৪৩. দুঃশাসনের রক্তপাণে ভীমের প্রতিজ্ঞা

অদ্ভুত দেখিয়া সভাজন হৈল স্তব্ধ।
সাধু সাধু দ্রৌপদী, চৌদিকে হৈল শব্দ।।
পূর্ব্বে কভু নাহি শুনি না দেখি নয়নে।
দুর্য্যোধনে বহু নিন্দা করে সভাজনে।।
ভ্রাতৃগণ মধ্যে বসি ছিল বৃকোদর।
মহানাদে গর্জ্জিত উঠে সভার ভিতর।।
অধরোষ্ঠ কম্পয়ে, কম্পয়ে কর পদ।
ঘূর্ণিত নয়ন-যুগ যেন কোকনদ।।
সভাশব্দ নিবারিয়া কহে সর্ব্বজনে।
মোর বাক্য শুন যত আছ রাজগণে।।
সত্য করি কহি আমি সবার অগ্রেতে।
যাহা করি, তাহা যদি না পারি করিতে।।
পিতৃ পিতামহ গতি না পান কখনে।
এই কুরু কুলাধম দুষ্ট দুঃশাসনে।।
রণমধ্যে ধরি বক্ষ করিব বিদার।
করিব শোণিত পান করি অঙ্গীকার।।
শুনিয়া সভার লোক হইল কম্পিত।
প্রশংসিল সভাজন বুঝিয়া বিহিত।।
তবে দুঃশাসন বড় হইল লজ্জিত।
পুঞ্জ পুঞ্জ বস্ত্র দেখি হইল বিস্মিত।।
পরিশ্রান্ত হৈয়া শেষে বসে ভূমিতলে।
মলিন বদন হৈল যত কুরুবলে।।
যত সাধুগণ সবে করয়ে রোদন।
ধিক্ ধৃতরাষ্ট্র! নিন্দা করে সর্ব্বজন।।
আপনিও অন্ধ, অন্ধ পুত্র জন্মাইল।
কুরুবংশে এমন কখন না হইল।।
তবে ত বিদুর নিবারিয়া সর্ব্বজনে।
সভাজনে চাহিয়া বলেন ততক্ষণে।।
এ সভার মধ্যে আছে যত রাজগণ।
বুঝি এক বাক্য নাহি বল কি কারণ।।
ভয়ার্ত্ত হইয়া যদি আসে সভামাঝে।
সভাজনে চাহিয়ে তাহার ন্যায় বুঝে।।
সভাতে থাকিয়া যেই বিচার না করে।
সে অধর্ম্মী-জন যায় নরক ভিতরে।।