২০. সপ্তম দিনের যুদ্ধ শেষ

সঞ্জয় বলেন, রাজা কর অবধান।
সপ্তম-দিবস যুদ্ধ নাহি পরিমাণ।।
ইন্দ্রদত্ত যত অস্ত্র পার্থের আছিল।
গগন ছাইয়া ভীষ্ম উপরে বর্ষিল।।
না দেখি যে রথখান না দেখি সারথি।
দীপ্ত হৈল কুরুবংশ যত যোধপতি।।
তবে দ্রোণ কৃপাচার্য্য গুরুর নন্দন।
ভূরিশ্রবা জয়দ্রথ সুশর্ম্মা রাজন।।
ভগদত্ত শল্য আদি যত মহামতি।
ভীষ্মের সাহায্য হেতু আইল শীঘ্রগতি।।
নানা অস্ত্র বর্ষে সবে পার্থের উপর।
বরিষাকালেতে যেন বর্ষে জলধর।।
ক্রোধ কৈল ধনঞ্জয় সংগ্রামে প্রচণ্ড।
অস্ত্রে অস্ত্রে কাটিয়া করিল খণ্ড খণ্ড।।
হেনকালে ভীম ক্রোধে প্রবেশিল রণে।
মত্ত হস্তী ধায় যথা কদলীর বনে।।
বিচিত্র ধনুক হাতে বীর বৃকোদর।
গমন পবন-গতি যমের সোসর।।
নানাবিধ অস্ত্র বীর করি অবতার।
লক্ষ লক্ষ মহাবীরে করিল সংহার।।
কাহারো কাটিল ধনু কবচ সহিতে।
মস্তক কাটিয়া কারো পাড়িল ভূমিতে।।
মধ্যদেশ কাটি কারো কৈল খণ্ড খণ্ড।
দুই পদ কাটে কারো, কারো ধ্বজদণ্ড।।
মহা ভয়ঙ্কর বীর পবন-নন্দন।
ভীমে দেখি ভঙ্গ দিল যত বীরগণ।।
ভগদত্তে ডাকি আজ্ঞা দিল দুর্য্যোধন।
শীঘ্রগতি মার গিয়া পবন-নন্দন।।
বিক্রমে বিশাল বীর বলে মহাবল।
সাবধানে যুঝ গিয়া করিয়া কৌশল।।
শীঘ্রগতি যাহ তুমি বিলম্ব না কর।
গজেন্দ্র লইয়া মার বীর বৃকোদর।।
আজ্ঞামাত্র ভগদত্ত সমরে দুর্ব্বার।
ভীমের উপরে করে বাণ-অবতার।।
রথী মহারথিগণ বেড়ি মারে শর।
তিলেক ভ্রূক্ষেপ নাহি পবন-কোঙর।।
শরে আবরিল ভীমে না দেখি না আর।
খড়্গ চর্ম্ম হাতে নিল পবন-কুমার।।
যত অস্ত্রবৃষ্টি করে কাটে নিরন্তর।
মহাবলবান বীর যমের সোসর।।
তবে অভিমন্যু বীর ক্রোধ হৈল মনে।
আকর্ণ পূরিয়া বাণ এড়ে ধনুর্গুণে ।।
হেথা গুরু ঘটোৎকচ করে মহারণ।
রাক্ষসের রণে ভঙ্গ কুরু-সৈন্যগণ।।
সূর্য্য অস্ত্র গেল হৈল সন্ধ্যার সময়।
রাত্রিতে রাক্ষস বল অধিক বাড়য়।।
বিচারিয়া বলে গুরু ভীষ্মেরে বচন।
আজিকার যুদ্ধ তুমি কর সমাধান।।
অনুচরে ডাকি আজ্ঞা দিল ততক্ষণ।
আজিকার মত যুদ্ধ কর সমাপন।।
আজ্ঞামাত্র অনুচর সৈন্যে পাঠাইল।
শুনিয়া উভয় সৈন্য যুদ্ধ ত্যাগ কৈল।।
যে যার ভবনে গেল কুরু-পাণ্ডুগণ।
উভয় দলের সবে বিষণ্ন বদন।।
মুনি বলে জন্মেজয় কর অবধান।
সম্পম-দিবস যুদ্ধ এই সমাধান।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে হেলে ভব তরি।।
কাশীরাম দাস কহে রচিয়া পয়ার।
অবহেলে শুনে যেন সকল সংসার।।