২৭. দ্রোণাচার্য্য-অশ্বত্থামা সংবাদ

মুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের কুমার।
দশম দিবসে হৈল ভীষ্মের সংহার।।
আপনার পরাক্রম সর্ব্ব ভীর করে।
কারো শক্তি নাহি দেখি রাখে ভীষ্মবীরে।।
তবে দ্রোণ মহাবীর হাতে শরাসন।
সৈন্য পর্য্যটন করি বুলে বিচক্ষণ।।
অশ্বত্থামা পুত্রকে বলয়ে মহামতি।
বুঝিতে না পারি আজি সমরের রীতি।।
অর্জ্জুন প্রতিজ্ঞা কৈল ভীষ্মে মারিবারে।
সেই দিন হৈল আজি ধ্বজে কাক পড়ে।।
অমঙ্গল যত দেখি শুন কহি তোরে।
তূণ হৈতে বাণ খসি ভূমিতলে পড়ে।।
পক্ষীসব কলরব শ্রবণেতে শুনি।
রথের উপরে পড়ে গৃধিনী শকুনি।।
যুদ্ধকালে হাত হৈতে খসি পড়ে শর।
প্রভাহীন গগনেতে দেব দিবাকর।।
দুর্য্যোধন বাহিনীতে গৃধ্র কাক উড়ে।
দিবসে শৃগাল সব ঊর্দ্ধরব করে।।
গগনমণ্ডল হৈতে উল্কা পড়ে খসি।
গগনে কবন্ধ নাচে সূর্য্যকে পরশি।।
সঘনে পৃথিবী কাঁপে শবদ বিস্তর।
শোণিত বরিষে মেঘে অতি ভয়ঙ্কর।।
পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজে গাণ্ডীবের ধ্বনি।
ঘোর গরজন হৈল যেন কাদম্বিনী।।
এড়িয়া সকল যোদ্ধা সংগ্রামে দুর্ব্বার।
ধনঞ্জয় বীর আইসে ভীষ্মে মারিবার।।
যুদ্ধে ইচ্ছা নাহি হয় লোমাঞ্চিত কায়।
অর্জ্জুনের সমাগম গোবিন্দ সহায়।।
দুরাচার শিখণ্ডীরে আগে রথে করি।
আইসে ফাল্গুনী বীর বিক্রমে কেশরী।।
দুর্জ্জয় অর্জ্জুন বীর বলে বলবন্ত।
মহাযোদ্ধা পার্থ বিক্রমের নাহি অন্ত।।
মহাঅন্ত্র জানে বীর দেবের দুর্জ্জয়।
ভীষ্মকে মারিতে আজি আইসে ধনঞ্জয়।।
স্বগণ সম্মুখ করি কর গিয়া রণ।
ঘুষিবে তোমার যশ এ তিন ভুবন।।
পুত্রের জীবন পিতা বাঞ্ছে সর্ব্বক্ষণ।
তথাপি তোমারে বলি করিবারে রণ।।
তিনলোকে পার্থ সম নাহি ধনুর্দ্ধর।
নিশ্চয় মারিবে ভীষ্মে করিয়া সমর।।
সৈন্য সব খেদাইয়া আইসে মহাবল।
হাহাকার শব্দ করে কৌরব সকল।।
যুধিষ্ঠির রাজা আসে লইয়া সৈন্যগণ।
তাহার সহিত গিয়া আমি করি রণ।।
অভিমন্যু সহিত সাত্যকি মহাধীর।
মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন বৃকোদর বীর।।
সহদেব নকুল সমরে মহাধীর।
ভীষ্মকে মারিতে আইসে নির্ভয় শরীর।।
এই দেখ শ্যামবর্ণ যেন শালগাছ।
পাণ্ডবের সৈন্য সব সমরের মাঝ।।
অস্ত্র লৈয়া যুঝে যেন দ্বিতীয় অর্জ্জুন।
ইন্দ্রের সমান সব সংগ্রামে নিপুণ।।
শিখণ্ডীকে আগু করি যুঝেন ফাল্গুনী।
অশ্বত্থামা বীর গেল যুঝিতে তখনি।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে হয় দিব্যজ্ঞান।।