২৪. শ্রীকৃষ্ণ কর্ত্তৃক চারিজন রাজার প্রাণদান

বিভীষণে সঙ্গে করি যান গদাধর।
কতদূরে দেখিলেন ভীম-অনুচর।।
চারিজন নৃপতিরে করিয়া বন্ধন।
কেশে ধরি কোপভরে যায় চারিজন।।
জিজ্ঞাসেন মাধব, তোমরা কোন্ জন।
এ চারি জনেরে কেন করিলে বন্ধন।।
চরগণ বলে, মোরা ভীমের কিঙ্কর।
দুষ্ট কর্ম্ম কৈল এই চারি নৃপবর।।
শ্বেত আর লোহিত মণ্ডল নরপতি।
অবধানে জগন্নাথ কর অবগতি।।
এ দোঁহার দেশ প্রভু সমুদ্রের তীরে।
পার্থ জিনি কর সহ আনিল দোঁহারে।।
না বলিয়া এখন যাইতেছিল দেশে।
অর্দ্ধপথ হৈতে মোরা আনি ধরি কেশে।।
হের দেখ জগন্নাথ এই দুই জনে।
উপহাস কৈল দুই দরিদ্র ব্রাহ্মণে।।
এই হেতু চারিজনে আনিনু বান্ধিয়া।
আজ্ঞা করিলেন ভীম শূলে দিতে নিয়া।।
এত শুনি কৃষ্ণ ফিরাইল চারিজনে।
বৃকোদর কোথা জিজ্ঞাসেন দূতগণে।।
আগে আগে যায় দূত, পিছে গদাধর।
কতদূরে দেখিলেন আসে বৃকোদর।।
এক লক্ষ রথী সহ ভ্রমে সর্ব্বস্থল।
সবাকার তত্ত্ব করে ভীম মহাবল।।
ভীমের নিকটে উত্তরিল নারায়ণ।
কহিলেন মুক্ত করি দেহ চারিজন।।
কর্ম্ম হেতু এ সবারে কৈলে অবহান।
অনাদর এখন করহ কি কারণ।।
কর্ম্ম যদি করিবে হইয়া মহাতেজা।
ক্ষুদ্র লোকে নিমন্ত্রিলে করিবেক পূজা।।
দুষ্ট শিষ্ট আসিয়াছে বহু কর্ম্মস্থলে।
কর্ম্মে বহু বিঘ্ন হয় ক্ষমা না করিলে।।
বৃকোদর বলে, শুন দেবকী-নন্দন।
দোষমত শাস্তি যদি না পায় দুর্জ্জন।।
আর সবে ক্রমে ক্রমে সেই পথ লয়।
কহ ইথে কর্ম্ম পূর্ণ কেমনেতে হয়।।
দুষ্টে ক্ষমা করিতে না পারি কদাচন।
দুষ্টাচারী নাহি ছাড়ে নিজ দুষ্টপণ।।
দুষ্ট জনে নিজ তেজ যদি না দেখাবে।
অবজ্ঞা করয়ে আর কর্ম্ম ধ্বংস হবে।।
ইহার সহিত পূর্ব্বে পরিচয় কোথা।
বাহুবলে যত দেখ আসিয়াছে হেথা।।
সুকর্ম্ম লভয়ে যদি শান্তি আচরণে।
ক্রমে ক্রমে সুকর্ম্ম লভিবে কিত দিনে।।
পুনশ্চ কহেন কৃষ্ণ কমল-লোচন।
শুন শুন ভীমসেন আমার বচন।।
তোমার শান্তির শব্দে ত্রৈলোক্য পূরিল।
সেই হেতু তিন লোক একত্র মিলিল।।
শান্তি না আচরি তুমি এ কর্ম্ম করিলে।
কহ ভীম যজ্ঞ পূর্ণ হইবে কি ভালে।।
অন্য কর্ম্ম নহে, এই রাজসূয় সত্র।
এক লক্ষ রাজা আসি হয়েছে একত্র।।
লক্ষ লক্ষ জন মধ্যে আছে ভালমন্দ।
একত্রিত হয়ে যদি সবে করে দ্বন্দ্ব।।
কহ মোরে তখন কি উপায় করিবে।
প্রমাদ ঘটিবে আর যজ্ঞ নষ্ট হৈবে।।
পৃথিবীর লোক সব করিলে বিরোধ।
কত কত জনে তুমি করিবা প্রবোধ।।
পাতালে রহিল গিয়া পার্থ ধনুর্দ্ধর।
দ্বন্দ্ব করিবারে তুমি আছ একেশ্বর।।
কৃষ্ণের বচন শুনি বলে বৃকোদর।
তব যোগ্য কথা নহে দেব দামোদর।।
এক লক্ষ রাজা যে বলিলা নারায়ণ।
প্রত্যক্ষেতে দেখিলাম আমি সর্ব্বজন।।
অজাযূথ লাগে যেন ব্যাঘ্রের নয়নে।
সেইমত রাজগণ লাগে মম মনে।।
দ্বন্দ্ব করিবারে একদিকে সবে হয়।
নিবারিব এক আমি কিবা তাহে ভয়।।
সসৈন্যে আগত এক লক্ষ নৃপবর।
মুহূর্ত্তেক দলিবারে পারি একেশ্বর।।
মনুষ্য কি গণি, যদি তিন লোক হয়।
একেশ্বর সবারে করিব পরাজয়।।
যার জয় ইচ্ছে দেব তোমা হেন জনে।
তারে পরাজয় করে নাহি ত্রিভুবনে।।
গোবিন্দ বলেন, সব সম্ভবে তোমারে।
তোমা সহ বিরোধ করিতে কেবা পারে।।
ইহা সবাকারে ছাড় আমার বচনে।
বহু অপমান পাইয়াছে দুষ্টগণে।।
এত বলি মুক্ত করি দেন চারিজনে।
তথা হৈতে যান চলি লৈয়া বিভীষণে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
কাশীকহে, শুনিলে তরয়ে ভববারি।।