৩৫. ধৃষ্টদ্যুম্ন বধে অশ্বথামার প্রতিজ্ঞা

মুনি বলে, শুন জন্মেজয় নৃপবর।
দ্রোণাচার্য্য পড়ি গেল সংগ্রাম ভিতর।।
দুর্য্যোধন রাজা কান্দে করি হাহাকার।
সৈন্যমধ্যে মহাশব্দ ক্রন্দন অপার।।
দুর্য্যোধন কান্দি বলে শুন যোদ্ধাগণ।
কোনজন কোনরূপে করিবে তারণ।।
এমন গুরুকে শক্র সংহারিল রণে।
কে ‍তাড়িবে কে মারিবে পাণ্ডুপুত্রগণে।।
পিতামহ বীর ছিল ভুবনে দুর্জ্জয়।
তাঁহাকে পাণ্ডবগণ করিল সংশয়।।
তাহার বিক্রমে ভৃগুরাম নহে স্থির।
হেন পিতামহে মারে ধনঞ্জয় বীর।।

অতি শোকাকুল হয়ে কান্দে দুর্য্যোধন।
হেনকালে তথা আসে সূর্য্যের নন্দন।।
কর্ণে দেখি দুর্য্যোধন বলে অভিমানে।
ভীষ্ম দ্রোণ সেনাপতি পড়ি গেল রণে।।
এখন কি বল সখে আছে কি উপায়।
কর্ণ বলে শুন রাজা বলি হে তোমায়।।
বড়ই দুর্ব্বল পুরাতন বৃদ্ধ ছিল।
বাণ শিক্ষা ছিল তেঁই সমর করিল।।
দোঁহা হেতু শোক না করিহ দুর্য্যোধন।
আমিই বান্ধিয়া দিব পাণ্ডবের গণ।।
ধর্ম্মকে ধরিয়া দিব সমর ভিতর।
রণস্থলে শোক না করিহ নৃপবর।।

হেনকালে তথা আইলেন অশ্বথামা।
কৃতবর্ম্মা সঙ্গে আর কৃপাচার্য্য মামা।।
পিতার বিনাশ শুনি হইল অস্থির।
শোকে অচেতন হৈল অশ্বথামা বীর।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন হস্তে শুনিপিতার নিধন।
মহাকাপে কাঁপে বীর দ্রোণের নন্দন।।
দুর্য্যোধনে চাহি বলে দ্রোণের তনয়।
আমি যাহা কহি তাহা শুন মহাশয়।।
বিনা ধৃষ্টদ্যুন্ন বধে ধনু যদি এড়ি।
সর্ব্ব ধর্ম্ম নষ্ট হবে নরকেতে পড়ি।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন না মারিয়া না আসিব ঘর।
করিনু প্রতিজ্ঞা আমি সবার গোচর।।
গোবধে ব্রাহ্মণ বধে যত পাপ হয়।
সেই পাপ মোরে যদি না মারি নিশ্চয়।।

এত শুনি আনন্দিত কৌরবকুমার।
যুদ্ধ নিবারিয়া গেল স্থানে আপনার।।
পাণ্ডবের দলে হৈল আনন্দ অপার।
সবে বলে কুরু আজি হইল সংহার।।
বাদ্যের নিনাদ হৈল না যায় লিখন।
মহানাদে নৃত্য করে নটনটীগণ।।
রত্ন সিংহাসনেতে বৈসেন যুধিষ্ঠির।
ভ্রাতৃগণ সহিত সানন্দ যত বীর।।
বলেন বৈশম্পায়ন জন্মেজয় শুনে।
কাশীরাম দাস কহে শুনে সর্ব্বজনে।।