োদশ বৎসর পাণ্ডব গেলে বন।
পৃথিবীর যত রাজা করিব আপন।।
অজ্ঞাত হইতে যদি হইবেক পার।
হীনবল হৈবে, তবে করিব সংহার।।
ইহা বিনা উপায় নাহিক মহাশয়।
আজ্ঞা কর আনিবারে পাণ্ডব-তনয়।।
শুনি অন্ধ আজ্ঞা দিল প্রতিকামী প্রতি।
যাহ শ্রীঘ্র, ফিরি আন ধর্ম্ম-নরপতি।।
পথে কিম্বা ইন্দ্রপ্রস্থে যথায় ভেটিবে।
মম আজ্ঞা বলি পুনঃ আনহ পাণ্ডবে।।
ইহা শুনি আইল যতেক মন্ত্রিগণ।
বিদুর বিকর্ণ শুনি আইল তখন।।
গান্ধারী শুনিয়া তথা আইলা শীঘ্রগতি।
সবিনয়ে বলে সতী, অন্ধরাজ প্রতি।।
শুনি রাজা পূনর্ব্বার পাণ্ডবে ডাকিলে।
বৃদ্ধকালে কি বুদ্ধি তোমারে দৈব দিলে।।
সাক্ষাতে দেখিলে যত পাণ্ডব-দুর্গতি।
পুনঃ পাশা খেলা হেতু দিলে অনুমতি।।
দ্রৌপদীর প্রতি এত করে অত্যাচার।
ক্ষমা করে দুষ্টে সতী, না করে সংহার।।
নাহি বুঝ দুষ্ট দুর্য্যোধনের প্রকৃতি।
ইহার কথায় রাজা হৈলে ছন্নমতি।।
এত শুনি ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ সোমদত্ত।
বাহ্লীক বিদুর মন্ত্রী বিকর্ণাদি যত।।
একে একে পুনঃ পুনঃ সবাই কহিল।
পুত্রবশ হৈয়ে রাজা শুনি না শুনিল।।
কারো বাক্য না শুনিল কুরু-অধিকারী।
কহিতে লাগিল তবে গান্ধারী সুন্দরী।।
উপস্থিত হয় যবে অন্তিম সময়।
ঔষধ না খায় রোগী কাশীদাস কয়।।
সময় হইলে মন্দ দুষ্টবুদ্ধি জন।
কাশী কহে, হিত বাক্য না করে শ্রবণ।।