৩৩. মণিস্পর্শে অর্জ্জুনাদির জীবন প্রাপ্তি

শ্রীজনমেজয় বলে শুন তপোধন।
কি প্রকারে পাইলেন অর্জ্জুন জীবন।।
সে সকল কথা এবে কহ মহাশয়।
তোমার প্রসাদে শুনি খণ্ডুক সংশয়।।

বলেন বৈশম্পায়ন শুন নরপাত।
কহি যে তোমারে আমি সে সব তারতী।।
নিজ পরিচয় দিল শ্রীবভ্রুবাহন।
করিলেন আশ্বাস তাহারে নারায়ণ।।
গোবিন্দ বলেন মুণ্ড হরিল যে জন।
তাহার মস্তক খসি পড়ুক এখন।।
অর্জ্জুনের মুণ্ড আসি স্কন্ধেতে লাগুক।
ইহা কহিলেন কৃষ্ণ হয়ে সকৌতুক।।
তবে সে দুজনার মস্তক খসিল।
বভ্রুবাহ রাজা তাহা নয়নে দেখিল।।
বৃষকেতু অর্জ্জুনের মস্তক লইয়া।
অনন্ত আপনি আসে সানন্দ হইয়া।।
দোঁহাকার স্কন্ধে মুণ্ড করিল যোজন।
অমৃত আপনি ছড়াইলা নারায়ণ।।
প্রাণদান পায় সবে মণির পরশে।
রাখিলেন কৃষ্ণচন্দ্র আপনার পাশে।।
হস্তী ঘোড়া আদি যত ছিল মৃতলোক।
মণি হৈতে প্রাণ পায় দূর হৈল শোক।।
উঠিয়া বলি যত নৃপতিকুমার।
মহাশব্দে সৈন্য সব বলে মার মার।।
যদুমণি মণি দেন অনন্তের স্থানে।
মণি লয়ে গেল নাগ আপন ভবনে।।

গোবিন্দ বলেন শুন অর্জ্জুন তনয়।
ক্ষন্ত্রধর্ম্ম আচরিলা নাহি ধর্ম্মভয়।।
অপরাধ বলি তুমি না ভাবিহ মনে।
ক্ষন্ত্রিয় প্রধান কর্ম্ম সম্মূখ সংগ্রামে।।
অর্জ্জুনেরে বুঝাইয়া কহিলেন হরি।
বভ্রুবাহনেরে তোষ আলিঙ্গন করি।।
কৃষ্ণবাক্যে ধনঞ্জয় সম্প্রীতি পাইয়া।
বভ্রুবাহে তুষিলেন আলিঙ্গন দিয়া।।
আমার নন্দন তুমি বড় বলবান।
ত্রিভুবনে বীর নাহি তোমার সমান।।
সম্প্রীতি পাইয়া সবে দিল আলিঙ্গন।
সবে বলে যোদ্ধা বড় শ্রীবভ্রুবাহন।।
প্রণমিয়া বভ্রুবাহ কহে যোড়হাতে।
একদৃষ্টে নিরীক্ষয়ে পাণ্ডবের নাথে।।
অনুশাল্ব দৈত্য সঙ্গে কৈল আলিঙ্গন।
সবে বলে ধন্য ধন্য অর্জ্জুন নন্দন।।
চিত্রাঙ্গদা উলুপী গেলেন অন্তঃপুরে।
কৃষ্ণ হেথা কহিলেন বভ্রুবাহনেরে।।
তুরঙ্গ রাখিতে যাহ অর্জ্জুন সংহতি।
সৈন্যগণ সঙ্গে লহ ঘোড়া আর হাতী।।
বভ্রুবাহ রাজা তবে হরষিত চিতে।
তুরঙ্গ লইয়া বীর করিল প্রয়াণ।।
এই বিবরণ রাজা কহিনু তোমারে।
আর কি বলিল রাজা বলহ আমারে।।