১৭. ব্রাহ্মণীর পাষাণ হইবার বৃত্তান্ত

জন্মেজয় রাজা বলে শুন তপোধন।
ব্রাহ্মণী পাষাণ হৈল কিসের কারণ।।
অভিশাপ কেন মুনি দিলেন তাহাকে।
কৃপা করি সেই কথা কহিবে আমাকে।।

বলেন বৈশম্পায়ন শুন নরপতি।
মন দিয়া শুন কহি ব্যাসের ভারতী।।
উদ্দালক নামে মুনি ছিল তপোবনে।
চণ্ডী নামে তাঁর ভার্য্যা বিখ্যাত ভুবনে।।
বিবাহ করিয়া মুনি ছিল নিকেতনে।
চণ্ডীকে বুঝান মুনি বিবিধি বিধানে।।
আমি তব স্বমী বটে হই গুরুজন।
যতনে পালিবে তুমি আমার বচন।।
চণ্ডী বলে তব বাক্য আমি না শুনিব।
তুমি যাহা বল তাহা আমি না করিব।।
দুঃখ পায় উদ্দালক তাহার বচনে।
কহিল সকল কথা মুনিপত্নীগণে।।
তারা বলে বাল্যকালে কত বড় জ্ঞান।
পালিবে তোমার বাক্য হৈলে বুদ্ধিমান।।
হেমতে কতকাল বঞ্চিলেন মুনি।
চণ্ডী সে না শুনে কিছু উদ্দালক বাণী।।
দুঃখ পায় উদ্দালক তাহার মিলনে।
স্বামীর বচন সে কদাচ নাহি শুনে।।
কমণ্ডলু আনিতে বলিল মুনিবর।
দেবতা পূজিব আমি শুনহ উত্তর।।
যজ্ঞ করি মনোনীত বর মাগি লন।
চণ্ডী বলে ‍আমি কমণ্ডলু না আনিব।।
না আনিব কমণ্ডলু যজ্ঞে নাহি কাজ।
কি হইবে সেবিলে গোবিন্দ দেবরাজ।।
বরে প্রয়োজন নাহি প্রাক্তন যে মূল।
বৃথা উপদেশ দেহ নহে সমতুল।।
চণ্ডীর বচনে মুনি যন্ত্রণা পাইল।
বাক্য নাহি শুনে নানামতে বুঝাইল।।
তীর্থ হেতু এল কৌণ্ডিন্য মুনিবর।
উদ্দালক আশ্রমেতে আইল তৎপর।।
শিষ্যসহ আইল কৌণ্ডিন্য মহামুনি।
প্রীতি পান উদ্দালক সেই কথা শুনি।।
চণ্ডীকে ডাকিয়া কহিলেন মুনিবর।
না আনিব কৌণ্ডিন্য করিয়া সমাদর।।
কোথায় পাইব ফল নাহি তপোবনে।
না করিব সম্প্রীতি কৌণ্ডিন্যের সনে।।
চণ্ডী বলে মুনিরে করিব সমাদর।
ফল মূল আনি আমি দিব তা সত্বর।।
কমণ্ডলু দেহ নিয়া পদ প্রক্ষালনে।
ঈষৎ হাসিয়া মুনি চণ্ডীর বচনে।।
সমাদর করি মুনি কৌণ্ডিন্যে আনিল।
পাদ্য অর্ঘ্য যথাযোগ্য কুশাসন দিল।।
কৌণ্ডিন্য বলেন শুন উদ্দালক মুনি।
কহ কহ কৃষ্ণ কথা তোমা হৈতে শুনি।।
উদ্দালক বলে মোর ভার্য্যা দুষ্টমতি।
আশ্রমে রহিতে আমি না পাই পিরীতি।।
পিতৃশ্রাদ্ধ আসিয়া হইল উপনীত।
বাক্য নাহি শুনে চণ্ডী মম হয় ভীত।।
কৌণ্ডিন্য বলেন শ্রাদ্ধ করহ প্রভাতে।
দেখি চণ্ডী বাক্য নাহি শুনয়ে কিমতে।।
রজনী বঞ্চিয়া মুনি প্রত্যূষ বিহানে।
জিজ্ঞাসেন চণ্ডীকে মুনির বিদ্যমানে।।
আজি মম পিতৃশ্রাদ্ধ শুনহ বচন।
চণ্ডী সে বলিল শ্রাদ্ধে নাহি প্রয়োজন।।
তাহা দেখি কৌণ্ডিন্যের ক্রোধ উপজিল।
আরক্ত লোচন করি চণ্ডীরে কহিল।।
স্বামী বাক্য পাপীয়সি নাহি শুন কাণে।
শিলারূপ হও গিয়া আমার বচনে।।
অব্যর্থ মুনির বাক্য হৃদয়ে ভাবিয়া।
হোড়হাতে চলে চণ্ডী বিনয় করিয়া।।
অব্যর্থ তোমার বাক্য শুন তপোধন।
কতকালে হবে মম শাপ বিমোচন।।
দোষ অনুরূপ দণ্ড ‍তুমি দিলা মোরে।
শাপান্ত করহ প্রভু নিবেদি তোমারে।।
কৌণ্ডিন্য বলেন তুমি থাক গিয়া বনে।
অভিশাপে মুক্ত হবে অর্জ্জুন মিলনে।।
অশ্বমেধ যজ্ঞ করিবেন যুধিষ্ঠির।
রাখিতে আসিবে ঘোড়া ধনঞ্জয় বীর।।
ধরিয়া রাখিবে ঘোড়া তুমি বাহুবলে।
অর্জ্জুন পরশে পাপ ঘুচিবে সকলে।।

এত বলি নিজালয়ে গেল তপোধন।
চণ্ডীকা পাষাণরূপা হৈল সেইক্ষণ।।
চিরকাল শিলা হয়ে আছিল কাননে।
শাপমুক্ত হৈল এবে অর্জ্জুন মিলনে।।
অশ্বমেধ যজ্ঞ কথা শুন জন্মেজয়।
ভদ্রাবতীপুরে গেল পাণ্ডবের হয়।।
বিজয় পাণ্ডব কথা অমৃত লহরী।
কাশী কহে শুনিলে তরয়ে ভববারি।।