৪৬. বিরাট রাজার নিকট উত্তরের যুদ্ধ-বৃত্তান্ত বর্ণন

তবে মৎস্য-নরপতি চাহিয়া কুমার।
জিজ্ঞাসিল কহ তাত যুদ্ধ-সমাচার।।
যে কর্ম্ম করিলে তুমি অদ্ভুত সংসারে।
দুর্দ্ধর্ষ যে কুরুসৈন্য জিনিলে সমরে।।
তোমার সমান পুত্র নহিল নহিবে।
তোমার মহিমা যশ সংসারে ঘোষিবে।।
কহ তাত কিরূপে জিনিলে কুরুগণে।
কর্ণ মহাবীর বলি বিখ্যাত ভুবনে।।
দেব দৈত্য অগ্রে যার যুদ্ধে নহে স্থির।
কিরূপে জিনিলে হেন কুরু মহাবীর।।
দ্রোণ গুরু বলি যিনি প্রতাপে অপার।
ক্রোধ কৈলে জিনিবারে পারয়ে সংসার।।
কালাগ্নি সমান শিক্ষা ভীষ্ম মহাবীর।
অশ্বত্থামা কৃপাচার্য্য দুর্জ্জয় শরীর।।
কিরূপে করিলে যুদ্ধ তা সবার সহ।
প্রত্যক্ষে সে সব কথা শুনি, মোরে কহ।।
অদ্ভুত লাগিছে মোর এই সব কথা।
যেই কুরুসৈন্যে আছে মহা মহা-রথা।।
ব্যাঘ্রমুখ হৈতে যেন আমিষ আনিলে।
সেইমত কুরু হৈতে গোধন ছাড়ালে।।
ধন্য ধন্য পুত্র তুমি কুলের দীপক।
বড় ভাগ্যবান আমি, তোমার জনক।।
উত্তর বলিল, তাত কর অবধান।
যখন সমরে আমি করিনু প্রয়াণ।।
বহু সৈন্য দেখি চিত্তে লাগে মোর ভয়।
হেনকালে আসে এক দেবের তনয়।।
আপনি হইয়া রথী করিলেক রণ।
কুরুবল রণে সেই জিনিল তখন।।
অদ্ভুত তাঁহার কর্ম্ম, নাহি দেখি শুনি।
এক মুখে কি কহিব তাঁহার কাহিনী।।
লণ্ড ভণ্ড করিলেক অপ্রমিত সেনা।
যতেক পড়িল তাত কে করে গণনা।।
দয়া করি তোমা আমা সঙ্কটেতে তারি।
কুরুসৈন্য হৈতে গবী দিলেন উদ্ধারি।।
নাহি জিনিয়াছি আমি কুরুসৈন্যগণ।
নাহি মুক্ত করিয়াছি একটি গোধন।।
শুনিয়া বিরাট কহে, কহ পুত্র মোরে।
কি হেতু সে দেবপুত্র রাখিল তোমারে।।
কোথায় নিবাস তাঁর, গেল কোথাকারে।
দেখিতে কি কভু নাহি পাব আমি তাঁরে।।
উত্তর বলিল, তাত আছে এই দেশে।
আজি কিম্বা কালি কিম্বা তৃতীয় দিবসে।।
হেথায় আসিবে সেই দেবের নন্দন।
শুনিয়া বিরাট হন আনন্দিত মন।।
অন্তঃপুরে যান পার্থ য‍থা কন্যাগণ।
উত্তরাকে দিল যত আনিল বসন।।
যার যে নিবাস-স্থানে নিবসিল গিয়া।
কাশীদাস কহে কৃষ্ণপদ ধেয়াইয়া।।
যতনে ধেয়ায় সাধু যাঁরে নিরবধি।
যাদব-কুলেতে যেই দয়াময় নিধি।।
জলধর-কান্তি মুখ-চন্দ্র অখণ্ডিত।
অমল কমল চক্ষু অরুণ-নিন্দিত।।
মকর কুণ্ডল কর্ণে মস্তকে মুকুট।
বান্ধুলি বরণ ওষ্ঠাধর করপুট।।
যে মুখ দর্শনে জন্ম জন্ম পাপ খণ্ডে।
জরা-শোক ভয় খণ্ডে আর যমদণ্ডে।।