১৩. যুধিষ্ঠিরের ইন্দ্রপুরী গমন

ধর্ম্ম আদি দেবচয়, দেখি রাজা সবিস্ময়,
প্রণাম করেন সবাকারে।
মাতলি ইঙ্গিত পেয়ে, দিব্য পুষ্পরথ লয়ে,
যোগাইল রাজা যুধিষ্ঠিরে।।
ধর্ম্ম ইন্দ্র দুইজনে, গন্ধমাল্য আভরণে,
যুধিষ্ঠিরে করেন ভূষিত।
বিবিধ বন্ধন ছান্দে, মস্তকে মুকুট বান্ধে,
কিন্নর গন্ধর্ব্ব গায় গীত।।
পারিজাত পুষ্পমালা, শোভয়ে রাজার গলা,
বাজে শঙ্খ মৃদঙ্গ কাহাল।
উর্ব্বশী প্রভৃতি নাচে, কেহআগে কেহ পাছে,
জয় শব্দ কংস করতাল।
মাতলি সারথি রথে, ধর্ম্ম ইন্দ্র আদি সাথে,
বায়ু ইন্দ্র বরুণ হুতাশ।
কেহ ছত্র শিরে ধরে, হুলাহুলি জয়স্বরে,
কেহ করে চামর বাতাস।।
কেহ অগ্রে যায় ধেয়ে, পঞ্চবাদ্যে বাজাইয়ে
পুষ্পবৃষ্টি আনন্দে প্রচুর।
মুনিগণ বেদ গান, ধর্ম্মপুত্র স্বর্গে যান,
মুহূর্ত্তে গেলেন সুরপুর।।
দেখি রাজা পুণ্যকারী, সকল সুবর্ণপুরী,
সর্ব্ব গৃহে কিন্নরের গান।
সদা মহানন্দময়, নাহি জরা মৃত্যু ভয়,
কৌতুকে বিহরে পুণ্যবান।।
স্বর্গগত নরবর, তারে দেখি পুরন্দর,
বসাইল রত্ন সিংহাসনে।
পদ প্রক্ষালিতে বারি, পূরিয়া সুবর্ণ ঝারি,
যোগাইল যত দাসগণে।।
ইন্দ্র আজ্ঞা পেয়ে পরে, নানাদ্রব্য উপহারে,
ভোজন করায় নরনাথে।
কর্পূর তাম্বুল দিয়া, পালঙ্কেতে বসাইয়া,
ইন্দ্র আশ্বাসিল ধর্ম্মসুতে।।
ইন্দ্র বলে যুধিষ্ঠির, তুমি পুণ্য আত্মা ধীর,
নরদেহে এলে স্বর্গপুরে।
এ পুরী অমরাবতী, হও তুমি শচীপতি,
যুক্তি আসে আমার বিচারে।।
শুনিয়া ইন্দ্রের বাণী, যুধিষ্ঠির নৃপমণি,
কহিছেন বিনয় বচন।
তব বাক্যে পাই ত্রাস, কেন কর পরিহাস,
আমি মূঢ়মতি আকিঞ্চন।।
সত্য কৈনু মর্ত্ত্যপুরী, বৈকুণ্ঠে দেখিব হরি,
তুমি মম সব দুঃখ জান।
তুমি পিতা দেব আর্য্য, কর মম এই কার্য্য
স্বর্গসুখে নাহি মম মন।।
ইন্দ্র বলে শুনবাণী, অষ্টাদশ অক্ষৌহিণী,
পঞ্চভাই শতেক কৌরবে।
পিতা জ্যেষ্ঠখুল্লতাত, জ্ঞাতিগোত্র ভ্রাতৃমাত,
সবা সঙ্গে বৈকুণ্ঠে মিলিবে।।
এত বলি সেইক্ষণে, পুষ্পরথ অরোহণে,
পাঠাইল স্বর্গ পরকাশ।
ভারত সঙ্গীত গীত, হেতু সুজনের প্রীত,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।