২৩. দক্ষিণ ও পূর্ব্বদ্বারে বিভীষণের অপমান

পার্থমুখে বার্ত্তা পেয়ে লঙ্কার ঈশ্বর।
হরষেতে রোমাঞ্চিত হৈল কলেবর।।
যাঁর কথা অনুক্ষণ কহে মুনিগণ।
বসুদেব-গৃহে জন্মিলেন নারায়ণ।।
নিরন্তর চিত্ত ব্যগ্র যাঁরে দেখিবারে।
আপনি ডাকেন তিনি দয়া করি মোরে।।
সর্ব্বতত্ত্ব-অন্তর্য্যামী ভকত-বৎসল।
অনুগত জনে দেন মনোমত ফল।।
তাঁর অনুগত আমি, বুঝিনু কারণ।
করিলেন নিজ ভক্ত বলিয়া স্মরণ।।
এত ভাবি বিভীষণ হৃষ্টচিত্ত হৈয়ে।
যতেক সুহৃদগণে বলিল ডাকিয়ে।।
শীঘ্রগতি সজ্জা কর নিজ পরিবারে।
আমার সহিত চল কৃষ্ণ ভেটিবারে।।
দিব্য রত্ন আছে যত আমার ভাণ্ডারে।
সব ধনরত্ন লহ, দিব দামোদরে।।
হেরিব নয়নে আজি কমল-লোচন।
জন্মাবধি-কৃত পাপ হৈবে বিমোচন।।
এত বলি রথে আরোগিল লঙ্কেশ্বর।
সঙ্গেতে চলিল লক্ষ লক্ষ নিশাচর।।
বাজায় বিবিধ বাদ্য রাক্ষসী-বাজনা।
শত শত শ্বেতচ্ছত্র, না যায় গণনা।।
দক্ষিণ-দ্বারেতে উত্তরিল বিভীষণ।
মিশামিশি হইল রাক্ষস নরগণ।।
বিকৃত আকার সব নিশাচরগণ।
বিস্ময় মানিয়া সবে করে নিরীক্ষণ।।
দুই তিন মুখ কার, অশ্বপ্রায় মুখ।
বক্রদন্ত দেখি, নাসা, চক্ষু যেন কূপ।।
রথ হৈতে ভূমিতে নামিল বিভীষণ।
যজ্ঞ স্থান দেখি হৈল বিস্ময়-বদন।।
আদি অন্ত নাহি লোক চতুর্দ্দিকে বেড়ি।
উচ্চ নীড় জল স্থল আছে লোক যুড়ি।।
কোথায় দেখয়ে একপদ নরগণ।
দীর্ঘ-কর্ণ দেখে কোথা বিবর্ণ বদন।।
কোথায় কিরাত ম্লেচ্ছ বিকৃত-আকার।
কৃষ্ণ অঙ্গ তাম্র কেশ দেখে কত আর।।
কোথায় অমরগণ নানা ক্রীড়া করে।
রাক্ষস দানব দৈত্য অনেক বিহরে।।
সিদ্ধ সাধ্য ঋষি যোগী অনেক ব্রাহ্মণ।
বিবিধ বাহনে কোথা যমদূতগণ।।
কোটি অশ্ব কোটি হস্তী, কোটি কোটি রথ।
স্থানে স্থানে নৃত্য গীত হয় অবিরত।।
অপূর্ব্ব দেখিয়া রাজা ভাবে মনে-মন।
এ হেন অদ্ভুত চক্ষে না দেখি কখন।।
যে দেব দানবে বৈরী আছয়ে সদায়।
হেন দেব-দানবেতে একত্র খেলায়।।
যে ফণী গরুড়ে কভু নাহি হয় দেখা।
একত্র খেলায় যেন ছিল পূর্ব্ব সখা।।
রাক্ষস পাইলে নরে করয়ে ভক্ষণ।
মনুষ্যের আজ্ঞা বহে নিমাচরগণ।।
অদ্ভুত মানিয়া রাজা নাকে দিল হাত।
জানিল এ সব মায়া করেন শ্রীনাথ।।
দুইভিতে দেখে রাজা অনিমেষ আঁখি।
তিন ভুবনের লোক এক ঠাঁই দেখি।।
কে কারে আনিয়া দেয়, নাহিক নির্ব্বন্ধ।
আসন, ভোজন, পানে সবার আনন্দ।।
পরিবার-লোক তার রহাইয়া রথ।
ঠেলাঠেলি পদব্রজে গেল কত পথ।।
আগুসার গম্য নহে যাইতে কাহারে।
থাকুক অন্যের কাজ পিপীলিকা নারে।।
কত দূর আছে দ্বার, নাহি চলে দৃষ্টি।
রাজগণ দাণ্ডাইয়া আছে পৃষ্ঠাপৃষ্ঠি।।
দুইভিতে দ্বারিগণ মারিতেছে বাড়ি।
একদৃষ্টে আছে সব দুইকর যুড়ি।।
পথ না পাইয়া দাণ্ডাইল বিভীষণ।
অন্তর্য্যামী সব জানিলেন নারায়ণ।।
কে আইল, কে খাইল, কেবা নাহি পায়।
প্রতিজনে জিজ্ঞাসা করেন যদুরায়।।
দূরে থাকি নিরখিল রক্ষ-অধিপতি।
দিব্যচক্ষে জানিলেন এই লক্ষ্মীপতি।।
অষ্টাঙ্গ লুটায়ে স্তুতি করে করযোড়ে।
বারিধারা নয়নেতে অবিশ্রান্ত পড়ে।।
দেখিয়া নিকটে তার গিয়া নারায়ণ।
দুই হাতে ধরি দেন প্রীতি-আলিঙ্গন।।
স্তুতি করে বিভীষণ যুড়ি দুই কর।
আনন্দেতে অশ্রুধারা বহে নিরন্তর।।
নানারত্ন নিবেদিয়া ফেলে ভূমিতলে।
পুনঃ পুনঃ ধরি পড়ে চরণ-কমলে।।
যতেক আনিল রাজা বিবিধ রতন।
গোবিন্দের আগে লয়ে দিল ততক্ষণ।।
করযোড় করি বলে রাক্ষসের রাজ।
আজ্ঞা কর জগন্নাথ করিব কি কাজ।।
গোবিন্দ বলেন, আসিয়াছ যেই কাজে।
মম সঙ্গে ভেটিবারে চল ধর্ম্মরাজে।।
বিভীষণ বলে, কর্ম্ম সম্পন্ন হইল।
তোমার পদারবিন্দ নয়ন দেখিল।।
তোমার কমল-অঙ্গ দৃঢ় আলিঙ্গন।
পিতামহ-বাঞ্ছিত যে অন্য কোন জন।।
লক্ষ্মীর দুর্ল্লভ মোরে করিলা প্রসাদ।
চিরকাল বিচ্ছেদের খণ্ডিল বিষাদ।।
সম্পূর্ণ মানস হৈল, সিদ্ধ হৈল কাজ।
এখন কি করি, আজ্ঞা কর দেবরাজ।।
গোবিন্দ বলেন, যে করিল আবাহন।
যার দূত-সঙ্গে পূর্ব্বে পাঠাইলা ধন।।
যার নিমন্ত্রণে তুমি আসিলে হেথায়।
চলহ ভেটাই সেই ঠাকুরে তোমায়।।
তবে বিভীষণ কহে, বিনয় বচন।
পাণ্ডবের যজ্ঞে অধিষ্ঠান নারায়ণ।।
তব আজ্ঞা মানি পাণ্ডবে দিয়াছি কর।
অন্য কি, তোমার নামে দিব কলেবর।।
চিরকাল অদর্শনে আছি অপরাধী।
আপনি ডাকিলা, হেন ঘটাইল বিধি।।
বিশ্বের ঠাকুর তুমি, মনে হেন জানি।
তোমার ঠাকুর আছে, আমি নাহি মানি।।
যে হউক মোর প্রভু তোমা বিনা নাই।
প্রয়োজন নাই মোর অন্য-জন-ঠাঁই।।
গোবিন্দ বলেন, ধর্ম্মপুত্র যুধিষ্ঠির।
যাঁর দরশনে হয়ে নিষ্পাপ শরীর।।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় সর্ব্ব-গুণধাম।
এ তিন ভুবনে আছে খ্যাত যাঁর নাম।।
প্রতাপে যাঁহার ইন্দ্র-আদি কর দিল।
কর দিয়া ফণীন্দ্র শরণ আসি নিল।।
উত্তরে উত্তর-কুরু, পূর্ব্বে জলনিধি।
পশ্চিমেতে আমি, দক্ষিণেতে তোমা আদি।।
নাহি দিল, না আসিল, নাহি হেন জন।
সাক্ষাতে নয়নে তুমি দেখহ এখন।।
দেবতা গন্ধর্ব্ব যক্ষ রক্ষ কপি ফণী।
মনুষ্য আসিল, যত আছয়ে অবনী।।
অষ্টাশী সহস্র দ্বিজ নিত্য গৃহে ভুঞ্জে।
ত্রিষ ত্রিশ দাস সেবে এক এক দ্বিজে।।
ঊর্দ্ধরেতা সহস্র-দশেক সদা সেবে।
আছেন যতেক দ্বিজ, কে অন্ত করিবে।।
স্থানে স্থানে রন্ধনাদি হয় অবিরাম।
লক্ষ লক্ষ বিপ্রবর ভুঞ্জে এক স্থান।।
এক লক্ষ দ্বিজ যবে করেন ভোজন।
একবার শঙ্খনাদ হয় যে তখন।।
হেনমতে মুহুমুর্হুঃ হয় শঙ্খধ্বনি।
চতুর্দ্দিকে শঙ্করবে কিছুই না শুনি।।
তিন পদ্ম অযুত মাতঙ্গ দীর্ঘদন্ত।
তিন পদ্মাযুত রথ তুরঙ্গ অনন্ত।।
লক্ষ নৃপতির পত্তি কে পারে গণিতে।
চারি জাতি যতেক নিবসে পৃথিবীতে।।
অর্দ্ধেক রন্ধনে ভুঞ্জে অর্দ্ধেক আমান্ন।
কাহার শকতি তাহা করিবে বর্ণন।।
এক জন অসন্তোষ নাহিক ইহাতে।
খাও খাও লও লও, ধ্বনি চারিভিতে।।
মনু-আদি যত হৈল পৃথিবীতে পতি।
হেন কর্ম্ম করিবারে কাহার শকতি।।
যত দূর পর্য্যন্ত নিবসে যত প্রাণী।
হেন জন নাহি, যুধিষ্ঠিরে নাহি জানি।।
স্মরণে সুমতি হয়, নিষ্পাপ দর্শনে।
প্রণামে পরম গতি আমার সমানে।।
হেন জনে নাহি জান তোমা হেন জন।
শীঘ্রগতি চল, লৈয়া করাব দর্শন।।
বিভীষণ বলে, প্রভু কহিলা প্রমাণ।
মম নিবেদন কিছু কর অবধান।।
পূর্ব্বে পিতামহ-মুখে শুনিয়াছি আমি।
অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে তুমি সবাকার স্বামী।।
ব্রহ্মা-ইন্দ্র-পদ তব কটাক্ষেতে হয়।
এ কর্ম্ম অসাধ্য নহে তোমার সহায়।।
মম পূর্ব্ব-বিবরণ জান গদাধর।
তপস্যা করিয়া আমি মাগিলাম বর।।
স্মরিব তোমার নাম, সেবিব তোমারে।
তব পদ বিনা শির না নোয়াব কারে।।
যথাই লইয়া যাব সংহতি যাইব।
কদাচিত অন্য জনে মান্য না করিব।।
এত বলি বিভীষণ চলিল সংহতি।
পশ্চাদ্ভাগে বিভীষণ আগেতে শ্রীপতি।।
চট চট শব্দেতে চৌদিকে পড়ে ছাট।
গোবিন্দেরে নিরখিয়া ছাড়ি দিল বাট।।
দ্বারের নিকটে উত্তরিল নারায়ণে।
পশিতে সাত্যকি নিবারিল বিভীষণে।।
গোবিন্দ বলেন, দ্বারে না রাখ ইহারে।
স্বদেশে যাবেন শীঘ্র ভেটিয়া রাজারে।।
সাত্যকি বলিল, প্রভু জানহ আপনি।
আজ্ঞা বিনা যাইতে না পারে বজ্রপাণি।।
হের দেখ জগন্নাথ দ্বারেতে বারিত।
যত রাজ-রাজ্যেশ্বর থাকে যাম্যভিত।।
মৎস্যদেশ-অধিপতি বিরাট নৃপতি।
শূরসেন দন্তবক্র সুমিত্র প্রভৃতি।।
অগণিত সৈন্য যাঁর ধনে নাহি অন্ত।
কর লৈয়ে দ্বারে আছে মাসেক পর্য্যন্ত।।
শ্রেণিমন্ত সুকুমার নীলধ্বজ রাজা।
একপদ কলিঙ্গ, নৈষধ মহাতেজা।।
কিষ্কিন্ধ্যা-ঈশ্বর দেখ সিন্ধুকূল-বাসী।
গোশৃঙ্খ ভ্রমণ আর রুক্মী ঔড্রদেশী।।
ইহা সবাকার সঙ্গে শত পঞ্চ শত।
কোটি কোটি গজ বাজী, কোটি কোটি রথ।।
নানারত্ন ধন নিজ পরিবার লৈয়া।
দ্বারেতে আছেন দেখ বারিত হইয়া।।
ত্রিশ-সহস্র নৃপতি আছে এই দ্বারে।
জন কত রাজা মাত্র গিয়াছে ভিতরে।।
পুরজিৎ-নামে রাজা পাণ্ডব-মাতুল।
রাজ-আজ্ঞা পেয়ে তবে লইল নকুল।।
তার সঙ্গে গেল জন কত নৃপবর।
দেখিয়া বড়ই ক্রুদ্ধ হৈল বৃকোদর।।
মাতুলে রাখিয়া আর যত রাজগণে।
ধাক্কা মারি তাড়াইয়া দেন ততক্ষণে।।
আজ্ঞা বিনা ছাড়িবারে নারি কদাচন।
আজ্ঞা আনি লৈয়া যাহ রাজা বিভীষণ।।
এত শুনি ক্রুদ্ধ হৈয়া গেলেন গোবিন্দ।
দুই চক্ষু দেখি যেন রক্ত-অরবিন্দ।।
তথা হৈতে চলি যান সহ লঙ্কাপতি।
পূর্ব্বদ্বারে উপনীত আপনি শ্রীপতি।।
মহাবীর ঘটোৎকচ হিড়িম্বা-কুমার।
তিন রক্ষ রাক্ষসেতে রক্ষা করে দ্বার।।
কৃষ্ণেরে দেখিয়া সবে পথ ছাড়ি দিল।
বেত্র দিয়া বিভীষণে দ্বারে নিবারিল।।
গোবিন্দ বলেন, ইনি লঙ্কার ঈশ্বর।
ব্রহ্মার প্রপৌত্র, রাবণের সহোদর।।
রাজ দরশন হেতু যাবেন ত্বরিত।
হেন জনে দ্বারে রাখা না হয় উচিত।।
ঘটোৎকচ বলে, শুন দেব চক্রপাণি।
আমি কি করিব, তুমি জানহ আপনি।।
বাইশ-সহস্র রাজা আছে এই দ্বারে।
জন কত রাজা মাত্র গিয়াছে ভিতরে।।
ব্রহ্মার প্রপৌত্র দেব অনেক এসেছে।
দুই তিন মাস দ্বারে রহিমা গিয়াছে।।
ব্রহ্মার প্রপৌত্র দেব কশ্যপ-কোঙর।
মহা মহা নাগ শেষ বিষধর।।
সহস্র-বদনশোভে নাগ-অধিকারী।
এইখানে ছিল তেঁই দিন দুই চারি।।
এই দেখ রাজগণ দাণ্ডাইয়া আছে।
একদৃষ্টে বুকে হস্ত, নাহি চায় পাছে।।
গিরিব্রজ-পুরোহিত জরাসন্ধ-সুত।
জয়সেন মহারাজ বহু সৈন্যযুত।।
নাব-কোটি রথ, নব-কোটি মত্ত হাতী।
ষষ্ঠি-কোটি তুরঙ্গম, অসংখ্য পদাতি।।
নানারত্ন আনিলেন নানা যানে করি।
হস্তিনী গর্দ্দব উট শকট উপরি।।
অহর্নিশি নৌকা বাহে, সংখ্যা নাহি জানি।
যার নৌকা ত্রিশ ক্রোশ ঢাকে গঙ্গাপানি।।
বিংশতি সহস্র রাজা যজ্ঞেতে আসিয়া।
দ্বারাতে আছেন দেখ বারিত হইয়া।।
শিশুপাল রাজা দেখ চেদির ঈশ্বর।
যাহার সহিত পঞ্চ-শত নৃপবর।।
তিন-কোটি আসোয়ার, গতি বায়ুবৎ।।
নানা যান করি নানা রত্ন সঙ্গে লৈয়া।
দ্বারেতে আছেন দেখ বারিত হইয়া।।
দীর্ঘযজ্ঞ রাজা দেখ অযোধ্যার পতি।
তিন-কোটি রথ সঙ্গে, তিন-কোটি হাতী।।
সপ্ত-শত নরপতি সংহতি করিয়া।
কর লৈয়া দ্বারে আছে বারিত হইয়া।।
কাশীরাজ দেখ এই কাশীর ঈশ্বর।
কোশলের রাজা বৃহদ্বল নৃপবর।।
বহু রাজা সুপার্শ্ব কৌশিক শ্রুত রাজা।
মদ্রসেন চন্দ্রসেন পার্শ্ব মহাতেজা।।
সুবর্ণ সুমিত্র রাজা সুমুখ শম্বূক।
মণিদন্ত দণ্ডধর নৃপতি মটুক।।
পুণ্ডরীক বাসুদেব জরদগব আদি।
করিল মেদিনী ব্যাপ্ত সমুদ্র অবধি।।
এ সবার সঙ্গে রাজা শত সপ্তশত।
লিখনে না যায় যত গজ বাজী রথ।।
যে দেশে যে রত্ন জন্মে, তাহা কর লৈয়া।
দ্বারেতে আছেন সব বারিত হইয়া।।
বিনয়ে অনুরাধ করেন যেইজন।
রাজারে জানাই গিয়া তাঁর বিবরণ।।
তবে যদি ধর্ম্মরাজ দেন অনুমতি।
সেই জন পায় তথা, করিবারে গতি।।
মুহূর্ত্তেক রহি মাত্র দরশন পায়।
শীঘ্রগতি পুনঃ আনি রাখয়ে হেথায়।।
রাজার শ্বশুর দেখ দ্রুপদ নৃপতি।
দিনেক রহিল পরিজনের সংহতি।।
রাজা-আজ্ঞা পেয়ে তবে ছাড়ে দ্রুপদেরে।
তার সঙ্গে রাজা কত পশিল ভিতরে।।
সেই হেতু পিতা মোরে করিলেন ক্রোধ।
শ্বশুরের কিছু না রাখিল উপরোধ।।
বাহির করিয়া যে দিলেন রাজগণে।
দ্বারিগণে বহু ক্রোধ করিয়াছে মনে।।
পূর্ব্বে ইন্দ্রসেন ছিল এই দ্বারে দ্বারী।
এই দোষে তাহারে দিলেন দূর করি।।
রাখিলেন মোরে দ্বারে অনেক কহিয়া।
আজ্ঞা বিনা ইন্দ্র এলে না দিবে ছাড়িয়া।।
এই হেতু জগন্নাথ ভয় লাগে মনে।
আজ্ঞা বিনা কিরূপেতে ছাড়ি বিভীষণে।।
আনহ অগ্রেতে রাজ-অনুমতি হরি।
জানাতে রাজারে আমি নাহি শক্তি ধরি।।
নকুল আইসে কিম্বা অনুজ তাঁহার।
বার্ত্তা জানাইতে এ দোঁহার অধিকার।।
বুঝিয়া আপনি কর যে হয় বিচার।
ক্ষণেক থাকহ, নহে যাহ অন্য দ্বার।।
এত শুনি কৃষ্ণ তারে নিন্দিয়া অপার।
ক্রোধ করি চলিলেন উত্তর দুয়ার।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।