১২. পুত্রশোকে জনার ভ্রাতৃগৃহে গমন

তবে জনাবতী নারী, অন্তরেতে ক্রোধ করি,
ত্যজিয়া আলয় ধন জন।
পুত্রশোকে অধোমুখ, মনেতে ভাবিছে দুঃখ,
স্বামী নিল বিপক্ষ শরণ।।
পথে যেতে যুক্তি করে, বিনাশিব অর্জ্জুনেরে,
সহোদর সহায় করিয়া।
না পূরিল মনোরথ, দৈবে মোর এই পথ,
কি করিব ঘরেতে বসিয়া।।
বিনাশিলে অর্জ্জুনেরে, তবে মোর আশা পূরে,
নহে আমি ত্যজিব শরীর।
কাতর হইল রাজ, দুঃখতে নাহিক লাজ,
কোথা গেল সে পুত্র প্রবীর।।
লাজ অধোমুখ হৈয়া, মনে যুক্তি বিচারিয়া,
ভ্রাতার ভবনে গেল চলি।
উলূকের বিদ্যমানে, জনা কাঁদে সকরুণে,
পুনঃ পুনঃ লোটাইয়া ধূলি।।
ভগিনীর দশা দেখি, উলূক হইল দুঃখী,
হাতে ধরি তুলিল তাহারে।
না কহিয়া বিবরণ, কাঁদে কেন অকারণ,
কেবা বল দুঃখ দিল তোরে।।
জনা বলে ওগো ভাই, কহিবারে আসি নাই,
প্রবীর মরিল আজি রণে।
অর্জ্জুন আইল পুরে, অশ্ব রাখিবার তরে,
সে হেতু সংগ্রাম তার সনে।।
যুদ্ধ করে ধনঞ্জয়, জামাতা পাইল ভয়,
পরাজয় হইল নৃপতি।
পুত্রশোক না ভাবিয়া, তুরগ দিলেন লৈয়া,
পার্থসহ করিলেক প্রীতি।।
শুনিয়া পাইনু তাপ, না ঘুচিল মনস্তাপ,
স্বামী নিল শত্রুর শরণ।
বিনাশিয়া অর্জ্জুনেরে, যদি রাজ্য দেহ মোরে,
তবে শোক হয় নিবারণ।।
এ বড় অধিক লাজ, নীলধ্বজ মহারাজ,
পুত্রশোক না করিল মনে।
জনমিয়া ক্ষত্রকূলে, অশ্ব রাখিবার ছলে,
ভয়ে গেল অর্জ্জুনের সনে।
ধরিনু চরণ তোর, প্রতিজ্ঞা রাখহ মোর,
অর্জ্জুনের বধিয়া জীবন।
আমি সে অবলাজাতি, কলঙ্কে আছয়ে ভীতি,
নহে আমি করিতাম রণ।।
ভাই যে উলূক নাম, ধর্ম্মবুদ্ধি অনুপাম,
লজ্জাতে করিল হেঁটমাথা।
অবলা প্রবলা হয়ে, নিজ পুরী তেয়াগিয়ে,
কি কারণে আসিয়াছ হেথা।।
পার্থ নর নারায়ণ, কহে যত মুনিগণ,
রণে কেহ জিনিতে না পারে।
পাণ্ডবের সখা গুরু, কৃষ্ণ বাঞ্ছাকল্পতরু,
কেবা তাঁর কি করিতে পারে।।
আপনার ভাল চাহ, নিজালয়ে চলি যাহ,
তবে সে আমার ক্রোধ নাই।
কি কর্ম্মকরিলে তুমি, কভু নাহি শুনি আমি,
প্রতিফল পাবে মোর ঠাইঁ।।
রহিবেক দুষ্ট ভাষা, নহে কাটিতাম নাসা,
অবলার এত অহঙ্কার।
ভাতৃমুখে কথা শুনি, জনা অপমান গণি,
নাহি গেল পুরে আপনার।।
মহাভারতের কথা, শুনিলে খণ্ডয়ে ব্যথা,
কলির কলুষ বিনাশন।
গোবিন্দ চরণে মন, নিয়োজিয়া সর্ব্বক্ষণ,
কাশীরাম দাস বিরচন।।