২১. হিড়িম্বা ও ঘটোৎকচের আগমন

ঘটোৎকচ মহাবীর হিড়িম্বা-তনয়।
যজ্ঞের পাইয়া বার্ত্তা সানন্দ হৃদয়।।
হিড়িম্বক-বনেতে তাহার অধিকার।
তিন লক্ষ রাক্ষস তাহার পরিবার।।
হয় হস্তী রথেতে করিয়া আরোহণ।
যজ্ঞ হেতু নানারত্ন করিয়া সাজন।।
নানাবাদ্যে উপনীত যজ্ঞের সদন।
অদ্ভুত রাক্ষসী মায়া করিয়া রচন।।
ধবল মাতঙ্গ-পৃষ্ঠে করি আরোহণ।
ঐরাবত-পৃষ্ঠে যেন সহস্র-লোচন।।
মাথায় মুকুট মণিরত্নেতে মণ্ডিত।
সারি সারি শ্বেত ছত্র শোভে চতুর্ভিত।।
কৃষ্ণ শ্বেত চামর ঢুলায় শত শত।
পার্ব্বতীর হ্স্তী অশ্ব নানাবর্ণ রথ।।
উত্তর-দ্বারেতে উপনীত ভীম-সুত।
চতুর্দ্দিকে হুড়াহুড়ি দেখিয়া অদ্ভুত।।
কেহ বলে, ইন্দ্র চন্দ্র কিম্বা প্রেতপতি।
অরুণ বরুণ কিম্বা কোন মহামতি।।
কেহ বলে, দেবরাজ এ যদি হইত।
সহস্র-লোচন তবে অঙ্গেতে থাকিত।।
কেহ বলে, এই যদি হইতে শমন।
গজ না হইয়া হৈত মহিষ বাহন।।
কেহ বলে, এই যদি হৈতে হুতাশন।
তবে সে হইত ছাগ ইহার বাহন।।
বরুণ হইলে হৈত শুশুক বাহন।
সপ্ত-অশ্ব রথ হৈত হইলে তপন।।
এত বলি লোক সব করিছে বিচার।
গজ হৈতে নামিলেন হিড়িম্বা-কুমার।।
প্রবেশ করিতে তারে নিবারে দ্বারেতে।
জিজ্ঞাসিল কেবা তুমি, এলে কোথা হতে।।
পরিচয় দেহ, বার্ত্তা জানাই রাজারে।
রাজাজ্ঞা পাইলে পাবে যাইতে ভিতরে।।
ঘটোৎকচ বলে, আমি ভীমের অঙ্গজ।
হিড়িম্বার গর্ভে জন্ম, নাম ঘটোৎকচ।।
এত শুনি অনিরুদ্ধ কৈল সম্ভাষণ।
রহিতে উত্তম স্থান দিল ততক্ষণ।।
সহদেব কহিলেন গোচরে রাজার।
জননী সহিত এলো হিড়িম্বা-কুমার।।
ধর্ম্ম আজ্ঞা করিলেন, আন শীঘ্রগতি।
জননী পাঠাও তাঁর যথায় পার্ষতী।।
যত দ্রব্য আনিয়াছে দেহ দুর্য্যোধনে।
আজ্ঞা পেয়ে সহদেব গেল সেইক্ষণে।।
হিড়িম্বারে পাঠাইল স্ত্রীগণ-ভিতর।
ঘটোৎকচে লৈয়া গেল রাজার গোচর।।
হিড়িম্বা দেখিয়া চমকিত অন্তঃপুরী।
রূপেতে নিন্দিত যত স্বর্গ-বিদ্যাধরী।।
অলঙ্কারে বিভূষিত আনন্দিত অঙ্গ।
বিনামেঘে স্থির যেন তরিত তরঙ্গ।।
কুন্তীর চরণে গিয়া প্রণাম করিল।
আশীর্ব্বাদ করি কুন্তী বসিতে বলিল।।
যথায় দ্রৌপদী ভদ্রা রত্ন-সিংহাসনে।
হিড়িম্বা বসিল গিয়া তার মধ্যস্থানে।।
অহঙ্কারে দ্রৌপদীরে সম্ভাষ না কৈল।
দেখিয়া দ্রৌপদী দেবী অন্তরে কুপিল।।