৩১. দুর্য্যোধন ও দুঃশাসনের বিলাপ

কেশব যাদবরায়,                জপে ভীষ্মবীর তায়,
জগদীশ মুকুন্দ মুরারি।
দেবকী-নন্দন হরি,                আমাকে সংহার করি,
রক্ষা কৈলা পাণ্ডবাধিকারী।।
তুমি দেব নারায়ণ,                রাখিলে পাণ্ডবগণ,
কৌরবের হইল বিনাশ।
তোমার চরণ দেখি,                সফল হইল আঁখি,
শমনের নাহিক তরাস।।
হেনকালে দুর্য্যোধন,                আসি করয়ে ক্রন্দন,
শোকাকুলি পড়ে ভূমিতলে।
হা হা পিতামহ বলি,                অনেক বিলাপ করি,
শোকাকুল পড়ে পদতলে।।
ভীষ্মবীর পড়ে যদি,                আমারে নির্দ্দয় বিধি,
কার আমি লইব শরণ।
পাণ্ডব সহিত রণ,                করিবেক কোন জন,
এত দিনে আমার মরণ।।
পাণ্ডব সহায় করি,                মোর পক্ষে অন্তকারী,
এবে মোর কি হবে উপায়।
যাহার ভরসা করি,                সে যদি পরাণে মরি,
এবে কেবা রাখিবে আমায়।।
কান্দে রাজা দুর্য্যোধন,                শোকে হৈয়া অচেতন,
লোমাঞ্চিত সকল শরীর।
পড়িল যে ভ্রাতৃগণ,                তাহে নহে শোকমন,
আচম্বিতে পড়ে ভীষ্ম বীর।।
কি করিব কোথা যাব,                কাহার শরণ নিব,
আর কেবা রাখিবে আমারে।
অজেয় পাণ্ডবগণ,                যার পক্ষে নারায়ণ,
কেবা আর জিনিবে তাহারে।।
যথা কান্দে দুর্য্যোধন,                তথা আইল দুঃশাসন,
মহাশোকে পড়ে ভূমিতলে।
কান্দে রাজা বিনাইয়া,                স্থির নাহি হয় হিয়া,
পিতামহ কোথা গেল বলে।।
এই ত দারুণ রণে,                অর্জ্জুনে হানিয়া বাণে,
আজ তুমি রাখিলা আমারে।
পাণ্ডবের সহ রণে,                রক্ষা কৈলে মোরে প্রাণে,
আর কেবা রাখিবেক মোরে।।
ভীষ্ম বলে দুর্য্যোধন,                শোক দূর কর মন,
মোর বোলে কর অবধান।
আমার বচন ধর,                ধর্ম্ম সনে প্রীতি কর,
এবে যুদ্ধ কর সমাধান।।
অর্দ্ধরাজ্য তারে দিয়া,                নিশ্চিন্তে থাকহ গিয়া,
হতশেষ লয়ে ভ্রাতৃগণ।
ভীষ্মের বচন শুনি,                দুর্য্যোধন নৃপমণি,
হেঁটমুণ্ডে রহিলা তখন।।
দীর্ঘছন্দে পুণ্যকথা,                ব্যাস বিরচিত গাথা,
শুনিয়া হরিষ জন্মেজয়।
ব্যাসের চরণ সেবি,                কহে কাশীরাম কবি,
শুনিলে শমনে নাহি ভয়।।