১৭৯. ঔর্ব ঋষির জন্মবৃত্তান্ত

১৭৯. ঔর্ব ঋষির জন্মবৃত্তান্ত

ঊনাশীত্যধিকশততম অধ্যায়।

ব্রাহ্মণী কহিলেন, হে বৎস ক্ষত্রিয়গণ! আমি ক্রোধপরায়ণ হইয়া তোমাদিগের চক্ষুঃ গ্ৰহণ করি নাই। মদীয় ঊরুসম্ভব ভার্গব তোমাদিগের উপর অদ্য রোপরবশ হইয়াছেন। তিনিই বন্ধুবান্ধবগণের নিধনদশা স্মরণ করিয়া কোপাকুলিতচিত্তে তোমাদিগের চক্ষুঃ গ্ৰহণ করিয়াছেন, সন্দেহ নাই। তোমরা যখন ভৃগুমহিলাদিগের গর্ভস্থ সন্তানগণকে সংহার কর, তদবধি অমি এক শত বৎসর কাল ঊরুদেশে এই গর্ভ ধারণ করিয়াছিলাম। ভৃগুবংশীয়দিগের হিতানুষ্ঠানের নিমিত্ত ষড়ঙ্গসম্পন্ন বেদ, গর্ভস্থ অবস্থায় এই বালকে প্রবেশ করিয়াছে। এই বালকই পিতৃবধজনিত ক্রোধে অধীর হইয়া তোমাদিগকে সংহার করিতে উদ্যত হইয়াছেন। ইহারই অলৌকিক তেজোবলে তোমাদিগের চক্ষুঃ অপহৃত হইয়াছে, অতএব তোমরা ইহার নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা কর, ইনিই প্রণিপাতে পরিতুষ্ট হইয়া পুনর্বার তোমাদিগকে দৃষ্টি প্রদান করিবেন। এইরূপ আদিষ্ট হইয়া তাহারা ঊরুসম্ভব ভাগবকে কহিলেন, মহাভাগ! প্রসন্ন হউন, এই কথা কহিবামাত্র তিনি তৎক্ষণাৎ প্রসন্ন হইলেন।

হে বৎস! ঐ বিপ্রর্ষি ঊরুভেদ করিয়া নির্গত হইয়াছিলেন, এই কারণে ত্রিভুবনে ঔৰ্ব বলিয়া বিখ্যাত হন। ক্ষত্রিয়ের। চক্ষুঃ লাভ করিয়া প্রতিনিবৃত্ত হইলে মহর্ষি ঔর্বের মনে হইল, যেন তিনি সকল লোককে পরাস্তব করিলেন। তৎপরে মহাত্মা মহামনাঃ মুনি সমূলে নিখিল লোক সংহার করিবার নিমিত্ত একান্ত উন্মুখ হইলেন। মহর্ষি, ভৃগুবংশীয়দিগের নিষ্কৃতিলাভ প্রত্যাশায় সৰ্বলোক বিনাশে কৃতসংকল্প হইয়া তপঃপ্রভাবে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিলেন এবং পিতামহগণের অন্তঃকরণে আনন্দ সঞ্চার করিবার নিমিত্ত তপোবলে দেবাসুর ও মনুষ্যের সহিত ত্রিলোককে সন্তপ্ত করিতে লাগিলেন।

অনন্তর পিতৃলোকেরা এই অদ্ভুত ব্যাপার অবগত হইলেন এবং ঔৰ্বের নিকট আবির্ভূত হইয়া কহিলেন, হে বৎস! আমরা তোমার পোবল দেখিলাম, এক্ষণে লোকের প্রতি প্রসন্ন হও এবং কোবাবেগ সম্বরণ কর। তৎকালে আমরা প্রতীকারে অশক্ত হইয়া যে প্রাণসংহারোদ্যত ক্ষত্রিয়দিগের তাদৃশ অত্যাচারে উপেক্ষা প্রদর্শন করিয়াছি, এমত নহে। অতি দীর্ঘ জীবন ভোগ করা অপেক্ষা জীবলোকে ক্লেশকর আর কিছুই নাই, এই জন্য স্বেচ্ছানুসারে আপনারাই আপনাদিগের বধোপায় ক্ষত্রিয়হস্তে অবধারিত করিয়াছিলাম। আমরা কোপের বশীভূত নহি, তথা ক্ষত্রিয়দিগের সহিত বিষেষভাব বদ্ধমূল হইবার উদ্দেশেই আমাদের মধ্যে একজন আপন আলয়ে সমুদায় ধনসম্পত্তি ভূগর্ভে নিখাত করিয়া রাখেন। ক্ষত্রিয়দিগকে কুপিত করাই তাহার উদ্দেশ্য। আমরা স্বৰ্গফল কামনা করিয়া থাকি, আমাদিগের ধনে কি প্রয়োজন? প্রয়োজন হইলে ধনাধ্যক্ষ কুবেরই আমাদিগের প্রভূত ধন আহরণ করেন। যখন দেখিলাম, ধর্মরাজ যম স্বয়ং আমাদিগকে গ্রহণ। করিতে পারিলেন না, তখন আমরা সর্বসম্মতিক্রমে এইরূপ উপায় অবধারণ করিলাম। আত্মঘাতী পুরুষেরা কদাচ পুণ্য লোক লাভ করিতে পারে না, এই হেতু আমরা আদ্যোপান্ত সমুদায় অনুধাবন করিয়া ক্ষত্রিয়হস্তে প্রাণ বিসৰ্জন করিয়াছিলাম। হে ভৃগুবংশাবতংস ঔর্ব! যে বিষয়ে অনুষ্ঠান করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি, তাহা আমাদিগের নিতান্ত অপ্রিয়। এক্ষণে তুমি সর্বলোকপরাভবরূপ পাপাচার হইতে মনঃসংষম কর। সর্বলোক ক্ষয় ও ক্ষত্রিয়দিগকে বধ করিবার কোন প্রয়োজন নাই। উচ্ছলিত ক্রোধাবেগ তুপঃপ্রভাবকে দুষিত ও কলুষিত করিতেছে, আশু তাহার পরিহার করা তোমার অবশ্য কর্তব্য।