৩১. মণিপুরে শ্রীকৃষ্ণের আগমন

শুন রাজা জন্মেজয় পূর্ব্বের ভারতী।
কদাচিত খল জন নহে শুদ্ধমতি।।
মণি লয়ে বভ্রুবাহ গেল নিজপুরে।
উপনীত হৈল গিয়া মায়ের গোচরে।।
উলুপী কহিল পুত্র কহ বিবরণ।
অনিলা কি রত্ন মণি অর্জ্জুন নন্দন।।
বভ্রুবাহ রাজা বলে আনিলাম মণি।
কিন্তু অর্জ্জুনের মাথা না দেখি জননী।।
বৃষকেতু মুণ্ড নাহি কেবা লয়ে গেল।
তাহা শুনি চিত্রাঙ্গদা কান্দিতে লাগিল।।
কুণ্ডলে মণ্ডিত মুণ্ড নিল কোনজন।
বিলাপিয়া ভূমে পড়ে অর্জ্জুন নন্দন।।
চিত্রাঙ্গদা উলুপী কান্দেন দুইজনে।
তা দেখিয়া পাত্রমিত্র দুঃখ পায় মনে।।
অন্বেষণ করি মুণ্ড কোথা না পাইল।
ভূমে পড়ি সর্ব্বজন কান্দিতে লাগিল।।
পাত্রমিত্র প্রবোধয়ে সে বভ্রুবাহনে।
চিত্রাঙ্গদা উলুপী শান্তাইল দুইজনে।।
অধোমুখে বিলাপ করেন নরপতি।
পিতৃহত্যা করিলাম হইয়া সন্তাত।।
এ ‍পাপ শরীর আর ‍না রাখিব আমি।
আত্মহত্যা করি আমি শুন গো জননী।।
শরীর ত্যজিব আমি এই পিতৃশোকে।
কৃমি হয়ে দুঃখ ভোগ করিব নরকে।।
বুঝিনু আমার সম পাপী নাহি আর।
বিনা দোষে বিনাশিনু পিতা আপনার।।
নাগগণে জিনি আমি আনিলাম মণি।
কেবা লয়ে গেল মুণ্ড কি হবে জননী।।
উলুপী বলিল তুমি না কর ক্রন্দন।
প্রতিকার ইহার করিবে নারায়ণ।।
এ কর্ম্ম অন্যের সাধ্য নহে কদাচন।
কৃষ্ণ বিনা আনিতে নারিবে কোনজন।।
ভকতবৎসল প্রভু আসিবে ত্বরিত।
কৃষ্ণসখা অর্জ্জুনেরে নাহি কিছু ভীত।।
এত বলি প্রয়োধিল সে বভ্রুবাহনে।
চৌদিকে বেড়িয়া সবে রহিল অর্জ্জুনে।।
অধোমুখে চিত্রাঙ্গদা উলুপী সুন্দরী।
বিষাদে রহিল সর্ব্ব সুখ পরিহরি।।

শুন রাজা জন্মেজয় কহি যে তোমারে।
কুন্তীদেবী দেখে স্বপ্ন হস্তিনানগরে।।
বৃষকেতু অর্জ্জুন হইল ক্ষয় রণে।
স্বপেতে দেখিল বভ্রুবাহনের বাণে।।
ভয়ে কুন্তীদেবী শ্রীঘ্র গোবিন্দে ডাকিল।
শুনহ গোবিন্দ মম অমঙ্গল হৈল।।
উচাটন চিত্ত মম শুন নারায়ণ।
বৃষকেতু অর্জ্জুনের হইল নিধন।।
মণিপুরে বভ্রুবাহ নামে নরপতি।
মহাবলবান সেই অর্জ্জুন সন্তুতি।।
ঘোড়ার রাখিবারে পার্থ গেল তার পুরে।
বভ্রুবাহ সে অশ্ব ধরিল অহঙ্কারে।।
অশ্বভালে লিখন পড়িয়া নরপতি।
অর্জ্জুনে ভেটিতে সে আইল শীঘ্রগতি।।
নানা রত্ন অগ্রে করি প্রণাম করিল।
ক্রোধ করি পার্থ তার পূজা না হইল।।
চরণ প্রহার কৈল মস্তক উপরে।
জারজ বলিয়া গালি দিলেক তাহারে।।
বভ্রুবাহ রাজা তবে পেয়ে অপমান।
করিল অর্জ্জন সঙ্গে অনেক সংগ্রাম।।
ভীম আদি যুবনাশ্ব যত সেনাগণ।
বভ্রুবাহনের হাতে হৈল অচেতন।।
বৃষকেতু অর্জ্জুনের কাটিলেক মাথা।
তোমারে জানাই কৃষ্ণ বিপদের কথা।।
স্বপ্নেতে দেখিনু আমি শুন নারায়ণ।
তুমি গেলে দূর হবে চিত্ত উচাটন।।

এতেক শুনিয়া কৃষ্ণ কুন্তীর বচন।
অন্তরে হৈলেন দুঃখী কমললোচন।।
অমঙ্গল কথা পিসি কহ কি কারণে।
কিরীটী জিনিবে হেন নাহি ত্রিভুবনে।।
কুন্তীরে অবোধ ঋষি মুকন্তধয়াসি।
কৃষ্ণের স্মরণে আসে বিনতানন্দন।।
আজ্ঞা কর কোন কর্ম্ম করিব এখন।
তবে কৃষ্ণ গরুড়ে করিয়া আরোহন।
অতি শীঘ্র যান প্রভু কিরীটী কারণ।।
উপনীত হইলেন হরি মণিপুরে।
যেইখানে চিত্রাঙ্গদা কান্দে উচ্চৈঃস্বরে।।
কৃষ্ণ দরশনে সবে চেতন পাইল।
বভ্রুবাহ রাজা তবে উঠি দাণ্ডাইল।।
বিজয় পাণ্ডব কথা অমৃত লহরী।
কাশী কহে শুনিলে তরয়ে ভববারি।।