২৬. শিবচতুর্দ্দশী-ব্রত উপাখ্যান

শান্তনু-কুমার সর্ব্বশাস্ত্র বিশারদ।
ইতিহাস কথা কহে শুনে সভাসদ।।
ধৃতি নামে এক দ্বিজ বড় দুষ্টমতি।
বুদ্ধিবলে হরে সেই পরের যুবতী।।
সদাকাল দুষ্টবুদ্ধি পাপী দুরাচার।
মল্ল নামে দ্বিজবর জনক তাহার।।
দুষ্ট পুত্র দেখি বিপ্র ভাবে নিরন্তর।
কিরূপে করিব বশ আপন কোঙর।।
নিগড় বন্ধনে বান্ধি রাখিলেন ঘরে।
তপস্যা করিতে মল্ল গেল গঙ্গাতীরে।।
বড় দুষ্ট দ্বিজ সেই ভাবে মনে মনে।
বুদ্ধিবলে মুক্ত কৈল নিগড় বন্ধনে।।
দণ্ডক নামেতে বনে গেল পলাইয়া।
ক্ষুধার নিবৃত্তি কৈল ফল-মূল খাইয়া।।
ভ্রমিল কানন মধ্যে দিন অবশেষ।
ক্ষুধায় পীড়িত হৈল রজনী প্রবেশ।।
চিন্তাকুল ‍দ্বিজপুত্র ভ্রময়ে কাননে।
কতদূরে রম্য স্থান দেখে মহাবনে।।
উত্তম প্রশস্ত ভূমি দেখে অনুপাম।
কি কহিব তার গুণ হরের বিশ্রাম।।
রম্যস্থান দেখিয়া রহিল দ্বিজবর।
আরোহণ কৈল বিল্ববৃক্ষের উপর।।
পশুভয়ে উঠিয়া রহিল বৃক্ষডালে।
ভূতগণ সহ তথা আইলা শূলপাণি।।
বৃক্ষতলে বসিয়া রহিলা মহেশ্বর।
ভূতগণ বেড়ি আছে ঠাকুর শঙ্কর।।
ভূতের ভ্রূকুটি দেখি দ্বিজের তনয়।
নিঃশব্দ রহিল বড় মনে পেয়ে ভয়।।
সেই দিন তিথি শিবরাত্রি চতুর্দ্দশী।
দ্বিজপুত্র অরণ্যে রহিল উপবাসী।।
ক্ষুধাতুর ভয়ে নিশি করে জাগরণ।
পিতা মাতা চিন্তি বিপ্র করেন রোদন।।
ভাবিত শরীরে নিদ্রা নাহি হৈল তার।
আকুল শরীরে রহে করি নিরাহার।।
চক্ষুজল পড়ে তার পৃথিবী-উপরে।
বিল্বপত্র সনে পড়ে মহেশের শিরে।।
সন্তুষ্ট হইলা শিব পুষ্পজল পেয়ে।
হেন বুঝি কেহ পূজে শিবরাত্রি পেয়ে।।
কৈলাসে পরম সুখ ভুঞ্জিবে বিশেষ।
এই বর দিলা তারে ঈশ্বর মহেশ।।
শিব দিলা বর, তাহা শুনি দ্বিজমণি।
বৃক্ষ হৈতে নামিয়া করিল স্তুতিবাণী।।
বৃক্ষতলে আছ তুমি, আমি নাহি জানি।
করিনু দুষ্কর দোষ ক্ষম শূলপাণি।।
সুমতি হইল বিপ্র শিব-দরশনে।
বহুবিধ স্তব কৈল বেদের বিধানে।।
তুমি অনাথের নাথ দুষ্ট বিনাশন।
নমো নমঃ শম্ভু ঋষি নমঃ পঞ্চানন।।
এরূপে অনেক স্তুতি করিল ব্রাহ্মণ।
তুষ্ট হৈয়া বর তারে দিলা ত্রিলোচন।।
মহাসুখী হও তুমি সংসার ভিতরে।
তোমার মহিমা খ্যাত হবে চরাচরে।।
অন্তে শিবলোকে যাবে চড়ি দিব্য রথে।
চতুর্দ্দশী-উপবাস মহাপুণ্য হৈতে।।
ব্রত উপবাস তুমি কর জাগরণ।
শিবরাত্রি-নিয়মে থাকিবে সর্ব্বক্ষণ।।
শিবরাত্রিদিনে যেবা করে শিবপূজা।
মহাসুখ ভুঞ্জিয়া কৈলাসে হয় রাজা।।
হেনমতে রজনী বঞ্চিয়া ঘোর বনে।
পাইয়া শিবের বর আইল নিজস্থানে।।
নিত্য নিয়মিত করে শিবের পূজন।
শিবরাত্রি ব্রত উপবাস জাগরণ।।
এইরূপে এইকালে বঞ্চিয়া কৌতুকে।
অন্তকালে শিবলোকে গেল মহাসুখে।।
সর্ব্বপাপে মুক্ত হৈল দণ্ডী দণ্ডদায়।
পূর্ব্বের কাহিনী এই কহিনু তোমায়।।
ভারত-পঙ্কজ-রবি মহামুনি ব্যাস।
পাঁচালী প্রবন্ধে বিরচিল কাশীদাস।।