৩০. ইন্দ্রের শাপমোচন

সহস্র যোনিতে ইন্দ্র পীড়িত শরীরে।
বসিতে না পারে সেই দেবের ভিতরে।।
মহাপীড়া কামজ্বরে করয়ে রোদন।
কে আছে আমার দুঃখ করিতে মোচন।।
দেবগুরু বৃহস্পতি কহিলা তাহারে।
আমার বচন তুমি শুন পুরন্দরে।।
যেখানে পতন হই, সেইখানে উঠি।
তাহারে সন্তোষ করি যার স্থানে ঘাটি।।
লাজ ভয় ছাড় ইন্দ্র, বলিনু তোমারে।
ব্রহ্মশাপ খণ্ডাইতে অন্যে নাহি পারে।।
গৌতম বিহনে ইহা অন্যে নাহি পারে।
গর্ব্ব ত্যজি যাও ‍তুমি মুনির গোচরে।।
তাঁহার চরণ ধরি বলহ একান্ত।
শাপ দিলে মহামুনি করহ শাপান্ত।।
এত শুনি ইন্দ্র গেল মুনির নিয়ড়ে।
দণ্ডবৎ হইয়া মুনির পদে পড়ে।।
অপরাধ ক্ষমা কর শুন মহাশয়।
শাপিলে শাপান্ত প্রভু করিতে যুয়ায়।।
সংসারের সার তুমি আমি পাপ কৈনু।
তাহার উচিত ফল তেমনি পাইনু।।
আর দুঃখ সহা নাহি যায় মুনিবর।
কৃপা করি মহামুনি করহ উদ্ধার।।
শুনিয়া ইন্দ্রের বাক্য দয়া উপজিল।
হিত উপদেশ মুনি তাহারে কহিল।।
মুনি বলে, শুন এবে আমার বচন।
অষ্টমীর ব্রত বিনে নাহি দেখি আন।।
মহা অষ্টমীর ব্রত কর পুরন্দর।
গুরুপত্নী হরিয়াছ হইয়া বর্ব্বর।।
কেমনে করিবে ব্রত শুনহ বচন।
সপ্তমীতে সংযম করিবে নিষ্ঠাপন।।
অষ্টমীতে উপবাস করি নিরাহার।
বৈষ্ণবী ভবানী পূজি দিবে উপচার।।
বলিদান নাহি দিবে, নহে ব্যবহার।
পূজিবে ভবানী দেবী দিয়া উপহার।।
কায়মনোবাক্যে তুমি পূজিবে ভবানী।
নবমীতে পারণ করিবে দেবমণি।।
তিন দিনে তিন গুণ আপনি ভবানী।
লয়েন সংসারে পূজা শুন সুরমণি।।
সপ্তমীতে রজোগুণ হইয়া পার্ব্বতী।
আপনি লয়েন পূজা দেবী ভগবতী।।
অষ্টমীতে লন পূজা যেমত প্রকার।
কহি যে তোমারে এই শুন সমাচার।।
অষ্টমীতে মহামায়া-স্বরূপা বৈষ্ণবী।
এই ত পূজায় তুষ্টা হৈলা মহাদেবী।।
নবমীতে তমোগুণ হইয়া ভবানী।
সংসারে লয়েন পূজা সংসার কারিণী।।
ছাগাদি মহিষ মেষ দিয়া বলিদান।
করিবে ভবানী-পূজা হৈয়া সাবধান।।
এইমত কর তুমি ভবানীর পূজা।
হইবে সহস্র চক্ষ, শুন দেবরাজা।।
সহস্রলোচন নাম হইবে তোমার।
কহিনু তোমারে আমি মহাব্রতাচার।।
এত শুনি দণ্ডবৎ হৈল মুনি পায়।
অষ্টমী পূজিতে ইন্দ্র চলিল ত্বরায়।।
দেবগুরু বৃহস্পতি পুরোহিত হৈল।
বিবিধ প্রকারে ইন্দ্র পূজা আরম্ভিল।।
যেমত বিধানে পূজা গৌতম কহিল।
বৃহস্পতি সহ ইন্দ্র পূজা আরম্ভিল।।
স্থাপন করিলা দেবী ঘটের উপরে।
অধিবাস করি ইন্দ্র হরিষ অন্তরে।।
শঙ্খ ও দুন্দুভি বাজে সর্ব্বদেবপুরী।
কায়মনোবাক্যে ইন্দ্র পূজে হর-গৌরী।।
গণেশে পূজিয়া ইন্দ্র পূজিল শ্রীহরি।
পূজিতে লাগিলা দেবী বড় শ্রদ্ধা করি।।
কত শত পুষ্প দিল কত লব নাম।
ঘটের উপরে দিল জবাপুষ্পদাম।।
মালতী মল্লিকা গন্ধরাজ আদি করি।
কুন্দ ও কাঞ্চন আর হার শতেশ্বরী।।
জাতী যূথী নাগেশ্বর পারিজাত আর।
জবাপুষ্প নানা জাতি দেখে বারে বার।।
নানাজাতি পুষ্প দিয়া ইন্দ্র করে পূজা।
আবির্ভূতা ভগবতী হৈয়া দশভূজা।।
সাক্ষাৎ হইলা মাতা জগত-জননী।
স্তবন করয়ে ইন্দ্র হয়ে যোড়পাণি।।
সর্ব্বদেব উঠিলেন করি যোড় হাতে।
আপনি বসিলা দেবী হইয়া সাক্ষাতে।।
কিবা সে রূপের ছটা নাহিক উপমা।
নখচন্দ্র দেখি যেন পূর্ণিত চন্দ্রমা।।
দশন মুকুতা পাঁতি ঝলমল করে।
কত শশী উদয় হইল স্বর্গপুরে।।
মুখের উদয় দেখি কত চন্দ্র জিনি।
যাহার দর্শনে স্থির হৈল সর্ব্ব প্রাণী।।
কিবা সে চরণ-শোভা রকত-উৎপল।
হৃদয়ের দুঃখ শোক ঘুচিল সকল।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশী কহে, শুনিলে জন্ময়ে দিব্যজ্ঞান।।