২১৯. সুভদ্রাহরণ পৰ্বাধ্যায় – রৈবতকে মহোৎসব

২১৯. সুভদ্রাহরণ পৰ্বাধ্যায় – রৈবতকে মহোৎসব

ঊনবিংশত্যধিকদ্বিশততম অধ্যায়।

বৈশম্পায়ন কহিলেন,-মহারাজ! অনন্তর কিয়দ্দিবস রৈবতকপৰ্বতে অন্ধক ও যদুবংশীয়দিগের মহা উৎসব আরম্ভ হইল। উক্ত বংশোদ্ভুত বীরপুরুষেরা উৎসবোপলক্ষে রৈবতকবাসী ব্রাহ্মণদিগকে প্রচুর অর্থ দান করিলেন। সেই পৰ্ব্বতের সন্নিহিত প্রদেশসকল, রত্নমণ্ডিত অট্টালিকাবলী ও কল্পপাদপ সমূহদ্বারা সুশোভিত হইল এবং স্থানে স্থানে নৃত্যগীত, স্থানে স্থানে বাদোদ্যম হইতে লাগিল। যদুবংশীয় রাজকুমারের বহুবিধ অলঙ্কারে অলঙ্কত হইয়া সুসজ্জিত সুবর্ণযানে আরোহণপূর্বক বারম্বার, ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে আরম্ভ করিলেন। শত সহস্র পুরবাসীরা কেহ বহুবিধ দিব্য যানে, কেহ সামান্য যানে, কেহ বা পুত্ৰকল সমভিব্যাহারে পাচারে সঞ্চরণ করিতে লাগিল। বলদেব মধুপানে মত্ত ও গন্ধর্বগণ কর্তৃক অনুগত হইয়া নিজ ভার্য্যা রেবতীর সহিত ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। প্রবল প্রতাপ যদুবংশীয় রাজা উগ্রসেনও অঙ্গনাসহস্রে পরিবৃত হইয়া গন্ধর্বদিগের সুমধুর সঙ্গীত শ্রবণপূর্বক পরমসুখে বিহার করিতেছিলেন। রুক্মিণীতনয় ও শান্তু, ইহারাও মধুপানে নিতান্ত উন্মত্ত হইয়া দিব্যাম্বর পরিধান ও দিব্য মাল্য ধারণপূর্বক বিহার করিতেছিলেন। অঙ্কুর, সারণ, গদ, ব, বিদুরথ, নিশঠ, চারুদেষ্ণ, পৃথু, বিপৃথু, সত্যক, সাত্যকি, ভঙ্গকার, মহারব, হার্দিক ও উদ্ধব, ইহারা এবং অন্যান্য যদুবংশীয়েরাও পৃথক পৃথক গন্ধর্বগণ ও অঙ্গগণে পরিবৃত হইয়া উৎসব করিতেছিলেন।

এই পরমাদ্ভুত কৌতূহল আরম্ভ হইলে বাসুদেব অর্জুন সমভিব্যাহারে কথায় উপস্থিত হইলেন। উপস্থিত হইয়া উৎসবসমাজে ইতস্ততঃ সঞ্চরণ করিতেছেন, এই অবসরেতাঁহারা, সখীজনপরিবৃতা সৰ্বালঙ্কারশোভিতা, সৰ্বাঙ্গসুন্দরী বসুদেবদুহিতা সুভদ্রাকে দর্শন করিলেন। দর্শন করিবামাত্র অর্জনের অন্তঃকরণ চঞ্চল হইয়া উঠিল। তখন কৃষ্ণ প্রিয়সখা অর্জুনকে তদেকান্তমনাঃ দেখিয়া হাস্যমুখে কহিলেন, সখে! বনচর হইয়াও অনঙ্গশরে চঞ্চল হইলে! এ কি! ইনি বসুদেবের কন্যা ও সারণের সহোদরা এবং আমারই ভগিনী; ইহার নাম সুভদ্রা। হে সখে! যদি তোমার মন নিতান্তই ইহার প্রতি অনুরক্ত হইয়া থাকে, তবে বল, আমি এই কথা পিতার কর্ণগোচর করি। অর্জুন কহিলেন, “হে কৃষ্ণ! পরমরূপসম্পন্ন সুভদ্রা বসুদেবের কন্যা ও বসুদেবের ভগিনী; সুতরাং কাহার না মনোমোহিনী হইবেন? কিন্তু ইনি আমার মহিষী হইলে সকল মঙ্গল সম্পাদিত হয়। অতএব এক্ষণে কি উপায়ে আমার সুভালাভ হইবে, অনুসন্ধান কর; তাহা যদি মনুষ্যের সাধ্যাতীত না হয়, তদ্বিষয়ে আমি অবশ্যই যত্ন করিব। বাসুদেব প্রত্যুত্তর করিলেন, হে অর্জুন! স্বয়ম্বরই ক্ষত্রিয়দিগের বিধেয়, কিন্তু স্ত্রীলোকের প্রবৃত্তির কথা কিছুই বলা যায় না, সুতরাং তদ্বিষয়ে আমার সংশয় জম্মিতেছে। আর ধর্মশাস্ত্রকারের কহেন, বিবাহোদ্দেশে বলপূর্বক হরণ করাও মহাবীর ক্ষত্রিয়দিগের প্রশংসনীয়। অতএব স্বয়ম্বরকাল উপস্থিত হইলে তুমি আমার ভগিনীকে বলপূর্বক হরণ করিয়া লইয়া যাইবে; কারণ, স্বয়ম্বরে সে কাহার প্রতি অনুরক্ত হইবে, কে বলিতে পারে।

অনন্তর বাসুদেব ও অর্জুন এইরূপ ইতিকৰ্তব্য স্থির করিয়া ইন্দ্র প্রস্থগত ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের নিকট দ্রুতগামী দূত প্রেরণ করিলেন। যুধিষ্ঠির এই বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়া তদ্বিষয়ে অর্জুনকে অনুমোেদন করিলেন।