১৩. জনার দেহত্যাগ ও অর্জ্জুনের প্রতি গঙ্গার অভিশাপ

শ্রীজনমেজয় বলে শুন তপোধন।
কি যুক্তি করিল জনা কহ বিবরণ।।
বলেন বৈশম্পায়ন শুন নরপতি।
দুর্ব্বাক্য শুনিল বহু জনা গুণবতী।।
ভ্রাতার নিকট বড় পেয়ে অপমান।
মনেতে করিল যুক্তি ত্যজিব পরাণ।।
ভাগীরথী তীরে জনা গেল শীঘ্রগতি।
যোড় হাত হয়ে বলে আপন ভারতী।।
শুন গঙ্গাদেবী আমি করি নিবেদন।
তোমার সলিলে আমি ত্যজিব জীবন।।
নাশিল অর্জ্জুন মম পুত্র ধন প্রাণ।
আপনি করিবে মাতা ইহার বিধান।।
সেই হেতু চিত্তে বড় হৈল অভিমান।
কাতর হইয়া বলি তোমা বিদ্যমান।।
এত বলি গঙ্গাজলে প্রবেশ করিল।
পুত্রশোক পেয়ে জনা শরীর ত্যজিল।।
জনার মরণে শোক পেয়ে ভাগীরথী।
ক্রোধে অভিশাপ দিল অর্জ্জুনের প্রতি।।
সতীকন্যা মরে পার্থ তোমার কারণে।
সে সকল ভয় তোর নাহি হয় মনে।।
ভীষ্মে নিপাতিলে তুমি কপট করিয়া।
ভয় না করিলে পিতামহ যে বলিয়া।।
কৃষ্ণ সখা বলি তোর বাড়ে অহঙ্কার।
না বুঝ দেবের মায়া পাণ্ডুর কুমার।।
পৌন্ত্র হস্তে ভীষ্ম বীর ত্যজিল পরাণ।
তুমি ও পুত্রের হস্তে হারাইবে প্রাণ।।
শাপিলেন গঙ্গাদেবী তবে অর্জ্জুনের।
তাহা শুনি নারায়ণ চিন্তিত অন্তরে।।
ঈষৎ হাসেন কৃষ্ণ পাণ্ডব সভায়।
ব্যাসদেব বুঝিলেন তার অভিপ্রায়।।
জিজ্ঞাসেন যুধিষ্ঠির দেব নারায়ণে।
কহ কৃষ্ণচন্দ্র তুমি হাস্য কৈলে কেনে।।
গোবিন্দ বলেন শুন ধর্ম্ম নৃপবরে।
অভিশাপ হইল যে পার্থ ধনুর্দ্ধরে।।
গঙ্গা অভিশাপ দেন দুঃখ পেয়ে মনে।
তার মৃত্যু হবে বব্রুবাহনের রণে।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন হইবে কেমনে।
অভিশাপ দেন গঙ্গা কিসের কারণে।।
গোবিন্দ বলেন রাজা কর অবধান।
মাহেশ্বরীপুরে রাজা নীলধ্বজ নাম।।
ধরিল যজ্ঞের ঘোড়া তাহার নন্দন।
অশ্ব হেতু অর্জ্জুনের সঙ্গে হৈল রণ।।
প্রবীর তাহার পুত্র হত হৈল রণে।
রাজারাণী তনুত্যাগ কৈল অভিমানে।।
গঙ্গাতে মরিল সেই পুত্রশোক পেয়ে।
গঙ্গা অভিশাপ দেন দুঃখিত হইয়ে।।
নীলধ্বজ অশ্ব দিল ধনঞ্জয় বীরে।
আপনি চলিল বীর অশ্ব রাখিবারে।।
অর্জ্জুন কারণে ভয় না করিহ তুমি।
সঙ্কট হইলে রক্ষা করিব সে আমি।।
এত বলি কৃষ্ণ প্রবোধেন যুধিষ্ঠিরে।
এই বিবরণ রাজা কহিনু তোমারে।।
অমৃত সমান এই ভারত কাহিনী।
আর কি কহিব আমি বল ‍নৃপমণি।।